Tuesday, May 12, 2015

সব ধর্মেরই সমালোচক ছিলেন ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস:টাইমনিউজ

সব ধর্মেরই সমালোচক ছিলেন ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস মো: কামরুজ্জামান বাবলু টাইম নিউজ বিডি, ১২ মে, ২০১৫ ১৪:০৩:০২ সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠন অনন্ত বিজয় দাসকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার (১২ মে ২০১৫) সকাল সাড়ে ন’টার দিকে সিলেট নগরের সুবিদ বাজার এলাকায় হামলা চালানো হয় এই লেখক ও ব্লগারকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে অনন্তের বন্ধু ও সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুজ্জামান পাপলু
বলেন, অনন্ত মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি বস্তুবাদ ও যুক্তিবাদ নিয়ে ব্লগে লিখতেন। এ নিয়ে তাঁর কয়েকটি বইও রয়েছে। পাপলু আরও জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত বিজ্ঞান মনস্ক লেখক অভিজিতের একটি বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন অনন্ত। এ ছাড়া ‘যুক্তি’ নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন তিনি। বিজয় দাস সব ধর্ম নিয়েই কমবেশি লিখেছেন। তার দৃষ্টিতে ধর্মের মধ্যে যেসব অসঙ্গতি আছে বলে তিনি মনে করতেন তা বেশ খোলামেলাভাবেই লিখতেন ফেসবুকে। হিন্দুদের বলীদান ও পুজার নামে অর্থ অপচয় থেকে শুরু করে মুসলমানদের মিরাজে বিশ্বাসের মতো বিষয়ে অনেক কড়া সমালোচনা রয়েছে বিজয় দাসের স্ট্যাটাসগুলোতে। টাইমনিউজবিডির পাঠকদের জন্য ব্লগার বিজয়ের কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো: ৯ মে সন্ধ্যা ৭টা ৪৯ মিনিটের স্ট্যাটাস: ক্লাসে ছাত্রীদের নেকাবের (চেহারা ঢাকা) বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শফিউল ইসলাম যদি অবস্থান নিয়েও থাকেন, তাহলে তিনি হুবহু তাই করেছেন যা করেছেন মিসরের গ্র্যান্ড মুফতি ও বিশ্ব-মুসলিমের শিক্ষাকেন্দ্র আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম ড: তানতাওয়ি। তিনি কায়রো 'র এক স্কুল পরিদর্শনের সময় নেকাব পরা এক ছাত্রী দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে আদেশ করেন তার চেহারার নেকাব খুলে ফেলতে। তিনি বলেন - "নেকাব একটা প্রথা মাত্র (কাস্টম), ইসলামের সাথে এর কোনই সম্পর্ক নেই। তুমি ও তোমার বাবা-মায়ের চেয়ে আমি ইসলামে ভালো জানি"। ...ইউরোপের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিশেষজ্ঞ ড: তারিক রামাদানও বলেন এটা ধর্মীয় বাধ্যতামূলক নয়। আইন শামস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আতিফ আল আওয়ামী বলেন, "আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি নিকাব শুধুমাত্র সামাজিক অভ্যাস মাত্র, যা ধর্মের সাথে সম্পর্কহীন অন্যন্য কারণে বিস্তার লাভ করে" ৮মে বেলা ১২টা ৫৪ মিনিটের স্ট্যাটাস: ওমরাহ হজে গিয়ে নাকি কিছু বাংলাদেশি আর দেশে ফিরেনি। সৌদি সরকার এজন্য খুব ক্ষিপ্ত। তারা এখন ওমরাহ হজের ভিসা ইস্যু করা বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশিদের জন্য পুরোপুরি। ভাবতেছি:  --- সৌদি সরকারের এহেন সিদ্ধান্তে কারো ধর্মানুভূতি (বিশেষ করে হজানুভূতি) আহত হয়েছে কী?  --- সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে আমাদের জনাব লতিফ সিদ্দিকীর কোনো হাত আছে কী?! ২মে সন্ধ্যা ৭টা ৩৪ মিনিটের স্ট্যাটাস: বিশ্ব ভারতীর আদলে শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে সেখানে সাংস্কৃতিক চর্চা করা হবে। যা ইসলাম ধর্মের বিরোধী। কেননা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই নাস্তিক ছিলেন। তিনি ইসলাম তথা নবীজীর বিরুদ্ধেও বিরূপ মন্তব্য করেছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় চাই। তবে, রবীন্দ্রনাথের নামে নয় বরং অন্য যেকোনও মুসলিম সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ও দার্শনিকের নামে হোক। তাতে আমাদের আপত্তি নেই। বেঁচে থাকলে আমি অবশ্যই রবীন্দ্রনাথকে জিজ্ঞেস করতাম, "গুরুজী, আপনার এখন অনুভূতি কি?" রবীন্দ্রনাথ হয়তো বলতেন, বাছা! আমার কোনো অনুভূতি নাই... আমি আসলে আমি না! পুরাটাই তোমাদের মিডিয়ার সৃষ্টি! ১মে বেলা ১২টা ৩৭ মিনিটের স্ট্যাটাস: কাঠমোল্লা টাইপের ধার্মিকদের কাছে খুব বেশি আশা করতে নেই। সেটা পাকিস্তানি মোল্লাই হোক, মার্কিন খ্রিস্টান মোল্লাই হোক আর ভারতীয় হিন্দু মোল্লাই হোক! দিনশেষে এরা সবাই এক গোয়ালের! --- প্রসঙ্গ নেপালের সাম্প্রতিক ভূমিকম্প। ১ ডিসেম্বর ২০১৪’র স্ট্যাটাস: ধর্ম কেমন করে মানুষের চিন্তাভাবনাকে নষ্ট করে দেয়? কেমন করে দৃষ্টিভঙ্গি অন্ধ করে রাখে? কেমন করে বিদ্যা-বুদ্ধি সব অকেজো করে দেয়? যুক্তিবোধকে লকাবেঢুকিয়ে দেয়? তার প্রমাণ এই ছবিটা। এটা নেপালের ভারতীয় সীমান্তের কাছে বারিজ্যপুর মন্দিরে পশুবলির দৃশ্য। সৌভাগ্যের জন্য শক্তির দেবীর উদ্দেশ্যে এই পশুবলি নারকীয় উৎসব চলছে। মন্দিরে দেবীর জন্য এ-বছর ইতিমধ্যে ৫০০০ পশু বলি দেয়া হয়েছে। গেল ২০০৯ সালে নাকি এই মন্দিরে প্রায় ৩ লক্ষ পশু বলি দেয়া হয়েছে। এটা যদি একটা মন্দিরের চিত্র হয়, তবে একবার ভেবে দেখুন, নেপালে অন্য যেসব মন্দিরে পশুবলির বিধান আছে, সেখানকার অবস্থা কি? ৩১ অক্টোবর ২০১৪’র স্ট্যাটাস: রাস্তাঘাটে বের হলেই দেখা যায় অমাদের পাবলিক ট্রান্সপোর্টের পিছনে অনেক নীতিকথা লেখা রয়েছে। যেমন সিএনজি, বাস, রিক্সার পেছনে দেখবেন লেখা রয়েছে "আপনার সন্তানকে স্কুলে দিন", "আপনার সন্তানকে ইসলামি শিক্ষা দিন", "আপনার সন্তানকে মাদ্রাসায় দিন", কিংবা আরও দেখা যায় "পর্দা নারীর অহংকার/অলঙ্কার", "নামাজ বেহেশতের চাবিকাঠি", "বিবেক থাকতে আদালত কেন", "কাজকে না বলুন, নামাজকে নয়" ইত্যাদি, ইত্যাদি। এই ধরনের নীতিকথা আসলে আমাদের সমাজ-মনস্তত্ত্বকে প্রকাশ করে। আমাদের জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যায় এখান থেকে। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, কদাচিৎ চোখে পড়ে দুর্নীতি প্রতিরোধের আহ্বান। অথচ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই বাণীটাই হওয়া উচিৎ ছিলো সবচেয়ে জোরালো এবং বহুমুখী। "দুর্নীতিবাজ যেই হোক তাকে প্রশ্রয় দেবেন না", "আপনি দুর্নীতি করবেন না, অন্যকেও দুর্নীতি করতে সুযোগ দেবেন না" ইত্যাদি বাস্তববাদী বাণী থাকাটাই জরুরি আমাদের জন্য। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪’র স্ট্যাটাস: অন্যান্য যে কোনো পূজার তুলনায় দূর্গা পূজায় খরচ অনেক বেশি। মূর্তির কাঠামো দিয়ে পূজা করলে নিম্নে আশি-নব্বই হাজার থেকে শুরু করে উপরে সাত-আট লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করা হয় এই পূজায়। এবার সারা দেশে প্রায় ২৮ হাজারেরও বেশি পূজা মণ্ডপে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। এখন গড়ে যদি প্রতি মণ্ডবে দূর্গা পূজার জন্য ব্যয় হয় ১ লক্ষ টাকা তবে আনুমানিক মোট ব্যয় হতে পারে ২৮০০০ × ১০০০০০ = ২৮00000000 মানে ২৮০ কোটি বা ২.৮ বিলিয়ন টাকা। বলতে গেলে বিনোদন-আমোদ ফূর্তি-উৎসব পালন করা ছাড়া এই টাকা খরচের ব্যবহারিক কোনো উপযোগিতা নেই। বাংলাদেশর মত একটা গরিব দেশের সংখ্যালঘিষ্ঠ গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য এই টাকা অবশ্যই বিশাল অংকের। এত বিরাট অংকের টাকা দিয়ে এভাবে মূর্তি বানিয়ে "জলে বিসর্জন" দেয়ার চাইতে পরিকল্পনামাফিক কমিউনিটির উন্নময়নমূলক (শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সেবাখাতে) বিনিয়োগ ঢের বেশি কল্যাণমূলক ও প্রয়োজনীয় নয় কি? ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩’র স্ট্যাটাস: জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ আর জোরপূর্বক সঙ্গম (ধর্ষণ) দুটোই সমতুল্য এবং একই ধরনের অপরাধ। অথচ ধর্ষণের বিচার আছে, শাস্তি আছে, কিন্তু আমাদের এ দেশে জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের বিরুদ্ধে আইন নেই, বিচার চাওয়ার সুযোগ নেই। ২৬ জানুয়ারি ২০১৩’র স্ট্যাটাস: প্রাচীন বৈদিক গ্রন্থগুলোতে বিবাহিত নারীদের "শতাধিক পুত্রবতী" হওয়ার প্রচুর মন্ত্র রয়েছে। সনাতন হিন্দুদের সামাজিক আকাঙ্ক্ষা প্রচণ্ড ছিল, নারী যেন অধিকহারে পুত্রসন্তান প্রসব করতে পারে। যাতে বংশরক্ষা হয়। বংশের ভিত মজবুত হয়। শত্রুপক্ষের সাথে যেন লড়াই করে টিকে থাকা যায়। ইহুদিদের ঈশ্বরও নাকি আব্রাহাম-মুসাসহ প্রমুখ ধর্মনেতাদের বহুবংশ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেটাও একই কারণ। অতীতে গোত্রে গোত্রে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা-যুদ্ধ ছিল ছিল দৈনন্দিন ব্যাপার। জনশক্তি না থাকলে দাঙ্গায় জয়ী হওয়া বা টিকে থাকা সম্ভব হতো না। কেননা, শক্তি বলতে কেবল গায়ের জোরকেই বুঝতো তখনকার মানুষ। ২৭ আগস্ট ২০১২’র স্ট্যাটাস: আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে একজন মানুষ এক সকালে ঘুম থেকে উঠে জানান দিলো, তিনি নাকি আগের রাতে "বোরাক" নামের উদ্ভট জীবের পিঠে চড়ে সাত আসমান পেরিয়ে মহাশূন্য ভ্রমণ করে ফেলেছেন! সাথে বহু কিছু দর্শনও করে এসেছেন! এই ঘটনা চাক্ষুস কেউ দেখলো না, কোনো প্রমাণও ছিল না, অথচ আজও কোটি কোটি মুমিন "শোনা কথা" অবলীলায় বিশ্বাস করে যায়! দেড় হাজার বছর ধরে দুহাত তুলে খোদার কাছে দোয়া চেয়ে কথিত ওই "মেরাজ" দিনটিকে সাড়ম্বরে পালনও করে যায়! কারো মনে কোনো প্রশ্ন জাগে না, সন্দেহ-অবিশ্বাস তো দূরের কথা! ২৮ জুন ২০১২’র স্ট্যাটাস: ধর্মগাধারা ইদানীং একটা কথা ল্যাদিয়ে বেড়াচ্ছে সব জায়গায়, "নাস্তিকরা খালি আমি আমি আমি করে...!" বেচারাদের জন্য কষ্ট লাগে... ওদের তো আর "আমি আমি আমি" করার সুযোগ নাই, আছে কেবল আল্লা আল্লা.. হরি হরি করার! নতমস্তকে কড়জোড়ে ঠায় দণ্ডায়মান মেরুদণ্ডহীন ওইসব মানুষ বুঝবে কী মেরুদণ্ড সোজা করার মর্যাদা! চোখ তুলে গায়েবী বিষয়কে গায়েব করে দেয়ার সৎসাহস ওদের নেই! অদৃশ্যের প্রতি নমশীলরা বিকারগ্রস্ত থাকে ধর্মীয় বাণী পাঠে! ওসব প্রাগহৈতিহাসিক ছেলেভুলানো কথাবার্তা ফুৎকারে উড়িয়ে দেবার হিম্মত ওদের বুকে নেই! ওরে, নাস্তিকের কোনো খোদা নেই, আল্লা নেই, বিধাতা নেই, ওসব স্বান্তনা বাণীর প্রয়োজন পড়ে না কখনো নাস্তিকের। এক একজন নাস্তিক চেতনাগতভাবে নিজেই নিজের আল্লা-খোদা! নিজেই নিজের ভাগ্যের রচয়িতা! ধর্মগ্রন্থগুলাতে যেমন বেহুদা আল্লা-খোদা-বিধাতার মুখে "আমি আমি আমি" দেখা যায়, নাস্তিকরা ওইরকম নয়। নাস্তিকদের "আমি আমি" তার "আমিত্বের' স্থান থেকে ধ্বনিত হয়! ব্যক্তিত্বের মর্যাদার অবস্থান থেকে উচ্চারিত হয়! ব্যক্তিস্বাধীনতার স্থান থেকে প্রতিফলিত হয়! একজন মানুষ হিসেবে মেরুদণ্ড সোজা করে, অদৃশ্যকে অবজ্ঞা ভরে উড়িয়ে দেবার হিম্মত থেকে বর্ণিত হয় এই "আমি"! কেবি

No comments:

Post a Comment