মোবারকের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। মোবারকের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্
যা, অপহরণ, আটক ও নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী চার ধরনের অপরাধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে ১ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৩ নম্বর অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকি তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার জন্য সকাল সোয়া এগারটার দিকে ট্রাইব্যুনালের এজলাসকক্ষে আসন নেন বিচারপতিরা। শুরুতে ভূমিকা বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। পরে সকাল ১১টা ২২ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি আনোয়ারুল হক। ৯২ পৃষ্ঠা রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। রায়ের শেষ অংশ পড়েন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। পরে তার ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়। যে অভিযোগে মোবারকের মৃত্যুদণ্ড: আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মোবারকের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে প্রথম অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। প্রথম অভিযোগটি হলো, একাত্তরের ২২ আগস্ট মোবারক ও অন্য রাজাকাররা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানার টানমান্দাইল গ্রামের ২৬ জন ও জাঙ্গাইল গ্রামের সাতজনকে বাছাই করে তেরোঝুড়ি হাজতখানায় নিয়ে যান। ২৩ আগস্ট পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা ওই ৩৩ জনকে দিয়ে গঙ্গাসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়ে গুলি করে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়। অভিযোগটি প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাকে মুত্যুদণ্ড দেয়। যে অভিযোগে যাবজ্জীবন: মোবারকের বিরুদ্ধে আনা তৃতীয় অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। অভিযোগটি হলো, একাত্তরের ১১ নভেম্বর রাত নয়টার দিকে মোবারক তার সশস্ত্র রাজাকার সহযোগীদের নিয়ে ছাতিয়ান গ্রামের আবদুল খালেককে অপহরণ করে সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। ওই রাতেই খালেককে তিতাস নদীর পশ্চিম পাড়ে বাকাইল ঘাটে নিয়ে গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এছাড়া দ্বিতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগে তাকে খালাস দেয়া হয়। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রসিকিউটর শাহিদুর রহমান বলেন, একাত্তর সালে মোবারক হোসেন মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাক বাহিনীকে সহযোগিতা করে স্বাধীনতাকামীদের হত্যা করেছে। তার এই কর্মকাণ্ডের কারণে ফাঁসির রায় হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। এর আগে সকাল পৌনে দশটার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় রাখা হয় মোবারক হোসেনকে। তার পরনে ছিল সাদা রঙের পাঞ্জাবি। সকাল সোয়া নয়টার দিকে কারাগার থেকে তাকে নিয়ে ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশ্যে রওনা হয় প্রিজন ভ্যানটি। এদিকে রায়কে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। রায়ের জন্য মোবারককে রবিবারই গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। নিয়ম অনুযায়ী রায়ের আগে তাকে বিশেষ নিরাপত্তায় ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। পুলিশের পাশাপাশি র্যা ব সদস্যদেরও সকাল থেকে ট্রাইব্যুনালের আশপাশে সতর্ক থাকতে দেখা গেছে। সবাইকে তল্লাশি করে তবেই ট্রাইব্যুনালে ঢুকতে দেওয়া হয়। মোগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোবারকের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শেষে গত ২ জুন রায় অপেক্ষমাণ রাখা হয়। গত বছরের ২৩ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১২ জন সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন মোবারক ও তার ছেলে। পরে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। দীর্ঘ ছয় মাস মামলটি অপেক্ষমাণ থাকার পর আজ রায় ঘোষণা করা হলো। ২০০৯ সালের ৩ মে মোবারকের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানায় মামলা করেন একাত্তরের শহীদ আবদুল খালেকের মেয়ে খোদেজা বেগম৷ মোবারক হাইকোর্ট থেকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান৷ পরে স্থানীয় আদালত এই মামলা ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করেন। মোবারকের বিরুদ্ধে যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত চলছিল, তখন এই ট্রাইব্যুনাল তাকে জামিন দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন৷ ১২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নিয়ে মোবারকের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান৷ ওই সময় থেকে তিনি কারাগারে আটক ছিলেন। অভিযুক্ত মোবারক হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামের মরহুম সাদত আলীর ছেলে। তিনি প্রথমে জামায়াত ও পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে মোবারক হোসেন তার সাক্ষ্যে দাবি করেন, তিনি সব সময়ই আওয়ামী লীগ করতেন। এখনো আওয়ামী লীগেই আছেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রতিহিংসামূলক। মন্তব্য pay per click নিজস্ব প্রতিবেদকআরটিএনএনঢাকা: হজ, মহানবী (সা.) এবং তাবলিগ জামায়াত নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত এবং . . . বিস্তারিত নিউজ ডেস্কআরটিএনএনঢাকা: আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের মধ্যে জামায়াত-শি . . . বিস্তারিত
No comments:
Post a Comment