Tuesday, June 16, 2015

৮২ শতাংশ ধর্ষিতাই ২০ বছরের কম বয়সী:টাইমনিউজ

৮২ শতাংশ ধর্ষিতাই ২০ বছরের কম বয়সী মো: কামরুজ্জামান বাবলু টাইম নিউজ বিডি, ১৫ জুন, ২০১৫ ১৮:১৫:১৪ বিউটি (ছদ্মনাম)। বয়স নয় বছর। এক পড়ন্ত বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল সে। প্রতিদিনের মতোই একা একা বাড়ি ফিরছিল বিউটি। ছোট্ট বালিকা তখনও জানে না নষ্টামিতে ভরপুর এই সমাজে এমন সুন্দর নির্জন পথে একা বাড়ি ফেরার কি চড়া মূল্য তাকে দিতে হবে। ছোট্ট মেয়ে বিউটিরই প্রতিবেশী সাগর (ছদ্মনাম)। সামান্য বুঝ হবার পর থেকেই অত
্যন্ত চেনা মুখ সাগর বিউটিকে জিজ্ঞেস করে সে আম খাবে কিনা। সাগরের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে বিউটি তাকে অনুসরণ করে এগিয়ে যায়। যেতে যেতে গ্রামের এক নির্জনা প্রান্তরে পৌঁছলে বিউটিকে ধর্ষণ করে বখাটে সাগর। বাংলাদেশে কোমলমতি এমন শত শত বিউটি প্রতিনিয়তই এই ধরনের লোমহর্ষক ধর্ষণের শিকার হয় নিজেদেরই অতি পরিচিত কারো না কারো হাতে। বাংলাদেশের প্রভাবশালী ইংরেজী দৈনিক “দি ডেইলি স্টার”- এর এক জরিপে বলা হয়, এই দেশে ধর্ষণের শিকার নারীদের ৮২ শতাংশেরই বয়স ২০ বছরের কম। জরিপে বলা হয়, প্রতি বছর ৮শ' থেকে ৯শ' ধর্ষণের ঘটনা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তবে, বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বাংলাদেশের বাস্তবতায় সামাজিক লজ্জার ভয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েও অনেকেই বিষয়টি গোপন রাখেন এবং গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে দেন না। তাই খবরে ধর্ষণের যেসব ঘটনা প্রকাশিত হয় তার চেয়ে বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটে অনেক বেশি। বিগত ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ধর্ষণের যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে তা একত্র করে পর্যালোচনা করা হয় ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৫২ শতাংশ ধর্ষিতা নারী কোন একক পুরুষের নির্যাচনের শিকার হয়েছেন। অপরদিকে, ৩৭ শতাংশ নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ১১ শতাংশ নারী নানাভাবে নির্যাতিত হলেও কোন না কোন উপায়ে শেষ পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন। জরিপে আরও দেখা যায়, ২ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পিতা-মাতা বা অভিভাবকের অনুপস্থিতিকে কাজে লাগিয়েছে ধর্ষকরা। জরিপে আরও বলা হয়, ধর্ষণের শিকার নারীদের ৫২ শতাংশই স্কুল শিক্ষার্থী। এবার এসব বালিকারা কোন কোন উপায়ে ধর্ষণের শিকার হলেন সেদিকে একটু নজর দেয়া যাক। জরিপ অনুযায়ী, ২৭ শতাংশ বালিকা তাদের স্কুলে যাওয়া বা স্কুল থেকে বাড়িতে ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার হন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব বালিকার সাথে তার পিতা-মাতা বা অভিভাবক না থাকার সুযোগটি গ্রহণ করেছে ধর্ষকরা। বাসা-বাড়িতে পিতা-মাতার অনুপস্থিতিকেও মেয়েদের ধর্ষণের শিকার হওয়ার জন্য অনেক সময় দায়ী করা হয়। জরিপে বলা হয়, ২২ শতাংশ মেয়ে বাসায় একা থাকার কারণে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। অপরদিকে, যেই ভয়ানক মাধ্যমে কোমলমতি বালিকারা ধর্ষণের শিকার হন তার মধ্যে রয়েছে– চকলেট, কেন্ডি, পুতুল, বই বা এ ধরনের উপহার দেয়ার লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলা। এছাড়া কিশোরীদের চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে বা প্রেমের ফাঁদে ফেলেও ধর্ষণ করা হয়। জরিপে আরও দেখা যায়, ধর্ষকদের ৪৫ শতাংশই হয় প্রতিবেশি নয়তো বা একই এলাকার বাসিন্দা এবং এরা ধর্ষিতার পূর্ব পরিচিত। এছাড়া ১১ শতাংশ নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সুযোগমতো ধর্ষণ করা হয় এবং ৭ শতাংশ নারী স্কুল শিক্ষক বা প্রাইভেট শিক্ষকের হাতে ধর্ষণের শিকার হন। জরিপে আরও দেখা যায়, ৩৩ শতাংশ ধর্ষিতাকে কোন নির্জন মাঠ কিংবা উদ্যানে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষকের বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে ৩০ শতাংশ নারীকে। অপরদিকে, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র চলতি বছরের মে মাসেই মোট ৭৫ জন নারী ও মেয়ে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ২৬ জন নারী ও ৪৯ জন মেয়ে শিশু। ওই ২৬ জন নারীর মধ্যে ৮ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের শিকার ৪৯ জন মেয়ে শিশুর মধ্যে ৮ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ৪ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে ১১ জন নারী ও শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এই সময় ১ জন যুবক যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে যেয়ে বখাটের হাতে নিহত হয়েছেন। তবে, আধুনিকতার নামে উচ্ছৃঙ্খল ও খোলামেলা জীবনযাপনের কারণেও নারীরা অনেক সময় যৌন লালসার শিকার হয়ে থাকেন বলেও মনে করেন অনেকেই। আর সে কারণেই পশ্চিমা দেশগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সর্বোচ্চ ভালো পর্যায়ে থাকা সত্ত্বেও সেখানে নারীরা অহরহ ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব জাস্টিসের ২০১০ থেকে ২০১১ সালে চালানো এক জরিপে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতি পাঁচজন নারীর মধ্যে একজন যৌন পীড়নের শিকার। আর প্রতি চারজন নারীর মধ্যে একজন স্বামী বা স্বজনদের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার। ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রকাশিত আরেক খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নৌ, বিমান ও সামরিক বাহিনীর তিনটি একাডেমিতে অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০১২ সালে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ২৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এটিকে তখন ‘বিদ্যমান সমস্যা’ অভিহিত করে এ ব্যাপারে অবিলম্বে জোরালো ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেট্টা। ২০১৩ সালের অক্টোবরে 'ইন্ডিয়ান পেনাল কোড'-এর এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আল জাজিরার খবরে বলা হয়, প্রতি ২০ মিনিটে ভারতীয় একজন নারী ধর্ষণের শিকার হন। আর দেশটিতে প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার হন ৭২ জন নারী। কেবি

No comments:

Post a Comment