Sunday, January 18, 2015

খালেদার অবরুদ্ধ অবস্থা তৃতীয় সপ্তাহে গড়াল:RTNN

খালেদার অবরুদ্ধ অবস্থা তৃতীয় সপ্তাহে গড়াল নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবরুদ্ধ অবস্থা তৃতীয় সপ্তাহে গড়াল। গত ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ আছেন তিনি। ফলে আজ তার অবরুদ্ধ অবস্থার ১৫তম দিন। এই প্রথম খালেদা জিয়াকে ১৫ দিন ধরে অবরুদ্ধ রাখা হলো, যিনি তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং দুইবার সংসদের বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশে দুটি  বড়
দলের একটি নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিন দশকের বেশি সময় ধরে। এর আগে গত বছরের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের প্রাক্কালে ২৯ ডিসেম্বরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র আগে খালেদা জিয়াকে তার বাসভবনে অবরুদ্ধ রাখা হয় এবং নির্বাচনের পরে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পান তিনি। খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার সমালোচনা করছেন দেশের রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ চলছে। একই দাবি বিভিন্ন জেলা ও বিভাগে হরতাল পালিত হচ্ছে। খালেদা জিয়ার অবরুদ্ধ অবস্থা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ অনেকে বলেছেন, সরকার যতদিন প্রয়োজন মনে করবে ততদিন তাকে অবরুদ্ধ রাখা হবে। আবার  কয়েকজন মন্ত্রী এবং সরকারি দলের কয়েক নেতা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ নন, চাইলেই বাসায় যেতে পারেন। তবে শনিবার রাতে আবার খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের গেটে তালা দেয়া হয়েছে।  সূত্র জানায়, ৩ জানুয়ারি রাতে পুলিশ এই কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেয়। একই সঙ্গে কার্যালয়ের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন এবং রাস্তায় ইট, বালু ও মাটিভর্তি ১১টি ট্রাক দিয়ে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৫ জানুয়ারি বের হওয়ার চেষ্টা করলে পেপার স্প্রে ছোড়ে পুলিশ। এর পর থেকে তিনি কার্যালয়েই আছেন। এর আগে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে যেকোনো মূল্যে রাজধানীতে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। একই দিন আওয়ামী লীগও সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে পুলিশ রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, খালেদা জিয়া যাতে কোনো সভা-সমাবেশে যোগ দিতে না পারেন, সে জন্য তাকে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এরপর সেখানে নেতা-কর্মীদের যাতায়াতেও পুলিশ কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। গত ১৫ দিনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। আবার অনেকে যেতে না পেরে ফটক থেকে ফিরে গেছেন। এ সময় দুদফায় কার্যালয়ের সামনে থেকে ইট-বালু ও মাটির ট্রাক রাখা ও সরিয়ে নেওয়া হলেও একটি জলকামান ও দুটি প্রিজন ভ্যান দিয়ে এখনো রাস্তা আটকানো আছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িটির সামনে ও ডান পাশে দুটি ফটক আছে। দুই ফটকের সামনে ও রাস্তায় পুলিশের কয়েক ডজন নারী ও পুরুষ সদস্য এখনো পাহারায় আছেন। বিএনপির নেতাদের দাবি, ৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে আটটায় খালেদা জিয়া গুলশানের কার্যালয়ে আসেন। এর মধ্যে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত দলের নেতা রুহুল কবির রিজভী অসুস্থ  হয়ে পড়েন। তাকে দেখতে খালেদা জিয়া নয়াপল্টনে যেতে চেয়েছিলেন। এরই মধ্যে রাত নয়টার দিকে পুলিশ গিয়ে তার কার্যালয় ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। রাত ১১টার দিকে খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের হতে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তার মাধ্যমে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খালেদা জিয়াকে বাসা পর্যন্ত যেতে দেওয়া হবে। এ সময় তার গাড়ির সামনে-পেছনে পুলিশের দুটি করে চারটি গাড়ি থাকবে। এটা জেনে তিনি আর বের হওয়ার চেষ্টা করেননি। এরপর ৫ জানুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে যে পেপার স্প্রে ছোড়ে, তাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াসহ প্রায় ৫০ জন ওই কার্যালয়ে আছেন। এদের মধ্যে আছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা, দলের নেতা বিলকিস জাহান, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুবুল আলম ডিউ, মিডিয়া উইংয়ের দুই সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দীন দিদার, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সমন্বয়ক আবদুল মজিদসহ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দলের ৩৫ জন সদস্য। এছাড়া খালেদা জিয়ার বাসার গৃহকর্মী কুলসুমসহ কার্যালয়ের কর্মচারীরাও আছেন। কার্যালয় সূত্র জানায়, ৩ জানুয়ারি অবরুদ্ধ হওয়ার রাতে খালেদা জিয়ার জন্য তার বাসা থেকে একটি খাট ও ম্যাট্রেস আনা হয়। এ ছাড়া ওই কার্যালয়ে শীতবস্ত্র হিসেবে বিতরণের জন্য থাকা কম্বল বিছিয়ে নিরাপত্তা দলের সদস্যসহ অন্যরা ঘুমাচ্ছেন। কার্যালয় সূত্র জানায়, এ কার্যালয়ে চা ছাড়া আর কোনো রান্নাবান্না হয় না। অবরুদ্ধ হওয়ার প্রথম দিন খালেদা জিয়ার জন্য গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেল থেকে খাবার আনা হয়। এর পরদিন থেকে খালেদা জিয়ার খাবারসহ প্রতিদিন আরও ১০-১৫ জনের খাবার রান্না করে পাঠান তারেক রহমানের স্ত্রীর বড় বোন শাহীনা খান। অন্যদের খাবার-দাবার সরবরাহ করছেন দলের নেতারা। মন্তব্য      


No comments:

Post a Comment