Monday, December 15, 2014

দুঃস্বপ্ন আজও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সেই ইসরাইলি সেনাদের:RTNN

দুঃস্বপ্ন আজও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সেই ইসরাইলি সেনাদের আন্তর্জাতিক ডেস্ক আরটিএনএন তেল আবিব: গত গ্রীষ্মে গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর যে ইউনিট আয়রন ডোম রকেট পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে, তাদের অনেকেই এখনও বিভিন্ন উপসর্গে ভুগছেন। আয়রন ডোম সিস্টেম পরিচালনাকারী সৈন্যরা জানিয়েছেন যে, যুদ্ধের সময় কঠিন চাপের মুখে ছিলেন তারা। হারেৎজ পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই সৈন্যরা এ
কথা জানান। সাক্ষাৎকারে তারা তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। এ কারণে পত্রিকাটি ইংরেজি এক্স, ওয়াই নাম ব্যবহার করেছে। এক্স নামের এক সৈন্য এই আয়রন ডোম রকেট পাকড়াও ইউনিটে কাজ করতেন। তিনি জানান, ৫০ দিনের এই যুদ্ধে তারা ভীষণ চাপের মুখে ছিলেন। এক্স বলেন, ‘যারা সেখানে ছিল না, তাদের কাছে এটি ব্যাখ্যা করা খুবই কঠিন। সপ্তাহের পর সপ্তাহ চরম মানসিক চাপের মুখে ছিলাম আমরা। যুদ্ধের পুরো সময় বলতে গেলে একটু সময়ের জন্যও ঘুমাতে পারিনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘তীব্র এই চাপের মাত্রা বর্ণনা করা কঠিন। দিনের ২৪ ঘণ্টাই জীবন ও মরণের এক উন্মাদ দায়িত্বে থাকতে হতো। সবসময় সতর্কতার মধ্যে থাকতে হতো। আমাদের ইউনিটের সবাই এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে কিন্তু তাদের কেউই এটি সম্পর্কে মুখ খুলতে চায় না। কারণ এর ফলে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি হতে পারে।’ কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এক্স নিজেকে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে পারেননি।  যদিও তিনি অব্যাহতভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এক্স বলেন, ‘আমি আমার সক্ষমতা অনেকটা হারিয়ে ফেলেছি। এটি ছিল অনেকটা দুঃস্বপ্নের মত। এই দুঃস্বপ্নের কারণে আমি ঘুমাতে পারিনি। এ কারণে আমাদের মাঝে বিভিন্ন রকম ভয়াবহ উপসর্গ দেখা দেয়। জীবনে প্রথমবারের মত আমি কাঁপুনিসহ আরো অনেক উপসর্গে ভুগতে থাকি।’ উপসর্গের লক্ষণগুলো কী রকম ছিলো? এক্স বলেন, ‘আমার বুকের মধ্যে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতো। মনে হতো কেউ আমার উপর বসে আছে এবং আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্রচণ্ড এই ব্যথা কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতো এবং পিছন ফিরে না শোয়া পর্যন্ত এটি চলতে থাকত। পরে পিছন ফিরে শোয়ার পর এটি থেমে যেত।’    এখন আপনার অনুভূতি কেমন (নভেম্বরের শেষ দিকে)?   ‘আমি এখনও দুঃস্বপ্নের মধ্যে আছি। প্রচণ্ড এই ব্যথা কিছুটা কমে গেছে। কিন্তু অপারেশনের ঐ চিত্রগুলো যখন সংবাদে দেখি তখন আর সহ্য করতে পারি না। তখন সবকিছু চোখের সামনে ভেসে ওঠে।’ ‘পাগলা গারদ’ আয়রন ডোম হচ্ছে প্রতিরক্ষামূলক অভিযানে দৃষ্টি আকর্ষণের শব্দসংকেত। স্বল্প পাল্লার রকেট পাকড়াও করার এই সিস্টেমের উন্নয়ন ও নির্মাণ করে ইসরাইল। ২০১১ সাল থেকে তারা এটি ব্যবহার করছে। সারাদেশ জুড়ে নয়টি সক্রিয় ব্যাটারি স্থাপন করা হয় এবং এটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকে শত শত নারী ও পুরুষ সৈন্য। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জনবহুল কোনো এলাকায় হামাসের রকেট আঘাত হানতে যাচ্ছে, এমন সম্ভাবনা থাকলে আয়রন ডোম থেকে আত্মরক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হত। এই আয়রন ডোম সিস্টেম দ্বারা গাজা ভূখণ্ড থেকে নিক্ষেপ করা ৪,৬০০ রকেট ও মর্টারের মধ্য ৭৩৫টি রকেট পাকড়াও করা হয়।       এই ইউনিটের অভিযানে যেসব সৈন্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তিন মাস পরও তাদের মধ্যে বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। ওয়াই (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমি এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারিনি।’ ওয়াই দেশটির সংরক্ষিত সৈন্য বাহিনীর একজন সৈনিক। তিনি সেখানে একজন ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার হিসাবে কাজ করেছেন। এক্সের মত তিনিও অনেকটা একই রকম অভিজ্ঞার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এটি ছিল একটি সক্রিয় পাগলা গারদের মত। এ রকম ব্যাটারি নিয়ে কাজ করে সৈন্যরা কি রকম চাপের সম্মুখীন ছিল তা যারা এখানে ছিল না, তাদের বুঝানো সম্ভব নয়। একটানা দুটি মাস আমাদের উচ্চ সতর্কতায় থাকতে হয়েছিল। কাঁধের উপর এক টন দায়িত্ব নিয়ে তীব্র গতির এই ব্যাটারির পাশে কাজ করতে হতো।’  তিনি আরো বলেন, ‘জীবন এবং মৃত্যুর মত এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় পেতাম এবং এটি কখনও এক মুহূর্তের জন্য বন্ধ হতো না। আমি সাত কিলো ওজন হারিয়েছি। কেননা আমি তখন কোনো কিছু খেতে পারতাম না। ক্রমাগত ভয়ের সঙ্গে বসবাস করেছি। সবসময় ভয়ে থাকতাম কেননা আমাদের একটু ভুলের কারণে অনেক মানুষ মারা যেত। ঐ দুই মাস ঘুম কাকে বলে আমি বলতে পারব না।  আমি এক ধরনের বিষণ্নতায় ছিলাম। ইউনিটের অনেকেরই তীব্র চাপের কারণে হাতের এবং চোখের মাংসপেশীর শিরায় কম্পন হত।’     সূত্র: হারেৎজ মন্তব্য      


No comments:

Post a Comment