রের স্বাস্থ্য বাজেটের চেয়েও বেশি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে ১১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদনে এ হিসাব জানানো হয়েছে। জিএফআই ‘ইলিসিট ফাইন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ফ্রম ডেভেলপিং কান্ট্রিজ: ২০০৩-১২’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বব্যাপী প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভ কার ও অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্পেনজারস এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। এতে বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে গত এক দশকে কী পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে, তার প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রতি বছরের ডিসেম্বরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৩১ কোটি ৬০ লাখ ডলার অবৈধ পথে বাংলাদেশের বাইরে চলে গেছে। এ ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে ২০০৬ সালে, ২৬৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়। সে সময় অবৈধ উপায়ে দেশের বাইরে চলে যায় ২৪৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর অর্থ পাচার কমে আসে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে ২০১২ সালে তা আবার বেড়ে যায়। অস্বচ্ছ ব্যবসায়িক লেনদেন, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে এ অর্থ স্থানান্তর করা হয়। অর্থ পাচারের যেসব পন্থা রয়েছে, তারই একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিং বা অস্বচ্ছ লেনদেন। জিএফআই বলছে, ২০১২ সালে মিস ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৭৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর হট মানি আউটফ্লো বা ব্যালেন্স অব পেমেন্টের মাধ্যমে পাচার হয়েছে ১০২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণের ক্রমানুসারে ১৫১টি উন্নয়নশীল দেশের একটি তালিকাও তৈরি করেছে জিএফআই। ২০১২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান তাতে ৪৭তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নির্বাচনের সময় যখন ঘনিয়ে আসে, তখন আসন্ন অনিশ্চয়তার কারণে অর্থ পাচার বেড়ে যায়। এ কারণেই ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বেড়েছে, আবার ২০১২ সালে বেড়েছে। যারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অর্থসম্পদ গড়েন, তারা টাকা পাচার করেন। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি সম্প্রতি দেশের বড় বড় শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নিজেদের পরিবার এবং সন্তানদের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, তারা যেভাবে ব্যবসা, কারখানা ও সম্পদ এ দেশে গড়ে তুলেছেন, তাদের সন্তানেরা তা পারবে না। আইএমএফের এই সাবেক কর্মকর্তা মনে করেন, আগামী দিনেও এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। কোনো আইন করে এটা ঠেকানো যাবে না। কেননা, টাকা পাচারের বিষয়টি অনেকাংশে সুশাসনের সঙ্গে জড়িত। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে বলে সম্প্রতি এক জরিপে উঠে এসেছে। এবার পাওয়া গেল অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার চিত্র। এ দুটো আসলে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কালে আর্থিক খাতে কেলেঙ্কারিও বেড়েছে। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা লোকজনই সাধারণত দুর্নীতি, আর্থিক কেলেঙ্কারি ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত থাকে। আর নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নির্বাচনের আগে এগুলো সরিয়ে নেয়া, যার চিত্র জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অর্থ পাচারের চিত্র উদ্বেগজনক আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন বলেন, এটি সরকারের কর আহরণ কমিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহারে ঘাটতি সৃষ্টি করছে। একদিকে সরকার ঋণ ও অনুদান নিচ্ছে, অন্যদিকে দেশের নিজস্ব আয় বাইরে চলে যাচ্ছে। এটি ভবিষ্যতে বৈদেশিক নির্ভরশীলতা বাড়াবে। পাশাপাশি আয়বৈষম্য চরম আকার ধারণ করবে। তবে জিএফআইয়ের প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের উপপ্রধান ও নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, অর্থ পাচার রোধে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বেড়েছে। এছাড়া কাস্টমসের কার্যক্রম অটোমেশন করা হয়েছে। তাই মিস ইনভয়েসিং করা আগের চেয়ে অনেক কঠিন হয়ে গেছে। ফলে বিদেশে অর্থ পাচার আগের চেয়ে কমেছে। জিএফআইয়ের হিসাবে, আলোচ্য এক দশকে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৫১০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার হয়েছে ৮০৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। মূলত রপ্তানির ক্ষেত্রে এ মিস ইনভয়েসিং হয়। এর মধ্যে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার হয়েছে ১৪৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ৬৮৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, পাচার করা অর্থের যে হিসাব করা হয়েছে, তা ধারণামাত্র। বাস্তবে এর চেয়েও বেশি অর্থ পাচার হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ না থাকায় অর্থ পাচার হচ্ছে। পাশাপাশি সুশাসনের অভাবে সহজে দুর্নীতি হচ্ছে। অবৈধ এ অর্থ দেশে নির্বিঘ্নে ব্যবহার করতে না পেরে তা পাচার করা হয়। পর্যাপ্ত নজরদারি ও আইনের শাসনে দুর্বলতা রয়েছে, যা সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। জিএফআই বলছে, ২০০৩ থেকে ২০১২ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অন্তত ৬ লাখ ৫৮ হাজার কোটি ডলার অবৈধ পথে বেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ২০১২ সালেই বেরিয়ে গেছে ৯৯ হাজার ১২৪ কোটি ডলার। ২০০৩-১২ সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে চীন থেকে, যার পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার ২৪১ কোটি ডলারের বেশি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। ২০১২ সালে দেশটি থেকে পাচার হয়েছে ৯৭ হাজার ৩৮৫ কোটি ডলারের বেশি। শীর্ষ পাঁচে এর পর রয়েছে যথাক্রমে মেক্সিকো, ভারত ও মালয়েশিয়া। পাচার হয়ে যাওয়া এসব অর্থ জমা হয়েছে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এবং ট্যাক্স হেভেন বলে পরিচিত বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে। এদিকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সঙ্গে জিএফআই যৌথভাবে প্রণয়ন করে ‘ইলিসিট ফিন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ফ্রম দ্য লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিজ: ১৯৯০-২০০৮’। ২০১১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে এলডিসিভুক্ত ৪৮টি দেশ থেকে অর্থ পাচারের প্রবণতা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ১৯ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩ হাজার ৪১৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার পাচার হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৯৯০ সালে পাচার হয় ১১১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। মূলত এরশাদ সরকারের পতনের সময়ে এ অর্থ পাচার হয়। গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫— এ পাঁচ বছরে অর্থ পাচারের প্রবণতা সবচেয়ে কম ছিল। ওই পাঁচ বছরে ২০১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার পাচার হয়। এর মধ্যে ১৯৯২ সালে কোনো অর্থই পাচার হয়নি। এর পর অর্থ পাচারের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যায়। ১৯৯৬-২০০০ সালে অর্থ পাচারের পরিমাণ ছিল ৬৫৪ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, ২০০১-০৬ সালে ১ হাজার ২১৬ কোটি ও ২০০৬-০৮ সালে ১ হাজার ২৩৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। গত জুনে ইউএনডিপি প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতার পর চার দশকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ জিডিপির আকারের প্রায় ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ। সে হিসাবে গত চার দশকে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এ অর্থ পাচারের মূল পন্থা আমদানি-রপ্তানিতে পণ্যের মূল্য কম-বেশি দেখানো (মিস ইনভয়েসিং)। আমদানি-রপ্তানিতে পণ্যের মূল্য বেশি ও কম দেখানোর মাধ্যমে পাচার করা অর্থের পরিমাণ ৫৮ দশমিক ২ শতাংশ। বাকিটা বিভিন্ন দেশের এজেন্টের মাধ্যমে হুন্ডি করে পাচার হয়। মন্তব্য
Wednesday, December 17, 2014
বাংলাদেশ থেকে এক বছরে পাচার ১৪ হাজার কোটি টাকা:RTNN
বাংলাদেশ থেকে এক বছরে পাচার ১৪ হাজার কোটি টাকা নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার এক বছরে প্রায় তিন গুণ বেড়ে গেছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১৪ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা (১৭৮ কোটি ডলার) অবৈধ পথে বিভিন্ন দেশে চলে গেছে। আর ২০১১ সালে পাচার হয়েছিল অন্তত ৪,৭৪৪ কোটি টাকা (৫৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার)। যে পরিমাণ অর্থ ২০১২ সালে অবৈধ পথে বাইরে চলে গেছে, তা বাংলাদেশের চলতি অর্থবছ
রের স্বাস্থ্য বাজেটের চেয়েও বেশি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে ১১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদনে এ হিসাব জানানো হয়েছে। জিএফআই ‘ইলিসিট ফাইন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ফ্রম ডেভেলপিং কান্ট্রিজ: ২০০৩-১২’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বব্যাপী প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভ কার ও অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্পেনজারস এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। এতে বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে গত এক দশকে কী পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে, তার প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রতি বছরের ডিসেম্বরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৩১ কোটি ৬০ লাখ ডলার অবৈধ পথে বাংলাদেশের বাইরে চলে গেছে। এ ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে ২০০৬ সালে, ২৬৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়। সে সময় অবৈধ উপায়ে দেশের বাইরে চলে যায় ২৪৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর অর্থ পাচার কমে আসে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে ২০১২ সালে তা আবার বেড়ে যায়। অস্বচ্ছ ব্যবসায়িক লেনদেন, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে এ অর্থ স্থানান্তর করা হয়। অর্থ পাচারের যেসব পন্থা রয়েছে, তারই একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিং বা অস্বচ্ছ লেনদেন। জিএফআই বলছে, ২০১২ সালে মিস ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৭৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর হট মানি আউটফ্লো বা ব্যালেন্স অব পেমেন্টের মাধ্যমে পাচার হয়েছে ১০২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণের ক্রমানুসারে ১৫১টি উন্নয়নশীল দেশের একটি তালিকাও তৈরি করেছে জিএফআই। ২০১২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান তাতে ৪৭তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নির্বাচনের সময় যখন ঘনিয়ে আসে, তখন আসন্ন অনিশ্চয়তার কারণে অর্থ পাচার বেড়ে যায়। এ কারণেই ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বেড়েছে, আবার ২০১২ সালে বেড়েছে। যারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অর্থসম্পদ গড়েন, তারা টাকা পাচার করেন। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি সম্প্রতি দেশের বড় বড় শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নিজেদের পরিবার এবং সন্তানদের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, তারা যেভাবে ব্যবসা, কারখানা ও সম্পদ এ দেশে গড়ে তুলেছেন, তাদের সন্তানেরা তা পারবে না। আইএমএফের এই সাবেক কর্মকর্তা মনে করেন, আগামী দিনেও এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। কোনো আইন করে এটা ঠেকানো যাবে না। কেননা, টাকা পাচারের বিষয়টি অনেকাংশে সুশাসনের সঙ্গে জড়িত। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে বলে সম্প্রতি এক জরিপে উঠে এসেছে। এবার পাওয়া গেল অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার চিত্র। এ দুটো আসলে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কালে আর্থিক খাতে কেলেঙ্কারিও বেড়েছে। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা লোকজনই সাধারণত দুর্নীতি, আর্থিক কেলেঙ্কারি ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত থাকে। আর নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নির্বাচনের আগে এগুলো সরিয়ে নেয়া, যার চিত্র জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অর্থ পাচারের চিত্র উদ্বেগজনক আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন বলেন, এটি সরকারের কর আহরণ কমিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহারে ঘাটতি সৃষ্টি করছে। একদিকে সরকার ঋণ ও অনুদান নিচ্ছে, অন্যদিকে দেশের নিজস্ব আয় বাইরে চলে যাচ্ছে। এটি ভবিষ্যতে বৈদেশিক নির্ভরশীলতা বাড়াবে। পাশাপাশি আয়বৈষম্য চরম আকার ধারণ করবে। তবে জিএফআইয়ের প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের উপপ্রধান ও নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, অর্থ পাচার রোধে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বেড়েছে। এছাড়া কাস্টমসের কার্যক্রম অটোমেশন করা হয়েছে। তাই মিস ইনভয়েসিং করা আগের চেয়ে অনেক কঠিন হয়ে গেছে। ফলে বিদেশে অর্থ পাচার আগের চেয়ে কমেছে। জিএফআইয়ের হিসাবে, আলোচ্য এক দশকে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৫১০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার হয়েছে ৮০৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। মূলত রপ্তানির ক্ষেত্রে এ মিস ইনভয়েসিং হয়। এর মধ্যে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার হয়েছে ১৪৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ৬৮৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, পাচার করা অর্থের যে হিসাব করা হয়েছে, তা ধারণামাত্র। বাস্তবে এর চেয়েও বেশি অর্থ পাচার হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ না থাকায় অর্থ পাচার হচ্ছে। পাশাপাশি সুশাসনের অভাবে সহজে দুর্নীতি হচ্ছে। অবৈধ এ অর্থ দেশে নির্বিঘ্নে ব্যবহার করতে না পেরে তা পাচার করা হয়। পর্যাপ্ত নজরদারি ও আইনের শাসনে দুর্বলতা রয়েছে, যা সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। জিএফআই বলছে, ২০০৩ থেকে ২০১২ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অন্তত ৬ লাখ ৫৮ হাজার কোটি ডলার অবৈধ পথে বেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ২০১২ সালেই বেরিয়ে গেছে ৯৯ হাজার ১২৪ কোটি ডলার। ২০০৩-১২ সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে চীন থেকে, যার পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার ২৪১ কোটি ডলারের বেশি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। ২০১২ সালে দেশটি থেকে পাচার হয়েছে ৯৭ হাজার ৩৮৫ কোটি ডলারের বেশি। শীর্ষ পাঁচে এর পর রয়েছে যথাক্রমে মেক্সিকো, ভারত ও মালয়েশিয়া। পাচার হয়ে যাওয়া এসব অর্থ জমা হয়েছে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এবং ট্যাক্স হেভেন বলে পরিচিত বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে। এদিকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সঙ্গে জিএফআই যৌথভাবে প্রণয়ন করে ‘ইলিসিট ফিন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ফ্রম দ্য লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিজ: ১৯৯০-২০০৮’। ২০১১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে এলডিসিভুক্ত ৪৮টি দেশ থেকে অর্থ পাচারের প্রবণতা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ১৯ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩ হাজার ৪১৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার পাচার হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৯৯০ সালে পাচার হয় ১১১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। মূলত এরশাদ সরকারের পতনের সময়ে এ অর্থ পাচার হয়। গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫— এ পাঁচ বছরে অর্থ পাচারের প্রবণতা সবচেয়ে কম ছিল। ওই পাঁচ বছরে ২০১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার পাচার হয়। এর মধ্যে ১৯৯২ সালে কোনো অর্থই পাচার হয়নি। এর পর অর্থ পাচারের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যায়। ১৯৯৬-২০০০ সালে অর্থ পাচারের পরিমাণ ছিল ৬৫৪ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, ২০০১-০৬ সালে ১ হাজার ২১৬ কোটি ও ২০০৬-০৮ সালে ১ হাজার ২৩৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। গত জুনে ইউএনডিপি প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতার পর চার দশকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ জিডিপির আকারের প্রায় ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ। সে হিসাবে গত চার দশকে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এ অর্থ পাচারের মূল পন্থা আমদানি-রপ্তানিতে পণ্যের মূল্য কম-বেশি দেখানো (মিস ইনভয়েসিং)। আমদানি-রপ্তানিতে পণ্যের মূল্য বেশি ও কম দেখানোর মাধ্যমে পাচার করা অর্থের পরিমাণ ৫৮ দশমিক ২ শতাংশ। বাকিটা বিভিন্ন দেশের এজেন্টের মাধ্যমে হুন্ডি করে পাচার হয়। মন্তব্য
রের স্বাস্থ্য বাজেটের চেয়েও বেশি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে ১১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদনে এ হিসাব জানানো হয়েছে। জিএফআই ‘ইলিসিট ফাইন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ফ্রম ডেভেলপিং কান্ট্রিজ: ২০০৩-১২’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বব্যাপী প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভ কার ও অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্পেনজারস এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। এতে বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে গত এক দশকে কী পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে, তার প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রতি বছরের ডিসেম্বরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৩১ কোটি ৬০ লাখ ডলার অবৈধ পথে বাংলাদেশের বাইরে চলে গেছে। এ ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে ২০০৬ সালে, ২৬৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়। সে সময় অবৈধ উপায়ে দেশের বাইরে চলে যায় ২৪৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর অর্থ পাচার কমে আসে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে ২০১২ সালে তা আবার বেড়ে যায়। অস্বচ্ছ ব্যবসায়িক লেনদেন, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে এ অর্থ স্থানান্তর করা হয়। অর্থ পাচারের যেসব পন্থা রয়েছে, তারই একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিং বা অস্বচ্ছ লেনদেন। জিএফআই বলছে, ২০১২ সালে মিস ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৭৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর হট মানি আউটফ্লো বা ব্যালেন্স অব পেমেন্টের মাধ্যমে পাচার হয়েছে ১০২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণের ক্রমানুসারে ১৫১টি উন্নয়নশীল দেশের একটি তালিকাও তৈরি করেছে জিএফআই। ২০১২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান তাতে ৪৭তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নির্বাচনের সময় যখন ঘনিয়ে আসে, তখন আসন্ন অনিশ্চয়তার কারণে অর্থ পাচার বেড়ে যায়। এ কারণেই ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বেড়েছে, আবার ২০১২ সালে বেড়েছে। যারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অর্থসম্পদ গড়েন, তারা টাকা পাচার করেন। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি সম্প্রতি দেশের বড় বড় শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নিজেদের পরিবার এবং সন্তানদের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, তারা যেভাবে ব্যবসা, কারখানা ও সম্পদ এ দেশে গড়ে তুলেছেন, তাদের সন্তানেরা তা পারবে না। আইএমএফের এই সাবেক কর্মকর্তা মনে করেন, আগামী দিনেও এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। কোনো আইন করে এটা ঠেকানো যাবে না। কেননা, টাকা পাচারের বিষয়টি অনেকাংশে সুশাসনের সঙ্গে জড়িত। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে বলে সম্প্রতি এক জরিপে উঠে এসেছে। এবার পাওয়া গেল অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার চিত্র। এ দুটো আসলে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কালে আর্থিক খাতে কেলেঙ্কারিও বেড়েছে। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা লোকজনই সাধারণত দুর্নীতি, আর্থিক কেলেঙ্কারি ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত থাকে। আর নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নির্বাচনের আগে এগুলো সরিয়ে নেয়া, যার চিত্র জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অর্থ পাচারের চিত্র উদ্বেগজনক আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন বলেন, এটি সরকারের কর আহরণ কমিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহারে ঘাটতি সৃষ্টি করছে। একদিকে সরকার ঋণ ও অনুদান নিচ্ছে, অন্যদিকে দেশের নিজস্ব আয় বাইরে চলে যাচ্ছে। এটি ভবিষ্যতে বৈদেশিক নির্ভরশীলতা বাড়াবে। পাশাপাশি আয়বৈষম্য চরম আকার ধারণ করবে। তবে জিএফআইয়ের প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের উপপ্রধান ও নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, অর্থ পাচার রোধে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বেড়েছে। এছাড়া কাস্টমসের কার্যক্রম অটোমেশন করা হয়েছে। তাই মিস ইনভয়েসিং করা আগের চেয়ে অনেক কঠিন হয়ে গেছে। ফলে বিদেশে অর্থ পাচার আগের চেয়ে কমেছে। জিএফআইয়ের হিসাবে, আলোচ্য এক দশকে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৫১০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার হয়েছে ৮০৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। মূলত রপ্তানির ক্ষেত্রে এ মিস ইনভয়েসিং হয়। এর মধ্যে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার হয়েছে ১৪৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ৬৮৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, পাচার করা অর্থের যে হিসাব করা হয়েছে, তা ধারণামাত্র। বাস্তবে এর চেয়েও বেশি অর্থ পাচার হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ না থাকায় অর্থ পাচার হচ্ছে। পাশাপাশি সুশাসনের অভাবে সহজে দুর্নীতি হচ্ছে। অবৈধ এ অর্থ দেশে নির্বিঘ্নে ব্যবহার করতে না পেরে তা পাচার করা হয়। পর্যাপ্ত নজরদারি ও আইনের শাসনে দুর্বলতা রয়েছে, যা সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। জিএফআই বলছে, ২০০৩ থেকে ২০১২ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অন্তত ৬ লাখ ৫৮ হাজার কোটি ডলার অবৈধ পথে বেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ২০১২ সালেই বেরিয়ে গেছে ৯৯ হাজার ১২৪ কোটি ডলার। ২০০৩-১২ সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে চীন থেকে, যার পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার ২৪১ কোটি ডলারের বেশি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। ২০১২ সালে দেশটি থেকে পাচার হয়েছে ৯৭ হাজার ৩৮৫ কোটি ডলারের বেশি। শীর্ষ পাঁচে এর পর রয়েছে যথাক্রমে মেক্সিকো, ভারত ও মালয়েশিয়া। পাচার হয়ে যাওয়া এসব অর্থ জমা হয়েছে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এবং ট্যাক্স হেভেন বলে পরিচিত বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে। এদিকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সঙ্গে জিএফআই যৌথভাবে প্রণয়ন করে ‘ইলিসিট ফিন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ফ্রম দ্য লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিজ: ১৯৯০-২০০৮’। ২০১১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে এলডিসিভুক্ত ৪৮টি দেশ থেকে অর্থ পাচারের প্রবণতা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ১৯ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩ হাজার ৪১৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার পাচার হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৯৯০ সালে পাচার হয় ১১১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। মূলত এরশাদ সরকারের পতনের সময়ে এ অর্থ পাচার হয়। গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫— এ পাঁচ বছরে অর্থ পাচারের প্রবণতা সবচেয়ে কম ছিল। ওই পাঁচ বছরে ২০১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার পাচার হয়। এর মধ্যে ১৯৯২ সালে কোনো অর্থই পাচার হয়নি। এর পর অর্থ পাচারের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যায়। ১৯৯৬-২০০০ সালে অর্থ পাচারের পরিমাণ ছিল ৬৫৪ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, ২০০১-০৬ সালে ১ হাজার ২১৬ কোটি ও ২০০৬-০৮ সালে ১ হাজার ২৩৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। গত জুনে ইউএনডিপি প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতার পর চার দশকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ জিডিপির আকারের প্রায় ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ। সে হিসাবে গত চার দশকে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এ অর্থ পাচারের মূল পন্থা আমদানি-রপ্তানিতে পণ্যের মূল্য কম-বেশি দেখানো (মিস ইনভয়েসিং)। আমদানি-রপ্তানিতে পণ্যের মূল্য বেশি ও কম দেখানোর মাধ্যমে পাচার করা অর্থের পরিমাণ ৫৮ দশমিক ২ শতাংশ। বাকিটা বিভিন্ন দেশের এজেন্টের মাধ্যমে হুন্ডি করে পাচার হয়। মন্তব্য
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment