Thursday, April 30, 2015

এশিয়ার নিকৃষ্ট সড়ক-মহাসড়ক বাংলাদেশে:আরটিএনএন

এশিয়ার নিকৃষ্ট সড়ক-মহাসড়ক বাংলাদেশে নিউজ ডেস্ক আরটিএনএন ঢাকা: বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো এশিয়ার নিকৃষ্ট বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট-২০১৫ অনুযায়ী গুণগতমানের অবকাঠামোতে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। আর এশিয়ার মধ্যে সবার নিচে। সড়ক অবকাঠামো সূচকে ১০-এর মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ২.৯। অথচ পার্শ্ববর্তী ভারতের স্কোর ৩.৮। এছাড়া সূচকে চীনের স্ক
োর ৪.৬, কম্বোডিয়ার ৩. ৪, পাকিস্তানের ৩.৮, শ্রীলংকার ৫.১ ও থাইল্যান্ডের ৪.৫। মাথাপিছু সড়কের হিসাবেও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি হাজার মানুষের জন্য সড়ক রয়েছে মাত্র ০.১ কিলোমিটার। অথচ মালদ্বীপে প্রতি হাজার মানুষের জন্য সড়ক রয়েছে ০.৩ কিলোমিটার, নেপালে ০.৮, পাকিস্তানে ১.৫, আফগানিস্তানে ১.৬, ভারতে ৩.৫, শ্রীলংকায় ৫.৫ ও ভুটানে ৯.৭ কিলোমিটার। বাংলাদেশে যে পরিমাণ পাকা সড়ক রয়েছে, তাও অপ্রতুল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট সড়কের মাত্র ১০ শতাংশ পাকা (পেভড রোড); যেখানে আফগানিস্তানে পাকা সড়ক ২৯ শতাংশ, ভুটানে ৪০, ভারতে ৫০, নেপালে ৫৪, পাকিস্তানে ৭২ ও শ্রীলংকায় ৮১ শতাংশ। আর মালদ্বীপের শতভাগ সড়কই পাকা। বাংলাদেশের সড়ক অবকাঠামোর গুণগত মানোন্নয়নে ২০২০ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৩৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামোর অবস্থা ভালো নয়। এর প্রতিফলন দেখা গেছে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা, প্রতিবেদন ও সূচকে। অবস্থার উন্নয়নে দ্রুত এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকল্পও নেয়া যেতে পারে। গুণগত মান খারাপ হওয়ায় বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোয় দুর্ঘটনাও ঘটে বেশি। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ মহাসড়কের ১০ গুণ দুর্ঘটনা ঘটে। অন্যান্য মহাসড়কের অবস্থাও একই রকম। ফলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মহাসড়ক বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ সড়কের তালিকায়ও রয়েছে। বাংলাদেশের সড়কের নিম্নমানের বিষয়টি উঠে এসেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) টেকনিক্যাল রিপোর্টেও। গত বছর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীন ৩,৫৮০ কিলোমিটার মহাসড়কের ৭৩ শতাংশই নিম্ন ক্যাটাগরির বা মানহীন। ইন্টারন্যাশনাল রোড অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় প্রত্যক্ষ জরিপের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করে এডিবি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ইউএন-এসকাপের ‘এশিয়ান হাইওয়ে ডাটাবেজ’-এ বলা হয়, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ের তিনটি রুট গেছে। এর মধ্যে দুটি আন্তর্জাতিক ও একটি আঞ্চলিক রুট রয়েছে। এ তিনটি রুটে সড়কের দৈর্ঘ্য ১,৭৪১ কিলোমিটার, যার প্রায় পুরোটাই নিম্নমানের। এক কিলোমিটার সড়কও নেই এশিয়ান হাইওয়ে মানের। আর সাসেক ও সওজের সমীক্ষা অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বা সাসেক রোড করিডোরের তিনটি রুট গেছে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে। রুট তিনটির দৈর্ঘ্য ১,৪৮১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১,৩১৮ কিলোমিটার বা ৮৯ শতাংশ সড়কই নিম্নমানের। এসব সড়ক আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় উপযুক্ত নয়। দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম। দুই লেনের এ সড়কের ৮৭ শতাংশই নিম্নমানের। রয়েছে দুর্ঘটনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বেশকিছু বাঁক। বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে নিয়মিতই বাজার বসছে। মহাসড়টি দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছতে লেগে যাচ্ছে ৮-১০ ঘণ্টা। সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে সময় গিয়ে ঠেকছে ২৪ ঘণ্টায়। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সড়কটিতে অবস্থিত মেঘনা ও গোমতী সেতুও। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগে নতুন মাত্রা এনে দেয় বঙ্গবন্ধু সেতু। কমে আসে যাতায়াতের সময়। কিন্তু এ অবস্থাও ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যেতে এখন ১০-১২ ঘণ্টাও লেগে যাচ্ছে। অবকাঠামোর পাশাপাশি ঘাটতি রয়েছে সড়ক ব্যবস্থাপনায়ও। কোনো মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত যান সরিয়ে নিতেই লেগে যায় ৩-৪ ঘণ্টা। এতে সড়কে সৃষ্টি হয় ৪০-৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট, ঈদ এলে যা নিত্যদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়ায়। এতে যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগে পড়তে হয়, একইভাবে বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয় পরিবহন মালিকদেরও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকে সামাজিক বিভিন্ন সূচকে এগিয়েছে দেশ। প্রচুর বিনিয়োগে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে অগ্রগতির এ চিত্র আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায়ও উঠে আসছে। তবে এর ঠিক বিপরীত চিত্র সড়ক-মহাসড়কের। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মহাসড়ক হতে হয় ন্যূনতম চার লেনের। মাঝে সড়ক বিভাজক (ডিভাইডার) থাকা আবশ্যকীয়। অযান্ত্রিক ও ধীরগতির যানের জন্য থাকতে হয় পৃথক লেনের ব্যবস্থা। মহাসড়কের দুই পাশে নিরাপত্তামূলক বেষ্টনী বা সীমানাপ্রাচীরের পাশাপাশি নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে কোনো জনবসতি-স্থাপনা রাখা যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো মহাসড়কই এসব শর্ত পূরণ না করায় এগুলোর অবস্থান নিম্নমানে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সহসভাপতি রুস্তম আলীর ভাষায়, দুই দশক আগে যে পথ ৪ ঘণ্টায় যাওয়া যেত, এখন তা লাগছে ৮ ঘণ্টা। সড়ক ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করা হচ্ছে কয়েক দশক আগের পদ্ধতি। এ অবস্থা কোনোমতেই কাম্য নয়। তবে মহাসড়কের গুণগত মানোন্নয়নে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান সওজের প্রধান প্রকৌশলী এম ফিরোজ ইকবাল। তিনি বলেন, সাসেক রোড করিডোর ও এশিয়ান হাইওয়ের রুটগুলো উন্নয়নে বেশকিছু প্রকল্প চলমান। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলো চার লেন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে ছোট-বড় বেশকিছু সেতু। এছাড়া ২০ বছর মেয়াদি রোড মাস্টারপ্ল্যানে আরো কিছু প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো সম্পন্ন হলে মহাসড়কের চিত্র অনেক উন্নত হবে। মন্তব্য      

No comments:

Post a Comment