Sunday, December 21, 2014

দুর্যোগ মোকাবিলায় নৌ-বাহিনীকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর:RTNN

দুর্যোগ মোকাবিলায় নৌ-বাহিনীকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব প্রতিনিধি আরটিএনএন চট্টগ্রাম: ভৌগোলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় নৌ-বাহিনীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি নৌ-বাহিনীর সুনাম ও ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন হয় এমন কিছু না করতে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর নতুন কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের প্রতিও আহ্বান জানান। রবিবার সকালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নৌ
বাহিনী একাডেমিতে মিডশিপম্যান-২০১৩-এর একটি ব্যাচ এবং ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার্স (ডিইও) ২০১৪-এর বি-ব্যাচের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। এর আগে প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা জিপে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় নৌ-বাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব ও বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী একাডেমির কমান্ডেন্ট কমোডর নাজমুল হাসান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিক, পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা এবং মিডশিপম্যানদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর ক্যাডেটদের জাতির ভবিষ্যত নেতা উল্লেখ করে বলেন, তারা দেশের স্বার্থকে ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দেবেন। তিনি বলেন, আপনারা এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে নৌ-বাহিনীর সুনাম ও ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন হয়। প্রধানমন্ত্রী নৈতিক গুণাবলীসহ মানবিক হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের দক্ষ অফিসার হিসেবে গড়ে তোলার জন্যও ক্যাডেটদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে, আপনারা জাতিকে সেবা দিতে যাচ্ছেন। তাই আপনাদের পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্যের স্বার্থে একজন দক্ষ অফিসার হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। শেখ হাসিনা প্রিয় মাতৃভূমির জন্য জীবন উৎসর্গকারী পূর্বসূরিদের ত্যাগ ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস স্মরণ করার জন্যও ক্যাডেটদের উপদেশ দেন। বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর উন্নয়নে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ফোর্স গোল-২০৩০-এর আওতায় এ বাহিনীকে ত্রিমাত্রিক একটি কার্যকর বাহিনীতে পরিণত করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের মেয়াদে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীকে ১৬টি জাহাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দুটি হেলিকপ্টার ও দুটি সামুদ্রিক টহল এয়ারক্র্যাফট যুক্ত করার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, দুটি সাবমেরিন নৌ-বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে। ২০১৬ সালের মধ্যে সাবমেরিনগুলো নৌ-বাহিনীতে যুক্ত হবে বলে আমরা আশা করছি। তিনি বলেন, যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণে বাংলাদেশ স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। খুলনা শিপইয়ার্ড ও নারায়ণগঞ্জ ডক ইয়ার্ডে অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ নির্মিত হচ্ছে। নৌ-বাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এগুলোতে প্রকৌশল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পটুয়াখালীর রাবনাবাদ এলাকায় বিমান ওঠা-নামা সুবিধাসহ একটি বিশাল নৌ-ঘাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীকে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ। সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার তার সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর উন্নয়নেও তার সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ অপরিহার্য। আর এক্ষেত্রে নৌ-বাহিনীর সদস্যদের বিরাট দায়দায়িত্ব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম হয়েছে। কিন্তু দেশের নিজস্ব সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আমাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গোপসাগরে বিপুল সম্পদের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে সেখানে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটার মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে তার বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গোপসাগরে সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি আর বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকার ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর ফলে আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের রায়ের মাধ্যমে আমরা বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর আমাদের স্বার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর তার সরকার বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করতে এবং অপারেশন ক্ষমতা বাড়াতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও যুদ্ধজাহাজ ক্রয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তিনি বলেন, তার সরকারের বিগত মেয়াদে নৌ-বাহিনীতে অত্যাধুনিক ফ্রিগেট ‘বিএনএস বঙ্গবন্ধু’ যুক্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সময়ের বিবর্তনে নৌ-বাহিনী একটি মর্যাদাশীল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ বাহিনী সুখ্যাতি অর্জন করেছে। শেখ হাসিনা আজকের রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজের মাধ্যমে যারা বাংলদেশ নৌ-বাহিনীকে কমিশন পেয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানিয়ে ত্যাগ ও নিষ্ঠার মাধ্যমে তারা বিশ্ব পর্যায়ে বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। মন্তব্য      


No comments:

Post a Comment