জাফরুল্লাহর জরিমানা ৫ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: আদালত অবমাননার দায়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ৫,০০০ টাকা জরিমানা রায়ের কার্যকারিতা ৫ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। জাফরুল্লাহর আবেদনটি ওইদিন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছে। সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছে
দ অনুসারে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর করা একটি আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি করে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। জাফরুল্লাহর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আখতার ইমাম। তার সঙ্গে ছিলেন রাশনা ইমাম ও রেশাদ ইমাম। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। রাশনা ইমাম বলেন, ‘সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে সম্পূর্ণ ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ আবেদন করা হয়।’ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আদালত জরিমানা স্থগিত করে আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছে।’ উল্লেখ্য, ট্রাইব্যুনালের সাজার বিষয়ে বিবৃতি দেওয়ায় গত ১০ জুন ট্রাইব্যুনাল জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এক ঘণ্টার কারাদণ্ড ও ৫,০০০ টাকা জরিমানা করে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল-২ তাকে এই সাজা ও জরিমানা করে আদেশ দেয়। ওইদিন আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলে, এই এক ঘণ্টা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কাটাতে হবে। আর ৫,০০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরো এক মাসের কারাদণ্ডাদেশ ভোগ করতে হবে। বাংলাদেশে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের জরিমানার রায়ের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ায় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এই সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল। পরে ওইদিন বেলা ১২টা ৪৯ মিনিট থেকে একটা ৪৯ মিনিট পর্যন্ত জাফরুল্লাহ চৌধুরী কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থেকে এই দণ্ড খাটেন। পরে তিনি ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে সাজা দিয়ে ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতি মানসিক অসুস্থতার পরিচয় দিয়েছেন। বিচারপতিরা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। যেখানে বিচারপতিরা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, সেখানে ন্যায়বিচার সম্ভব নয়।’ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি বিচারপতিদের বলেছি- আপনাদের এই আদেশ স্থগিত রাখেন যেন উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারি। তারা সেই সুযোগ না দিয়ে দ্রুত আদালত ত্যাগ করেছেন। এখন বিষয়টা আপনারা বিবেচনা করেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কোনো বিষয়ে মন্তব্য বা সমালোচনা করা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আমার মন্তব্য বা সমালোচনা বিচারপতিরা সহ্য করতে পারেননি। রায়ের বেশিরভাগ অংশই ছিল রাগ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।’ এর আগে বার্গম্যানের সাজার বিষয়ে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ ৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি যুক্ত বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরে অবশ্য মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। এরপর ট্রাইব্যুনালে তাদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আখতার ইমাম এবং আইনজীবী আনিসুল হাসান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন তুরিন আফরোজ। শুনানির সময় ট্রাইব্যুনাল বলে, বার্গম্যানের সাজার বিষয়ে এই বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবৃতিদাতারা ‘দায়িত্বহীন আচরণ’ করেছেন। গত ১৪ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল ৪৯ বিবৃতিদাতার কাছে তাদের বিবৃতির বিষয়ে ব্যাখ্যা চায়। পরে বিবৃতির জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় ২৬ বিবৃতিদাতাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় ট্রাইব্যুনাল। গত ১ এপ্রিল ওই ২৩ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আদালত অবমাননার রুল জারি করে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করায় ডেভিড বার্গম্যানকে গত ২ ডিসেম্বর কারাদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বিচার কার্যক্রম চলাকালে তিনিও কারাদণ্ড হিসেবে এজলাসে এই সাজা ভোগ করেন। একই সঙ্গে বার্গম্যানকে ৫,০০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে সাত দিনের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল। মন্তব্য
No comments:
Post a Comment