Thursday, January 29, 2015

৮৭৯ নারী সৈনিকের শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী  :RTNN

৮৭৯ নারী সৈনিকের শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী   নিজস্ব প্রতিনিধি আরটিএনএন টাঙ্গাইল:  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের নারীরা পিছিয়ে নেই। শ্রম, মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে তারা। এরই মধ্যে দুঃসাহসী ও চ্যালেঞ্জি কর্মকাণ্ডে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে নারীরা। বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের শহীদ সালাউদ্দিন সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রথম নারী মিলিটারি প্যারা
মেডিকস রিক্রুট ব্যাচের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে নারীরা যোগ দিলেন।  মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে বৃহস্পতিবার ৮৭৯ জন নারী সৈনিক শপথ নিলেন।   শপথ নেয়া এই নারী সৈনিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পেশাগত উৎকর্ষ, ত্যাগের মহান ব্রত নিয়ে   প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জি পেশায় নারীর অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।   সশস্ত্র বাহিনীকে একুশ শতকের চৌকস পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আর্মি মেডিকেল কোরে নারী অফিসারের পাশাপাশি অন্যান্য কোরেও নারী অফিসার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় তার সরকার। ২০০০ সালে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন আর্মস ও সার্ভিসে মহিলা অফিসাররা দেশে ও শান্তিরক্ষা মিশনে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীতে নারী অফিসারের পাশাপাশি নারী সৈনিক নিয়োগেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজের অর্ধেক জনসংখ্যাই নারী। নারীদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো ক্ষেত্রেই পূর্ণাঙ্গ সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা জানি ক্রিমিয়ান যুদ্ধে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল এর সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে নার্সিং সার্ভিসের পথচলা শুরু হয়েছিল। সেই নার্সিং সার্ভিস আজ পৃথিবীর সকল পেশাদার সেনাবাহিনীর অনিবার্য অংশ হিসেবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিকেল সার্ভিস আরো বিস্তৃত, আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আর্মি মেডিকেল কোর সেন্টার অ্যান্ড স্কুলকে ‘ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল অ্যান্ড হেলথ টেকনোলজি’ পরিচালনার অনুমতি দেয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী সৈনিকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  আজকের দিনটি আপনাদের জীবেন অত্যন্ত আনন্দের এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত সৈনিক হিসেবে আপনারা বৃহত্তর কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। আপনাদের উপর ন্যস্ত হচ্ছে দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। এএমসি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল অ্যান্ড হেলথ টেকনোলজি সম্পন্ন করে সেনাবাহিনীর চিকিৎসাসেবায় এই সৈনিকরা বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেবার মহান ব্রত নিয়ে আজ আপনারা শপথ গ্রহণ করলেন। আপনাদের আত্মত্যাগ, দায়িত্বের প্রতি একাগ্রতা ও পেশাদারিত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের চিকিৎসাসেবায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাবাদী। তিনি বলেন, ইসলামের সেবার প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন একজন নারী। তিনি বিবি খাদিজা। প্রায় শত বছর আগে বেগম রোকেয়া বাঙালি মুসলিম নারী সমাজকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন। বেগম রোকেয়ার অবদান বাঙালি নারীর জন্য চিরকালের প্রেরণা হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের উজ্জ্বল ভূমিকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  আমার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আগাগোড়া এই সংগ্রামে ধৈর্য ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। সদা সর্বদা জাতির পিতার পাশে থেকে প্রেরণা দেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি দমে যাননি। প্রধানমন্ত্রী আরো স্মরণ করেন, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডা. সেতারা বেগম এবং তারামন বিবির কথা।তিনি বলেন,  তারা আমাদের গর্ব ও অহঙ্কার। ৭১-এ নারীরা সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়ে এবং খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে, অনুপ্রেরণা ও ত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, তা ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের নারীরা আজ আর পিছিয়ে নেই। নিজেদের শ্রম, মেধা এবং দক্ষতা দিয়ে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নারীরা এগিয়ে চলছে সর্বক্ষেত্রে। ইতোমধ্যে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জিং এবং দুঃসাহসিক কাজে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন নারীরা। নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজনীনের এভারেস্টজয়, সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌসের প্রথম মহিলা ছত্রীসেনা হওয়ার গৌরব অর্জন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাঈমা হক এবং ফ্লাইং অফিসার তামান্না-ই-লুৎফীর প্রথম সামরিক বৈমানিক হওয়ার যোগ্যতা লাভের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এদের সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি।   নবীন নারী সৈনিকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষ করে গর্বিত সদস্য হিসেবে আজ আপনারা সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হলেন। আপনাদের মনে রাখতে হবে আপনারা এদেশের জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মন্তব্য      


No comments:

Post a Comment