করেছেন স্থানীয়রা। চাষিরা বলছেন- প্রতি বছর বাম্পার ফলন পেয়েও বাজারে আলু বিক্রি করতে গিয়ে ভাল দাম পান না তারা, সংরক্ষণও করা যায় না। তাই যেমন-তেমন দরেই বিক্রি করতে হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরের ব্যবধানে নওগাঁয় আলুর আবাদ বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর। চলতি মওসুমে ২৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে হয়েছে আলু আবাদ। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৫১ হাজার ৯০৫ মেট্রিক টন। যা গত ১০ বছরের ব্যবধানে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন বেশি। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জেলায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় কার্ডিনাল, এস্টোরিক, গ্রানোলা ও দেশীয় জাতের লাল আলু। হেক্টর প্রতি কার্ডিনাল উৎপাদন হয় ২০ থেকে ২২ মেট্রিক টন পর্যন্ত। এছাড়া হেক্টর প্রতি এস্টোরিক ১৮ থেকে ২০, গ্রানোলা ১৭ থেকে ১৮ ও দেশীয় জাতের আলু উৎপাদন হয় ১৬ থেকে ১৭ মেট্রিক টন। উৎপাদন বেশি হওয়ায় জেলার অধিকাংশ চাষিই কার্ডিনাল আলু চাষে বেশি আগ্রহী। এবার জেলার সমতল জমির পাশাপাশি আত্রাই, ছোট যমুনা ও তুলশী গঙ্গা নদীর চরেও আলু আবাদ হয়েছে। চাষিরা পৌষের হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে ফসলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এরই মধ্যে দেশীয় জাতের আলু তুলতে শুরু করেছেন তারা। জেলার বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী গ্রামের চাষি আব্দুল হাকিম বাংলানিউজকে জানান, সপ্তাহ খানেক হলো তারা দেশি জাতের লাল আলু তুলতে শুরু করেছেন। এবার ফলন হয়েছে ভাল। প্রতি বিঘায় ফলন আসছে ৫৫ থেকে ৬০ মণ। তবে জমিতে আলু রেখে গাছ শুকিয়ে তুলতে আরো সপ্তাহ খানেক সময় দরকার। কিন্তু আলু তোলার পর একই জমিতে ইরি-বোরো মওসুমের ধান রোপন করবেন তাই খানিকটা আগেই আলু তুলে নিচ্ছেন। তাছাড়া ভাল দাম পাওয়ার আশায় আগে ভাগেই তুলতে হয় এ জাতের আলু। স্থানীয় পাইকারি বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৪৭০ টাকা মন হিসেবে। একই গ্রামের আলু চাষি মনমথনাথ চন্দ্র বর্মন জানান, গ্রানোলা, কার্ডিনাল ও অন্যান্য হাইব্রিড জাতের আলু উঠা শুরু হতে সময় লাগবে আরো অন্তত ২০ থেকে ২৫ দিন। এসব আলু ক্ষেত সংরক্ষণে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হচ্ছে। রোগবালাই, পোকা ও ইদুরের হাত থেকে আলু ক্ষেত রক্ষা করতে নিয়মিত প্রয়োগ করতে হচ্ছে ওষুধ। তবে এখন পর্যন্ত এ এলাকায় আলু ক্ষেতে বড় ধরনের কোনো রোগ বালাইয়ের মহামারি দেখা যায়নি। তিনি জানান, রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করার পর ভালভাবে আলু তুলতে পারলে এবার বাম্পার ফলন আসবে। এতে বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৭৫ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এসব চাষিরা অভিযোগ করে বলেন, আলু উঠানোর ভরা মৌসুমে বাজারে দাম থাকে না। অথচ দুই থেকে তিন মাস পরই সেই আলুর বাজার দর উঠে বিক্রি হয় ৫ থেকে ৭ গুণ বেশি দরে। তখন আর বিক্রি করার মতো আলু থাকে না তাদের কাছে। এতে বড় ধরনের লাভ থেকে বঞ্চিত হন তারা। অনেক সময় লোকসানও গুণতে হয়। চাষি মনমথনাথ চন্দ্র বর্মন জানান, বেশি ফসল তাই কৃষকের বাড়িতে সংরক্ষণেরও সুযোগ নেই। আবার জেলায় যেসব কোল্ড স্টোরেজ আছে তাতেও জায়গা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই গত বছর আলু চাষ করে লাভ হয়নি। ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে তাকে লোকসান গুণতে হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এদিকে জেলায় আলু চাষ দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি সংরক্ষণাগার। সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের বিপরীতে জেলায় রয়েছে মাত্র ৭০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার ৮টি বেসরকারি কোল্ড স্টোরেজ। তাই চাষিদের পক্ষে সম্ভব হয়না উৎপাদিত আলু সংরক্ষণে রাখা। এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, শুধু সংরক্ষণের অভাবেই এ অঞ্চলের আলু চাষিরা প্রতি বছর বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছেন। শতকরা ৮০জন কৃষক পান না উৎপাদিত আলুর ন্যায্য দাম। কখনও-কখনও ৮ থেকে ১০ গুণ লাভ থেকেও বঞ্চিত হন তারা। এছাড়া ৫ থেকে ৭ শতাংশ আলু নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে আলু চাষ করে প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ কৃষক মূলধন হারাচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (নওগাঁ) উপ পরিচালক সত্যব্রত সাহা বাংলানিউজকে জানান, নওগাঁর সমতল জমিগুলো রবি মৌসুমে আলু ও সরিষা চাষের খুবই উপযোগী। এছাড়া নদীর চরেও আলু চাষ করে ভাল ফলন পাওয়া যায়। তাই ক্রমেই এ জেলায় আলু আবাদ বাড়ছে। তিনি জানান, রবি মৌসুমের শুরু থেকেই আলুচাষিদের মধ্যে ফসলের রোগবালাই দমন ও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আলু তোলার পর সেগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে (বাঁশের মাচা ও বালুর মাঝে রেখে) কৃষকের বাড়িতেই সংরক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে আলুর খোসা পুড়ো হয়। এতে ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত ভাল রাখা যায়। তাই কৃষকদের লাভবান করতে উৎপাদিত আলু যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বাড়িতেই সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেন তিনি। ইআর
Thursday, January 22, 2015
নওগাঁয় লক্ষ্যমাত্রার বেশি আলু চাষ, বিপাকে চাষিরা:Time News
নওগাঁয় লক্ষ্যমাত্রার বেশি আলু চাষ, বিপাকে চাষিরা নওগাঁ করেসপন্ডেন্ট টাইম নিউজ বিডি, ২২ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০:০০ উত্তরের খাদ্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত নওগাঁ জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দেড় হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশীয় জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে কৃষকের ঘরে। তবে ফসলের আশানুরূপ দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত চাষিরা। প্রতিবছর এ জেলার ৩৫/৪০ ভাগ আলু চাষি তাদের মূলধন হারাচ্ছেন বলে মন্তব্য
করেছেন স্থানীয়রা। চাষিরা বলছেন- প্রতি বছর বাম্পার ফলন পেয়েও বাজারে আলু বিক্রি করতে গিয়ে ভাল দাম পান না তারা, সংরক্ষণও করা যায় না। তাই যেমন-তেমন দরেই বিক্রি করতে হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরের ব্যবধানে নওগাঁয় আলুর আবাদ বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর। চলতি মওসুমে ২৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে হয়েছে আলু আবাদ। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৫১ হাজার ৯০৫ মেট্রিক টন। যা গত ১০ বছরের ব্যবধানে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন বেশি। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জেলায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় কার্ডিনাল, এস্টোরিক, গ্রানোলা ও দেশীয় জাতের লাল আলু। হেক্টর প্রতি কার্ডিনাল উৎপাদন হয় ২০ থেকে ২২ মেট্রিক টন পর্যন্ত। এছাড়া হেক্টর প্রতি এস্টোরিক ১৮ থেকে ২০, গ্রানোলা ১৭ থেকে ১৮ ও দেশীয় জাতের আলু উৎপাদন হয় ১৬ থেকে ১৭ মেট্রিক টন। উৎপাদন বেশি হওয়ায় জেলার অধিকাংশ চাষিই কার্ডিনাল আলু চাষে বেশি আগ্রহী। এবার জেলার সমতল জমির পাশাপাশি আত্রাই, ছোট যমুনা ও তুলশী গঙ্গা নদীর চরেও আলু আবাদ হয়েছে। চাষিরা পৌষের হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে ফসলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এরই মধ্যে দেশীয় জাতের আলু তুলতে শুরু করেছেন তারা। জেলার বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী গ্রামের চাষি আব্দুল হাকিম বাংলানিউজকে জানান, সপ্তাহ খানেক হলো তারা দেশি জাতের লাল আলু তুলতে শুরু করেছেন। এবার ফলন হয়েছে ভাল। প্রতি বিঘায় ফলন আসছে ৫৫ থেকে ৬০ মণ। তবে জমিতে আলু রেখে গাছ শুকিয়ে তুলতে আরো সপ্তাহ খানেক সময় দরকার। কিন্তু আলু তোলার পর একই জমিতে ইরি-বোরো মওসুমের ধান রোপন করবেন তাই খানিকটা আগেই আলু তুলে নিচ্ছেন। তাছাড়া ভাল দাম পাওয়ার আশায় আগে ভাগেই তুলতে হয় এ জাতের আলু। স্থানীয় পাইকারি বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৪৭০ টাকা মন হিসেবে। একই গ্রামের আলু চাষি মনমথনাথ চন্দ্র বর্মন জানান, গ্রানোলা, কার্ডিনাল ও অন্যান্য হাইব্রিড জাতের আলু উঠা শুরু হতে সময় লাগবে আরো অন্তত ২০ থেকে ২৫ দিন। এসব আলু ক্ষেত সংরক্ষণে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হচ্ছে। রোগবালাই, পোকা ও ইদুরের হাত থেকে আলু ক্ষেত রক্ষা করতে নিয়মিত প্রয়োগ করতে হচ্ছে ওষুধ। তবে এখন পর্যন্ত এ এলাকায় আলু ক্ষেতে বড় ধরনের কোনো রোগ বালাইয়ের মহামারি দেখা যায়নি। তিনি জানান, রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করার পর ভালভাবে আলু তুলতে পারলে এবার বাম্পার ফলন আসবে। এতে বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৭৫ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এসব চাষিরা অভিযোগ করে বলেন, আলু উঠানোর ভরা মৌসুমে বাজারে দাম থাকে না। অথচ দুই থেকে তিন মাস পরই সেই আলুর বাজার দর উঠে বিক্রি হয় ৫ থেকে ৭ গুণ বেশি দরে। তখন আর বিক্রি করার মতো আলু থাকে না তাদের কাছে। এতে বড় ধরনের লাভ থেকে বঞ্চিত হন তারা। অনেক সময় লোকসানও গুণতে হয়। চাষি মনমথনাথ চন্দ্র বর্মন জানান, বেশি ফসল তাই কৃষকের বাড়িতে সংরক্ষণেরও সুযোগ নেই। আবার জেলায় যেসব কোল্ড স্টোরেজ আছে তাতেও জায়গা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই গত বছর আলু চাষ করে লাভ হয়নি। ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে তাকে লোকসান গুণতে হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এদিকে জেলায় আলু চাষ দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি সংরক্ষণাগার। সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের বিপরীতে জেলায় রয়েছে মাত্র ৭০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার ৮টি বেসরকারি কোল্ড স্টোরেজ। তাই চাষিদের পক্ষে সম্ভব হয়না উৎপাদিত আলু সংরক্ষণে রাখা। এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, শুধু সংরক্ষণের অভাবেই এ অঞ্চলের আলু চাষিরা প্রতি বছর বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছেন। শতকরা ৮০জন কৃষক পান না উৎপাদিত আলুর ন্যায্য দাম। কখনও-কখনও ৮ থেকে ১০ গুণ লাভ থেকেও বঞ্চিত হন তারা। এছাড়া ৫ থেকে ৭ শতাংশ আলু নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে আলু চাষ করে প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ কৃষক মূলধন হারাচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (নওগাঁ) উপ পরিচালক সত্যব্রত সাহা বাংলানিউজকে জানান, নওগাঁর সমতল জমিগুলো রবি মৌসুমে আলু ও সরিষা চাষের খুবই উপযোগী। এছাড়া নদীর চরেও আলু চাষ করে ভাল ফলন পাওয়া যায়। তাই ক্রমেই এ জেলায় আলু আবাদ বাড়ছে। তিনি জানান, রবি মৌসুমের শুরু থেকেই আলুচাষিদের মধ্যে ফসলের রোগবালাই দমন ও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আলু তোলার পর সেগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে (বাঁশের মাচা ও বালুর মাঝে রেখে) কৃষকের বাড়িতেই সংরক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে আলুর খোসা পুড়ো হয়। এতে ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত ভাল রাখা যায়। তাই কৃষকদের লাভবান করতে উৎপাদিত আলু যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বাড়িতেই সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেন তিনি। ইআর
করেছেন স্থানীয়রা। চাষিরা বলছেন- প্রতি বছর বাম্পার ফলন পেয়েও বাজারে আলু বিক্রি করতে গিয়ে ভাল দাম পান না তারা, সংরক্ষণও করা যায় না। তাই যেমন-তেমন দরেই বিক্রি করতে হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরের ব্যবধানে নওগাঁয় আলুর আবাদ বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর। চলতি মওসুমে ২৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে হয়েছে আলু আবাদ। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৫১ হাজার ৯০৫ মেট্রিক টন। যা গত ১০ বছরের ব্যবধানে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন বেশি। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জেলায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় কার্ডিনাল, এস্টোরিক, গ্রানোলা ও দেশীয় জাতের লাল আলু। হেক্টর প্রতি কার্ডিনাল উৎপাদন হয় ২০ থেকে ২২ মেট্রিক টন পর্যন্ত। এছাড়া হেক্টর প্রতি এস্টোরিক ১৮ থেকে ২০, গ্রানোলা ১৭ থেকে ১৮ ও দেশীয় জাতের আলু উৎপাদন হয় ১৬ থেকে ১৭ মেট্রিক টন। উৎপাদন বেশি হওয়ায় জেলার অধিকাংশ চাষিই কার্ডিনাল আলু চাষে বেশি আগ্রহী। এবার জেলার সমতল জমির পাশাপাশি আত্রাই, ছোট যমুনা ও তুলশী গঙ্গা নদীর চরেও আলু আবাদ হয়েছে। চাষিরা পৌষের হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে ফসলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এরই মধ্যে দেশীয় জাতের আলু তুলতে শুরু করেছেন তারা। জেলার বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী গ্রামের চাষি আব্দুল হাকিম বাংলানিউজকে জানান, সপ্তাহ খানেক হলো তারা দেশি জাতের লাল আলু তুলতে শুরু করেছেন। এবার ফলন হয়েছে ভাল। প্রতি বিঘায় ফলন আসছে ৫৫ থেকে ৬০ মণ। তবে জমিতে আলু রেখে গাছ শুকিয়ে তুলতে আরো সপ্তাহ খানেক সময় দরকার। কিন্তু আলু তোলার পর একই জমিতে ইরি-বোরো মওসুমের ধান রোপন করবেন তাই খানিকটা আগেই আলু তুলে নিচ্ছেন। তাছাড়া ভাল দাম পাওয়ার আশায় আগে ভাগেই তুলতে হয় এ জাতের আলু। স্থানীয় পাইকারি বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৪৭০ টাকা মন হিসেবে। একই গ্রামের আলু চাষি মনমথনাথ চন্দ্র বর্মন জানান, গ্রানোলা, কার্ডিনাল ও অন্যান্য হাইব্রিড জাতের আলু উঠা শুরু হতে সময় লাগবে আরো অন্তত ২০ থেকে ২৫ দিন। এসব আলু ক্ষেত সংরক্ষণে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হচ্ছে। রোগবালাই, পোকা ও ইদুরের হাত থেকে আলু ক্ষেত রক্ষা করতে নিয়মিত প্রয়োগ করতে হচ্ছে ওষুধ। তবে এখন পর্যন্ত এ এলাকায় আলু ক্ষেতে বড় ধরনের কোনো রোগ বালাইয়ের মহামারি দেখা যায়নি। তিনি জানান, রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করার পর ভালভাবে আলু তুলতে পারলে এবার বাম্পার ফলন আসবে। এতে বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৭৫ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এসব চাষিরা অভিযোগ করে বলেন, আলু উঠানোর ভরা মৌসুমে বাজারে দাম থাকে না। অথচ দুই থেকে তিন মাস পরই সেই আলুর বাজার দর উঠে বিক্রি হয় ৫ থেকে ৭ গুণ বেশি দরে। তখন আর বিক্রি করার মতো আলু থাকে না তাদের কাছে। এতে বড় ধরনের লাভ থেকে বঞ্চিত হন তারা। অনেক সময় লোকসানও গুণতে হয়। চাষি মনমথনাথ চন্দ্র বর্মন জানান, বেশি ফসল তাই কৃষকের বাড়িতে সংরক্ষণেরও সুযোগ নেই। আবার জেলায় যেসব কোল্ড স্টোরেজ আছে তাতেও জায়গা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই গত বছর আলু চাষ করে লাভ হয়নি। ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে তাকে লোকসান গুণতে হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এদিকে জেলায় আলু চাষ দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি সংরক্ষণাগার। সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের বিপরীতে জেলায় রয়েছে মাত্র ৭০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার ৮টি বেসরকারি কোল্ড স্টোরেজ। তাই চাষিদের পক্ষে সম্ভব হয়না উৎপাদিত আলু সংরক্ষণে রাখা। এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, শুধু সংরক্ষণের অভাবেই এ অঞ্চলের আলু চাষিরা প্রতি বছর বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছেন। শতকরা ৮০জন কৃষক পান না উৎপাদিত আলুর ন্যায্য দাম। কখনও-কখনও ৮ থেকে ১০ গুণ লাভ থেকেও বঞ্চিত হন তারা। এছাড়া ৫ থেকে ৭ শতাংশ আলু নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে আলু চাষ করে প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ কৃষক মূলধন হারাচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (নওগাঁ) উপ পরিচালক সত্যব্রত সাহা বাংলানিউজকে জানান, নওগাঁর সমতল জমিগুলো রবি মৌসুমে আলু ও সরিষা চাষের খুবই উপযোগী। এছাড়া নদীর চরেও আলু চাষ করে ভাল ফলন পাওয়া যায়। তাই ক্রমেই এ জেলায় আলু আবাদ বাড়ছে। তিনি জানান, রবি মৌসুমের শুরু থেকেই আলুচাষিদের মধ্যে ফসলের রোগবালাই দমন ও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আলু তোলার পর সেগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে (বাঁশের মাচা ও বালুর মাঝে রেখে) কৃষকের বাড়িতেই সংরক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে আলুর খোসা পুড়ো হয়। এতে ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত ভাল রাখা যায়। তাই কৃষকদের লাভবান করতে উৎপাদিত আলু যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বাড়িতেই সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেন তিনি। ইআর
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment