লন্ডন: জনমত জরিপের ফল যদি ভুল না হয়, তাহলে বৃটেনে আজকের নির্বাচনে কোন দলই হয়তো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। এর মানে, নির্বাচনে কোনো দলকেই সুস্পষ্টভাবে বিজয়ী বলা যাবে না। কারা সরকার গঠন করবে, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন—এসব প্রশ্ন নির্বাচনী ফল প্রকাশের পরও অমীমাংসিত থেকে যেতে পারে। বলা হচ্ছে, গত কয়েক দশকের মধ্যে বৃটেনে এরকম অনিশ্চয়তায় ভরা নির্বাচন আর হয়নি। বৃটিশ নির্বাচন নিয়ে সবার মনে জাগছে এমন কি
ছু প্রশ্নের উত্তর: ১. নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কারা বৃটেনে সবচেয়ে বড় দুটি দল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ আর বিরোধী লেবার পার্টির মধ্যেই হচ্ছে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কনজারভেটিভদের নেতৃত্বে আছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। আর লেবার পার্টির নেতৃত্বে বিরোধী দলীয় নেতা এড মিলিব্যান্ড। এর বাইরে এবার তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে স্কটল্যান্ডের জাতীয়তাবাদী দল এসএনপি। স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটে এসএনপি হেরে গেলেও তাদের পক্ষে এবারের নির্বাচনে সমর্থনের জোয়ার দেখা যাচ্ছে। বর্তমান জোট সরকারের অংশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এখনও জাতীয়ভাবে বড় দল, কিন্তু তাদের আসন সংখ্যা এবার কমে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ইমিগ্রেশন বিরোধী ইস্যুতে ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি (ইউকিপ) এবার বড় দুই দলের ভোটে ভাগ বসাতে পারে। এর বাইরে আছে আরও কিছু ছোট দল: গ্রিন পার্টি, ওয়েলস ন্যাশনালিস্ট পার্টি (প্লাইড কামরু), উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ন্যাশনালিষ্ট পার্টি এবং শিন ফেইন। ২. নির্বাচনে প্রধান ইস্যুগুলো কি? অর্থনীতি, ইমিগ্রেশন, এবং জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এনএইচএস-বলতে গেলে এই তিনটি ইস্যুতেই বেশি বিতর্ক চলছে এবারের নির্বাচনে। ইউরোপের অন্য দেশগুলোর তুলনায় বৃটিশ অর্থনীতির অবস্থা এই মূহুর্তে ভালো-কনজারভেটিভরা সেই সাফল্যের ওপর জোর দিচ্ছে। লেবার পার্টি দেখাতে চাইছে কনজারভেটিভরা আরেক দফা ক্ষমতায় গেলে বৃটেনে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার ভবিষ্যত বিপন্ন হতে পারে। আর ইউকিপ এর মতো দক্ষিণপন্থী দল ইমিগ্রেশনের বিরুদ্ধে কট্টর অবস্থান নিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। ৩. নির্বাচনে জিততে কত আসন দরকার? হাউজ অব কমন্সের আসন সংখ্যা ৬৫০। তার মানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে দরকার অন্তত ৩২৬টি আসন। জনমত জরিপ বলছে, বড় দুই দল কনজারভেটিভ এবং লেবার, কেউই এর কাছে নেই। এর মানে, বৃটেনে আবারও একটা ‘হাং পার্লামেন্ট’ বা ‘ঝুলন্ত পার্লামেন্ট’ হতে যাচ্ছে। ২০১০ সালে আগের নির্বাচনেও তাই ঘটেছিল। কেউই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, তখন কনজারভেটিভদের সরকার গঠন করতে হয়েছিল লিবারেল ডেমোক্রেটদের সঙ্গে জোট বেঁধে। ৪. যদি কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় তখন কি হবে? এক্ষেত্রে বিভিন্ন দলের মধ্যে শুরু হবে সরকার গঠনের লক্ষ্যে আলোচনা আর দরকষাকষি। সরকার গঠনের সম্ভাব্য দাবিদার বড় দুই দল কনজারভেটিভ আর লেবার পার্টি নেতারা জোর চেষ্টা চালাবেন ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের। ধরে নেয়া যেতে পারে ডেভিড ক্যামেরন বা এড মিলিব্যান্ড, এ দুজনের একজনই হবেন পরবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী। ৫. পার্লামেন্টে সবচেয়ে বড় দলটিই কি সরকার গঠনের সুযোগ পাবে? না, একদম নিশ্চিত করে এ কথা বলা যাবে না। ধরা যাক কনজারভেটিভরা তিনশো আসন জিতলো, তাদের এখন আরও ২৬টি আসন দরকার। সেক্ষেত্রে অন্য দলের সমর্থন তাদের দরকার হবে। তারা যদি সেই সমর্থন না পায়, তখন দ্বিতীয় বৃহত্তম দলটিও সরকারে চলে আসতে পারে অন্য ক্ষুদ্র দলগুলোর সমর্থন নিয়ে। লেবার পার্টির ক্ষেত্রে এরকম সম্ভাবনা প্রবল যদি তারা স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (এসএনপি) সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনে রাজি হয়। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডেভিড ক্যামেরনই প্রথম চেষ্টা চালাবেন তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের। যদি ব্যর্থ হন তখন তিনি পদত্যাগ করে সরে দাঁড়াবেন, সেটাই রীতি। তখন দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের প্রধান হিসেবে এড মিলিব্যান্ড তার জোট সঙ্গীদের নিয়ে সরকার গঠনের চেষ্টা চালাতে পারেন। ৬. কোন দলের সঙ্গে কাদের জোট হতে পারে? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ক্ষমতায় আছেন তাদের জোটসঙ্গী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থনে। এখন এবারের নির্বাচনে কনজারভেটিভরা এবং লিবারেল ডেমোক্রেটরা মিলে ৩২৬ বা তার চেয়ে বেশি আসনে জেতেন, তাহলে আশা করা যায়, তাদের মধ্যে আবারও জোট হতে পারে। কিন্তু আশংকা হচ্ছে লিবারেল ডেমোক্রেটদের আসন এবার অনেক কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কনজারভেটিভদের জন্য আরও একটি/দুটি ক্ষুদ্র দলের সমর্থন দরকার হতে পারে। এবারের নির্বাচনে ইউকিপ বেশ কিছু আসন জিতবে বলে আশা করা হয়। কিন্তু ইউকিপের মতো কট্টর রক্ষণশীলরা যদি সরকারের অংশ হয়, লিবারেল ডেমোক্রেটরা সেই সরকারে যোগ দেবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। লেবার পার্টির জন্য জোট গঠনের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য দুই সহযোগী দল হচ্ছে লিবারেল ডেমোক্রেট এবং এসএনপি। অংকের হিসাবে লেবার-লিবডেম জোটের সম্ভাবনা কম, কারণ দুই দল মিলে ৩২৬ টি আসনের হিসাব মেলানো কষ্টকর। এর চেয়ে অনেক সহজ লেবার-এসএনপি জোট। কিন্তু এসএনপির সঙ্গে লেবার পার্টি জোট গঠনের সম্ভাবনা আগে থেকেই নাকচ করে দিচ্ছে। যদিও নির্বাচনের পর তারা তাদের মত পাল্টালে সেটা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অবাক করবে না। ৭. যদি কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পারে, তখন কি হবে? সেক্ষেত্রে একমাত্র বিকল্প আরেকটি নির্বাচন। এরকম আশংকা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা উপ প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগের ধারণা, নির্বাচনের কয়েক মাসের মধ্যেই এরকম পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। সরকারকে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে পদত্যাগ করতে হয় এবছরই ক্রিসমাসের আগে আরেকটি বৃটেনকে আরেক দফা নির্বাচনে যেতে হবে।– বিবিবি নতুন বার্তা/এসএ
No comments:
Post a Comment