Monday, May 4, 2015

ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণা তুঙ্গে:আরটিএনএন

ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণা তুঙ্গে আন্তর্জাতিক ডেস্ক আরটিএনএন লন্ডন: আর ক’দিন পরই, মে মাসের ৭ তারিখে, ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে। ব্রিটেনে অনেক দিন পরে এমন একটা নির্বাচন হচ্ছে - যার ফল কি হবে ঠিক কেউ জানে না। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, প্রধান দুই দল- বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কনসারভেটিভ পাটি এবং এড মিলিব্যান্ডের ল
েবার পার্টি জনপ্রিয়তার দৌড়ে খুব কাছাকাছি অবস্থানে। কোনো কোনোটিতে কনসারভেটিভ পাটি এগিয়ে আছে, আবার কোনোটিতে লেবার পার্টি এগিয়ে আছে, কিন্তু ব্যবধান প্রতি ক্ষেত্রেই খুব সামান্য। মোট ৬৫০টি আসনের মধ্যে কনসারভেটিভরা ২৭৩টির কাছাকাছি আসন এবং লেবার পাটি ২৬৯টির মতো আসন পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হচ্ছে না, সরকার গড়তে হলে অন্য দলের সমর্থন লাগবে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য জোট শরিক হিসেবে প্রধান বিকল্প হবে লিবারেল ডেমোক্রেটরা যারা ২৭টির মতো আসন পাবে বলে মনে করা হয়, অথবা স্কটিশ জাতীয়তাবাদী আঞ্চলিক দল এসএনপি - যারা ৫৬টি আসন পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনের প্রধান ইস্যুগুলো কি? নির্বাচনী প্রচার আর নেতাদের বক্তৃতায় আন্দাজ করা যায়: এবার প্রধান বিষয় হচ্ছে অর্থনীতির সংকট কাটানো, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বা এনএইচএসকে টিকিয়ে রাখা, বাজেট ঘাটতি কমানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অভিবাসন কমানো, ইউরোপের সাথে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কি হবে তা নির্ধারণ ইত্যাদি। কনজারভেটিভ পার্টি বলছে, তারা ব্রিটেনের অর্থনীতিকে সংকট থেকে পুনরুদ্ধার করেছে। গত পাঁচ বছরে তারা সরকারের সেবাখাত ও কল্যাণভাতায় ব্যাপকভাবে ব্যয় কাটছাঁট করে বাজেট ঘাটতি কমিয়েছে, ২০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তাদের কথা হলো, ব্রিটেনের অর্থনীতিতে এখন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে - মূদ্রাস্ফীতি কমেছে। অভিবাসনের ক্ষেত্রে তারা ইউরোপ থেকে ইমিগ্রেশন কমাতে পারেনি - তবে ইউরোপের বাইরে থেকে ইমিগ্রেশন কমাতে পেরেছে। সব মিলিয়ে কনজারভেটিভরা বলছে, তাদের গৃহীত পদক্ষেপে সুফল পাওয়া যাচ্ছে, তাই এগুলো অব্যাহত রাখতে হবে এবং ব্রিটেনকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে পুরোপুরি বের করে আনতে হলে তাদেরকেই ভোট দিতে হবে। অন্যদিকে এড মিলিব্যান্ডের লেবার পার্টি বলছে, কনজারভেটিভ নীতির ফলে ধনী-দারিদ্রের ব্যবধান বেড়েছে, জীবনযাত্রার মান নেমে গেছে। ব্রিটেনে এখন ১০ লাখের বেশি লোক ফুডব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল, ধনীদের ওপর কর কমিয়ে এবং সেবা ও কল্যাণ ভাতা সংকুচিত করে সাধারণ মানুষকে আর্থিক সংকটে ফেলে দেযা হয়েছে। লেবার পার্টি বলছে, কনসারভেটিভরা এবার জিতলে স্বাস্থ্যসেবায় আরো কাটছাঁট ও বেসরকারিকরণ হবে, সামাজিক কল্যাণভাতাও আরো কমানো হবে – তাই এসব খাতগুলোকে রক্ষা করতে হলে, সাধারণ মানুয়ের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন করতে হলে লেবার পার্টিকেই ভোট দিতে হবে। অভিবাসন বা ইমিগ্রেশন কত বড় ইস্যু এবার? ইমিগ্রেশন এবার যথেষ্ট বড় ইস্যু, কারণ বড় সব দলই এ নিয়ে কথা বলছে। কনজারভেটিভ পার্টি এর আগের নির্বাচনের ইমিগ্রেশন লাখের কোঠা থেকে হাজারের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আগের তুলনায় ইমিগ্রেশন বেড়েছে। তবে কনজারভেটিভ পার্টি বলছে, তারা ইউরোপ থেকে ইমিগ্রেশন কমাতে না পারলেও ইউরোপের বাইরে থেকে ইমিগ্রেশন কমিয়েছে, এবং নির্বাচিত হলে তারা ইউরোপের সাথে থাকা না থাকা নিয়ে একটি গণভোট করবে। লেবার পার্টি বলছে তারাও ব্রিটেনে ইমিগ্রেশন কমাবে এবং ইমিগ্র্যান্টরা যেন ব্রিটেনে ঢুকে প্রথম দু'বছর সামজিক কল্যাণভাতা নিতে না পারে, এবং তাদের সস্তা শ্রমের জন্য যেন ব্রিটিশ নাগরিকদের কাজ থেকে বঞ্চিক হতে না হয় - তার জন্য কড়া আইন করবে। তবে ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টি বা ইউকিপ সম্পূর্ণ ইমিগ্রেশনবিরোধী দক্ষিণপন্থী দল। তারা বলছে, ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের মধ্যে অবাধ চলাচল বহাল রেখে এ সব পদক্ষেপে কোনো কাজ হবে না, তাই ইমিগ্রেশন বন্ধ করতে হলে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং সেটাই তাদের এজেন্ডা। লেবার পার্টি অবশ্য ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসার বিরোধী - কারণ তারা বলছে এতে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে বিরাট বিপর্যয় নেমে আসবে। স্কটল্যান্ড ও এসএনপি ইস্যু স্কটল্যান্ডের ইস্যুটি খুবই গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠেছে কারণ স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি যদি নিরর্বাচনে ৫৬টির মতো সিট পায়, তাহলে বড় দলগুলো তাদের সাথে কোয়ালিশন করতে পারে, এবং এর ফলে তারা জাতীয় রাজনীতিতে কিংমেকার হয়ে উঠতে পারে। এসএনপি স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা চায়, তবে এ দাবির ওপর গণভোটে তারা হেরে যাবার পর আপাতত স্বাধীনতার কথা আর বলছে না। কিন্তু নির্বাচনের পর এসএনপি কোন কোয়ালিশনে ঢুকলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে, এটা অনেকে বলছেন। কোয়ালিশনের রাজনীতিতে এসএনপি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠলে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর ছড়ি ঘোরাবে এবং ভবিষ্যতে আবারো স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য নতুন গণভোটের দাবি তুলতে পারে। কনজারভেটিভ পার্টি বলছে, ক্ষমতায় যাবার জন্য লেবার পার্টিই এসএনপির সাথে কোয়ালিশন করতে পারে। যদিও লেবার নেতা এড মিলিব্যান্ড এসএনপির সাথে কোনো চুক্তি বা কোয়ালিশনের কথা বার বার অস্বীকার করছেন। কনজারভেটিভ পার্টি বলছে, এসএনপি যুক্তরাজ্য ভাঙতে চায় তাই তার সাথে কোয়ালিশন করাটা বিপজ্জনক হবে। এ নিয়ে এসএনপির নেত্রী নিকোলা স্টারজিওন এখন ব্রিটেনের রাজনীতিতে সবচাইতে আলোচিতে নারীনেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। প্রশ্ন হলো, একক কোনো দলকে কি স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবারে দেবেন ব্রিটিশ ভোটাররা? নাকি ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনাই সত্যি হবে শেষ পর্যন্ত? এ প্রশ্নের জবাব মিলবে নির্বাচনের পরপরই। মন্তব্য      

No comments:

Post a Comment