্যু হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, উদ্ধারের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে জিয়াদের মৃত্যু হয়েছে। তার আগে এত সময় জীবিতই ছিল শিশুটি। এলাকাবাসী বলছেন, শুরু থেকেই স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে নিয়ে কাজ করলে হয়তো জিয়াদকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা যেত। গত শুক্রবার বিকেল ৪টায় খেলা করতে করতে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে ওয়াসার একটি খোলা পাইপের মধ্যে পড়ে যায় চার বছরের শিশু জিয়াদ। পাইপের ভেতর থেকে চিৎকার শুনে পুষ্পিতা নামে একটি মেয়ে সবাইকে ডাকাডাকি শুরু করে। এরপর পুষ্পিতার বাবা জাহিদ পাইপের কাছে গিয়ে কথা বলেন এবং প্রায় ৩০০ ফুট নিচ থেকে জিয়াদ তার কথার উত্তর দেয়। এরপর খবর দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসকে। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে জিয়াদকে উদ্ধারকার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে তারা পাইপের ভেতর একটি রশি ফেলে। ফায়ার সার্ভিসের দাবি, জিয়াদ রশি ধরলে তারা টেনে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু মাঝপথে আসতেই জিয়াদ রশি ছেড়ে দেয়। এরপর একটি চটের ব্যাগ দেয়া হয়। কিন্তু ছোট্ট শিশু জিয়াদ ব্যাগে বসার কথা মাথায় আনতে পারেনি। যার কারণে সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে পাইপের মধ্যে কয়েক দফা অক্সিজেন দেয়া হয়। জিয়াদের অবস্থান জানতে তৃতীয় দফায় একটি সিসি ক্যামেরা পাঠানো হয় পাইপের ভেতর। কিন্তু সেটা মাঝপথে গিয়ে বিকল হয়ে পড়ে। অবশেষে আনা হয় অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন গোল্ড হোল নামে ক্যামেরা। এই ক্যামেরাটি চালু করতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় চলে যায়। বলা হয়, কেনার পর থেকে এই মেশিনটি কখনো চালানো হয়নি। একপর্যায়ে চালু হয় যন্ত্রটি। পাঠানো হয় পাইপের ভেতর। মেশিনটি পাইপের ভেতর থেকে টিকটিকি, ব্যাঙ, তেলাপোকাসহ বিভিন্ন বস্তুর ছবি পাঠালেও জিয়াদের কোনো ছবি পাঠাতে পারেনি। একপর্যায়ে সেই যন্ত্রটিও তুলে নেয়া হয়। এ সময় এনএসআইর একজন কর্মকর্তাসহ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই পাইপের মধ্যে মানব শিশুর কোনো অস্তিত্বই নেই’। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো’। পরদিন (গতকাল) শনিবার আবার পাঠানো হয় অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরাটি। তখন পাইপের নিচে কঠিন কোনো বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়। ওই বস্তুটির কারণে যন্ত্রটিকে নিচে নামানো যাচ্ছিল না। বস্তুটিকে ভাঙতে হাতুরিজাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। কিন্তু সেটিকে ভাঙা সম্ভব হয়নি। এর পর থেকেই মূলত ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম শিথিল করা হয়। বেলা আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আলী আহম্মদ খান সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ২৩ ঘণ্টার উদ্ধারকার্যক্রম স্থগিত হয়েছে বলে ঘোষণা দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই পাইপে জিয়াদের কোনো অস্তিত্বই নেই। ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম সিথিল হওয়ার পর স্থানীয় কয়েকজন সাধারণ ও স্বেচ্ছাসেবী নিজের প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ধারকার্যক্রম চালাতে চান। ফায়ার সার্ভিস তাদের অনুমতি দেয়ায় তারা দ্রুতগতিতে দু’টি ক্যাচার বা খাঁচা তৈরি করেন। মহাপরিচালকের সংবাদ সম্মেলন চলা অবস্থায়ই তারা একটি খাঁচা পাইপে ঢুকিয়ে দেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র ২৩ মিনিটের মধ্যে তারা শিশু জিয়াদকে ওপরে তুলে নিয়ে আসেন। কিন্তু তখন জিয়াদ আর বেঁচে নেই। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলছিলেন, অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে ফায়ার সার্ভিস যে কাজ ২৩ ঘণ্টায় করতে পারেনি, সাধারণ মানুষ সাধারণ যন্ত্র ব্যবহার করে সেই কাজ ২৩ মিনিটে করেছে; কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। যাদের সাহসিকতায় উদ্ধার হয় জিয়াদ : সাভারে রানা প্লাজায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আহত-নিহতদের উদ্ধারকারীদের মতো কয়েকজন সাহসী যুবক গত শুক্রবার রাত থেকেই ভিড় করতে থাকেন ঘটনাস্থলে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা যখন বারবার উদ্ধারে ব্যর্থ হচ্ছিলেন, তখন তারা দায়িত্ব নিতে চাইলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। গতকাল সকাল থেকেই যখন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান থেমে যায় তখন বেশ কয়েকজন যুবক তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ধারের চেষ্টা চালান। জানা গেছে, তাদের কেউই পূর্বপরিচিত নন। তাদের কেউ মিরপুর, পুরানা পল্টন আবার কেউ বসুন্ধরা এলাকা থেকে এসেছেন। এদের কেউ কাজ করেন ওয়েল্ডিং কারখানায়, সিসি ক্যামেরার দোকান আর কেউ সেনেটারি ওয়ার্কার। এদের মধ্যে মুরাদ, আবুবক্কর সিদ্দিক, আনোয়ার, বাবলু, আলমগীরসহ আরো কয়েকজন মিলে লোহার খাঁচা তৈরির কাজ শুরু করেন। তাদের খাঁচা বানাতে সার্বিক সহযোগিতা করে আইকন ইঞ্জিনিয়ারিং। আবুবক্কর জানান, তারা তিনটি লোহার রডকে তিনটি পৃথক চাকতির মাধ্যমে ঝালাই করে আটকে দেন। এর মাথায় কয়েকটি আংটার মতো তৈরি করেন। মাঝখানে বসানো হয় সিসি ক্যামেরা ও টর্চ লাইট। মুরাদ জানান, তিনি সিসি ক্যামেরার কাজ করেন। টেলিভিশনে জিয়াদের আটকে যাওয়ার খবর দেখে রাতেই বন্ধু আনোয়ারকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। সাথে আনেন ৯০০ ফুট লম্বা ডি-লিংকের ক্যাট-সিক্স তার এবং একটি আধুনিক সিসি ক্যামেরা। তারা ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ি থেকে একটি ২১ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন আনেন। এরপর খাঁচার সাথে ক্যামেরাজুড়ে দিয়ে খাঁচাটিকে নলকূপে নামান। তাদের নিজস্ব উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তিতে মাত্র ২৩ মিনিটের মাথায় তারা জিয়াদকে উদ্ধারে সফল হন। উদ্ধারের পর উদ্ধারকারী যুবকদের নিয়ে টানাহেঁচড়া পড়ে যায়। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল তাদের এ বীরত্বের কথা তুলে ধরেন। সিদ্দিক জানান, আমাদের সকাল বেলাও যদি কাজ করতে দিত তাহলে হয়তো শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করতে পারতাম। আর তখনই আমাদের চেষ্টা সফল হতো।সূত্র: নয়াদিগন্ত ইআর
Sunday, December 28, 2014
ফায়ার সার্ভিসের ২৩ ঘণ্টা স্বেচ্ছাসেবীদের ২৩ মিনিট:Time News
ফায়ার সার্ভিসের ২৩ ঘণ্টা স্বেচ্ছাসেবীদের ২৩ মিনিট টাইম ডেস্ক টাইম নিউজ বিডি, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১০:০৩:২৫ ২৩ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও শিশু জিয়াদকে উদ্ধার করতে পারেননি ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা। এমনকি তারা বলেছেন পাইপের মধ্যে জিয়াদের কোনো অস্তিত্বই নেই। অথচ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের মাত্র ২৩ মিনিটের চেষ্টায় সেই পাইপ থেকেই উদ্ধার করা হয় শিশু জিয়াদকে। তবে জীবিত নয়, মৃত। সময়ক্ষেপণের কারণে পাইপের ভেতরই জিয়াদের মৃত
্যু হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, উদ্ধারের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে জিয়াদের মৃত্যু হয়েছে। তার আগে এত সময় জীবিতই ছিল শিশুটি। এলাকাবাসী বলছেন, শুরু থেকেই স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে নিয়ে কাজ করলে হয়তো জিয়াদকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা যেত। গত শুক্রবার বিকেল ৪টায় খেলা করতে করতে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে ওয়াসার একটি খোলা পাইপের মধ্যে পড়ে যায় চার বছরের শিশু জিয়াদ। পাইপের ভেতর থেকে চিৎকার শুনে পুষ্পিতা নামে একটি মেয়ে সবাইকে ডাকাডাকি শুরু করে। এরপর পুষ্পিতার বাবা জাহিদ পাইপের কাছে গিয়ে কথা বলেন এবং প্রায় ৩০০ ফুট নিচ থেকে জিয়াদ তার কথার উত্তর দেয়। এরপর খবর দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসকে। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে জিয়াদকে উদ্ধারকার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে তারা পাইপের ভেতর একটি রশি ফেলে। ফায়ার সার্ভিসের দাবি, জিয়াদ রশি ধরলে তারা টেনে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু মাঝপথে আসতেই জিয়াদ রশি ছেড়ে দেয়। এরপর একটি চটের ব্যাগ দেয়া হয়। কিন্তু ছোট্ট শিশু জিয়াদ ব্যাগে বসার কথা মাথায় আনতে পারেনি। যার কারণে সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে পাইপের মধ্যে কয়েক দফা অক্সিজেন দেয়া হয়। জিয়াদের অবস্থান জানতে তৃতীয় দফায় একটি সিসি ক্যামেরা পাঠানো হয় পাইপের ভেতর। কিন্তু সেটা মাঝপথে গিয়ে বিকল হয়ে পড়ে। অবশেষে আনা হয় অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন গোল্ড হোল নামে ক্যামেরা। এই ক্যামেরাটি চালু করতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় চলে যায়। বলা হয়, কেনার পর থেকে এই মেশিনটি কখনো চালানো হয়নি। একপর্যায়ে চালু হয় যন্ত্রটি। পাঠানো হয় পাইপের ভেতর। মেশিনটি পাইপের ভেতর থেকে টিকটিকি, ব্যাঙ, তেলাপোকাসহ বিভিন্ন বস্তুর ছবি পাঠালেও জিয়াদের কোনো ছবি পাঠাতে পারেনি। একপর্যায়ে সেই যন্ত্রটিও তুলে নেয়া হয়। এ সময় এনএসআইর একজন কর্মকর্তাসহ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই পাইপের মধ্যে মানব শিশুর কোনো অস্তিত্বই নেই’। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো’। পরদিন (গতকাল) শনিবার আবার পাঠানো হয় অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরাটি। তখন পাইপের নিচে কঠিন কোনো বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়। ওই বস্তুটির কারণে যন্ত্রটিকে নিচে নামানো যাচ্ছিল না। বস্তুটিকে ভাঙতে হাতুরিজাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। কিন্তু সেটিকে ভাঙা সম্ভব হয়নি। এর পর থেকেই মূলত ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম শিথিল করা হয়। বেলা আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আলী আহম্মদ খান সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ২৩ ঘণ্টার উদ্ধারকার্যক্রম স্থগিত হয়েছে বলে ঘোষণা দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই পাইপে জিয়াদের কোনো অস্তিত্বই নেই। ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম সিথিল হওয়ার পর স্থানীয় কয়েকজন সাধারণ ও স্বেচ্ছাসেবী নিজের প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ধারকার্যক্রম চালাতে চান। ফায়ার সার্ভিস তাদের অনুমতি দেয়ায় তারা দ্রুতগতিতে দু’টি ক্যাচার বা খাঁচা তৈরি করেন। মহাপরিচালকের সংবাদ সম্মেলন চলা অবস্থায়ই তারা একটি খাঁচা পাইপে ঢুকিয়ে দেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র ২৩ মিনিটের মধ্যে তারা শিশু জিয়াদকে ওপরে তুলে নিয়ে আসেন। কিন্তু তখন জিয়াদ আর বেঁচে নেই। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলছিলেন, অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে ফায়ার সার্ভিস যে কাজ ২৩ ঘণ্টায় করতে পারেনি, সাধারণ মানুষ সাধারণ যন্ত্র ব্যবহার করে সেই কাজ ২৩ মিনিটে করেছে; কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। যাদের সাহসিকতায় উদ্ধার হয় জিয়াদ : সাভারে রানা প্লাজায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আহত-নিহতদের উদ্ধারকারীদের মতো কয়েকজন সাহসী যুবক গত শুক্রবার রাত থেকেই ভিড় করতে থাকেন ঘটনাস্থলে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা যখন বারবার উদ্ধারে ব্যর্থ হচ্ছিলেন, তখন তারা দায়িত্ব নিতে চাইলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। গতকাল সকাল থেকেই যখন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান থেমে যায় তখন বেশ কয়েকজন যুবক তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ধারের চেষ্টা চালান। জানা গেছে, তাদের কেউই পূর্বপরিচিত নন। তাদের কেউ মিরপুর, পুরানা পল্টন আবার কেউ বসুন্ধরা এলাকা থেকে এসেছেন। এদের কেউ কাজ করেন ওয়েল্ডিং কারখানায়, সিসি ক্যামেরার দোকান আর কেউ সেনেটারি ওয়ার্কার। এদের মধ্যে মুরাদ, আবুবক্কর সিদ্দিক, আনোয়ার, বাবলু, আলমগীরসহ আরো কয়েকজন মিলে লোহার খাঁচা তৈরির কাজ শুরু করেন। তাদের খাঁচা বানাতে সার্বিক সহযোগিতা করে আইকন ইঞ্জিনিয়ারিং। আবুবক্কর জানান, তারা তিনটি লোহার রডকে তিনটি পৃথক চাকতির মাধ্যমে ঝালাই করে আটকে দেন। এর মাথায় কয়েকটি আংটার মতো তৈরি করেন। মাঝখানে বসানো হয় সিসি ক্যামেরা ও টর্চ লাইট। মুরাদ জানান, তিনি সিসি ক্যামেরার কাজ করেন। টেলিভিশনে জিয়াদের আটকে যাওয়ার খবর দেখে রাতেই বন্ধু আনোয়ারকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। সাথে আনেন ৯০০ ফুট লম্বা ডি-লিংকের ক্যাট-সিক্স তার এবং একটি আধুনিক সিসি ক্যামেরা। তারা ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ি থেকে একটি ২১ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন আনেন। এরপর খাঁচার সাথে ক্যামেরাজুড়ে দিয়ে খাঁচাটিকে নলকূপে নামান। তাদের নিজস্ব উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তিতে মাত্র ২৩ মিনিটের মাথায় তারা জিয়াদকে উদ্ধারে সফল হন। উদ্ধারের পর উদ্ধারকারী যুবকদের নিয়ে টানাহেঁচড়া পড়ে যায়। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল তাদের এ বীরত্বের কথা তুলে ধরেন। সিদ্দিক জানান, আমাদের সকাল বেলাও যদি কাজ করতে দিত তাহলে হয়তো শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করতে পারতাম। আর তখনই আমাদের চেষ্টা সফল হতো।সূত্র: নয়াদিগন্ত ইআর
্যু হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, উদ্ধারের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে জিয়াদের মৃত্যু হয়েছে। তার আগে এত সময় জীবিতই ছিল শিশুটি। এলাকাবাসী বলছেন, শুরু থেকেই স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে নিয়ে কাজ করলে হয়তো জিয়াদকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা যেত। গত শুক্রবার বিকেল ৪টায় খেলা করতে করতে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে ওয়াসার একটি খোলা পাইপের মধ্যে পড়ে যায় চার বছরের শিশু জিয়াদ। পাইপের ভেতর থেকে চিৎকার শুনে পুষ্পিতা নামে একটি মেয়ে সবাইকে ডাকাডাকি শুরু করে। এরপর পুষ্পিতার বাবা জাহিদ পাইপের কাছে গিয়ে কথা বলেন এবং প্রায় ৩০০ ফুট নিচ থেকে জিয়াদ তার কথার উত্তর দেয়। এরপর খবর দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসকে। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে জিয়াদকে উদ্ধারকার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে তারা পাইপের ভেতর একটি রশি ফেলে। ফায়ার সার্ভিসের দাবি, জিয়াদ রশি ধরলে তারা টেনে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু মাঝপথে আসতেই জিয়াদ রশি ছেড়ে দেয়। এরপর একটি চটের ব্যাগ দেয়া হয়। কিন্তু ছোট্ট শিশু জিয়াদ ব্যাগে বসার কথা মাথায় আনতে পারেনি। যার কারণে সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে পাইপের মধ্যে কয়েক দফা অক্সিজেন দেয়া হয়। জিয়াদের অবস্থান জানতে তৃতীয় দফায় একটি সিসি ক্যামেরা পাঠানো হয় পাইপের ভেতর। কিন্তু সেটা মাঝপথে গিয়ে বিকল হয়ে পড়ে। অবশেষে আনা হয় অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন গোল্ড হোল নামে ক্যামেরা। এই ক্যামেরাটি চালু করতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় চলে যায়। বলা হয়, কেনার পর থেকে এই মেশিনটি কখনো চালানো হয়নি। একপর্যায়ে চালু হয় যন্ত্রটি। পাঠানো হয় পাইপের ভেতর। মেশিনটি পাইপের ভেতর থেকে টিকটিকি, ব্যাঙ, তেলাপোকাসহ বিভিন্ন বস্তুর ছবি পাঠালেও জিয়াদের কোনো ছবি পাঠাতে পারেনি। একপর্যায়ে সেই যন্ত্রটিও তুলে নেয়া হয়। এ সময় এনএসআইর একজন কর্মকর্তাসহ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই পাইপের মধ্যে মানব শিশুর কোনো অস্তিত্বই নেই’। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো’। পরদিন (গতকাল) শনিবার আবার পাঠানো হয় অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরাটি। তখন পাইপের নিচে কঠিন কোনো বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়। ওই বস্তুটির কারণে যন্ত্রটিকে নিচে নামানো যাচ্ছিল না। বস্তুটিকে ভাঙতে হাতুরিজাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। কিন্তু সেটিকে ভাঙা সম্ভব হয়নি। এর পর থেকেই মূলত ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম শিথিল করা হয়। বেলা আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আলী আহম্মদ খান সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ২৩ ঘণ্টার উদ্ধারকার্যক্রম স্থগিত হয়েছে বলে ঘোষণা দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই পাইপে জিয়াদের কোনো অস্তিত্বই নেই। ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম সিথিল হওয়ার পর স্থানীয় কয়েকজন সাধারণ ও স্বেচ্ছাসেবী নিজের প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ধারকার্যক্রম চালাতে চান। ফায়ার সার্ভিস তাদের অনুমতি দেয়ায় তারা দ্রুতগতিতে দু’টি ক্যাচার বা খাঁচা তৈরি করেন। মহাপরিচালকের সংবাদ সম্মেলন চলা অবস্থায়ই তারা একটি খাঁচা পাইপে ঢুকিয়ে দেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র ২৩ মিনিটের মধ্যে তারা শিশু জিয়াদকে ওপরে তুলে নিয়ে আসেন। কিন্তু তখন জিয়াদ আর বেঁচে নেই। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলছিলেন, অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে ফায়ার সার্ভিস যে কাজ ২৩ ঘণ্টায় করতে পারেনি, সাধারণ মানুষ সাধারণ যন্ত্র ব্যবহার করে সেই কাজ ২৩ মিনিটে করেছে; কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। যাদের সাহসিকতায় উদ্ধার হয় জিয়াদ : সাভারে রানা প্লাজায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আহত-নিহতদের উদ্ধারকারীদের মতো কয়েকজন সাহসী যুবক গত শুক্রবার রাত থেকেই ভিড় করতে থাকেন ঘটনাস্থলে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা যখন বারবার উদ্ধারে ব্যর্থ হচ্ছিলেন, তখন তারা দায়িত্ব নিতে চাইলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। গতকাল সকাল থেকেই যখন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান থেমে যায় তখন বেশ কয়েকজন যুবক তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ধারের চেষ্টা চালান। জানা গেছে, তাদের কেউই পূর্বপরিচিত নন। তাদের কেউ মিরপুর, পুরানা পল্টন আবার কেউ বসুন্ধরা এলাকা থেকে এসেছেন। এদের কেউ কাজ করেন ওয়েল্ডিং কারখানায়, সিসি ক্যামেরার দোকান আর কেউ সেনেটারি ওয়ার্কার। এদের মধ্যে মুরাদ, আবুবক্কর সিদ্দিক, আনোয়ার, বাবলু, আলমগীরসহ আরো কয়েকজন মিলে লোহার খাঁচা তৈরির কাজ শুরু করেন। তাদের খাঁচা বানাতে সার্বিক সহযোগিতা করে আইকন ইঞ্জিনিয়ারিং। আবুবক্কর জানান, তারা তিনটি লোহার রডকে তিনটি পৃথক চাকতির মাধ্যমে ঝালাই করে আটকে দেন। এর মাথায় কয়েকটি আংটার মতো তৈরি করেন। মাঝখানে বসানো হয় সিসি ক্যামেরা ও টর্চ লাইট। মুরাদ জানান, তিনি সিসি ক্যামেরার কাজ করেন। টেলিভিশনে জিয়াদের আটকে যাওয়ার খবর দেখে রাতেই বন্ধু আনোয়ারকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। সাথে আনেন ৯০০ ফুট লম্বা ডি-লিংকের ক্যাট-সিক্স তার এবং একটি আধুনিক সিসি ক্যামেরা। তারা ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ি থেকে একটি ২১ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন আনেন। এরপর খাঁচার সাথে ক্যামেরাজুড়ে দিয়ে খাঁচাটিকে নলকূপে নামান। তাদের নিজস্ব উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তিতে মাত্র ২৩ মিনিটের মাথায় তারা জিয়াদকে উদ্ধারে সফল হন। উদ্ধারের পর উদ্ধারকারী যুবকদের নিয়ে টানাহেঁচড়া পড়ে যায়। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল তাদের এ বীরত্বের কথা তুলে ধরেন। সিদ্দিক জানান, আমাদের সকাল বেলাও যদি কাজ করতে দিত তাহলে হয়তো শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করতে পারতাম। আর তখনই আমাদের চেষ্টা সফল হতো।সূত্র: নয়াদিগন্ত ইআর
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment