Tuesday, December 23, 2014

সিসির কাছে কাতারের নতিস্বীকার, মিশরে আলজাজিরা বন্ধ:RTNN

সিসির কাছে কাতারের নতিস্বীকার, মিশরে আলজাজিরা বন্ধ আন্তর্জাতিক ডেস্ক আরটিএনএন কায়রো: কাতার তার প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ এবং মিশরের সামরিক নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রবল চাপের মুখে আলজাজিরার মিশরীয় চ্যানেলের সম্প্রচার স্থগিত করেছে। এই স্থগিতাদেশ কাতারের সবচেয়ে বড় ছাড় বলে মনে করা হচ্ছে। মিশরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকদের সমর্থন বন্ধ করতে সৌদি আরব, সংযুক্ত আর
ব আমিরাত এবং মিশর সরকার প্রায় ১৮ মাস যাবৎ কাতারকে চাপ প্রয়োগ করে আসছিল।    কাতারের এই সিদ্ধান্ত মিশরের স্বৈরশাসক আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসির জন্য একটি বড় বিজয়। সিসি গত বছর মুরসির সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। কাতারই একমাত্র আরব রাষ্ট্র যারা সিসির বৈধতা কিংবা ক্ষমতায় থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কাতারের এই স্থগিতাদেশ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তারাও সিসির শাসনকে বৈধতা দিয়েছেন কিংবা মেনে নিয়েছেন। বন্ধ হওয়া চ্যানেলটি হল কাতারের মালিকানাধীন ‘আলজাজিরা লাইভ মিশর’। আলজাজিরা নেটওয়ার্ক মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন করে আসছিল। ব্রাদারহুড মিশরের একটি মূলধারার ইসলামী সংগঠন। সিসির নেতৃত্বে ব্রাদারহুডকে ছিন্নভিন্ন করার পূর্বে এটি ছিল মিশরের সবচেয়ে সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি এবং সফল একটি রাজনৈতিক দল। ‘আলজাজিরা লাইভ মিশর’ মিশরের গুরুত্বপূর্ণ খবর সরাসরি সম্প্রচার করত। চ্যানেলটিতে ব্রাদারহুডের সরকার বিরোধী বিক্ষোভের বিভিন্ন ভিডিও চিত্র ও তাদের মতামত সম্প্রচার করা হতো। সম্প্রতিক দিনগুলোতে কার্যত ‘আলজাজিরা লাইভ মিশর’ই ছিল একমাত্র মিশরীয় চ্যানেল যারা ব্রাদারহুডের বিভিন্ন সংবাদ সরাসরি সম্প্রচার করত। সম্প্রতি ব্রাদারহুডের নেতৃত্বাধীন বিলুপ্ত মিশরীয় সংসদের সংসদ সদস্যরা ইস্তাম্বুলে এক বৈঠক করেন। সেখানে তারা সিসির অভ্যুত্থানের নিন্দা জানান। তাদের এই বৈঠকের পুরোটাই আল জাজিরা সম্প্রচার করে। মিশরেরর সাংবাদিক সিন্ডিকেটের প্রধান এবং রাজনৈতিক ও সরকার পরিচালিত কৌশলগত গবেষণা প্রতিষ্ঠান আল আহরাম সেন্টারের একজন গবেষক দিয়া রাশান বলেন, ‘মিশরের শাসকের জন্য এটি একটি বড় ধরনের অর্জন। বিশেষ করে মিশরের সংবাদ সিস্টেমের জন্য।’    রাশান পূর্বাভাস দেন যে, কাতারের এই পদক্ষেপে মিশরে গ্রেপ্তারকৃত আলজাজিরার ইংরেজি শাখার তিন সাংবাদিকের মুক্তির পথকে সহজ করতে পারে। মিশরকে অস্থিতিশীল করার জন্য ব্রাদারহুডের সঙ্গে চক্রান্তের অভিযোগে আলজাজিরার তিন সাংবাদিককে গত ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার করা হয়।    তাদের সবাইকে অন্তত সাত বছরের জন্য দণ্ডিত করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিকদের মধ্য দু’জন বিদেশী নাগরিক। উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়াই তাদের কারাদণ্ড প্রদান করায় এটি ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক নিন্দার সম্মুখীন হয়। গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিকদের একজন অস্ট্রেলিয়ান এবং অন্য একজন মিশর ও কানাডার দ্বৈত নাগরিক। সাংবাদিক সংগঠনের তথ্যানুযায়ী, বর্তমান মিশরে এক ডজন সাংবাদিক আটক আছেন। মিশরে সংসদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সিসিই একমাত্র আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সিসি একটি আইন অনুমোদন করেছেন যে আইনের আওতায় সরকার বিদেশী নাগরিকদের কারাদণ্ডের পরিবর্তে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন গ্রেপ্তার হওয়া দুই বিদেশি সাংবাদিককে তাদের দেশে পাঠানোর জন্যই সিসি এই উদ্যোগ নিয়েছেন। রাশান বলেন, ‘আমি মনে করি, কাতারের অনুমোদনের পর আমরা কিছু ভাল খবর দেখতে পাব।’ আঞ্চলিক প্রভাবের একটি কৌশল হিসাবে মুরসি ও তার দল ব্রাদারহুডের সঙ্গে কাতারের ঘনিষ্ঠ মিত্রতার সর্ম্পক গড়ে ওঠেছিল এবং আলজাজিরা, বিশেষ করে তার মিশরীয় শাখা লক্ষণীয়ভাবে মুরসি ও ব্রাদারহুডকে সমর্থন করে আসছিল। মুরসিকে ক্ষমতাচ্যূত করার পর সেনা সমর্থিত সরকার ‘আলজাজিরা লাইভ মিশর’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকে এটি কাতারের দোহা থেকে তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যায়। চ্যানেলটি মিশর ও পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে সিসির সমর্থকদের নিকট ক্রমাগত মাথাব্যথার কারণ ছিল।  ব্রাদারহুডের প্রতি কাতারের সমর্থন এবং আলজাজিরার সিসি বিরোধী প্রচারণা বন্ধ করতে কাতারকে চাপ প্রয়োগের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে গত মার্চে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন মিশরে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করেন।  কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহ আঞ্চলিক পুনর্মিলনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করেন। ইরান ও ইসলামিক স্টেট চরমপন্থী কর্তৃক দ্বৈত হুমকির বিরুদ্ধে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করার লক্ষ্যে আবদুল্লাহ এই প্রদক্ষেপ নেন। সৌদি আরব সিসি সরকারের আর্থিক সহায়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।     যুক্তফ্রন্ট গঠনের লক্ষ্যে উপসাগরীয় দেশগুলোর সংগঠন জিসিসির প্রধান হিসেবে সৌদি বাদশাহ রিয়াদে প্রথমে একটি সভা আহ্বান করেন। এই সভায় মিশরে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। চলতি সপ্তাহে তিন দেশের একটি বৈঠক আয়োজনের জন্য তিনি কায়রোতে তার বিশেষ দূত প্রেরণ করেন। সৌদি দূতের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের মত দোহার একজন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সিসির বৈঠক  অনুষ্ঠিত হয়। মনে করা হচ্ছে তাদের এই বৈঠকেই চ্যানেলটির সম্প্রচার স্থগিতাদেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।    সোমবার সন্ধ্যায় ‘আলজাজিরা লাইভ মিশর’ তাদের চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধের ঘোষণা দেয়। চ্যানেলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘কায়রোর উপযুক্ত প্রস্তুতি না হওয়া পর্যন্ত চ্যানেলটি তার সম্প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখবে। মিশরীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র পাওয়ার পর এটি আবার তাদের সম্প্রচারে ফিরে আসবে।’ চ্যানেলটির ঘোষক সারাহ রেফাত বলেন, ‘আলজাজিরা নেটওয়ার্কের একটি বিশেষ ঘোষণা, দোহা থেকে সম্প্রচারিত আলজাজিরা লাইভ মিশর-এর এটিই শেষ সংবাদ প্রতিবেদন।’  কাতারে আশ্রয় নেয়া ব্রাদারহুডের হাজার হাজার সমর্থক ও নেতাদের মিশরের কাছে হস্তান্তরের জন্য মিশর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।       মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বদর আব্দেলাতিকে চ্যানেলটির স্থগিতাদেশের ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, আরবের পুনর্মিলনের জন্যই কায়রোকে সমর্থন করা হয়েছে। তিনি এই ব্যাপারে বিস্তারিত না বলে শুধু বলেন, ‘আমাদের কথার সঙ্গে কর্মের মিল থাকা প্রয়োজন। কর্মই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।’ সূত্র:  নিউইর্য়ক টাইমস মন্তব্য      


No comments:

Post a Comment