িংসতায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন,এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বড় অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতিতে পড়বে এনবিআর। এতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি মাঝপথে হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া সরকারের ঋণের বোঝা বাড়ার পাশাপাশি বেসরকারি খাতে অর্থপ্রবাহ কমবে। অর্থনীতির আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হবে। অবরোধ,হরতালসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সহিংসতায় আয়কর,মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং শুল্ক-রাজস্বের এ তিন খাতেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায় সম্ভব হচ্ছে না। এনবিআর সূত্র জানায়, এক দিনের হরতাল, অবরোধে সমুদ্রবন্দরে গড়ে ৪০০ কনটেইনার কম ওঠানামা করে। এতে প্রতিদিন ৬০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক না থাকায় স্থলবন্দরে দৈনিক ১৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। রাজনৈতিক সহিংসতায় দোকানপাটে স্বাভাবিক বেচাকেনা হচ্ছে না। এতে মূসক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ শতাংশ কম আদায় হয়। ফলে দৈনিক ৩৫ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে নেতিবাচক পরিস্থিতি শুল্ক খাতে। টানা অবরোধে বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অবরোধে আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক থাকলে স্থলবন্দরের প্রতিটিতে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০টি ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসে। অবরোধের প্রথম দিকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাক পুলিশ পাহারায় এলেও গত দুই দিনে ট্রাক আসার সংখ্যা আরো কমেছে। অন্যদিকে স্থলবন্দরে অন্য দেশ থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক এসে পৌঁছালেও তা অবরোধের কারণে বাংলাদেশের মধ্যে নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছতে পারছে না। টানা অবরোধে স্থলবন্দরে আটকা পড়েছে পণ্য বোঝাই দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার ট্রাক। অন্যদিকে সমুদ্রবন্দরে রাজস্ব কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বন্দরে পণ্য নেওয়ার হার কমেছে কয়েকগুণ। একইভাবে জাহাজে পণ্য এসে পৌঁছালেও তা খালাস করে দেশের মধ্যে নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছাতে পারছে না। আখাউড়া,হিলি,সোনামসজিদ,বুড়িমারী, বেনাপোল স্থলবন্দরে পণ্য পরিবহন বেশি হয়। ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশি পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতের ত্রিপুরায় পণ্য রপ্তানি হয়। ৩০টি পণ্য নিয়মিত রপ্তানি হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ বন্দর থেকে ভারতের ত্রিপুরায় পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ সরকারের আয় হয়েছে ২২৬ কোটি টাকা। টানা অবরোধে আখাউড়া স্থলবন্দরে পণ্য রপ্তানি কমে গেছে। এনবিআর সূত্র জানায়, নভেম্বরে ৩৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা,ডিসেম্বরে ৪১ কোটি ১৭ লাখ টাকা রপ্তানি আয় হয়। কিন্তু টানা অবরোধে চলতি বছরের গত ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আয় হয়েছে ৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে হিলি স্থলবন্দরে নভেম্বরে আয় হয়েছে এক কোটি ৩৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা,ডিসেম্বরে এক কোটি ৯৬ লাখ টাকা ৭১ হাজার ৭৭০ টাকা। অথচ জানুয়ারি মাসে টানা অবরোধ থাকায় ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আট লাখ টাকা আয় হয়। একইভাবে অন্যান্য স্থলবন্দরেও রপ্তানি আয় কমেছে। অর্থবছরের গত ছয় মাসে ভ্যাট আদায়ে ঘাটতি রয়েছে। এ সময়ে ২৪ হাজার ১২২ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। আদায়ে এ নেতিবাচক ধারার মধ্যেই চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় ভ্যাট আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। চলমান অবরোধে রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরের মধ্যে স্বাভাবিক পণ্য পরিবহন নেই। পুলিশ পাহারায় সীমিতভাবে কিছু পরিবহন চলছে। এতে ছোট-বড় অনেক দোকানের মজুদ শেষ হয়ে এলেও আবার দোকানে পণ্য আনতে পারছে না বিক্রেতারা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পণ্য সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। এতে স্বাভাবিক বেচাকেনা ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি রাজস্ব কর্মকর্তারা ভ্যাট আদায়ে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে ভ্যাট পরিশোধে সময় বাড়ানোর আবেদন করছে ব্যবসায়ীরা। অতীতে দেশের মধ্যে ভ্যাট খাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আদায় সবচেয়ে বেশি হলেও এ দুই অঞ্চলে অবরোধে বিপাকে থাকা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও আদায় সম্ভব হয়নি। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন,দোকানের মালামাল শেষ হয়ে গেলেও অবরোধের কারণে আবারও পণ্য আনা যাচ্ছে না। রাজধানীসহ সারা দেশের দোকানপাটে একই অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে হিসাব মতো রাজস্ব পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজনৈতিক সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আয়কর আদায়ে। অথচ রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আয়কর খাতে। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, ‘২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে হয়। এতে অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় বাধ্য হয়েই এডিপি কাটছাঁট করতে হয়।’ সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় চলতি অর্থবছরে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এত বড় অঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা থাকছে। এতে ব্যয় নির্বাহে সরকার বেকায়দায় পড়বে। ঋণ করতে বাধ্য হবে। বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ কমবে। ফলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’ এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে এ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কৌশলপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এ কৌশলপত্র অনুসরণ করে কাজ করা হচ্ছে। আশা করি চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।’ মন্তব্য
Thursday, January 22, 2015
হরতাল-অবরোধে রাজস্ব আদায়ে ধস:RTNN
হরতাল-অবরোধে রাজস্ব আদায়ে ধস নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: চলতি অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের ৫৯.৮ শতাংশ অর্থায়নের দায় রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাঁধে। এবার এক লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। এই হিসাবে এনবিআরকে প্রতিদিন রাজস্ব আদায় করতে হবে ৪১০ কোটি টাকা, যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। অথচ টানা অবরোধ, বিক্ষিপ্ত হরতালসহ রাজনৈতিক সহ
িংসতায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন,এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বড় অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতিতে পড়বে এনবিআর। এতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি মাঝপথে হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া সরকারের ঋণের বোঝা বাড়ার পাশাপাশি বেসরকারি খাতে অর্থপ্রবাহ কমবে। অর্থনীতির আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হবে। অবরোধ,হরতালসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সহিংসতায় আয়কর,মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং শুল্ক-রাজস্বের এ তিন খাতেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায় সম্ভব হচ্ছে না। এনবিআর সূত্র জানায়, এক দিনের হরতাল, অবরোধে সমুদ্রবন্দরে গড়ে ৪০০ কনটেইনার কম ওঠানামা করে। এতে প্রতিদিন ৬০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক না থাকায় স্থলবন্দরে দৈনিক ১৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। রাজনৈতিক সহিংসতায় দোকানপাটে স্বাভাবিক বেচাকেনা হচ্ছে না। এতে মূসক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ শতাংশ কম আদায় হয়। ফলে দৈনিক ৩৫ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে নেতিবাচক পরিস্থিতি শুল্ক খাতে। টানা অবরোধে বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অবরোধে আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক থাকলে স্থলবন্দরের প্রতিটিতে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০টি ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসে। অবরোধের প্রথম দিকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাক পুলিশ পাহারায় এলেও গত দুই দিনে ট্রাক আসার সংখ্যা আরো কমেছে। অন্যদিকে স্থলবন্দরে অন্য দেশ থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক এসে পৌঁছালেও তা অবরোধের কারণে বাংলাদেশের মধ্যে নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছতে পারছে না। টানা অবরোধে স্থলবন্দরে আটকা পড়েছে পণ্য বোঝাই দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার ট্রাক। অন্যদিকে সমুদ্রবন্দরে রাজস্ব কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বন্দরে পণ্য নেওয়ার হার কমেছে কয়েকগুণ। একইভাবে জাহাজে পণ্য এসে পৌঁছালেও তা খালাস করে দেশের মধ্যে নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছাতে পারছে না। আখাউড়া,হিলি,সোনামসজিদ,বুড়িমারী, বেনাপোল স্থলবন্দরে পণ্য পরিবহন বেশি হয়। ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশি পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতের ত্রিপুরায় পণ্য রপ্তানি হয়। ৩০টি পণ্য নিয়মিত রপ্তানি হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ বন্দর থেকে ভারতের ত্রিপুরায় পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ সরকারের আয় হয়েছে ২২৬ কোটি টাকা। টানা অবরোধে আখাউড়া স্থলবন্দরে পণ্য রপ্তানি কমে গেছে। এনবিআর সূত্র জানায়, নভেম্বরে ৩৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা,ডিসেম্বরে ৪১ কোটি ১৭ লাখ টাকা রপ্তানি আয় হয়। কিন্তু টানা অবরোধে চলতি বছরের গত ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আয় হয়েছে ৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে হিলি স্থলবন্দরে নভেম্বরে আয় হয়েছে এক কোটি ৩৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা,ডিসেম্বরে এক কোটি ৯৬ লাখ টাকা ৭১ হাজার ৭৭০ টাকা। অথচ জানুয়ারি মাসে টানা অবরোধ থাকায় ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আট লাখ টাকা আয় হয়। একইভাবে অন্যান্য স্থলবন্দরেও রপ্তানি আয় কমেছে। অর্থবছরের গত ছয় মাসে ভ্যাট আদায়ে ঘাটতি রয়েছে। এ সময়ে ২৪ হাজার ১২২ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। আদায়ে এ নেতিবাচক ধারার মধ্যেই চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় ভ্যাট আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। চলমান অবরোধে রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরের মধ্যে স্বাভাবিক পণ্য পরিবহন নেই। পুলিশ পাহারায় সীমিতভাবে কিছু পরিবহন চলছে। এতে ছোট-বড় অনেক দোকানের মজুদ শেষ হয়ে এলেও আবার দোকানে পণ্য আনতে পারছে না বিক্রেতারা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পণ্য সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। এতে স্বাভাবিক বেচাকেনা ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি রাজস্ব কর্মকর্তারা ভ্যাট আদায়ে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে ভ্যাট পরিশোধে সময় বাড়ানোর আবেদন করছে ব্যবসায়ীরা। অতীতে দেশের মধ্যে ভ্যাট খাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আদায় সবচেয়ে বেশি হলেও এ দুই অঞ্চলে অবরোধে বিপাকে থাকা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও আদায় সম্ভব হয়নি। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন,দোকানের মালামাল শেষ হয়ে গেলেও অবরোধের কারণে আবারও পণ্য আনা যাচ্ছে না। রাজধানীসহ সারা দেশের দোকানপাটে একই অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে হিসাব মতো রাজস্ব পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজনৈতিক সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আয়কর আদায়ে। অথচ রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আয়কর খাতে। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, ‘২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে হয়। এতে অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় বাধ্য হয়েই এডিপি কাটছাঁট করতে হয়।’ সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় চলতি অর্থবছরে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এত বড় অঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা থাকছে। এতে ব্যয় নির্বাহে সরকার বেকায়দায় পড়বে। ঋণ করতে বাধ্য হবে। বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ কমবে। ফলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’ এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে এ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কৌশলপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এ কৌশলপত্র অনুসরণ করে কাজ করা হচ্ছে। আশা করি চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।’ মন্তব্য
িংসতায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন,এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বড় অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতিতে পড়বে এনবিআর। এতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি মাঝপথে হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া সরকারের ঋণের বোঝা বাড়ার পাশাপাশি বেসরকারি খাতে অর্থপ্রবাহ কমবে। অর্থনীতির আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হবে। অবরোধ,হরতালসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সহিংসতায় আয়কর,মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং শুল্ক-রাজস্বের এ তিন খাতেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায় সম্ভব হচ্ছে না। এনবিআর সূত্র জানায়, এক দিনের হরতাল, অবরোধে সমুদ্রবন্দরে গড়ে ৪০০ কনটেইনার কম ওঠানামা করে। এতে প্রতিদিন ৬০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক না থাকায় স্থলবন্দরে দৈনিক ১৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। রাজনৈতিক সহিংসতায় দোকানপাটে স্বাভাবিক বেচাকেনা হচ্ছে না। এতে মূসক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ শতাংশ কম আদায় হয়। ফলে দৈনিক ৩৫ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে নেতিবাচক পরিস্থিতি শুল্ক খাতে। টানা অবরোধে বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অবরোধে আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক থাকলে স্থলবন্দরের প্রতিটিতে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০টি ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসে। অবরোধের প্রথম দিকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাক পুলিশ পাহারায় এলেও গত দুই দিনে ট্রাক আসার সংখ্যা আরো কমেছে। অন্যদিকে স্থলবন্দরে অন্য দেশ থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক এসে পৌঁছালেও তা অবরোধের কারণে বাংলাদেশের মধ্যে নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছতে পারছে না। টানা অবরোধে স্থলবন্দরে আটকা পড়েছে পণ্য বোঝাই দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার ট্রাক। অন্যদিকে সমুদ্রবন্দরে রাজস্ব কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বন্দরে পণ্য নেওয়ার হার কমেছে কয়েকগুণ। একইভাবে জাহাজে পণ্য এসে পৌঁছালেও তা খালাস করে দেশের মধ্যে নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছাতে পারছে না। আখাউড়া,হিলি,সোনামসজিদ,বুড়িমারী, বেনাপোল স্থলবন্দরে পণ্য পরিবহন বেশি হয়। ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশি পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতের ত্রিপুরায় পণ্য রপ্তানি হয়। ৩০টি পণ্য নিয়মিত রপ্তানি হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ বন্দর থেকে ভারতের ত্রিপুরায় পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ সরকারের আয় হয়েছে ২২৬ কোটি টাকা। টানা অবরোধে আখাউড়া স্থলবন্দরে পণ্য রপ্তানি কমে গেছে। এনবিআর সূত্র জানায়, নভেম্বরে ৩৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা,ডিসেম্বরে ৪১ কোটি ১৭ লাখ টাকা রপ্তানি আয় হয়। কিন্তু টানা অবরোধে চলতি বছরের গত ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আয় হয়েছে ৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে হিলি স্থলবন্দরে নভেম্বরে আয় হয়েছে এক কোটি ৩৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা,ডিসেম্বরে এক কোটি ৯৬ লাখ টাকা ৭১ হাজার ৭৭০ টাকা। অথচ জানুয়ারি মাসে টানা অবরোধ থাকায় ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আট লাখ টাকা আয় হয়। একইভাবে অন্যান্য স্থলবন্দরেও রপ্তানি আয় কমেছে। অর্থবছরের গত ছয় মাসে ভ্যাট আদায়ে ঘাটতি রয়েছে। এ সময়ে ২৪ হাজার ১২২ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। আদায়ে এ নেতিবাচক ধারার মধ্যেই চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় ভ্যাট আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। চলমান অবরোধে রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরের মধ্যে স্বাভাবিক পণ্য পরিবহন নেই। পুলিশ পাহারায় সীমিতভাবে কিছু পরিবহন চলছে। এতে ছোট-বড় অনেক দোকানের মজুদ শেষ হয়ে এলেও আবার দোকানে পণ্য আনতে পারছে না বিক্রেতারা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পণ্য সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। এতে স্বাভাবিক বেচাকেনা ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি রাজস্ব কর্মকর্তারা ভ্যাট আদায়ে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে ভ্যাট পরিশোধে সময় বাড়ানোর আবেদন করছে ব্যবসায়ীরা। অতীতে দেশের মধ্যে ভ্যাট খাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আদায় সবচেয়ে বেশি হলেও এ দুই অঞ্চলে অবরোধে বিপাকে থাকা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও আদায় সম্ভব হয়নি। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন,দোকানের মালামাল শেষ হয়ে গেলেও অবরোধের কারণে আবারও পণ্য আনা যাচ্ছে না। রাজধানীসহ সারা দেশের দোকানপাটে একই অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে হিসাব মতো রাজস্ব পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজনৈতিক সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আয়কর আদায়ে। অথচ রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আয়কর খাতে। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, ‘২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে হয়। এতে অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় বাধ্য হয়েই এডিপি কাটছাঁট করতে হয়।’ সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় চলতি অর্থবছরে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এত বড় অঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা থাকছে। এতে ব্যয় নির্বাহে সরকার বেকায়দায় পড়বে। ঋণ করতে বাধ্য হবে। বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ কমবে। ফলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’ এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে এ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কৌশলপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এ কৌশলপত্র অনুসরণ করে কাজ করা হচ্ছে। আশা করি চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।’ মন্তব্য
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment