Monday, May 4, 2015

পিন্টুকে হত্যার নির্দেশে হাসিনার বিচার হবে: খালেদা:আরটিএনএন

পিন্টুকে হত্যার নির্দেশে হাসিনার বিচার হবে: খালেদা নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘পিন্টু হত্যার বিচার হবে। আশা করি আমরা দেখে যেতে পারব। হাসিনারও বিচার হবে। কারণ তার নির্দেশেই সব হয়েছে। তার নির্দেশেই তাকে রাজশাহী নেওয়া হয়েছে।’ রবিবার রাতে গুলশান কা
র্যালয়ে বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন এসব কথা বলেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন পিন্টুকে রাজশাহী নেওয়া হয়েছে? এর জবাব সরকারকে দিতে হবে।’ বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘আদালত যে আদেশ দিয়েছেন, সে আদেশও তারা (সরকার) মানে না। অন্য সময় আদালতের আদেশ দেখায়। আর এখানে যে আদালত আদেশ দিয়েছেন সে আদেশ তারা মানে না।’ তিনি বলেন, ‘অসুস্থ মানুষকে ওরা (কারা কর্তৃপক্ষ) ডাক্তার দেখাতে দেয়নি। এদের কি আপনারা মানুষ বলবেন? এরা মানুষরূপী নরপিশাচ।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘পিন্টুকে সুচিকিৎসা দেওয়া হয়নি। জেলে রাখা হয়েছে অন্যায়ভাবে; মিথ্যা মামলা দিয়ে। জেলে অসুস্থ অবস্থায় তার যে চিকিৎসা পাওয়ার কথা, তা দেওয়া হয়নি।’ প্রধানমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজের দলের লোকদের এভাবে খুন হতে আর দেখতে চাই না, দেখতে পারি না। দেশের মানুষই এই ‘লেডি হিটলারের’ (শেখ হাসিনা) থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিবে।’ পিন্টুকে একজন ত্যাগী সংগঠক অভিহিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সে একজন দক্ষ ও ভালো সংগঠক ছিল। চিকিৎসার অভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। দীর্ঘদিন অন্যায়ভাবে পিন্টুকে জেলে রাখা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশ তারা (সরকার) মানেনি।’ ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি, পিন্টুর চিকিৎসার জন্য রাজশাহী কারাগারে একজন ডাক্তার এসেছিলেন, তাকে দেখতে দেয়া হয়নি। অসুস্থ ছেলেটাকেও এরা ডাক্তার দেখাতে দেয়নি। এদের কি আপনারা মানুষ বলবেন? এরা মানুষরূপী নরপিশাচ।’ ২০০১ সালে ঢাকা-৮ আসন থেকে নিবার্চিত সংসদ সদস্য পিন্টুর জানাজা সংসদ ভবনে করতে সরকারের অপরাগতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘পিন্টু একজন সংসদ সদস্য ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী তার জানাজা সংসদ প্লাজায় হওয়ার নিয়ম। এখন শুনলাম তার মরদেহ সংসদে নিতে দিতে চায় না সরকার। আল্লাহ এর বিচার করবেন।’ খালেদা জিয়া আবারো দাবি করেন, ‘দলের যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘তাকে কোথায় নেওয়া হয়েছে? ভালোভাবে, অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিন। ফেরত না দিলে ভালো হবে না। আপনারা শান্তির বাণী শোনান। আমরা এই বাণী আর শুনব না। আমরা চুপ করে বসে থাকব না।’ সালাহ উদ্দিন আহমেদকে অবিলম্বে তার পরিবারের কাছে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘র্যা বসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে গেছে। এখনো সে তাদের কাছেই আছে। আমি বলব- সালাহ উদ্দিনকে ভালোভাবে, সুস্থভাবে ফেরত দেয়া হোক। তার কোনো ক্ষতি হলে কেউ রক্ষা পাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাদের আমাদের চোখের সামনে একের পর এক হত্যা করা হবে, আর আমরা চুপ করে বসে থাকব। তা হতে পারে না। হতে দেয়া যায় না।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। আমরা গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাই। মানুষের নিরাপত্তা চাই। এসব করতে হবে। অন্যথায় দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে তারা কোন পথে এগুবে। কোন পথে এগুলে তারা শান্তি পাবে এবং এই জালেম খুনি লেডি হিটলারের হাত থেকে রক্ষা পাবে।’ দেশবাসীকে সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সকলকে রাস্তায় নেমে এসে নীবর প্রতিবাদ জানাতে হবে। কখন রাস্তায় সেই সময়টুকু আমাদের নির্ধারণ করতে। খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা বলে দিতে চাই- আমরা সরকারের বিরুদ্ধে এভাবে নীরব প্রতিবাদ করতেই থাকবে। তারা (সরকার) বলছে, অমুক সাল, তমুক সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। এসব বলে লাভ হবে না। এমন একদিন আসবে তাদের সৃষ্টি ফ্রাঙ্কেস্টাইনের হাতেই তারা শেষ হয়ে যাবে। আমাদের কোনো কিছু করতে হবে না।’ সিটি নিবার্চন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কেন আমরা ৫ জানুয়ারির নিবার্চনে যাইনি, তা ২৮ এপ্রিলের সিটি নিবার্চনে প্রমাণ হয়েছে। কিভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও গুণ্ডালীগ ভোট জালিয়াতি করেছে, আপনারা দেখেছেন।’ বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নিবার্চনে আমরা অংশ না নেয়ায় ওই সময়ে আমাদের সহকর্মীরাও অনেকে মনে করেছিল- আমাদের জনপ্রিয়তা আছে, ভোটে গেলেই জিতো যেত। ২৮ এপ্রিল সেই সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করেছে।’ চট্টগ্রামের নবনির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিনি চট্টগ্রামের একজন নামকরা সন্ত্রাসী। খুনের মামলা আছে তার বিরুদ্ধে। ১৪ বছর সে লুকিয়ে ছিল। নিবার্চনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর জামিন পান।’ বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘অথচ মির্জা আব্বাসকে জামিন দেয়া হয়নি। সরকারি দলের সন্ত্রাসী হলে তারা জামিন পাবে, আর বিরোধী দলের কাউকে জামিন দেয়া হবে না। আমাদের কাউন্সিলররা প্রচারণায় গেলে আটক করা হয়েছে।’ প্রধান নির্বাচনন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এই সিইসি অর্থব, মেরুদণ্ডহীন। মনে হয়, সে চোখে আন্ধার দেখে। সিটি নিবার্চন নিয়ে পত্রিকায় এতো কিছু প্রকাশ পেলো, তারপরও তিনি কিভাবে বলতে পারেন- নিবার্চন সুষ্ঠু হয়েছে। এটা একটা নির্বোধ লোক। তার কাছ থেকে সুষ্ঠু নিবার্চন আশা করা যায় না।’ সিটি নিবার্চন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজ দেশে কোনো সরকার নেই। জবরদখলকারী অবৈধ একটি সরকার রয়েছে। বাংলাদেশে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার নেই। এটি একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশরা বলে বেড়াই তারাই না কি এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। আমরা (পুলিশ) যা ইচ্ছা তাই করব, যাকে ইচ্ছা তাকে মারব। দেশের মানুষের আজ কোনো নিরাপত্তা নেই। হাসিনা সিটি নিবার্চনের পর বলেছে, তারা ভালো কাজ করেছে। এটা তো তিনি বলবেই। কারণ পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের গুণ্ডাবাহিনীর ওপর তিনি টিকে আছেন।’ ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ বসতিতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা স্মরণ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- রামুসহ সেখানে মন্দির প্যাগাডো হামলা না কি বিরোধী দল করেছে। তার বলতে একটুও লজ্জা করল না এতবড় মিথ্যা। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নির্লজ্জ মিথ্যাবাদী। তার দলের লোকরাই ওই হামলা করেছিল। হামলাকারীদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল।’ সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে জে (অব.) মাহবুবুর রহমান, আসম হান্নান শাহ, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক নিতাই রায় চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান কল্যাণ ট্রাস্ট্রের সদস্য সুশীল বড়ুয়া, সনত তালুকদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রুহুল আলম চৌধুরী, বৌদ্ধ ভীক্ষু প্রিয়বোধিব ভীক্ষু, সুনাম দীপ্তসহ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মন্তব্য      

No comments:

Post a Comment