Saturday, June 20, 2015

এবার হুমকির মুখে কর্ণফুলীর জীব বৈচিত্র্য:টাইমনিউজ

এবার হুমকির মুখে কর্ণফুলীর জীব বৈচিত্র্য আবদুর রহমান টাইম নিউজ বিডি, ২০ জুন, ২০১৫ ১২:৪৯:০২ সুন্দরবনের পর এবার হুমকির মুখে পড়েছে কর্ণফুলী নদীর জীব বৈচিত্র্য। নিরাপদে নেই দেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদাও। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে সেতু ভেঙ্গে ফার্নেস অয়েলবাহী তিনটি ওয়াগন খালে পড়ে গেলে পরিবেশ বিপর্যয়ের এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনার দ্বিতীয় দিনেও উদ্ধার না হওয়ায় খালের পানিতে তলিয়ে য
াওয়া ওয়াগন থেকে ছড়িয়ে পড়ছে ফার্নেস ওয়েল। যার গন্তব্যস্থল খালের সঙ্গে সংযুক্ত কর্ণফুলী নদী। ফলে ভয়াবহ দূষণের শিকার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামে ঐতিহ্যের অংশীদার এ নদী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণফুলী নদীর পানিতে ফার্নেস অয়েল মিশে গেলে জীব বৈচিত্র্যের মারাত্বক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে এই ফার্নেস অয়েল হালদা খালের পানিতে গিয়ে মিশে দেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানা যায়, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর বেঙ্গুরা ও পটিয়ার ধলঘাট এলাকার মাঝামাঝি রেলওয়ের ২৪নং সেতু ভেঙ্গে ইঞ্জিনসহ তিনটি তেলবাহি ওয়াগন খালে পড়ে যায়। এরমধ্যে দুইটি ওয়াগন বোয়ালখালী খালে ডুবে যায়। দোহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য জ্বালানি তেলগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এদিকে দুর্ঘটনার ২৩ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সেতু ভেঙে খালে ডুবে যাওয়া তেলবাহি ওয়াগন উদ্ধারে কাজ শুরু করতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এমনকি ভেঙে যাওয়া সেতুটি সচলেও কাজ শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। ফলে চট্টগ্রাম-দোহাজারী লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।   রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ওই রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে আরো তিন থেকে চারদিন লাগবে। তবে ডুবে যাওয়া ওয়াগন উদ্ধারে কাজ চলছে বলে দাবি করেছেন তিনি। মফিজুর রহমান আরো বলেন, শুক্রবার থেকেই ডুবে যাওয়া ওয়াগন উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে রেলওয়ে। তবে ভেঙে যাওয়া ব্রিজটি সচলে এখনো কাজ শুরু হয়নি। তাই ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ধলঘাট স্টেশন মাস্টার অনুপম জানান, ডুবে যাওয়া ওয়াগন থেকে জ্বালানি তেল বের করতে না পারায় উদ্ধার কাজ বন্ধ রয়েছে। দোহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের কর্মকর্তারা এসে ডুবে যাওয়া ওয়াগন পরিবর্তন করে তেলগুলো অন্য ওয়াগনে রাখবেন। এরপর খালি ওয়াগন উদ্ধারে কাজ শুরু হবে বলেও জানান অনুপম। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ জানান, বোয়ালখালী খালটি কর্ণফুলী নদীর একটি শাখা খাল। এই খালটি সরাসরি কর্ণফুলী নদীর সঙ্গেই মিশেছে। বোয়ালখালী খালে বিপুল পরিমাণ ফার্নেস অয়েল ভেসে যাওয়ায় এগুলো ক্রমান্বয়ে কর্ণফুলী নদীর দিকেই যাচ্ছে। এ ছাড়া ফার্নেস অয়েলে বোয়ালখালী উপজেলার অনেক কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে বোয়ালখালী নদীর পানিতে ফার্নেস অয়েল মিশে গিয়ে পুরো পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। ভেসে যাওয়া ফার্নেস অয়েল খাল হয়ে কর্ণফুলী নদীর দিকে যেতে থাকায় কর্ণফুলী নদীর পানিও ভয়াবহ দূষণের শিকার হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে ফার্নেস ওয়েলবাহী ওয়াগন কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালের পানিতে ডুবে যাওয়া পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরাও। তারা বলছেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনে সম্প্রতি ফার্নেস ওয়েলাবাহী লাইটারেজ জাহাজ ডুবে জীববৈচিত্রের যে ক্ষতি হয়েছে এখানে সে ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।   চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা নদী গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, খালে ভেসে যাওয়া ফার্নেস অয়েল কর্ণফুলী নদীর পানিতে মিশে গেলে জীব বৈচিত্র্যের মারাত্বক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে এই ফার্নেস অয়েল হালদা খালের পানিতে গিয়ে মিশে দেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মকবুল হোসেন জানান, ফার্নেস অয়েলে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি দেখার জন্য ঘটনাস্থলে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন শেষে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে। এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীর মৃগামারী এলাকায় তলা ফেটে একটি তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে যায়। এ ঘটনায় শেলা নদীতে প্রায় ৭০ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে তেল ছড়িয়ে পড়ে। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিশ্বের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র। দুর্ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায় সার্বিক বিপর্যয়ের চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠে। গাছ-পলার মূল-কাণ্ড জেকে ধরে তেলের আস্তরণ৷ বিলুপ্ত প্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, পাখি, ভোঁদর এবং কাঁকড়াসহ জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। কর্মহীন হয়ে পড়ে শত শত জেলে৷ এআর/কেএইচ  

No comments:

Post a Comment