ঢাকা: বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু যেভাবে বাড়ছে, তাতে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনীতি ভবিষ্যতে নতুন ধরনের চাপের মুখে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু এখন ৬৯ দশমিক চার বছর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার পরিণামে মোট জনসংখ্যায় বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়বে। কিন্
তু এদের জন্য যে ধরনের সেবার দরকার হবে, তা সামাল দেয়ার মতো স্বাস্থ্যখাতসহ অন্যান্য সেবা খাত তৈরি হয়নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে দেখা যাচ্ছে, চার বছরে মানুষের গড় আয়ু প্রায় আড়াই বছর বেড়েছে। ২০০৮ সালে যেখানে গড় আয়ু ছিল প্রায় ৬৭ বছর - ২০১২ সালে গিয়ে তা হয়েছে ৬৯ বছরের বেশি। বিশেষজ্ঞরা এর পেছনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ বৃদ্ধি, শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন সুবিধাসহ অনেক বিষয়কে উল্লেখ করছেন। জনসংখ্যা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম নূরুন্নবী মনে করেন, নতুন এই জরিপে পুরুষের তুলনায় নারীদের গড় আয়ু আরো বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি গর্ভাবস্থায় মৃত্যু, মাতৃমৃত্যু এবং শিশু মৃত্যুর হার কমার বিষয়কে উল্লেখ করেছেন। তবে মানুষের গড় আয়ু বাড়তে থাকায় বাংলাদেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা। এরও একটা প্রভাব ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। অধ্যাপক নূরুন্নবী বলছিলেন, “এখন আমাদের দেশে ৬.৫ শতাংশ ষাট বছর বয়সের বেশি মানুষ আছে। ২০৫০ সালে এই হার বিশ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। তখন কিন্তু এই চাপ অর্থনীতি টানতে পারবে না। স্বাস্থ্যসহ সেবা খাতগুলোও সেভাবে প্রস্তুত নয়। ফলে বয়স্কদের বোঝা বোঝা মনে হবে।” জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন ড. তারেক সালাহউদ্দিন। তার মতে, “আমাদের দেশে হেলথ ইনস্যুরেন্স নেই। এছাড়া বয়স্কদের জন্য বিশেষায়িত স্বাস্থ্য দরকার হয়, সেই ব্যবস্থা এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি।" তিনি বলছিলেন, "বয়স্করা বেশিরভাই উপার্জনক্ষম নয়। ফলে বয়স্কদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা একটা সংকটে পড়তে পারে। আমাদের মরটালিটি কমে যাবে, কিন্তু মরবিডিটি বাড়বে। বয়স্করা জীবনের শেষ অংশটাকে আসলে উপভোগ করতে পারবেন না।” এদিকে, দেশের বয়স্কদের জন্য যদিও এখন সরকার সেবা খাতে কিছু সুবিধা সৃষ্টির কথা বলছে। সেটা যথেষ্ট নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তারা বলছেন, এখনই বড় পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। সূত্র: বিবিসি নতুন বার্তা/জবা
No comments:
Post a Comment