Friday, December 26, 2014

না-ফেরার দেশে চলে গেলেন যারা:Time News

না-ফেরার দেশে চলে গেলেন যারা জাকিরুল আহসান টাইম নিউজ বিডি, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০৯:৪৯:২৩ কিছু মানুষ সূর্যের মতো উদিত হয়, তাদের মেধা, মনন আর সৃষ্টির কল্যাণে আলোকিত হয়ে ওঠে জগৎ সংসার। তেমনি আলোকিত মানুষদের প্রতিনিয়তই আমরা হারিয়ে চলেছি সময়ের পরিক্রমায়। মৃত্যুজনিত এই শূন্যতা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। তবু চিরাচরিত নিয়মে ২০১৪ সালেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। কীর্তি মানের কখনোই মৃত্যু নেই। ত
ারা আমাদের মাঝে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। গভীর শ্রদ্ধার সাথে আমরা তাদেরকে স্মরণ করছি ও আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন ৮ অক্টোবর সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। আব্দুল মতিন ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার ধুবালীয়ায় এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আব্দুল জলিল এবং মায়ের নাম আমেনা খাতুন। তিনি ছিলেন তাদের প্রথম সন্তান। তিনি ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব আর্টস (পাস কোর্স) এ ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে গ্র্যাজুয়েশন কোর্স শেষ করেন এবং পরে মাস্টার্স করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান সৈনিক। ড. পিয়াস করিম ১৩ অক্টোবর সোমবার ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম। পিয়াস করিমের জন্ম ২৩ অক্টোবর ১৯৫৮ কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার রামপুর গ্রামে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. পিয়াস করিম। আসল নাম ড. মঞ্জুরুল করিম। বাবা এ্যাডভোকেট এমএ করিম। তার ডাক নাম পিয়াস। তবে তিনি পিয়াস করিম নামেই বেশি পরিচিত। স্ত্রী ড. আমেনা মহসিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যাপনা করছেন। বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম সোনালি আঁশের সুদিন ফেরানোর স্বপ্ন দেখানো বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ২১ ডিসেম্বর শনিবার রাত দুইটায় যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের কুইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। মাকসুদুল আলম কয়েক বছর ধরে কিডনির জটিল রোগে ভুগছিলেন। মাকসুদুল আলম ছিলেন জিনতত্ত্ববিদ। বাংলাদেশের সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন এই বিজ্ঞানী। ১৯৫৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর মাদারীপুরে জন্মগ্রহণ করেন মাকসুদুল আলম। স্বাধীনতার পর মাকসুদুল আলম রাশিয়ায় চলে যান এবং সেখানে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে অণুপ্রাণবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৮৭ সালে প্রাণরসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। আয়েশা ফয়েজ ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। আয়েশা ফয়েজের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৩ মার্চ, নানাবাড়ি বারহাট্টার কৈলাটি গ্রামে। বাবা শেখ আবুল হোসেন এবং মা খায়রুন নেসা। ১৯৪৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি পরিচয় সূত্রে আবদ্ধ হন ফয়জুর রহমানের সঙ্গে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তার স্বামীকে হারান। আয়েশা ফয়েজের তিন ছেলে হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব এবং তিন মেয়ে শেকু, শেফু ও মণি। সাংবাদিক মাহবুবুল আলম চলে গেলেন ইংরেজি দৈনিক দ্য ইনডিপেনডেন্টের সাবেক সম্পাদক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম। ৬ জুন রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। মাহবুবুল আলম ১৯৩৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথ্য উপদেষ্টা ছিলেন। প্রখ্যাত সাংবাদিক জগলুল আহমদ চৌধুরী সিনিয়র সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক জগলুল আহমেদ চৌধুরী ২৯ নভেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসসের প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শেষে ইংরেজি দৈনিক ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসে কর্মরত ছিলেন তিনি। এর আগে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৫বছর। সাংবাদিক এ বি এম মুসা দেশের প্রতিথযশা সাংবাদিক এবং সাংবাদিকতা জগতের অন্যতম পথিকৃত এবিএম মুসা ৯ এপ্রিল বুধবার রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ক্লাবের আজীবন সদস্য বিশিষ্ট সাংবাদিক এবিএম মুসা ১৯৩১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তার নানার বাড়ি ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার ধর্মপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে ৬৪ বছর ধরে সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৫০ সালে দৈনিক ইনসাফে তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয়। ওই বছর তিনি ইংরেজী দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারে যোগ দেন। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্রতিবেদক, ক্রীড়া প্রতিবেদক ও বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিবিসি, সানডে টাইমস পত্রিকার সংবাদদাতা হিসেবে রণাঙ্গন থেকে সংবাদ পাঠাতেন। স্বাধীনতার পর এবিএম মুসা বিটিভির মহাব্যবস্থাপক ও মর্নিং নিউজের সম্পাদক ছিলেন। জাতীয় অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদ ১৯ অক্টোবর রোববার ভোরে বনানীতে নিজের বাসায় মারা গেছেন জাতীয় অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদের। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। ইতিহাস চর্চায় বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক এবং স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করেন সালাহউদ্দীন আহমদ। স্মৃতিসৌধের স্থপতি মঈনুল হোসেন জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন ১০ নভেম্বর সোমবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে (এনআইসিভিডি) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তার জন্ম ১৯৫২ সালের ৫ মে মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ীর দামপাড়া গ্রামে। চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ৩০ নভেম্বর রোববার রাতে ইন্তেকাল করেন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। কাইয়ুম চৌধুরী ১৯৩৪ সালের ৯ মার্চ ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী ছিলেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তাকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। ১৯৪৯ সালে আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে কাইয়ুম চৌধুরী কৃতিত্বের সঙ্গে শিক্ষা সমাপন করেন ১৯৫৪ সালে। ১৯৫৭ সালে কাইয়ুম চৌধুরী আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন। অভিনেতা খলিলুল্লাহ খান জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা খলিলুল্লাহ খান ৮ ডিসেম্বর স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তিকাল করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০। ২০১২ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন। জীবদ্দশায় অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন এ অভিনেতা। ‘প্রীত না জানে রীত’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন খলিলুল্লাহ খান। তার অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সংগম, সোনার কাজল, অশান্ত ঢেউ, হাওর সন্নাসী, বেগানা, পুনম কি রাত, নদের চাঁদ, মাটির ঘর, পাগলা রাজা, ফকির মজনু শাহ, বেঈমান প্রভৃতি। ভাষা সৈনিক আব্দুস সামাদ ভাষা সৈনিক আলহাজ অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ ১৩ সেপ্টেম্বর ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেল রোডস্থ বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। প্রবীণ এই আইনজীবী ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রবীণ সংগঠক, জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও আমরা হারিয়েছি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সিরাজুল ইসলাম, স্বাধীন বাংলা বেতারের শব্দ সৈনিক বাবুয়া বোস, আলোকচিত্রী আজিজুর রহীম পিউ, অধ্যাপক লতিফা আকন্দ, কণ্ঠশিল্পী মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, ধারাভাষ্যকার মঞ্জুর হোসেন মিন্টু, প্রবীণ সাংবাদিক ফওজুল করিম, বিশিষ্ট নজরুল সংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগমকে। জেএ  


No comments:

Post a Comment