Tuesday, May 5, 2015

সিটি নির্বাচন: বৈধের চেয়ে বাতিল ভোটই বেশি:টাইমনিউজ

সিটি নির্বাচন: বৈধের চেয়ে বাতিল ভোটই বেশি টাইম ডেস্ক টাইম নিউজ বিডি, ০৫ মে, ২০১৫ ০৮:২৮:৫৭ সিটি নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১০টি কেন্দ্রে ৯৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে দুটি কেন্দ্রে। আবার উল্টো চিত্রও আছে। একটি কেন্দ্রে ৯ শতাংশেরও কম ভোট পড়েছে। এমনও কেন্দ্র রয়েছে যেখানে বৈধ ভোটের চেয়ে বাতিল ভোটই বেশি। কেন্দ্রভিত্তিক ভোটের ফলে অস্বাভাবিকতা আরও আছে। একটি কেন্দ্রে নবনির্বাচিত
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-সমর্থিত মোহাম্মদ মনজুর আলম কোনো ভোটই পাননি। অন্য একটি কেন্দ্রে পেয়েছেন মাত্র সাত ভোট। আবার ২৪১টি কেন্দ্রে নাছিরের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৭১৯টি ভোটকেন্দ্রের ফল বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। আগ্রাবাদের তালেবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ হাজার ৪৬২ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ২ হাজার ৪৩৩টি। ভোট গ্রহণের হার ৯৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। এই কেন্দ্রে ছয়টি বুথ। সে হিসেবে গড়ে দেড় মিনিটের কম সময়ে একটি ভোট পড়েছে। বৈধ ভোটের ৯৪ দশমিক ৫৫ শতাংশই (২ হাজার ১৮৯ ভোট) পেয়েছেন হাতি প্রতীকের আ জ ম নাছির। কমলালেবু প্রতীকের মনজুর আলম পেয়েছেন ভোটের ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ (৮৩ ভোট)। এই কেন্দ্রে বাতিল ভোট ১১৮টি। ২০১০ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল প্রায় ৫৩ শতাংশ। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ভোট পড়ার হার ছিল প্রায় ৭৮ শতাংশ। গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে তালেবিয়া বিদ্যালয় কেন্দ্রের মতো ৩২টি কেন্দ্রে ৮০ থেকে প্রায় ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। এসব কেন্দ্রে গোলযোগ, কারচুপি, ভোটকেন্দ্র দখলের মাধ্যমে জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগ রয়েছে। এই ৩২টি কেন্দ্রে আ জ ম নাছির পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৭৩৩ ভোট। মনজুর আলম পান ১১ হাজার ৩২৭ ভোট। ৩২টি কেন্দ্রে ভোটের হারের এই অস্বাভাবিক চিত্র সম্পর্কে মনজুর আলমের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান গতকাল সোমবার বলেন, ‘এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই ব্যালট পেপার যদি সঠিকভাবে যাচাই করা হয়, তাহলে ৮০ শতাংশ ভোটও বৈধ হবে না। কারণ ব্যালট পেপারে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা ও ভোটারের স্বাক্ষর মিলবে না। কোথাও হয়তো সিল ওলট-পালটভাবে মারা হয়েছে। এটা নির্বাচন হয়নি।’ তবে আ জ ম নাছিরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে শুধু মেয়ররা নন, ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে অসংখ্য প্রার্থী থাকেন। তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যাপারে তৎপর ছিলেন। কিছু জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। ভোটাররাও সচেতন। সব মিলিয়ে কিছু কিছু জায়গায় বেশি ভোট পড়তে পারে। এটা স্বাভাবিক।’ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৬০০। ভোট পড়ার হার ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ (৮ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৩ ভোট)। এর মধ্যে বাতিল ভোট ৪৭ হাজার ২৯২টি, যা মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। নির্বাচনে আ জ ম নাছির উদ্দিন পান ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট। ভোট গ্রহণের সোয়া তিন ঘণ্টা পর নির্বাচন বর্জন করেও মনজুর আলম পান ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট। দুটি কেন্দ্রে প্রায় ৯৯ শতাংশ ভোট পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ চট্টগ্রামে দুপুরের পর কেন্দ্র ফাঁকা হয়ে যায়। ন্যূনতম প্রতিটি ভোট প্রদানে তিন মিনিট সময় লাগলেও এত অল্প সময়ে এত বেশি ভোট পড়ার কথা নয়। আবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বীর কোনো কেন্দ্রে শূন্য ভোট পাওয়াও বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন রিং হলেও ফোন ধরেননি। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি চট্টগ্রামের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান। ১০ কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ভোট: ৱফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, নির্বাচনে ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে ১০টি কেন্দ্রে। ২০১০ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই ১০টি কেন্দ্রসহ কোনো কেন্দ্রেই ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। এবার আগ্রাবাদ তালেবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৮ দশমিক ৮২ শতাংশ, জামালখানের সলিমা সিরাজ ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৯৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, দক্ষিণ কাট্টলি প্রাণহরি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ, নিউমুরিং এলাকায় আহম্মদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, দক্ষিণ কাট্টলি পিএইচ আমিন একাডেমি কেন্দ্রে ৯৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ, পূর্ব নাছিরাবাদে চট্টগ্রাম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৯৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, বলিরহাট এলাকায় সানোয়ারা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ৯৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ, বাগমনিরাম আবদুর রশিদ সিটি করপোরেশন বালক উচ্চবিদ্যালয়ে ৯২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, নিউ টাইগারপাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯২ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯০ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ ছাড়া ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে ২২টি কেন্দ্রে। আর ৭০ থেকে ৭৯ শতাংশ ভোট পড়েছে এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৯টি। অস্বাভাবিক কম ভোট: বেশি ভোট প্রদানের পাশাপাশি অস্বাভাবিক কম ভোট পড়ারও নজির আছে। ১৯টি কেন্দ্রে ২০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। এর মধ্যে নৌ-বাহিনী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা শতাংশের হিসাবে সবচেয়ে কম। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পরিচয়পত্র ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে যাচাই করে ভোটারদের এই ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়। এখানে মোট ভোটার ৩ হাজার ৯০৫ জন। ভোট পড়ে ৩৩৯টি। এ ছাড়া দক্ষিণ হালিশহর উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট পড়ার হার ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এই কেন্দ্রে ৩ হাজার ৬৪২ ভোটের মধ্যে পড়েছে ৩৯২ ভোট। হালিশহর আহম্মদ মিয়া সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩ হাজার ২৩৭ ভোটের মধ্যে পড়েছে ৩৬১ ভোট, যা মোট ভোটের ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ। গোসাইলডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৫৭৬। ভোট পড়েছে ৩৬২, যা মোট ভোটের ১৪ দশমিক ০৫ শতাংশ। বি এফ শাহীন কলেজ কেন্দ্রে ৩২৯টি ভোট পড়েছে। এই কেন্দ্রের ভোটার ২ হাজার ৬৪৩ জন। এক কেন্দ্রে মনজুর ভোটই পাননি: হালিশহর মেহের আফজল উচ্চবিদ্যালয়ের চারটি কেন্দ্রের একটিতে শূন্য ভোট পান মনজুর আলম। এই কেন্দ্রে আ জ ম নাছির পান ৭৪৬ ভোট। এ ছাড়া মনজুর আলম সাত ভোট পান দক্ষিণ পাহাড়তলী অলি আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। নাছির পেয়েছেন ১৪২৩ ভোট। এক কেন্দ্রে বাতিল ভোট বেশি: দক্ষিণ কাট্টলি প্রাণহরি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বৈধ ভোট পড়েছে ১ হাজার ৮৬২টি। বাতিল ভোট ২ হাজার ৪৬০টি, যা প্রদত্ত ভোটের প্রায় ৫৭ শতাংশ। এই কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা ৪ হাজার ৪২২। ভোট পড়েছে ৪ হাজার ৩২২। সূত্র: প্রথম আলো এএইচ

No comments:

Post a Comment