Saturday, May 23, 2015

সিরিয়ালের ‘পাখি’, ‘কিরণমালা’ এবার লেখাপড়ার খাতায়:টাইমনিউজ

সিরিয়ালের ‘পাখি’, ‘কিরণমালা’ এবার লেখাপড়ার খাতায় টাইম ডেস্ক টাইম নিউজ বিডি, ২৩ মে, ২০১৫ ১০:২০:১৭ ময়মনসিংহের নান্দাইল ও কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে স্কুলশিক্ষার্থীদের হাতে শোভা পাচ্ছে ভারতীয় সিরিয়ালের নায়িকাদের ছবিসংবলিত মলাটের খাতা। বিক্রিও হচ্ছে দেদার। বিক্রেতারা জানালেন, এসব খাতা শিশুদের কাছে বিক্রি করাটা দৃষ্টিকটু হলেও এর চাহিদা ব্যাপক। তাই তাঁরা বিক্রি করছেন। স্থানীয় শিক্ষক ও অভিভা
বকেরা জানালেন, বিশেষত মায়েরা ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়ালের প্রতি আসক্ত হওয়ায় শিশু-শিক্ষার্থীরাও এতে আসক্ত হচ্ছে। এরই প্রভাব পড়েছে খাতায়। একটি হচ্ছে ‘কিরণমালা খাতা’। এর মলাটে স্টার জলসার কিরণমালা সিরিয়ালটির প্রধান চরিত্রের অভিনেত্রীর বড় ছবি রয়েছে। পাশেই লেখা রয়েছে, ‘রূপকথার রাজকন্যা কিরণমালা কি পারবে অচিনপুরের সুখ ফিরিয়ে আনতে?’ মলাটের নিচের অংশে রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদের ও বিদ্যালয়ের নাম, শ্রেণি, শাখা, বিষয় এবং রোল লেখার জায়গা। একইভাবে ‘পাখি’ খাতাতেও শোভা পাচ্ছে চরিত্রটিতে অভিনয় করা অভিনেত্রী ও এক অভিনেতার ছবি। পাশে লেখা রয়েছে সিরিয়ালটির নাম বোঝে না সে বোঝে না। গত সোমবার সকালে নান্দাইল পৌর শহরের কয়েকটি বই-খাতার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ভালোই বিক্রি হচ্ছে এসব খাতা। একেকটি খাতা ১০ টাকা করে কিনছে শিক্ষার্থীরা। কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, এসব খাতা বিক্রি করতে তাদের খারাপ লাগে। কিন্তু চাহিদা থাকায় এবং ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার তাঁরা এসব খাতা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নান্দাইলের কয়েকজন প্রবীণ শিক্ষক আক্ষেপ করে বলেন, এখনকার শিক্ষার্থীরা দেশের কবি-সাহিত্যিকদের চেনে না। এরা সিরিয়ালের অসুস্থ বিনোদনে অভ্যস্ত হয়ে হিংসা, পরশ্রীকাতরতা শিখছে। খাতা প্রস্তুতকারীরা বিক্রি বাড়ানোর জন্য জেনেশুনেই সিরিয়ালের নায়িকাদের ছবি ব্যবহার করছেন। নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক বলেন, এ ব্যাপারে তিনি আগে নজর দেননি। তিনি নিজে শ্রেণিকক্ষে গিয়ে ছাত্রীদের এসব খাতা বিদ্যালয়ে না আনার নির্দেশ দেবেন বলে জানান। নান্দাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আইনুল ইসলাম বলেন, তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি দিয়ে শিক্ষকদের এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলবেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ভৈরবের প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেবি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারের সামনের বইয়ের দোকানে শিক্ষার্থীদের জটলা দেখা যায়। কৌতূহলবশত দোকানে ঢুকে দেখা যায়, দোকানগুলোতে দেদার বিক্রি হচ্ছে ‘কিরণমালা ও পাখি খাতা’। দোকানিরা জানান, এক মাস আগে থেকে স্টার জলসার সিরিয়ালের খাতা বাজারে আসা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ‘কিরণমালা ও পাখি’ খাতা বাজারে এসেছে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা এসব খাতা সরবরাহ করছেন। এ খাতার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ অনেক। স্টার জলসার ইষ্টি কুটুম, ঠিক যেন লাভ স্টোরি, চোখের তারা তুই, জলনূপুর, তুমি আসবে বলে, বধূবরণ, সব চরিত্র কাল্পনিক, মন নিয়ে কাছাকাছি সিরিয়ালের প্রচ্ছদের ছবিসংবলিত খাতাও বাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে বলে দোকানিরা জানালেন। শিক্ষার্থীদের হাতে এমন খাতা দেখে শিক্ষকেরাও বিব্রত। কয়েকজন শিক্ষক জানান, এত দিন শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধ, গ্রামবাংলার এবং কবি-সাহিত্যিকের ছবি দিয়ে করা প্রচ্ছদের খাতা ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এখন শিক্ষা উপকরণেও পড়েছে ভারতীয় সিরিয়ালের প্রভাব। কেবি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হাতে এমন প্রচ্ছদের খাতা আমাদের লজ্জায় ফেলেছে। এসব সিরিয়াল শিক্ষার্থীদের মনে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’ বোঝে না সে বোঝে না সিরিয়ালের পাখি চরিত্রে অভিনয়কারীর পোশাকে (পাখি ড্রেস) আকৃষ্ট হয়ে কিনতে না পেরে বাংলাদেশে একাধিক কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি সিরিয়াল দেখা নিয়ে স্বামী, স্ত্রী ও গৃহকর্মীদের মধ্যেও মারামারির ঘটনা ঘটে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৭ আগস্ট বাংলাদেশে ভারতীয় তিনটি টিভি চ্যানেল (স্টার জলসা, স্টার প্লাস ও জি বাংলা) সম্প্রচার বন্ধের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দিষ্ট শাখায় রিট করেন এক আইনজীবী।প্রথম আলো ইআর

No comments:

Post a Comment