পরকীয়া ঠেকাতে এবার ম্যারিজ ডিটেক্টিভ! (ভিডিও) মো: কামরুজ্জামান বাবলু টাইম নিউজ বিডি, ১০ জুন, ২০১৫ ১৭:১৬:০৯ আকাশ সংস্কৃতির নামে অশ্লীলতার ব্যাপক সয়লাব, সম-অধিকারের ছদ্মাবরণে নারী-পুরুষের অবাদ মেলা-মেশা এবং ইন্টারনেট-ফেসবুক থেকে শুরু করে তথ্য-প্রযুক্তির সুবাদে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের লাগামহীন যোগাযোগের ফলে পরকীয়া ও বিবাহ-বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। শুধু পশ্চিমা বিশ
্ব তথা উন্নত দেশই নয়; বাংলাদেশের মতো দেশও আজ এ সমস্যায় মারাত্মকভাবে জর্জরিত। আর পার্শ্ববর্তী ভারতে এখন এটা একটা অন্যতম বড় সমস্যা। পথে-ঘাটে, বাসে-ট্রেনে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে এশিয়ার সুপার পাওয়ারের স্বপ্নে বিভোর এই দেশটিতে যার হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। সম্প্রতি চলন্ত মাইক্রোবাসে গারো মেয়ের গণধর্ষণ যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বিশেষ করে সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোতেই আজ এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। চলচ্চিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, শীর্ষ ব্যবসায়ী ও আমলা কেউই যেন নিস্তার পাচ্ছেন না এই সমস্যা থেকে। সমাজের উচ্চবিত্ত এই পরিবারগুলোতে বিবাহ-বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। হর-হামেশা খুন-খারাবি ও আত্মহত্যার মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনা যেন এখন অনেকটাই স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ২০১১ সালে প্রকাশিত ঢাকা সিটি কপোরেশনের এক জরিপ বলা হয়, শুধু রাজধানীতেই বছরে পাঁচ হাজার বিয়ে বিচ্ছেদ হচ্ছে। উচ্চবিত্তদের মধ্যে এর সংখ্যা বেশি। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সালিশ বোর্ডের কাছে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে আরো প্রায় ৫০ হাজার আবেদন। বিয়ে বিচ্ছেদে এসব আবেদনের ৭০ ভাগই করেছেন নারীরা। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মেয়েরা যত বেশি আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে ততই বিয়ে বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে যা বাঙালি সমাজের জন্য একটি অশনি সংকেত। অপর এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দু’টি এলাকায় ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় ২৩০৯টি, যার মধ্যে ১৬৯২টি স্ত্রী ও স্বামী করেছে ৯২৫টি। ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত তালাকের সংখ্যা ৩৫৮৯টি। এর মধ্যে ২৩৮১টি স্ত্রী ও ১২০৮টি স্বামী। এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, তালাক দেয়া পুরুষ ৩০ শতাংশ, আর নারী ৭০ শতাংশ। জাতীয় মহিলা পরিষদ নারীদের তালাকের ক্ষেত্রে প্রধানত চারটি কারণকে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো- যৌতুক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং স্বামীর পরকিয়া। পুরুষের ক্ষেত্রে স্ত্রীর পরকিয়া ও যৌতুকের কারণটাই প্রধান বলে জানা যায়। তবে অনেকেই এটাকে কথিত আধুনিকতার কুফল বলে মনে করছেন। শহুরে জীবনের প্রয়োজন মেটাতে বা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক পরিবারেই স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চাকুরি কিংবা ব্যবসায়ীক কাজে জড়িত হচ্ছেন। বাসার বাইরে একটি বড় সময় তাদের পার করতে হয়। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর বাসায় ফিরে নেই শান্তি। স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে অথবা উভয় উভয়কে বিশ্বাস করতে পারছেন না। দুজনেরই সন্দেহ দুজনের ওপর। বছরের পর বছর এ নিয়ে চলে ঝগড়া ঝাটি। আবার অনেক সময়ই বাস্তবে দেখা যায় দুজনেই পরকীয়ায় আসক্ত। উঠতি বয়সি তরুণ-তরুণীরাও আজ চরমভাবে অধপতিত। জড়াচ্ছে বিবাহ-বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কে। এমনকি অনেকেই এই সম্পর্ককে একজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ভারতীয় নষ্ট সিরিয়ালের অনুকরণে একজন তরুণ বা তরুণী একাধিক প্রেমে আসক্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই তা গড়ায় অনৈতিক সম্পর্কের দিকে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি এই যে সন্দেহ-তার সত্যতা কতটুকু, তা যাচাইও অনেক সময় হয়ে পড়ে অসম্ভব। সাধারণত কয়েকটি লক্ষণ দেখে অনেক সময় বোঝার চেষ্টা করা হয় স্বামী কিংবা স্ত্রী পরকীয়ায় লিপ্ত কীনা। এর মধ্যে রয়েছে-মোবাইল ফোনে খুব বেশি পরিমানে সময় ক্ষেপণ, নিজের জীবন সঙ্গিনীর চেয়ে ফেসবুব বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের প্রতি বেশি আকর্ষণ অনুভব, সারাক্ষণ টেলিফোনে ব্যস্ত থাকা, ব্যক্তিগত ফোনে হাত দেয়া অপছন্দ করা ইত্যাদি। তবে, অনেক সময় সত্যিকার অর্থেই কাজের মধ্যে সময় পার করেছেন স্ত্রী বা স্বামী। কিন্তু এটা বুঝতে চাননা তার জীবনসঙ্গী। এখন প্রশ্ন হলো- কারো মনে যদি এমন দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে তার লাইফ পার্টনার পরকীয়ায় লিপ্ত। এ ব্যাপারে উপযুক্ত তথ্য-উপাত্ত দরকার, জানা দরকার সঠিক খবরটি। এই পরিস্থিতিতে পবিত্র বিবাহের মাধ্যমে অর্জিত চিরস্থায়ী বন্ধনটি টিকিয়ে রাখতে কে সাহায্য করবে? এমনই পরিস্থিতিতে ম্যারিজ ডিটেক্টিভই হতে পারে উত্তম সাহায্যদাতা। আর এ ধারণার ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ম্যারিজ ডিটেক্টিভ কার্যক্রম। লাইফ পার্টনারের ব্যাপারে সব প্রশ্নের জবাব দিবে এই প্রতিষ্ঠান, দৃষ্টিগোচরে এনে উন্মোচন করবে সন্দেহের জাল। কিন্তু কিভাবে? এই ধরনেরই একটি “ম্যারিজ ডিটেক্টিভ”-এর লিফলেট দেখে অনুসন্ধানে নামে ঢাকার একটি ইংরেজি দৈনিকের এক সাংবাদিক। ম্যারিজ ডিটেক্টিভের সদস্যের সাথে ওই সাংবাদিকের কথোপকথনের ভিডিওটি সংযুক্ত করে দেয়া হলো টাইমনিউজবিডির পাঠকদের জন্য। তবে, মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়া পরকিয়া ও প্রেম-ভালোবাসার নামে অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধে এ ধরণের সংগঠন কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে- তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বেশিরভাগ মানুষরই। কর্মব্যস্ত নগর জীবন থেকে শুরু করে মফস্বল বা গ্রামগঞ্জের মানুষও যেভাবে জীবন-জীবিকার তাগিদে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন তাতে কয়জনের পক্ষে ম্যারিজ ডিটেক্টিভ দিয়ে নিজের জীবনসঙ্গীর ব্যাপারে খোঁজ নেয়া সম্ভব-সে প্রশ্ন এখন অনেকেরই। অপর দিকে কোন স্বামী বা স্ত্রী যদি জানতে পারেন যে তার ব্যাপারে তার লাইফ পার্টনার ডিটেক্টিভ দিয়ে তদন্ত চালাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে বিষয়টি ভুল প্রমাণিত হলেও স্বাভাবিক সম্পর্কটি ধরে রাখা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট সংশয়। এসব আজগুবি ও অবাস্তব চিন্তা-ভাবনা বাদ দিয়ে নিজেরা নৈতিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার পাশাপাশি নিজেদের সন্তানদেরও সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার কোন বিকল্প নেই বলেই মনে করেন সচেতন জনগোষ্ঠী। আধুনিকতার নামে নিজের সন্তানদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা থেকে দূরে রাখতে গিয়ে অচিরেই না জানি আদরের সন্তানের ভয়াবহ পরিণতি দেখতে হয়, তাই সময় থাকতেই সাবধান হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। কেবি
No comments:
Post a Comment