ত পানি শেষ হয়ে গেছে। আমার ভূগর্ভ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে আর আমার ভূপৃষ্ঠের মাটি, বাতাস, বৃক্ষলতা, তরুরাজি, অট্টালিকা-হর্মরাজি সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এসব কারণে আমার বুকে বসবাসরত তোমার বান্দা-বান্দীরা নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাদের দেহ-মনে শুধু খাউজানি আর খাউজানি। তারা কথায় কথায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে আর আজরাইলের মতো চোখ দুইটারে গোল গোল করে যারে তারে খামচি দিতে যায়। তারপর একসময় নিজের শরীর খামচাতে খামচাতে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। তাই ইদানীং আমার খুব ভয় হচ্ছে, হয়তো যে কোনো সময় মরে যেতে পারি। এ কারণেই তোমার কাছে মাফ চেয়ে নিলাম। হে আল্লাহ তুমি আমাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করিও। হে দয়াময়, আমি তোমার প্রতি যারপরনাই কৃতজ্ঞ। তুমি আমার ভূমিকে সর্বোত্তম উর্বরতা দিয়ে সৃষ্টি করেছ। আমার বুকে প্রবহমান বাতাসকে করেছ নাতিশীতোষ্ণ। আমার চারদিকে চারটি চমৎকার প্রবহমান নদীর সুমিষ্ট ধারা প্রবাহিত করেছিলে। সেই নদীর সঙ্গে অসংখ্য প্রবহমান খাল দ্বারা আমার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছিলে। পৃথিবীর অন্য কোনো নগর বা মহানগরকে তুমি এত সুযোগ-সুবিধা দাওনি। অন্যদিকে, যে মহান ব্যক্তিটি আমার বুকে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সেই সুবেদার ইসলাম খানের জন্য তোমার দরবারে দোয়া প্রার্থনা করছি। তিনি সঠিক কাজটিই করেছিলেন। অর্থাৎ সুবেদার বাংলার সর্বোত্তম স্থানে প্রথমবারের মতো রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক মতো ছিল। পাকিস্তান আমলে শুরু হয় আমার বুকে দাপাদাপি। স্বাধীন বাংলাদেশে আমাকে নির্মমভাবে ক্ষতবিক্ষত করতে করতে ১৫-১৬ বছর ধরে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। আমি জানি না আমার মৃত্যু কীভাবে হবে, হয়তো ভূমিকম্পে অথবা ভূমিধসে। কারণ আমার হৃদয়ের সব পানি নিংড়ে বের করে আনা হয়েছে। আমার ভূগর্ভের গঠন প্রণালিতে মারাত্দক সমস্যা দেখা দিয়েছে, আমি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছি না। হে আমার জমিনের মালিক, তুমি আমাকে তোমার রহমত এবং বরকতের চাদর দ্বারা ঢেকে রাখ। নচেৎ আমি হয়তো পাগল হয়ে যাব। আমার বুকে তোমার বান্দা-বান্দীরা যেভাবে দর্প করে বেড়ায়, সকালে-বিকালে যেভাবে মিথ্যাচার করে, একজন অন্যজনকে ঠকায়, সবল দুর্বলের ওপর অত্যাচার করে, ধনীরা ধনলিপ্সায় নিকৃষ্ট প্রাণীদের মতো আচরণ করে এবং সর্বোপরি তোমার নাফরমানি, তাতে পাগল না হয়ে কী করব। প্রতিদিনের সামাজিক জীবনে যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন অনাচার আর ব্যভিচার। মানুষজন অন্যায় ও অপকর্ম করার জন্য সারা দিন ফন্দি-ফিকির করে। ফলে আমার আকাশ-বাতাস অভিশাপের মর্ম বেদনায় দিন-রাত কান্নাকাটি করে। আজ আমি তোমার সাহায্য চাইব কতিপয় সমস্যা সমাধানের বিষয়ে। হে আল্লাহ, তুমি আমার বাসিন্দাদের ফেসবুকের যন্ত্রণা থেকে বাঁচাও। এই মহানগরীতে সাম্প্রতিককালে ফেসবুক নামক জিনিসটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্লাস ফাইভে পড়া বালক-বালিকা থেকে শুরু করে মৃত্যুপথযাত্রী ৯০-৯৫ বছরের বুড়াবুড়ি পর্যন্ত আজ ফেসবুক জ্বরে আক্রান্ত। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেম করে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয় আবার তালাকও দিয়ে দেয়। তারা অহরহ পরকীয়া এবং অসম প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। ১৫-১৬ বছরের কিশোরী অনায়াসে ৭০-৭৫ বছরের বুড়ার গলা জড়িয়ে ধরে প্রেম নিবেদন শুরু করেছে। অন্যদিকে ২০-২২ বছরের ছোকড়া তার নানী বা দাদির বয়সী বৃদ্ধার গলায় প্রেমের মালা পরানোর জন্য দিওয়ানা হয়ে পড়েছে। বিবাহিত পুরুষ তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যার ভালোবাসা ভুলে অন্য বিবাহিতা নারীর সংসার ভাঙছে। আবার বিবাহিতা মহিলারাও সমান তালে পরকীয়ার টানে উন্মত্ত হয়ে বিবাহিত পুরুষদের ফাঁদে ফেলছে। এসব অপকর্ম করার জন্য বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি অতি সাশ্রয়ী দামে ইন্টারনেট দিচ্ছে। অন্যদিকে খুবই কম দামে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বাহারি মোবাইল সেটও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে মহানগরের বাসিন্দারা সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ফেসবুক নামক প্রেম-পীরিতি আর পরকীয়ার রূপ সাগরে। হে অন্তর্যামী, তুমি ছাড়া আমার কোনো অভিভাবক নেই। তাই সব দুঃখের কথা তোমাকেই জানাচ্ছি। সম্প্রতি আমি অতিকষ্টে বাংলালিংকের থ্রি-জি কানেকশনসহ একটি আইফোন ৬ মোবাইল জোগাড় করেছি। ফলে আমি এখন নিজে ফেসবুক চালাই এবং দেশের অন্যান্য নগর-মহানগরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। রাজধানী হওয়ার কারণে সবাই আমাকে মুরব্বি হিসেবে মান্য করে। তারা তাদের দুরবস্থার কথা আমাকে জানায়। অবস্থা বেশি খারাপ হলে তারা স্কাইপের মাধ্যমে আমাকে সব কিছুর সচিত্র প্রতিবেদন দেখায়। মাঝে-মধ্যে বেশ কিছু গোপন কথাবার্তা বলে। তখন তারা ভাইবার বা ট্যাংগোর মাধ্যমে কথা বলে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ভ্রাতঃবৃন্দ! গোপন কথা হলেই তোমরা মোবাইলে ফোন করে ভাইবার, ট্যাংগো কিংবা স্কাইপেতে কল কর কেন? তারা অভিযোগের সুরে বলল, মুরব্বি! আর বলবেন না। ইদানীং সব কিছু রেকর্ড হয়। সব জায়গায় টিকটিকি ওত পেতে থাকে। তাই ওসব ব্যবহার করি কারণ ওগুলোতে আড়িপাতার প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। আমি একদিন ফেসবুকের ভয়াবহতা নিয়ে দেশের অন্যান্য নগর-মহানগর এবং বন্দরের সঙ্গে একযোগে ভিডিও কনফারেন্স করলাম। সবাই ফেসবুক সম্পর্কে এমনসব বেলেল্লাপনার অভিযোগ করল, যা শুনে লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে উঠল। লজ্জায় আমি তাদের বলতেই পারলাম না যে, তোমাদের ওখানে যেসব অনাচার হয় তা ঢাকার তুলনায় একেবারেই নস্যি। আমার লজ্জা লাগল এ কারণে যে, যৌবনকালে আমি বড়ই রূপসী এবং ঢঙি ছিলাম। এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ এবং রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অতিশয় কুৎসিত হয়ে পড়েছি। ফলে প্রেম-পীরিতির বেলেল্লাপনার কথা যদি বলি তবে অন্যরা বলবে দেখ বুড়ির ঢং দেখ! মরতে বসেছে কিন্তু রং কমেনি। ওসব কথা ওদের না বললেও তোমাকে বলছি। কারণ তুমি ছাড়া কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না। ফেসবুকের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বয়স্ক এবং বিবাহিতরা রাত-বিরাতে পার্কে চলে আসে। তারা প্রাথমিক হাতাহাতির কাজটি সেখানেই সেরে নেয়। পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য কোনো হোটেল, বাগানবাড়ি, বন্ধুর বাড়ি কিংবা সুযোগমতো নিজেদের বাড়িকেই বেছে নেয়। তারা জীবনের গোপনীয় কর্ম এবং শরীরের গোপন বিষয় নিয়ে খুবই অশ্লীল এবং বাজে কথা বলে। তারা জড়াজড়ি করে ছবি তোলে এবং একজন অন্যজনের ইনবক্সে পাঠায়। তারা নিজেদের স্বামী বা স্ত্রীর বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ তৈরি করে পরস্পরকে শোনায় এবং ফন্দি আটঁতে থাকে কী করে আপন আপন সংসারে আগুন লাগিয়ে নতুন সংসার গড়া যায়। তাদের এই পাপ কর্ম অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনার জন্ম দেয়। প্রতিটি সংসারে মারামারি, কাটাকাটি, অশান্তি, বিবাহবিচ্ছেদ থেকে খুন-খারাবি পর্যন্ত ঘটে যায়। পরিবারের ছোট্ট সোনামণিরা এবং বৃদ্ধ পিতা-মাতারা আমার মতো অসহায় হয়ে তোমার কাছে ফরিয়াদ জানাতে থাকে। ফেসবুকের সবচেয়ে মারাত্নক ধ্বংসাত্নক দিক হচ্ছে তারা আমার কোমলমতি একটি প্রজন্মকে ভবিষ্যতের জন্য শেষ করে দিচ্ছে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে সারা দিন-রাত ফেসবুকের মধ্যে ডুবে থাকে। তারা প্রেম-ভালোবাসার টানে কখনো সমবয়সীদের সঙ্গে অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আবার কখনো বা ওসব প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে নিজে শেষ হয় এবং পুরো পরিবার, দেশ ও জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। এ কারণে কত পরিবার যে পুড়ছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। হে আমার মালিক, ফেসবুক সম্পর্কে সর্বশেষ নোংরামির কথা বলে অন্য ২-১টা দুঃখের প্রসঙ্গে চলে যাব। বাংলাদেশে কোনো দিন সমকামীদের দৌরাত্ম্য ছিল না। সমকামী নারী বা পুরুষের কথা আমি আমার ৪০০ বছরের ইতিহাসে শুনিনি। মাঝে-মধ্যে ২-১টা চরিত্রহীন পুরুষের কথা কানে আসত, যারা অল্প বয়সী বালকদের কাছে পেলে অশালীন আচরণের চেষ্টা চালাত। কিন্তু সম্প্রতি ফেসবুকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমকামীরা সবাই একত্রিত হয়েছে। আমি শুনলাম, ওরা নাকি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেবে যে, ওরা জঘন্য হারামিপনা করে, এ কাজে তাদের কোনো লজ্জা নেই এবং ওরা ওদের হারামিপনার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করে। আমি জানি, লুত নবীর আমলে জমিনে সমকামিতা মহামারী আকার ধারণ করেছিল। তুমি ক্রোধান্বিত হয়ে তোমার ফেরেশতা পাঠিয়ে পুরো জমিনটি উল্টিয়ে দিয়েছিলে। সেই উল্টানো জমির ধ্বংসাবশেষের ওপরই নাকি বর্তমান জমানার ডেড সি অবস্থিত। আমার আল্লাগো, আমার রব গো, তুমি ক্রোধান্বিত হয়ে আমারে উল্টিয়ে দিও না। হে ন্যায়বিচারক, এবার আমি ফরিয়াদ জানাই আমার জমিনে দর্প করে বেড়ানো কতিপয় বদ খাছলতের জুলুমবাজ সম্পর্কে। এরা আমার দরিদ্র রিকশাওয়ালাকে সকাল-বিকাল মারধর করে। পান থেকে চুন খসলে আজরাইলের মতো হাজির হয়, অন্যদিকে তাদের চেয়ে বড় জাহেলরা যখন ভেঁপু বাজিয়ে উল্টাপথে চলে তখন একদম মেনি বিলাই হয়ে যায়। এরা শক্তের ভক্ত নরমের যম। এরা মিথ্যা মামলা দিয়ে অসহায় এবং দুর্বলদের নাস্তানাবুদ এবং বিপর্যস্ত করে। অন্যদিকে প্রভাবশালীদের পদ লেহনের জন্য জিহ্বা বের করে রাখে। এদের কারণে অন্যায়-অপরাধ জ্যামিতিক হারে বাড়ছে, মানুষের নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সাহস, শক্তি, উৎপাদনশীলতা, সৃজনশীলতা কমে যাচ্ছে। দিন দিন মানুষের মধ্যে আদিম বন্যতা বাড়ছে। কাজেই আমার মৃত্যুর আগে তুমি ওসব জাহেলের মৃত্যু দাও। হে আল্লাহ, আমার বুকে চলাচলকারী পাবলিক বাস এবং রাজনীতিবিদদের নিয়ে ইদানীংকালে আমি অতীব মসিবতের মধ্যে আছি। বাসগুলোর সামনের অংশের চেয়ে পাছাটি বড়ই ভয়ঙ্কর। তারা চলাচলের সময় প্রায়ই পাছা বাঁকা করে চলে। আজ পর্যন্ত কোনো রাজা-মহারাজা কিংবা সেনাপতি আমার পাবলিক বাসের পাছা সোজা করতে পারেনি। এদের পাছার রং, আকৃতি এবং কার্যক্রম দেখলে যে কোনো সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। পাছায় কোনো লাইট নেই এবং সর্বদা লোকজনকে বিরক্ত করার জন্য সেখান থেকে ঢক ঢক করে কালো ধোঁয়া বের করে বাসগুলো এক ধরনের পৈশাচিক আনন্দ লাভ করে। তাদের মারামারি করার ঢং ও আলাদা- পাছা দিয়ে মারামারি করে। নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী কাউকে আঘাত করার জন্য তারা পাছা দিয়ে গুঁতো দিয়ে প্রতিপক্ষের নাকসা ফাটিয়ে দেয়। এদের অত্যাচারে নগরবাসী যেমন নাকাল হতে বসেছে তেমনি আমিও মরতে বসেছি। তাদের ইঞ্জিন নড়বড়ে, বডি ভাঙাচোরা, চালকরা অদক্ষ এবং মালিকরা নির্মম প্রকৃতির। এদের চলাচলের শব্দে জমিন থর থর করে কাঁপে। আশপাশের বাড়িঘরের ভিত্তি নড়ে ওঠে। গাছপালা মরে যায়, পশুপাখি ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যায় এবং মানুষের নাক, কান ও চোখের বারোটা বাজে। পাবলিক বাসের ধোঁয়ার কারণে কিনা জানি না, আমার বুকের ওপর চলাচলকারী রাজনীতিবিদদের মুখের অবস্থা সাম্প্রতিককালে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাদের অনেকের ঠোঁট এবং শিকারির তীর-ধনুকের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তাদের ভেংচি কাটার দৃশ্য দেখলে আমার অন্তরাত্ত্বা কেঁপে ওঠে। তাদের জিহ্বার কাজকর্ম দেখলে বার বার খন্তা, কোদাল এবং কুড়ালের কথা মনে পড়ে। পরস্পরের প্রতি তাদের হিংস্রতা, নির্মমতা এবং অসৌজন্যতা দেখে আমার বার বার আশরাফুল মাখলুকাত শব্দটির জন্য বড় মায়া হয়। তাদের কারও কারও অপকর্ম, দুর্নীতি এবং মন্দ কাজের বহর দেখে এই মহানগরীর ইবলিশ অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কারণ তার মনে হয়েছে এই জমিনে কোনো শয়তানের দরকার নেই। পরিশেষে মানুষের কিছু প্রাকৃতিক কর্ম নিয়ে ফরিয়াদ জানিয়ে আজকের মোনাজাত শেষ করব। হে আমার আল্লাহ, আমি তো নগরবাসীর বর্জ্যের গন্ধে আর টিকতে পারছি না। তারা যেখানে সেখানে নিজেদের বর্জ্য ফেলছে এবং খোলা জায়গায় মল-মূত্র ত্যাগ করছে। ফলে আমার সর্বাঙ্গ ময়লা-আবর্জনা, পশুপাখি এবং মনুষ্য বিষ্ঠায় দিন দিন কদাকার হয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধে প্রায়ই আমার বমি আসে এবং পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে আসতে চায়। লোকজন সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিলেও আমি কিন্তু পারছি না। আমি আক্রান্ত হতে হতে জরাজীর্ণতার প্রান্তসীমায় পৌঁছে গেছি। আমার ভয় হচ্ছে, কবে না জানি তোমার দরবার থেকে ডাক এসে যায়। তাই এই বুড়া বয়সে তোমার অসীম রহমত ও ক্ষমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করার মাধ্যমে তোমার করুণা প্রার্থনা করছি। আমিন-ছুম্মা আমিন। (সূত্র:bd-protidin) এমকে
Saturday, December 27, 2014
একটি মজলুম মহানগরের গগনবিদারী ফরিয়াদ!:Time News
একটি মজলুম মহানগরের গগনবিদারী ফরিয়াদ! স্টাফ রিপোর্টার টাইম নিউজ বিডি, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১৮:৩৯:৩৪ -গোলাম মাওলা রনি ইয়া আল্লাহ, ইয়া মাবুদ, আমার মালিক, আমার পরোয়ারদিগার। আমার প্রতি দয়া কর, রহম কর আর আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার ভয় হচ্ছে, আমি হয়তো প্রায় দেড় কোটি আদম সন্তান, লাখো কোটি পশুপাখি, কীটপতঙ্গ এবং সীমাহীন সংখ্যক জীবাণুর আক্রমণে যে কোনো সময় মরে যাব। নগরবাসীর চাপে এবং তাপে আমার কলিজার মধ্যে সংরক্ষি
ত পানি শেষ হয়ে গেছে। আমার ভূগর্ভ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে আর আমার ভূপৃষ্ঠের মাটি, বাতাস, বৃক্ষলতা, তরুরাজি, অট্টালিকা-হর্মরাজি সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এসব কারণে আমার বুকে বসবাসরত তোমার বান্দা-বান্দীরা নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাদের দেহ-মনে শুধু খাউজানি আর খাউজানি। তারা কথায় কথায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে আর আজরাইলের মতো চোখ দুইটারে গোল গোল করে যারে তারে খামচি দিতে যায়। তারপর একসময় নিজের শরীর খামচাতে খামচাতে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। তাই ইদানীং আমার খুব ভয় হচ্ছে, হয়তো যে কোনো সময় মরে যেতে পারি। এ কারণেই তোমার কাছে মাফ চেয়ে নিলাম। হে আল্লাহ তুমি আমাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করিও। হে দয়াময়, আমি তোমার প্রতি যারপরনাই কৃতজ্ঞ। তুমি আমার ভূমিকে সর্বোত্তম উর্বরতা দিয়ে সৃষ্টি করেছ। আমার বুকে প্রবহমান বাতাসকে করেছ নাতিশীতোষ্ণ। আমার চারদিকে চারটি চমৎকার প্রবহমান নদীর সুমিষ্ট ধারা প্রবাহিত করেছিলে। সেই নদীর সঙ্গে অসংখ্য প্রবহমান খাল দ্বারা আমার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছিলে। পৃথিবীর অন্য কোনো নগর বা মহানগরকে তুমি এত সুযোগ-সুবিধা দাওনি। অন্যদিকে, যে মহান ব্যক্তিটি আমার বুকে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সেই সুবেদার ইসলাম খানের জন্য তোমার দরবারে দোয়া প্রার্থনা করছি। তিনি সঠিক কাজটিই করেছিলেন। অর্থাৎ সুবেদার বাংলার সর্বোত্তম স্থানে প্রথমবারের মতো রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক মতো ছিল। পাকিস্তান আমলে শুরু হয় আমার বুকে দাপাদাপি। স্বাধীন বাংলাদেশে আমাকে নির্মমভাবে ক্ষতবিক্ষত করতে করতে ১৫-১৬ বছর ধরে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। আমি জানি না আমার মৃত্যু কীভাবে হবে, হয়তো ভূমিকম্পে অথবা ভূমিধসে। কারণ আমার হৃদয়ের সব পানি নিংড়ে বের করে আনা হয়েছে। আমার ভূগর্ভের গঠন প্রণালিতে মারাত্দক সমস্যা দেখা দিয়েছে, আমি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছি না। হে আমার জমিনের মালিক, তুমি আমাকে তোমার রহমত এবং বরকতের চাদর দ্বারা ঢেকে রাখ। নচেৎ আমি হয়তো পাগল হয়ে যাব। আমার বুকে তোমার বান্দা-বান্দীরা যেভাবে দর্প করে বেড়ায়, সকালে-বিকালে যেভাবে মিথ্যাচার করে, একজন অন্যজনকে ঠকায়, সবল দুর্বলের ওপর অত্যাচার করে, ধনীরা ধনলিপ্সায় নিকৃষ্ট প্রাণীদের মতো আচরণ করে এবং সর্বোপরি তোমার নাফরমানি, তাতে পাগল না হয়ে কী করব। প্রতিদিনের সামাজিক জীবনে যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন অনাচার আর ব্যভিচার। মানুষজন অন্যায় ও অপকর্ম করার জন্য সারা দিন ফন্দি-ফিকির করে। ফলে আমার আকাশ-বাতাস অভিশাপের মর্ম বেদনায় দিন-রাত কান্নাকাটি করে। আজ আমি তোমার সাহায্য চাইব কতিপয় সমস্যা সমাধানের বিষয়ে। হে আল্লাহ, তুমি আমার বাসিন্দাদের ফেসবুকের যন্ত্রণা থেকে বাঁচাও। এই মহানগরীতে সাম্প্রতিককালে ফেসবুক নামক জিনিসটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্লাস ফাইভে পড়া বালক-বালিকা থেকে শুরু করে মৃত্যুপথযাত্রী ৯০-৯৫ বছরের বুড়াবুড়ি পর্যন্ত আজ ফেসবুক জ্বরে আক্রান্ত। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেম করে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয় আবার তালাকও দিয়ে দেয়। তারা অহরহ পরকীয়া এবং অসম প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। ১৫-১৬ বছরের কিশোরী অনায়াসে ৭০-৭৫ বছরের বুড়ার গলা জড়িয়ে ধরে প্রেম নিবেদন শুরু করেছে। অন্যদিকে ২০-২২ বছরের ছোকড়া তার নানী বা দাদির বয়সী বৃদ্ধার গলায় প্রেমের মালা পরানোর জন্য দিওয়ানা হয়ে পড়েছে। বিবাহিত পুরুষ তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যার ভালোবাসা ভুলে অন্য বিবাহিতা নারীর সংসার ভাঙছে। আবার বিবাহিতা মহিলারাও সমান তালে পরকীয়ার টানে উন্মত্ত হয়ে বিবাহিত পুরুষদের ফাঁদে ফেলছে। এসব অপকর্ম করার জন্য বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি অতি সাশ্রয়ী দামে ইন্টারনেট দিচ্ছে। অন্যদিকে খুবই কম দামে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বাহারি মোবাইল সেটও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে মহানগরের বাসিন্দারা সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ফেসবুক নামক প্রেম-পীরিতি আর পরকীয়ার রূপ সাগরে। হে অন্তর্যামী, তুমি ছাড়া আমার কোনো অভিভাবক নেই। তাই সব দুঃখের কথা তোমাকেই জানাচ্ছি। সম্প্রতি আমি অতিকষ্টে বাংলালিংকের থ্রি-জি কানেকশনসহ একটি আইফোন ৬ মোবাইল জোগাড় করেছি। ফলে আমি এখন নিজে ফেসবুক চালাই এবং দেশের অন্যান্য নগর-মহানগরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। রাজধানী হওয়ার কারণে সবাই আমাকে মুরব্বি হিসেবে মান্য করে। তারা তাদের দুরবস্থার কথা আমাকে জানায়। অবস্থা বেশি খারাপ হলে তারা স্কাইপের মাধ্যমে আমাকে সব কিছুর সচিত্র প্রতিবেদন দেখায়। মাঝে-মধ্যে বেশ কিছু গোপন কথাবার্তা বলে। তখন তারা ভাইবার বা ট্যাংগোর মাধ্যমে কথা বলে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ভ্রাতঃবৃন্দ! গোপন কথা হলেই তোমরা মোবাইলে ফোন করে ভাইবার, ট্যাংগো কিংবা স্কাইপেতে কল কর কেন? তারা অভিযোগের সুরে বলল, মুরব্বি! আর বলবেন না। ইদানীং সব কিছু রেকর্ড হয়। সব জায়গায় টিকটিকি ওত পেতে থাকে। তাই ওসব ব্যবহার করি কারণ ওগুলোতে আড়িপাতার প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। আমি একদিন ফেসবুকের ভয়াবহতা নিয়ে দেশের অন্যান্য নগর-মহানগর এবং বন্দরের সঙ্গে একযোগে ভিডিও কনফারেন্স করলাম। সবাই ফেসবুক সম্পর্কে এমনসব বেলেল্লাপনার অভিযোগ করল, যা শুনে লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে উঠল। লজ্জায় আমি তাদের বলতেই পারলাম না যে, তোমাদের ওখানে যেসব অনাচার হয় তা ঢাকার তুলনায় একেবারেই নস্যি। আমার লজ্জা লাগল এ কারণে যে, যৌবনকালে আমি বড়ই রূপসী এবং ঢঙি ছিলাম। এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ এবং রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অতিশয় কুৎসিত হয়ে পড়েছি। ফলে প্রেম-পীরিতির বেলেল্লাপনার কথা যদি বলি তবে অন্যরা বলবে দেখ বুড়ির ঢং দেখ! মরতে বসেছে কিন্তু রং কমেনি। ওসব কথা ওদের না বললেও তোমাকে বলছি। কারণ তুমি ছাড়া কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না। ফেসবুকের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বয়স্ক এবং বিবাহিতরা রাত-বিরাতে পার্কে চলে আসে। তারা প্রাথমিক হাতাহাতির কাজটি সেখানেই সেরে নেয়। পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য কোনো হোটেল, বাগানবাড়ি, বন্ধুর বাড়ি কিংবা সুযোগমতো নিজেদের বাড়িকেই বেছে নেয়। তারা জীবনের গোপনীয় কর্ম এবং শরীরের গোপন বিষয় নিয়ে খুবই অশ্লীল এবং বাজে কথা বলে। তারা জড়াজড়ি করে ছবি তোলে এবং একজন অন্যজনের ইনবক্সে পাঠায়। তারা নিজেদের স্বামী বা স্ত্রীর বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ তৈরি করে পরস্পরকে শোনায় এবং ফন্দি আটঁতে থাকে কী করে আপন আপন সংসারে আগুন লাগিয়ে নতুন সংসার গড়া যায়। তাদের এই পাপ কর্ম অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনার জন্ম দেয়। প্রতিটি সংসারে মারামারি, কাটাকাটি, অশান্তি, বিবাহবিচ্ছেদ থেকে খুন-খারাবি পর্যন্ত ঘটে যায়। পরিবারের ছোট্ট সোনামণিরা এবং বৃদ্ধ পিতা-মাতারা আমার মতো অসহায় হয়ে তোমার কাছে ফরিয়াদ জানাতে থাকে। ফেসবুকের সবচেয়ে মারাত্নক ধ্বংসাত্নক দিক হচ্ছে তারা আমার কোমলমতি একটি প্রজন্মকে ভবিষ্যতের জন্য শেষ করে দিচ্ছে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে সারা দিন-রাত ফেসবুকের মধ্যে ডুবে থাকে। তারা প্রেম-ভালোবাসার টানে কখনো সমবয়সীদের সঙ্গে অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আবার কখনো বা ওসব প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে নিজে শেষ হয় এবং পুরো পরিবার, দেশ ও জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। এ কারণে কত পরিবার যে পুড়ছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। হে আমার মালিক, ফেসবুক সম্পর্কে সর্বশেষ নোংরামির কথা বলে অন্য ২-১টা দুঃখের প্রসঙ্গে চলে যাব। বাংলাদেশে কোনো দিন সমকামীদের দৌরাত্ম্য ছিল না। সমকামী নারী বা পুরুষের কথা আমি আমার ৪০০ বছরের ইতিহাসে শুনিনি। মাঝে-মধ্যে ২-১টা চরিত্রহীন পুরুষের কথা কানে আসত, যারা অল্প বয়সী বালকদের কাছে পেলে অশালীন আচরণের চেষ্টা চালাত। কিন্তু সম্প্রতি ফেসবুকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমকামীরা সবাই একত্রিত হয়েছে। আমি শুনলাম, ওরা নাকি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেবে যে, ওরা জঘন্য হারামিপনা করে, এ কাজে তাদের কোনো লজ্জা নেই এবং ওরা ওদের হারামিপনার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করে। আমি জানি, লুত নবীর আমলে জমিনে সমকামিতা মহামারী আকার ধারণ করেছিল। তুমি ক্রোধান্বিত হয়ে তোমার ফেরেশতা পাঠিয়ে পুরো জমিনটি উল্টিয়ে দিয়েছিলে। সেই উল্টানো জমির ধ্বংসাবশেষের ওপরই নাকি বর্তমান জমানার ডেড সি অবস্থিত। আমার আল্লাগো, আমার রব গো, তুমি ক্রোধান্বিত হয়ে আমারে উল্টিয়ে দিও না। হে ন্যায়বিচারক, এবার আমি ফরিয়াদ জানাই আমার জমিনে দর্প করে বেড়ানো কতিপয় বদ খাছলতের জুলুমবাজ সম্পর্কে। এরা আমার দরিদ্র রিকশাওয়ালাকে সকাল-বিকাল মারধর করে। পান থেকে চুন খসলে আজরাইলের মতো হাজির হয়, অন্যদিকে তাদের চেয়ে বড় জাহেলরা যখন ভেঁপু বাজিয়ে উল্টাপথে চলে তখন একদম মেনি বিলাই হয়ে যায়। এরা শক্তের ভক্ত নরমের যম। এরা মিথ্যা মামলা দিয়ে অসহায় এবং দুর্বলদের নাস্তানাবুদ এবং বিপর্যস্ত করে। অন্যদিকে প্রভাবশালীদের পদ লেহনের জন্য জিহ্বা বের করে রাখে। এদের কারণে অন্যায়-অপরাধ জ্যামিতিক হারে বাড়ছে, মানুষের নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সাহস, শক্তি, উৎপাদনশীলতা, সৃজনশীলতা কমে যাচ্ছে। দিন দিন মানুষের মধ্যে আদিম বন্যতা বাড়ছে। কাজেই আমার মৃত্যুর আগে তুমি ওসব জাহেলের মৃত্যু দাও। হে আল্লাহ, আমার বুকে চলাচলকারী পাবলিক বাস এবং রাজনীতিবিদদের নিয়ে ইদানীংকালে আমি অতীব মসিবতের মধ্যে আছি। বাসগুলোর সামনের অংশের চেয়ে পাছাটি বড়ই ভয়ঙ্কর। তারা চলাচলের সময় প্রায়ই পাছা বাঁকা করে চলে। আজ পর্যন্ত কোনো রাজা-মহারাজা কিংবা সেনাপতি আমার পাবলিক বাসের পাছা সোজা করতে পারেনি। এদের পাছার রং, আকৃতি এবং কার্যক্রম দেখলে যে কোনো সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। পাছায় কোনো লাইট নেই এবং সর্বদা লোকজনকে বিরক্ত করার জন্য সেখান থেকে ঢক ঢক করে কালো ধোঁয়া বের করে বাসগুলো এক ধরনের পৈশাচিক আনন্দ লাভ করে। তাদের মারামারি করার ঢং ও আলাদা- পাছা দিয়ে মারামারি করে। নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী কাউকে আঘাত করার জন্য তারা পাছা দিয়ে গুঁতো দিয়ে প্রতিপক্ষের নাকসা ফাটিয়ে দেয়। এদের অত্যাচারে নগরবাসী যেমন নাকাল হতে বসেছে তেমনি আমিও মরতে বসেছি। তাদের ইঞ্জিন নড়বড়ে, বডি ভাঙাচোরা, চালকরা অদক্ষ এবং মালিকরা নির্মম প্রকৃতির। এদের চলাচলের শব্দে জমিন থর থর করে কাঁপে। আশপাশের বাড়িঘরের ভিত্তি নড়ে ওঠে। গাছপালা মরে যায়, পশুপাখি ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যায় এবং মানুষের নাক, কান ও চোখের বারোটা বাজে। পাবলিক বাসের ধোঁয়ার কারণে কিনা জানি না, আমার বুকের ওপর চলাচলকারী রাজনীতিবিদদের মুখের অবস্থা সাম্প্রতিককালে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাদের অনেকের ঠোঁট এবং শিকারির তীর-ধনুকের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তাদের ভেংচি কাটার দৃশ্য দেখলে আমার অন্তরাত্ত্বা কেঁপে ওঠে। তাদের জিহ্বার কাজকর্ম দেখলে বার বার খন্তা, কোদাল এবং কুড়ালের কথা মনে পড়ে। পরস্পরের প্রতি তাদের হিংস্রতা, নির্মমতা এবং অসৌজন্যতা দেখে আমার বার বার আশরাফুল মাখলুকাত শব্দটির জন্য বড় মায়া হয়। তাদের কারও কারও অপকর্ম, দুর্নীতি এবং মন্দ কাজের বহর দেখে এই মহানগরীর ইবলিশ অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কারণ তার মনে হয়েছে এই জমিনে কোনো শয়তানের দরকার নেই। পরিশেষে মানুষের কিছু প্রাকৃতিক কর্ম নিয়ে ফরিয়াদ জানিয়ে আজকের মোনাজাত শেষ করব। হে আমার আল্লাহ, আমি তো নগরবাসীর বর্জ্যের গন্ধে আর টিকতে পারছি না। তারা যেখানে সেখানে নিজেদের বর্জ্য ফেলছে এবং খোলা জায়গায় মল-মূত্র ত্যাগ করছে। ফলে আমার সর্বাঙ্গ ময়লা-আবর্জনা, পশুপাখি এবং মনুষ্য বিষ্ঠায় দিন দিন কদাকার হয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধে প্রায়ই আমার বমি আসে এবং পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে আসতে চায়। লোকজন সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিলেও আমি কিন্তু পারছি না। আমি আক্রান্ত হতে হতে জরাজীর্ণতার প্রান্তসীমায় পৌঁছে গেছি। আমার ভয় হচ্ছে, কবে না জানি তোমার দরবার থেকে ডাক এসে যায়। তাই এই বুড়া বয়সে তোমার অসীম রহমত ও ক্ষমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করার মাধ্যমে তোমার করুণা প্রার্থনা করছি। আমিন-ছুম্মা আমিন। (সূত্র:bd-protidin) এমকে
ত পানি শেষ হয়ে গেছে। আমার ভূগর্ভ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে আর আমার ভূপৃষ্ঠের মাটি, বাতাস, বৃক্ষলতা, তরুরাজি, অট্টালিকা-হর্মরাজি সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এসব কারণে আমার বুকে বসবাসরত তোমার বান্দা-বান্দীরা নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাদের দেহ-মনে শুধু খাউজানি আর খাউজানি। তারা কথায় কথায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে আর আজরাইলের মতো চোখ দুইটারে গোল গোল করে যারে তারে খামচি দিতে যায়। তারপর একসময় নিজের শরীর খামচাতে খামচাতে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। তাই ইদানীং আমার খুব ভয় হচ্ছে, হয়তো যে কোনো সময় মরে যেতে পারি। এ কারণেই তোমার কাছে মাফ চেয়ে নিলাম। হে আল্লাহ তুমি আমাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করিও। হে দয়াময়, আমি তোমার প্রতি যারপরনাই কৃতজ্ঞ। তুমি আমার ভূমিকে সর্বোত্তম উর্বরতা দিয়ে সৃষ্টি করেছ। আমার বুকে প্রবহমান বাতাসকে করেছ নাতিশীতোষ্ণ। আমার চারদিকে চারটি চমৎকার প্রবহমান নদীর সুমিষ্ট ধারা প্রবাহিত করেছিলে। সেই নদীর সঙ্গে অসংখ্য প্রবহমান খাল দ্বারা আমার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছিলে। পৃথিবীর অন্য কোনো নগর বা মহানগরকে তুমি এত সুযোগ-সুবিধা দাওনি। অন্যদিকে, যে মহান ব্যক্তিটি আমার বুকে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সেই সুবেদার ইসলাম খানের জন্য তোমার দরবারে দোয়া প্রার্থনা করছি। তিনি সঠিক কাজটিই করেছিলেন। অর্থাৎ সুবেদার বাংলার সর্বোত্তম স্থানে প্রথমবারের মতো রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক মতো ছিল। পাকিস্তান আমলে শুরু হয় আমার বুকে দাপাদাপি। স্বাধীন বাংলাদেশে আমাকে নির্মমভাবে ক্ষতবিক্ষত করতে করতে ১৫-১৬ বছর ধরে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। আমি জানি না আমার মৃত্যু কীভাবে হবে, হয়তো ভূমিকম্পে অথবা ভূমিধসে। কারণ আমার হৃদয়ের সব পানি নিংড়ে বের করে আনা হয়েছে। আমার ভূগর্ভের গঠন প্রণালিতে মারাত্দক সমস্যা দেখা দিয়েছে, আমি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছি না। হে আমার জমিনের মালিক, তুমি আমাকে তোমার রহমত এবং বরকতের চাদর দ্বারা ঢেকে রাখ। নচেৎ আমি হয়তো পাগল হয়ে যাব। আমার বুকে তোমার বান্দা-বান্দীরা যেভাবে দর্প করে বেড়ায়, সকালে-বিকালে যেভাবে মিথ্যাচার করে, একজন অন্যজনকে ঠকায়, সবল দুর্বলের ওপর অত্যাচার করে, ধনীরা ধনলিপ্সায় নিকৃষ্ট প্রাণীদের মতো আচরণ করে এবং সর্বোপরি তোমার নাফরমানি, তাতে পাগল না হয়ে কী করব। প্রতিদিনের সামাজিক জীবনে যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন অনাচার আর ব্যভিচার। মানুষজন অন্যায় ও অপকর্ম করার জন্য সারা দিন ফন্দি-ফিকির করে। ফলে আমার আকাশ-বাতাস অভিশাপের মর্ম বেদনায় দিন-রাত কান্নাকাটি করে। আজ আমি তোমার সাহায্য চাইব কতিপয় সমস্যা সমাধানের বিষয়ে। হে আল্লাহ, তুমি আমার বাসিন্দাদের ফেসবুকের যন্ত্রণা থেকে বাঁচাও। এই মহানগরীতে সাম্প্রতিককালে ফেসবুক নামক জিনিসটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্লাস ফাইভে পড়া বালক-বালিকা থেকে শুরু করে মৃত্যুপথযাত্রী ৯০-৯৫ বছরের বুড়াবুড়ি পর্যন্ত আজ ফেসবুক জ্বরে আক্রান্ত। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেম করে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয় আবার তালাকও দিয়ে দেয়। তারা অহরহ পরকীয়া এবং অসম প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। ১৫-১৬ বছরের কিশোরী অনায়াসে ৭০-৭৫ বছরের বুড়ার গলা জড়িয়ে ধরে প্রেম নিবেদন শুরু করেছে। অন্যদিকে ২০-২২ বছরের ছোকড়া তার নানী বা দাদির বয়সী বৃদ্ধার গলায় প্রেমের মালা পরানোর জন্য দিওয়ানা হয়ে পড়েছে। বিবাহিত পুরুষ তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যার ভালোবাসা ভুলে অন্য বিবাহিতা নারীর সংসার ভাঙছে। আবার বিবাহিতা মহিলারাও সমান তালে পরকীয়ার টানে উন্মত্ত হয়ে বিবাহিত পুরুষদের ফাঁদে ফেলছে। এসব অপকর্ম করার জন্য বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি অতি সাশ্রয়ী দামে ইন্টারনেট দিচ্ছে। অন্যদিকে খুবই কম দামে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বাহারি মোবাইল সেটও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে মহানগরের বাসিন্দারা সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ফেসবুক নামক প্রেম-পীরিতি আর পরকীয়ার রূপ সাগরে। হে অন্তর্যামী, তুমি ছাড়া আমার কোনো অভিভাবক নেই। তাই সব দুঃখের কথা তোমাকেই জানাচ্ছি। সম্প্রতি আমি অতিকষ্টে বাংলালিংকের থ্রি-জি কানেকশনসহ একটি আইফোন ৬ মোবাইল জোগাড় করেছি। ফলে আমি এখন নিজে ফেসবুক চালাই এবং দেশের অন্যান্য নগর-মহানগরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। রাজধানী হওয়ার কারণে সবাই আমাকে মুরব্বি হিসেবে মান্য করে। তারা তাদের দুরবস্থার কথা আমাকে জানায়। অবস্থা বেশি খারাপ হলে তারা স্কাইপের মাধ্যমে আমাকে সব কিছুর সচিত্র প্রতিবেদন দেখায়। মাঝে-মধ্যে বেশ কিছু গোপন কথাবার্তা বলে। তখন তারা ভাইবার বা ট্যাংগোর মাধ্যমে কথা বলে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ভ্রাতঃবৃন্দ! গোপন কথা হলেই তোমরা মোবাইলে ফোন করে ভাইবার, ট্যাংগো কিংবা স্কাইপেতে কল কর কেন? তারা অভিযোগের সুরে বলল, মুরব্বি! আর বলবেন না। ইদানীং সব কিছু রেকর্ড হয়। সব জায়গায় টিকটিকি ওত পেতে থাকে। তাই ওসব ব্যবহার করি কারণ ওগুলোতে আড়িপাতার প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। আমি একদিন ফেসবুকের ভয়াবহতা নিয়ে দেশের অন্যান্য নগর-মহানগর এবং বন্দরের সঙ্গে একযোগে ভিডিও কনফারেন্স করলাম। সবাই ফেসবুক সম্পর্কে এমনসব বেলেল্লাপনার অভিযোগ করল, যা শুনে লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে উঠল। লজ্জায় আমি তাদের বলতেই পারলাম না যে, তোমাদের ওখানে যেসব অনাচার হয় তা ঢাকার তুলনায় একেবারেই নস্যি। আমার লজ্জা লাগল এ কারণে যে, যৌবনকালে আমি বড়ই রূপসী এবং ঢঙি ছিলাম। এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ এবং রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অতিশয় কুৎসিত হয়ে পড়েছি। ফলে প্রেম-পীরিতির বেলেল্লাপনার কথা যদি বলি তবে অন্যরা বলবে দেখ বুড়ির ঢং দেখ! মরতে বসেছে কিন্তু রং কমেনি। ওসব কথা ওদের না বললেও তোমাকে বলছি। কারণ তুমি ছাড়া কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না। ফেসবুকের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বয়স্ক এবং বিবাহিতরা রাত-বিরাতে পার্কে চলে আসে। তারা প্রাথমিক হাতাহাতির কাজটি সেখানেই সেরে নেয়। পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য কোনো হোটেল, বাগানবাড়ি, বন্ধুর বাড়ি কিংবা সুযোগমতো নিজেদের বাড়িকেই বেছে নেয়। তারা জীবনের গোপনীয় কর্ম এবং শরীরের গোপন বিষয় নিয়ে খুবই অশ্লীল এবং বাজে কথা বলে। তারা জড়াজড়ি করে ছবি তোলে এবং একজন অন্যজনের ইনবক্সে পাঠায়। তারা নিজেদের স্বামী বা স্ত্রীর বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ তৈরি করে পরস্পরকে শোনায় এবং ফন্দি আটঁতে থাকে কী করে আপন আপন সংসারে আগুন লাগিয়ে নতুন সংসার গড়া যায়। তাদের এই পাপ কর্ম অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনার জন্ম দেয়। প্রতিটি সংসারে মারামারি, কাটাকাটি, অশান্তি, বিবাহবিচ্ছেদ থেকে খুন-খারাবি পর্যন্ত ঘটে যায়। পরিবারের ছোট্ট সোনামণিরা এবং বৃদ্ধ পিতা-মাতারা আমার মতো অসহায় হয়ে তোমার কাছে ফরিয়াদ জানাতে থাকে। ফেসবুকের সবচেয়ে মারাত্নক ধ্বংসাত্নক দিক হচ্ছে তারা আমার কোমলমতি একটি প্রজন্মকে ভবিষ্যতের জন্য শেষ করে দিচ্ছে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে সারা দিন-রাত ফেসবুকের মধ্যে ডুবে থাকে। তারা প্রেম-ভালোবাসার টানে কখনো সমবয়সীদের সঙ্গে অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আবার কখনো বা ওসব প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে নিজে শেষ হয় এবং পুরো পরিবার, দেশ ও জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। এ কারণে কত পরিবার যে পুড়ছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। হে আমার মালিক, ফেসবুক সম্পর্কে সর্বশেষ নোংরামির কথা বলে অন্য ২-১টা দুঃখের প্রসঙ্গে চলে যাব। বাংলাদেশে কোনো দিন সমকামীদের দৌরাত্ম্য ছিল না। সমকামী নারী বা পুরুষের কথা আমি আমার ৪০০ বছরের ইতিহাসে শুনিনি। মাঝে-মধ্যে ২-১টা চরিত্রহীন পুরুষের কথা কানে আসত, যারা অল্প বয়সী বালকদের কাছে পেলে অশালীন আচরণের চেষ্টা চালাত। কিন্তু সম্প্রতি ফেসবুকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমকামীরা সবাই একত্রিত হয়েছে। আমি শুনলাম, ওরা নাকি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেবে যে, ওরা জঘন্য হারামিপনা করে, এ কাজে তাদের কোনো লজ্জা নেই এবং ওরা ওদের হারামিপনার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করে। আমি জানি, লুত নবীর আমলে জমিনে সমকামিতা মহামারী আকার ধারণ করেছিল। তুমি ক্রোধান্বিত হয়ে তোমার ফেরেশতা পাঠিয়ে পুরো জমিনটি উল্টিয়ে দিয়েছিলে। সেই উল্টানো জমির ধ্বংসাবশেষের ওপরই নাকি বর্তমান জমানার ডেড সি অবস্থিত। আমার আল্লাগো, আমার রব গো, তুমি ক্রোধান্বিত হয়ে আমারে উল্টিয়ে দিও না। হে ন্যায়বিচারক, এবার আমি ফরিয়াদ জানাই আমার জমিনে দর্প করে বেড়ানো কতিপয় বদ খাছলতের জুলুমবাজ সম্পর্কে। এরা আমার দরিদ্র রিকশাওয়ালাকে সকাল-বিকাল মারধর করে। পান থেকে চুন খসলে আজরাইলের মতো হাজির হয়, অন্যদিকে তাদের চেয়ে বড় জাহেলরা যখন ভেঁপু বাজিয়ে উল্টাপথে চলে তখন একদম মেনি বিলাই হয়ে যায়। এরা শক্তের ভক্ত নরমের যম। এরা মিথ্যা মামলা দিয়ে অসহায় এবং দুর্বলদের নাস্তানাবুদ এবং বিপর্যস্ত করে। অন্যদিকে প্রভাবশালীদের পদ লেহনের জন্য জিহ্বা বের করে রাখে। এদের কারণে অন্যায়-অপরাধ জ্যামিতিক হারে বাড়ছে, মানুষের নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সাহস, শক্তি, উৎপাদনশীলতা, সৃজনশীলতা কমে যাচ্ছে। দিন দিন মানুষের মধ্যে আদিম বন্যতা বাড়ছে। কাজেই আমার মৃত্যুর আগে তুমি ওসব জাহেলের মৃত্যু দাও। হে আল্লাহ, আমার বুকে চলাচলকারী পাবলিক বাস এবং রাজনীতিবিদদের নিয়ে ইদানীংকালে আমি অতীব মসিবতের মধ্যে আছি। বাসগুলোর সামনের অংশের চেয়ে পাছাটি বড়ই ভয়ঙ্কর। তারা চলাচলের সময় প্রায়ই পাছা বাঁকা করে চলে। আজ পর্যন্ত কোনো রাজা-মহারাজা কিংবা সেনাপতি আমার পাবলিক বাসের পাছা সোজা করতে পারেনি। এদের পাছার রং, আকৃতি এবং কার্যক্রম দেখলে যে কোনো সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। পাছায় কোনো লাইট নেই এবং সর্বদা লোকজনকে বিরক্ত করার জন্য সেখান থেকে ঢক ঢক করে কালো ধোঁয়া বের করে বাসগুলো এক ধরনের পৈশাচিক আনন্দ লাভ করে। তাদের মারামারি করার ঢং ও আলাদা- পাছা দিয়ে মারামারি করে। নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী কাউকে আঘাত করার জন্য তারা পাছা দিয়ে গুঁতো দিয়ে প্রতিপক্ষের নাকসা ফাটিয়ে দেয়। এদের অত্যাচারে নগরবাসী যেমন নাকাল হতে বসেছে তেমনি আমিও মরতে বসেছি। তাদের ইঞ্জিন নড়বড়ে, বডি ভাঙাচোরা, চালকরা অদক্ষ এবং মালিকরা নির্মম প্রকৃতির। এদের চলাচলের শব্দে জমিন থর থর করে কাঁপে। আশপাশের বাড়িঘরের ভিত্তি নড়ে ওঠে। গাছপালা মরে যায়, পশুপাখি ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যায় এবং মানুষের নাক, কান ও চোখের বারোটা বাজে। পাবলিক বাসের ধোঁয়ার কারণে কিনা জানি না, আমার বুকের ওপর চলাচলকারী রাজনীতিবিদদের মুখের অবস্থা সাম্প্রতিককালে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাদের অনেকের ঠোঁট এবং শিকারির তীর-ধনুকের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তাদের ভেংচি কাটার দৃশ্য দেখলে আমার অন্তরাত্ত্বা কেঁপে ওঠে। তাদের জিহ্বার কাজকর্ম দেখলে বার বার খন্তা, কোদাল এবং কুড়ালের কথা মনে পড়ে। পরস্পরের প্রতি তাদের হিংস্রতা, নির্মমতা এবং অসৌজন্যতা দেখে আমার বার বার আশরাফুল মাখলুকাত শব্দটির জন্য বড় মায়া হয়। তাদের কারও কারও অপকর্ম, দুর্নীতি এবং মন্দ কাজের বহর দেখে এই মহানগরীর ইবলিশ অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কারণ তার মনে হয়েছে এই জমিনে কোনো শয়তানের দরকার নেই। পরিশেষে মানুষের কিছু প্রাকৃতিক কর্ম নিয়ে ফরিয়াদ জানিয়ে আজকের মোনাজাত শেষ করব। হে আমার আল্লাহ, আমি তো নগরবাসীর বর্জ্যের গন্ধে আর টিকতে পারছি না। তারা যেখানে সেখানে নিজেদের বর্জ্য ফেলছে এবং খোলা জায়গায় মল-মূত্র ত্যাগ করছে। ফলে আমার সর্বাঙ্গ ময়লা-আবর্জনা, পশুপাখি এবং মনুষ্য বিষ্ঠায় দিন দিন কদাকার হয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধে প্রায়ই আমার বমি আসে এবং পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে আসতে চায়। লোকজন সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিলেও আমি কিন্তু পারছি না। আমি আক্রান্ত হতে হতে জরাজীর্ণতার প্রান্তসীমায় পৌঁছে গেছি। আমার ভয় হচ্ছে, কবে না জানি তোমার দরবার থেকে ডাক এসে যায়। তাই এই বুড়া বয়সে তোমার অসীম রহমত ও ক্ষমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করার মাধ্যমে তোমার করুণা প্রার্থনা করছি। আমিন-ছুম্মা আমিন। (সূত্র:bd-protidin) এমকে
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment