ছি, দেখেছি সব কিছু মেনে নিয়ে নগর সভ্যতার জয়গান গাইতে। ফলে বিষয়টিকে কোনোভাবেই আয়ত্ব করতে পারিনি। তবে প্রশ্ন জাগে ক্লাইমেট চেঞ্জ, ওজন স্তরের পরিবর্তন, জীববৈচিত্রের উন্নয়ন নিয়ে প্রাশ্চাত্যের সভ্য মানুষগুলোর কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখে। সে যাই হোক প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ যে অন্তরে এক অদ্ভুত পরিতৃপ্তি যোগায় তা জানি। আর এ পরিতৃপ্তি থেকেই হয়তো এক সময় প্রাণ-প্রকৃতির সাথে আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠবে। প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন দিক থাকতে পারে, তবে প্রকৃতিতে মিশে গিয়ে প্রকৃতির মাঝ থেকেই শিক্ষা নিয়ে তালে তাল মিলিয়ে চলতে শেখায় নেচার ক্যাম্প। সম্প্রতি এমনই একটি ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা লেখায় আলোচনা করতে চাই। পাহাড় আর ঝিরি পথের দেশ বান্দরবানেই গিয়েছিলাম নেচার ক্যাম্পে। যাত্রা শুরু পয়লা ফাল্গুন, উদ্দেশ্য প্রকৃতির পথ বেয়ে পাহাড়ের অনেক গভীরে পৌঁছানো, যেখানে সচরাচর মানুষের আনাগোনা নেই, নেই নগর সভ্যতার কোন ছোয়া। প্রকৃতি যেখানে নিজেই নিজের পরিচর্যার ভার নিজেই নিয়েছে, বেড়ে উঠছে আপন মনে, আপন আনন্দে। তবে আসলেই কি এমন কোন জায়গা আছে? উত্তর আমাদেরও অজানা। বসন্তের শুরুতে প্রকৃতির মতো পাহাড়ও অন্যরকম ভাবেই সাঁজে। পাহাড়ের উঁচু নিচু পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রথমেই আপনার চোখে পড়বে রংবেরংয়ের পাতা। শীত শেষে গাছের কঁচিপাতার এমন দৃশ্য আপনাকে মনোনিবেশ করতে বাধ্য করবে কি না জানিনা, তবে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে লাল হলুদ-বাদামি-খয়রি রংয়ের প্রকৃতির ছবি আপনাকে সজিব করে তুলবে এটা নিশ্চিত। আবার পথ চলার পথে মর্মর ধ্বনি শোনা একটি স্বাভাবিক ছন্দ মনে হতে পারে। কারণ এসময় পুরো পাহাড়টাই ঢাকা থাকে শুকনো পাতার চাদরে। তবে এজন্যই বাড়তি সতর্কতার বিষয়টিও জানা থাকা দরকার। সামান্য দেয়াশলাইর কাঠি পুরো পাহাড়কে জ্বালিয়ে দিতে পারে এক নিমেষে। পথ চলতে চলতে পুড়ে ছাই এমন পাহাড়ও আমাদের চোখে পড়ল। চোখে পড়ল নাম না জানা হাজারো পাহাড়ি বনফুল, আর নগর সভ্যতা থেকে হারিয়ে যাওয়া পলাশ শিমুল কাঠালচাঁপাও। বসন্তে পাখির কলতান হয়তো নতুন কিছু নয় তবে ঝিরি পথের বাঁকে করা আমাদের ক্যাম্পে পুরো রাত নানান পাখির গানে মুখরিত থাকার বিষয়টি অদ্ভুত অনুভূতি যুগিয়েছে। রাতে অবস্থানের জন্য ক্যাম্প করতে আপনাকে কয়কটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমেই আপনি যেই জায়গায় অবস্থান করবেন তার আসে পাশে পানি থাকাটা জরুরি। সারারাত অবস্থানের জন্য যথেষ্ঠ পরিমাণ জ্বালানি আর খাবারের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। একইসাথে মনে রাখতে হবে আপনার অবস্থানের জন্য প্রকৃতির কোনো প্রকার ক্ষতি সাধন যেন না হয়। বিশেষ করে আপনার সাথে বহন করা পানির বোতল, পলিথিন, প্লাস্টিক কোনোভাবেই যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। রাত যাপনের পর আপনার আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলা উত্তম। ক্যাম্পের জন্য সমতল জায়গা নির্বাচন জরুরী তবে পরিস্থীতির ওপর নির্ভর করে পাহাড়ের ওপরও রাত্রি যাপন হতে পারে। বান্দরবানে আমাদের তৃতীয় দিনের ক্যাম্পের অবস্থান ছিল পাহাড়ের ওপরে যেখান থেকে ঝিরি পথ কয়েকশ ফিট নিচে। সেখানে অবস্থান কালে খাবার সহ নানা প্রয়োজনে পানির ব্যবস্থা করতে আমাদের কষ্ট পোহাতে হয়। তবে পাহাড়িদের জীবন বৈচিত্রের কথা ভাবলে এমন কষ্ট কিছুই মনে হবে না। ঝিরি পথ থেকে পানি সংগ্রহ করতে পাহাড়িদের মাইলের পর মাইল হাঁটা নতুন কিছু নয়। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে এ মানুষগুলোর সংগ্রাম আপনাকে অনুপ্রাণিত না করলেও ভাবাবে। এক থেকে দুইজন পাহাড়ি দিনরাত পরিশ্রম করে বিশাল পাহাড়কে জুম চাষের জন্য উপযোগী করে তোলার বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে। বসন্তের এমন সময় পাহাড়ের ঝোপঝাড় আর আগাছা পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত পাহাড়িরা। কিছুদিনের মধ্যে এ আগাছা শুকিয়ে গেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হবে। আবার বর্ষায় পোড়া ছাই মাটির সাথে মিশে গেলে বোপন করা হবে বীজ। প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা এমন পরিশ্রমী মানুষগুলোর হাস্যজ্জলতা সারল্য আতিথ্য দেখে অবাক না হওয়ার কথা নয়। তবে সরলতার সুযোগ নিয়ে কুটিল মানুষের স্বার্থ উদ্ধারের ঘটনাও পাহাড়ের পরতে পরতে। গল্পে ফিরে আসি। আমরা আটজন পাহাড়ের পথে হাঁটতে হাঁটতে সত্যিই পৌছে গেলাম জনমানবশূন্য এক অদ্ভুত সুন্দর জায়গায়। ঝিরি পথের বাঁকে হাজারো পাথরের স্তুপ আর চারপাশে পাহাড়ের উঁচু সবুজ দেয়াল, রংবেরংয়ের বাহারি গাছ, প্রজাপতি ঘাসফড়িং, মাকরসাহ সহ নানান ধরনের প্রাণের সন্ধান পেলাম সেখানে। মাঝে আঁকা-বাঁকা পথ এগিয়ে গেছে কোনো এক পাহাড়েরই দিকেই। কিছু দূর এগুতেই দেখলাম বিশাল এক রাজ প্রাসাদের গেট। দুই পাহাড়ের মাঝে ঝিরিপথ বয়ে যাওয়া ফাঁকা জায়গাটি এমনই এক অদ্ভুত গেটের আকার ধারন করেছে। যা হলিউডের সিনেমা কিংবা কল্পনাতেই দেখা হয়েছে এর আগে। অবশ্য এমন সৌন্দর্যের বর্ণনা বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না, তাই ছবি দেখেই বুঝে নেয়ার অনুরোধ থাকল। সন্ধা প্রায় ঘনিয়ে, আমাদের আশ্রয় নিতে হবে সমতল কোনো জায়গায়। উপায় না দেখে পাথরের খাড়া পাহাড়টাকেই পাড়ি দিতে হবে সবার। সামান্য এদিক ওদিক পা পরলেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও টিকে থাকার যুদ্ধে ক্যাম্পাররা একে একে পাড়ি দিল বিশাল এ পাহাড়। রাত ঘনিয়ে আসলো, তাই পাহাড় ঝিরি পথ আর পাথরের রাজ্যে রাত্রিযাপন করলাম। পরদিন সকালে আবারো যাত্রা। এবারে উদ্দেশ্য সামনের পথ ধরে জনবসতির সন্ধান। টানা তিন সাড়ে তিন ঘণ্টা হাঁটার পর দূর থেকে দুই জন পাহাড়ির দেখা মিলল। তবে পাহাড়ের অনেক ভেতর থেকে আমাদের দলবেধে এগিয়ে আসতে দেখে অনেকটা ভয়েই পালিয়ে গেল তারা। অবশেষে তাদের পালিয়ে যাওয়ার পথ ধরেই ফিরলাম লোকবসতিতে। খানিক জিরিয়ে আবারো যাত্রা। ফেরার পথে সন্ধান মিলল ঝিরিপথের বাঁকে পাহাড়ি গুহার। এবারের পথটা একেবারেই অন্যরকম, শেওলা ঢাকা স্যাঁত স্যাঁতে সবুজ অরণ্য তার মাঝে ঝিরিপথের বাঁক কোথাও হাঁটু পানি কোথাও কোমর আবার কথাও গলা পানি। আমাদের চেষ্টা ছিল পাহাড়ের দুইপাশে জঙ্গলের সরু পথ বেয়ে লক্ষে পৌঁছানো। পথে একজন ক্যাম্পার হাঁপিয়ে ওঠায় তাকে রেখেই এগিয়ে গেলাম সবাই। এগুতে এগুতে মিলল গুহার দরজা। গুটগুটে অন্ধকারে সরু পথ বেয়ে আস্তে আস্তে গুহার ভেতর ঢুকলাম আমরা। কিন্তু গুহার পথ এতোটাই সরু আর সংকীর্ণ ছিল যে বাধ্য হয়েই মাঝ পথ থেকে ফিরে আসতে হলো আমি সহ আরেকজন ক্যাম্পারকে। অন্যরা সেই সরু পথে হামাগুড়ি দিয়েই গুহার অপর প্রান্ত দিয়ে বেড়িয়ে এলো। তাদের হাতে থাকা ক্যামেরায় এসময় দেখা মিলল জানা অজানা নানান প্রাণের চিত্র। প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা এসব প্রান যেমন নিরাপদ, আবার প্রকৃতির প্রয়োজনে একটি আরেকটির ওপর নির্ভর করেই জীবিকা নির্বাহ করে। যাকে আমরা বাস্তুসংস্থান বলেই জানি। আর এ বাস্তুসংস্থানের শেকল যখন নষ্ট হতে থাকে তখনই দেখা দেয় পরিবেশ বিপর্যয়, প্রয়োজন হয় আন্দলন আর পরিবেশ বাঁচাও স্লোগানের। বান্দরবান রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। এরপরের পথ-পরিক্রমা, মানচিত্র হয়তো বলা সম্ভব। আর এতে দু চারজন পর্যটক উৎসাহিত হলেই একদিন গড়ে উঠবে পর্যটন শিল্প। সেই সাথে উন্নত হবে রাস্তা-ঘাট, ধংস হবে পাহাড়-ঝিরিপথ, গড়ে উঠবে হোটেল-আবাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য এক কথায় নগর-সভ্যতা। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সভ্যতা অনুস্বীকার্য কিন্তু সমগ্র পৃথিবীকে বাঁচাতে প্রয়োজন বাস্তুসংস্থান বা প্রাকৃতির ভারসাম্য। আর এ ভারসাম্য রক্ষা কেবল প্রকৃতিরই কাজ।তাই নিজেদের প্রয়োজনেই সভ্যতার বাইরে প্রকৃতিকে বেঁড়ে ওঠার সুযোগ দেয়া জরুরি অসভ্য হয়ে । ছবি: শেখ রাজিব, নেচার ফটোগ্রাফার ও ক্যাম্পার জঙ্গলবাড়ি
Thursday, April 9, 2015
পাহাড়ের পথে নেচার ক্যাম্প... :Natun Barta
প্রকৃতি ও প্রাণ ভিন্নার্থক কিংবা সমার্থক যাই হোক না কেন; একটি আরেকটির ওপর নির্ভরশীল বলেই জানি। তবে এ ধারনাটাও অনেকটা পুঁথিগত। নগর সভ্যতায় সভ্য মানুষ হয়ে বেড়ে উঠতে গিয়ে প্রাণ কিংবা প্রকৃতি কোনোটির সাথেই সম্পর্ক গড়া হয়নি। বরং রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বড় দালানকোঠা নির্মাণ, প্রযুক্তির উন্নয়ন এককথায় নগর সভ্যতার উন্নয়নে বনবাদার, গাছপালা-পাহাড় ধংস করতে দেখেছি বহু। আবার এনিয়ে পরিবেশবাদিদের আন্দলন দেখে
ছি, দেখেছি সব কিছু মেনে নিয়ে নগর সভ্যতার জয়গান গাইতে। ফলে বিষয়টিকে কোনোভাবেই আয়ত্ব করতে পারিনি। তবে প্রশ্ন জাগে ক্লাইমেট চেঞ্জ, ওজন স্তরের পরিবর্তন, জীববৈচিত্রের উন্নয়ন নিয়ে প্রাশ্চাত্যের সভ্য মানুষগুলোর কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখে। সে যাই হোক প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ যে অন্তরে এক অদ্ভুত পরিতৃপ্তি যোগায় তা জানি। আর এ পরিতৃপ্তি থেকেই হয়তো এক সময় প্রাণ-প্রকৃতির সাথে আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠবে। প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন দিক থাকতে পারে, তবে প্রকৃতিতে মিশে গিয়ে প্রকৃতির মাঝ থেকেই শিক্ষা নিয়ে তালে তাল মিলিয়ে চলতে শেখায় নেচার ক্যাম্প। সম্প্রতি এমনই একটি ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা লেখায় আলোচনা করতে চাই। পাহাড় আর ঝিরি পথের দেশ বান্দরবানেই গিয়েছিলাম নেচার ক্যাম্পে। যাত্রা শুরু পয়লা ফাল্গুন, উদ্দেশ্য প্রকৃতির পথ বেয়ে পাহাড়ের অনেক গভীরে পৌঁছানো, যেখানে সচরাচর মানুষের আনাগোনা নেই, নেই নগর সভ্যতার কোন ছোয়া। প্রকৃতি যেখানে নিজেই নিজের পরিচর্যার ভার নিজেই নিয়েছে, বেড়ে উঠছে আপন মনে, আপন আনন্দে। তবে আসলেই কি এমন কোন জায়গা আছে? উত্তর আমাদেরও অজানা। বসন্তের শুরুতে প্রকৃতির মতো পাহাড়ও অন্যরকম ভাবেই সাঁজে। পাহাড়ের উঁচু নিচু পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রথমেই আপনার চোখে পড়বে রংবেরংয়ের পাতা। শীত শেষে গাছের কঁচিপাতার এমন দৃশ্য আপনাকে মনোনিবেশ করতে বাধ্য করবে কি না জানিনা, তবে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে লাল হলুদ-বাদামি-খয়রি রংয়ের প্রকৃতির ছবি আপনাকে সজিব করে তুলবে এটা নিশ্চিত। আবার পথ চলার পথে মর্মর ধ্বনি শোনা একটি স্বাভাবিক ছন্দ মনে হতে পারে। কারণ এসময় পুরো পাহাড়টাই ঢাকা থাকে শুকনো পাতার চাদরে। তবে এজন্যই বাড়তি সতর্কতার বিষয়টিও জানা থাকা দরকার। সামান্য দেয়াশলাইর কাঠি পুরো পাহাড়কে জ্বালিয়ে দিতে পারে এক নিমেষে। পথ চলতে চলতে পুড়ে ছাই এমন পাহাড়ও আমাদের চোখে পড়ল। চোখে পড়ল নাম না জানা হাজারো পাহাড়ি বনফুল, আর নগর সভ্যতা থেকে হারিয়ে যাওয়া পলাশ শিমুল কাঠালচাঁপাও। বসন্তে পাখির কলতান হয়তো নতুন কিছু নয় তবে ঝিরি পথের বাঁকে করা আমাদের ক্যাম্পে পুরো রাত নানান পাখির গানে মুখরিত থাকার বিষয়টি অদ্ভুত অনুভূতি যুগিয়েছে। রাতে অবস্থানের জন্য ক্যাম্প করতে আপনাকে কয়কটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমেই আপনি যেই জায়গায় অবস্থান করবেন তার আসে পাশে পানি থাকাটা জরুরি। সারারাত অবস্থানের জন্য যথেষ্ঠ পরিমাণ জ্বালানি আর খাবারের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। একইসাথে মনে রাখতে হবে আপনার অবস্থানের জন্য প্রকৃতির কোনো প্রকার ক্ষতি সাধন যেন না হয়। বিশেষ করে আপনার সাথে বহন করা পানির বোতল, পলিথিন, প্লাস্টিক কোনোভাবেই যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। রাত যাপনের পর আপনার আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলা উত্তম। ক্যাম্পের জন্য সমতল জায়গা নির্বাচন জরুরী তবে পরিস্থীতির ওপর নির্ভর করে পাহাড়ের ওপরও রাত্রি যাপন হতে পারে। বান্দরবানে আমাদের তৃতীয় দিনের ক্যাম্পের অবস্থান ছিল পাহাড়ের ওপরে যেখান থেকে ঝিরি পথ কয়েকশ ফিট নিচে। সেখানে অবস্থান কালে খাবার সহ নানা প্রয়োজনে পানির ব্যবস্থা করতে আমাদের কষ্ট পোহাতে হয়। তবে পাহাড়িদের জীবন বৈচিত্রের কথা ভাবলে এমন কষ্ট কিছুই মনে হবে না। ঝিরি পথ থেকে পানি সংগ্রহ করতে পাহাড়িদের মাইলের পর মাইল হাঁটা নতুন কিছু নয়। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে এ মানুষগুলোর সংগ্রাম আপনাকে অনুপ্রাণিত না করলেও ভাবাবে। এক থেকে দুইজন পাহাড়ি দিনরাত পরিশ্রম করে বিশাল পাহাড়কে জুম চাষের জন্য উপযোগী করে তোলার বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে। বসন্তের এমন সময় পাহাড়ের ঝোপঝাড় আর আগাছা পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত পাহাড়িরা। কিছুদিনের মধ্যে এ আগাছা শুকিয়ে গেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হবে। আবার বর্ষায় পোড়া ছাই মাটির সাথে মিশে গেলে বোপন করা হবে বীজ। প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা এমন পরিশ্রমী মানুষগুলোর হাস্যজ্জলতা সারল্য আতিথ্য দেখে অবাক না হওয়ার কথা নয়। তবে সরলতার সুযোগ নিয়ে কুটিল মানুষের স্বার্থ উদ্ধারের ঘটনাও পাহাড়ের পরতে পরতে। গল্পে ফিরে আসি। আমরা আটজন পাহাড়ের পথে হাঁটতে হাঁটতে সত্যিই পৌছে গেলাম জনমানবশূন্য এক অদ্ভুত সুন্দর জায়গায়। ঝিরি পথের বাঁকে হাজারো পাথরের স্তুপ আর চারপাশে পাহাড়ের উঁচু সবুজ দেয়াল, রংবেরংয়ের বাহারি গাছ, প্রজাপতি ঘাসফড়িং, মাকরসাহ সহ নানান ধরনের প্রাণের সন্ধান পেলাম সেখানে। মাঝে আঁকা-বাঁকা পথ এগিয়ে গেছে কোনো এক পাহাড়েরই দিকেই। কিছু দূর এগুতেই দেখলাম বিশাল এক রাজ প্রাসাদের গেট। দুই পাহাড়ের মাঝে ঝিরিপথ বয়ে যাওয়া ফাঁকা জায়গাটি এমনই এক অদ্ভুত গেটের আকার ধারন করেছে। যা হলিউডের সিনেমা কিংবা কল্পনাতেই দেখা হয়েছে এর আগে। অবশ্য এমন সৌন্দর্যের বর্ণনা বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না, তাই ছবি দেখেই বুঝে নেয়ার অনুরোধ থাকল। সন্ধা প্রায় ঘনিয়ে, আমাদের আশ্রয় নিতে হবে সমতল কোনো জায়গায়। উপায় না দেখে পাথরের খাড়া পাহাড়টাকেই পাড়ি দিতে হবে সবার। সামান্য এদিক ওদিক পা পরলেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও টিকে থাকার যুদ্ধে ক্যাম্পাররা একে একে পাড়ি দিল বিশাল এ পাহাড়। রাত ঘনিয়ে আসলো, তাই পাহাড় ঝিরি পথ আর পাথরের রাজ্যে রাত্রিযাপন করলাম। পরদিন সকালে আবারো যাত্রা। এবারে উদ্দেশ্য সামনের পথ ধরে জনবসতির সন্ধান। টানা তিন সাড়ে তিন ঘণ্টা হাঁটার পর দূর থেকে দুই জন পাহাড়ির দেখা মিলল। তবে পাহাড়ের অনেক ভেতর থেকে আমাদের দলবেধে এগিয়ে আসতে দেখে অনেকটা ভয়েই পালিয়ে গেল তারা। অবশেষে তাদের পালিয়ে যাওয়ার পথ ধরেই ফিরলাম লোকবসতিতে। খানিক জিরিয়ে আবারো যাত্রা। ফেরার পথে সন্ধান মিলল ঝিরিপথের বাঁকে পাহাড়ি গুহার। এবারের পথটা একেবারেই অন্যরকম, শেওলা ঢাকা স্যাঁত স্যাঁতে সবুজ অরণ্য তার মাঝে ঝিরিপথের বাঁক কোথাও হাঁটু পানি কোথাও কোমর আবার কথাও গলা পানি। আমাদের চেষ্টা ছিল পাহাড়ের দুইপাশে জঙ্গলের সরু পথ বেয়ে লক্ষে পৌঁছানো। পথে একজন ক্যাম্পার হাঁপিয়ে ওঠায় তাকে রেখেই এগিয়ে গেলাম সবাই। এগুতে এগুতে মিলল গুহার দরজা। গুটগুটে অন্ধকারে সরু পথ বেয়ে আস্তে আস্তে গুহার ভেতর ঢুকলাম আমরা। কিন্তু গুহার পথ এতোটাই সরু আর সংকীর্ণ ছিল যে বাধ্য হয়েই মাঝ পথ থেকে ফিরে আসতে হলো আমি সহ আরেকজন ক্যাম্পারকে। অন্যরা সেই সরু পথে হামাগুড়ি দিয়েই গুহার অপর প্রান্ত দিয়ে বেড়িয়ে এলো। তাদের হাতে থাকা ক্যামেরায় এসময় দেখা মিলল জানা অজানা নানান প্রাণের চিত্র। প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা এসব প্রান যেমন নিরাপদ, আবার প্রকৃতির প্রয়োজনে একটি আরেকটির ওপর নির্ভর করেই জীবিকা নির্বাহ করে। যাকে আমরা বাস্তুসংস্থান বলেই জানি। আর এ বাস্তুসংস্থানের শেকল যখন নষ্ট হতে থাকে তখনই দেখা দেয় পরিবেশ বিপর্যয়, প্রয়োজন হয় আন্দলন আর পরিবেশ বাঁচাও স্লোগানের। বান্দরবান রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। এরপরের পথ-পরিক্রমা, মানচিত্র হয়তো বলা সম্ভব। আর এতে দু চারজন পর্যটক উৎসাহিত হলেই একদিন গড়ে উঠবে পর্যটন শিল্প। সেই সাথে উন্নত হবে রাস্তা-ঘাট, ধংস হবে পাহাড়-ঝিরিপথ, গড়ে উঠবে হোটেল-আবাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য এক কথায় নগর-সভ্যতা। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সভ্যতা অনুস্বীকার্য কিন্তু সমগ্র পৃথিবীকে বাঁচাতে প্রয়োজন বাস্তুসংস্থান বা প্রাকৃতির ভারসাম্য। আর এ ভারসাম্য রক্ষা কেবল প্রকৃতিরই কাজ।তাই নিজেদের প্রয়োজনেই সভ্যতার বাইরে প্রকৃতিকে বেঁড়ে ওঠার সুযোগ দেয়া জরুরি অসভ্য হয়ে । ছবি: শেখ রাজিব, নেচার ফটোগ্রাফার ও ক্যাম্পার জঙ্গলবাড়ি
ছি, দেখেছি সব কিছু মেনে নিয়ে নগর সভ্যতার জয়গান গাইতে। ফলে বিষয়টিকে কোনোভাবেই আয়ত্ব করতে পারিনি। তবে প্রশ্ন জাগে ক্লাইমেট চেঞ্জ, ওজন স্তরের পরিবর্তন, জীববৈচিত্রের উন্নয়ন নিয়ে প্রাশ্চাত্যের সভ্য মানুষগুলোর কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখে। সে যাই হোক প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ যে অন্তরে এক অদ্ভুত পরিতৃপ্তি যোগায় তা জানি। আর এ পরিতৃপ্তি থেকেই হয়তো এক সময় প্রাণ-প্রকৃতির সাথে আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠবে। প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন দিক থাকতে পারে, তবে প্রকৃতিতে মিশে গিয়ে প্রকৃতির মাঝ থেকেই শিক্ষা নিয়ে তালে তাল মিলিয়ে চলতে শেখায় নেচার ক্যাম্প। সম্প্রতি এমনই একটি ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা লেখায় আলোচনা করতে চাই। পাহাড় আর ঝিরি পথের দেশ বান্দরবানেই গিয়েছিলাম নেচার ক্যাম্পে। যাত্রা শুরু পয়লা ফাল্গুন, উদ্দেশ্য প্রকৃতির পথ বেয়ে পাহাড়ের অনেক গভীরে পৌঁছানো, যেখানে সচরাচর মানুষের আনাগোনা নেই, নেই নগর সভ্যতার কোন ছোয়া। প্রকৃতি যেখানে নিজেই নিজের পরিচর্যার ভার নিজেই নিয়েছে, বেড়ে উঠছে আপন মনে, আপন আনন্দে। তবে আসলেই কি এমন কোন জায়গা আছে? উত্তর আমাদেরও অজানা। বসন্তের শুরুতে প্রকৃতির মতো পাহাড়ও অন্যরকম ভাবেই সাঁজে। পাহাড়ের উঁচু নিচু পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রথমেই আপনার চোখে পড়বে রংবেরংয়ের পাতা। শীত শেষে গাছের কঁচিপাতার এমন দৃশ্য আপনাকে মনোনিবেশ করতে বাধ্য করবে কি না জানিনা, তবে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে লাল হলুদ-বাদামি-খয়রি রংয়ের প্রকৃতির ছবি আপনাকে সজিব করে তুলবে এটা নিশ্চিত। আবার পথ চলার পথে মর্মর ধ্বনি শোনা একটি স্বাভাবিক ছন্দ মনে হতে পারে। কারণ এসময় পুরো পাহাড়টাই ঢাকা থাকে শুকনো পাতার চাদরে। তবে এজন্যই বাড়তি সতর্কতার বিষয়টিও জানা থাকা দরকার। সামান্য দেয়াশলাইর কাঠি পুরো পাহাড়কে জ্বালিয়ে দিতে পারে এক নিমেষে। পথ চলতে চলতে পুড়ে ছাই এমন পাহাড়ও আমাদের চোখে পড়ল। চোখে পড়ল নাম না জানা হাজারো পাহাড়ি বনফুল, আর নগর সভ্যতা থেকে হারিয়ে যাওয়া পলাশ শিমুল কাঠালচাঁপাও। বসন্তে পাখির কলতান হয়তো নতুন কিছু নয় তবে ঝিরি পথের বাঁকে করা আমাদের ক্যাম্পে পুরো রাত নানান পাখির গানে মুখরিত থাকার বিষয়টি অদ্ভুত অনুভূতি যুগিয়েছে। রাতে অবস্থানের জন্য ক্যাম্প করতে আপনাকে কয়কটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমেই আপনি যেই জায়গায় অবস্থান করবেন তার আসে পাশে পানি থাকাটা জরুরি। সারারাত অবস্থানের জন্য যথেষ্ঠ পরিমাণ জ্বালানি আর খাবারের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। একইসাথে মনে রাখতে হবে আপনার অবস্থানের জন্য প্রকৃতির কোনো প্রকার ক্ষতি সাধন যেন না হয়। বিশেষ করে আপনার সাথে বহন করা পানির বোতল, পলিথিন, প্লাস্টিক কোনোভাবেই যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। রাত যাপনের পর আপনার আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলা উত্তম। ক্যাম্পের জন্য সমতল জায়গা নির্বাচন জরুরী তবে পরিস্থীতির ওপর নির্ভর করে পাহাড়ের ওপরও রাত্রি যাপন হতে পারে। বান্দরবানে আমাদের তৃতীয় দিনের ক্যাম্পের অবস্থান ছিল পাহাড়ের ওপরে যেখান থেকে ঝিরি পথ কয়েকশ ফিট নিচে। সেখানে অবস্থান কালে খাবার সহ নানা প্রয়োজনে পানির ব্যবস্থা করতে আমাদের কষ্ট পোহাতে হয়। তবে পাহাড়িদের জীবন বৈচিত্রের কথা ভাবলে এমন কষ্ট কিছুই মনে হবে না। ঝিরি পথ থেকে পানি সংগ্রহ করতে পাহাড়িদের মাইলের পর মাইল হাঁটা নতুন কিছু নয়। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে এ মানুষগুলোর সংগ্রাম আপনাকে অনুপ্রাণিত না করলেও ভাবাবে। এক থেকে দুইজন পাহাড়ি দিনরাত পরিশ্রম করে বিশাল পাহাড়কে জুম চাষের জন্য উপযোগী করে তোলার বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে। বসন্তের এমন সময় পাহাড়ের ঝোপঝাড় আর আগাছা পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত পাহাড়িরা। কিছুদিনের মধ্যে এ আগাছা শুকিয়ে গেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হবে। আবার বর্ষায় পোড়া ছাই মাটির সাথে মিশে গেলে বোপন করা হবে বীজ। প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা এমন পরিশ্রমী মানুষগুলোর হাস্যজ্জলতা সারল্য আতিথ্য দেখে অবাক না হওয়ার কথা নয়। তবে সরলতার সুযোগ নিয়ে কুটিল মানুষের স্বার্থ উদ্ধারের ঘটনাও পাহাড়ের পরতে পরতে। গল্পে ফিরে আসি। আমরা আটজন পাহাড়ের পথে হাঁটতে হাঁটতে সত্যিই পৌছে গেলাম জনমানবশূন্য এক অদ্ভুত সুন্দর জায়গায়। ঝিরি পথের বাঁকে হাজারো পাথরের স্তুপ আর চারপাশে পাহাড়ের উঁচু সবুজ দেয়াল, রংবেরংয়ের বাহারি গাছ, প্রজাপতি ঘাসফড়িং, মাকরসাহ সহ নানান ধরনের প্রাণের সন্ধান পেলাম সেখানে। মাঝে আঁকা-বাঁকা পথ এগিয়ে গেছে কোনো এক পাহাড়েরই দিকেই। কিছু দূর এগুতেই দেখলাম বিশাল এক রাজ প্রাসাদের গেট। দুই পাহাড়ের মাঝে ঝিরিপথ বয়ে যাওয়া ফাঁকা জায়গাটি এমনই এক অদ্ভুত গেটের আকার ধারন করেছে। যা হলিউডের সিনেমা কিংবা কল্পনাতেই দেখা হয়েছে এর আগে। অবশ্য এমন সৌন্দর্যের বর্ণনা বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না, তাই ছবি দেখেই বুঝে নেয়ার অনুরোধ থাকল। সন্ধা প্রায় ঘনিয়ে, আমাদের আশ্রয় নিতে হবে সমতল কোনো জায়গায়। উপায় না দেখে পাথরের খাড়া পাহাড়টাকেই পাড়ি দিতে হবে সবার। সামান্য এদিক ওদিক পা পরলেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও টিকে থাকার যুদ্ধে ক্যাম্পাররা একে একে পাড়ি দিল বিশাল এ পাহাড়। রাত ঘনিয়ে আসলো, তাই পাহাড় ঝিরি পথ আর পাথরের রাজ্যে রাত্রিযাপন করলাম। পরদিন সকালে আবারো যাত্রা। এবারে উদ্দেশ্য সামনের পথ ধরে জনবসতির সন্ধান। টানা তিন সাড়ে তিন ঘণ্টা হাঁটার পর দূর থেকে দুই জন পাহাড়ির দেখা মিলল। তবে পাহাড়ের অনেক ভেতর থেকে আমাদের দলবেধে এগিয়ে আসতে দেখে অনেকটা ভয়েই পালিয়ে গেল তারা। অবশেষে তাদের পালিয়ে যাওয়ার পথ ধরেই ফিরলাম লোকবসতিতে। খানিক জিরিয়ে আবারো যাত্রা। ফেরার পথে সন্ধান মিলল ঝিরিপথের বাঁকে পাহাড়ি গুহার। এবারের পথটা একেবারেই অন্যরকম, শেওলা ঢাকা স্যাঁত স্যাঁতে সবুজ অরণ্য তার মাঝে ঝিরিপথের বাঁক কোথাও হাঁটু পানি কোথাও কোমর আবার কথাও গলা পানি। আমাদের চেষ্টা ছিল পাহাড়ের দুইপাশে জঙ্গলের সরু পথ বেয়ে লক্ষে পৌঁছানো। পথে একজন ক্যাম্পার হাঁপিয়ে ওঠায় তাকে রেখেই এগিয়ে গেলাম সবাই। এগুতে এগুতে মিলল গুহার দরজা। গুটগুটে অন্ধকারে সরু পথ বেয়ে আস্তে আস্তে গুহার ভেতর ঢুকলাম আমরা। কিন্তু গুহার পথ এতোটাই সরু আর সংকীর্ণ ছিল যে বাধ্য হয়েই মাঝ পথ থেকে ফিরে আসতে হলো আমি সহ আরেকজন ক্যাম্পারকে। অন্যরা সেই সরু পথে হামাগুড়ি দিয়েই গুহার অপর প্রান্ত দিয়ে বেড়িয়ে এলো। তাদের হাতে থাকা ক্যামেরায় এসময় দেখা মিলল জানা অজানা নানান প্রাণের চিত্র। প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা এসব প্রান যেমন নিরাপদ, আবার প্রকৃতির প্রয়োজনে একটি আরেকটির ওপর নির্ভর করেই জীবিকা নির্বাহ করে। যাকে আমরা বাস্তুসংস্থান বলেই জানি। আর এ বাস্তুসংস্থানের শেকল যখন নষ্ট হতে থাকে তখনই দেখা দেয় পরিবেশ বিপর্যয়, প্রয়োজন হয় আন্দলন আর পরিবেশ বাঁচাও স্লোগানের। বান্দরবান রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। এরপরের পথ-পরিক্রমা, মানচিত্র হয়তো বলা সম্ভব। আর এতে দু চারজন পর্যটক উৎসাহিত হলেই একদিন গড়ে উঠবে পর্যটন শিল্প। সেই সাথে উন্নত হবে রাস্তা-ঘাট, ধংস হবে পাহাড়-ঝিরিপথ, গড়ে উঠবে হোটেল-আবাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য এক কথায় নগর-সভ্যতা। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সভ্যতা অনুস্বীকার্য কিন্তু সমগ্র পৃথিবীকে বাঁচাতে প্রয়োজন বাস্তুসংস্থান বা প্রাকৃতির ভারসাম্য। আর এ ভারসাম্য রক্ষা কেবল প্রকৃতিরই কাজ।তাই নিজেদের প্রয়োজনেই সভ্যতার বাইরে প্রকৃতিকে বেঁড়ে ওঠার সুযোগ দেয়া জরুরি অসভ্য হয়ে । ছবি: শেখ রাজিব, নেচার ফটোগ্রাফার ও ক্যাম্পার জঙ্গলবাড়ি
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment