এবারও চীনে রোজার ওপর নিষেধাজ্ঞা; ধর্মীয় সম্প্রতি ব্যাহতের আশংকা মো: কামরুজ্জামান বাবলু টাইম নিউজ বিডি, ১৮ জুন, ২০১৫ ১৭:২২:৫৮ চীনের মুসলিম প্রধান অঞ্চল জিনজিয়াং-এ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারি, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের পবিত্র রমযান মাসে রোজা না রাখতে এবং হোটেল-রেস্তোরা খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। বৃহস্পতিবার সুবহে সাদিক থেকে দেশটিতে পবিত্র রমযানের রোজা পালন শুরু হয়েছে। তবে কমিউনিস্ট পার্
টি শাসিত চীনে নাস্তিক্যবাদী শাসন কায়েম থাকায় অনেক বছর ধরেই রোজার মতো ধর্মীয় বিধি-বিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। বিশেষ করে দেশটি সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান আবাসস্থল জিনজিয়াং-এ বেশ কড়াকড়িভাবে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। জিনজিয়াং প্রদেশের জিংহে কাউন্টি থেকে সরকারি খাদ্য বিভাগ (ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন)-এর পক্ষে গত সপ্তাহে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রমযান মাসে খাবার সরবরাহকারী কর্মস্থলগুলোতেও স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে। একই প্রদেশের বোল কাউন্টির কর্মকর্তাদের প্রতি এই মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা হয়-কেউ যেন রমযানের রোজা, রাত জেগে ইবাদত বা অন্যান্য ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন না করেন। চলতি সপ্তাহে স্থানীয় সরকারের এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যা পরে সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে প্রতিবছর এভাবে উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়কে রোজা পালন থেকে বিরত রাখতে সরকারি এমন বাড়াবাড়ির ব্যাপারে এরই মধ্যে মানবাধিকার গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে ব্যাপক সমালোচনা করা হয়েছে। উইঘুর মানবাধিকার গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, জিনজিয়াং-এ ইসলাম ধর্মের ওপর এমন হস্তক্ষেপ এই অঞ্চলে ধর্মীয় উত্তেজনা বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে এখানে শত শত মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে। তবে, স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে চীনের পক্ষ থেকে পাল্টা অভিযোগ এনে বলা হয়, জিনজিয়াং-এ সন্ত্রাসী হুমকি (terrorist threat) বেড়ে চলছে এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতার জন্য ধর্মীয় চরমপন্থাই (religious extremism) দায়ী। চীন থেকে নির্বাসিত বিশ্ব উইঘুর কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র দিলযাত রেক্সিট বলেন, রমযানের সময় মুসলমানদের তাদের একান্ত নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যেই চীন উইঘুর মুসলমানদের জোরপূর্বক রোজা পালন থেকে বিরত রাখছে। উইঘুর কংগ্রেসের এই মুখপাত্রের মতে, ধর্মীয় সিয়াম সাধনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির এই চীনা নীতিমালা শুধু অসহনশীলতাকেই উস্কে দিবে। এর ফলে দেশটিতে ভবিষ্যতে অস্থিতিশীলতা আরও বাড়বে এবং নতুন নতুন সংঘাতের জন্ম দিবে। এর আগের বছরগুলোতেও স্কুলগামী ছেলে-মেয়েরা যাতে রমযানের রোজা এবং অন্যান্য ধর্মীয় রীতি-নীতির অনুশীলন করতে না পারে সে ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা কার্যকর ছিল। এবারেও পরিস্থিতি অনেকটাই অপরিবর্তিত রয়েছে। চলতি মাসে “চীনা টেচেং” হিসেবে পরিচিত টারবাঘাটাই শহরের শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতি এক নির্দেশনায় বলা হয়- শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীরা রমযান মাসে রোজা না রাখে, মসজিদে প্রবেশ না করে এবং কোন ধর্মীয় কর্মকান্ডে অংশ না নেয়। জিনজিয়াং প্রদেশের অন্যান্য শিক্ষা ব্যুরো ও স্কুলগুলোর ওয়েব সাইটেও একই নির্দেশনা জারি করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। জিনজিয়াংয়ের কুইমো কাউন্টি অঞ্চলের সরকারি ওয়েব সাইটে বলা হয়, কর্মকর্তারা চলতি সপ্তাহে স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের সাথে সাক্ষাত করেছেন এবং তাদেরকে এই মর্মে অবহিত করেছেন যে, রমযান মাসে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারি ওয়েবসাইটে সতর্ক করে বলা হয়, কাজাখিস্তানের সীমান্ত ঘেষা চীনের একটি গ্রাম ইয়েলিতে মসজিদগুলোতে অবশ্যই তল্লাশি চালানো হবে এবং আইডি কার্ড চেক করে দেখা হবে এখানে রমযানে কারা নামাজ পড়তে আসেন। চীনের বোলে কাউন্টি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ৯০ বছরের উইঘুর কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য মেহমেত তালিপ রোযা পরিহার এবং মসজিদে প্রবেশ না করার প্রতিজ্ঞা করেছেন যাতে সচেতনভাবে ধর্মীয় এবং কুসংস্কারবাদী চিন্তা-চেতনাকে রুখে দেয়া যায়। উল্লেখ্য, আগামীর বিশ্ব সুপার পাওয়ার হিসেবে বেড়ে ওঠা কমিউনিস্ট শাসিত চীনে মুক্ত গণমাধ্যমের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের পাশাপাশি এভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত দেশটি তার এগিয়ে চলার গতিকে কতটা নিস্কন্টক রাখতে পারবে সেদিকেই এখন সতর্ক দৃষ্টি আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের। (সূত্র: আল জাজিরা, এএফপি) কেবি
No comments:
Post a Comment