Monday, March 9, 2015

ভেঙেছে সাধুর হাট:Time News

ভেঙেছে সাধুর হাট কুষ্টিয়া করেসপন্ডেন্ট টাইম নিউজ বিডি, ০৮ মার্চ, ২০১৫ ১৯:১৫:০২ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের পাঁচ দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব রোববার শেষ হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ও লালন একাডেমীর আয়াজনে পাঁচ দিনব্যাপী স্মরণোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লালন ভক্ত সাধু-সন্ন্যাসীরা স্মরণোৎসব শেষ ফিরছে যে যার আপন ঘরে। রোববার আখড়া ঘুরে
দেখা গেছে, দূর-দূরান্ত থেকে আসা বাউলরা নিজ নিজ আস্তানা ছেড়ে রওনা হয়েছে আপন মোকামে। যাওয়ার আগে শেষ বারের মত গুরুকে প্রণাম ও নানা ভক্তি জানিয়ে বিদায় নেন শিষ্যরা। গুরু ভক্তি আর সিদ্ধ মন নিয়েই বাউলরা পরিতৃপ্ত। আবার দেখা হবে সাঁইজির উদাসী টানে। মেহেরপুর থেকে আসা গুরু আকবর আলী সাঁই জানান, সাঁইজির জীবদ্দশায় শুধুমাত্র তার ভক্ত আর শিষ্যদের নিয়ে মূলত আড়াই দিনের উৎসব করতেন। সে নিময় মেনেই বাউলরা ভাটাই আসে উজানে ফিরে যায়, যে যার আপন নিবাসে। প্রকৃত ভেকধারী বাউলরা সরকারি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে খোঁজখবরও রাখেনা না। রোববার ভোরে সূর্য্য ওঠার আগেই অহিংস মানবতা প্রতিষ্ঠায় আপন মোকামে গুরুর চরণ ছুয়ে ভক্তি নিবেদন করে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে অনেক বাউল। লালন আঁখড়ার আশপাশে ও একাডেমীর নিচে যারা আসন গাড়ে তারা সাঁইকে ভক্তি আর আরাধনায় নিমগ্ন থাকে কখনো স্থান ত্যাগ করে না। যাবার সময় গুরু নহির সাঁই বললেন, ‘এবার আপনারে চিনতে পারলে রে যাবে অচিনারে চেনা’। ‘এই মানুষে আছে রে মন যারে বলে মানুষ রতন’ আমার ঘর খানাই কে বিরাজ করে। বাড়ি ফিরবেন কবে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সংসার ধর্ম টানে না আমাকে। আমার বাড়ির খবর নাই অন্যের বাড়ি কি হবে। সারা বছর পথেই কেটে যায়। মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের অহিংস মানবতা ও ফকিরী মতবাদের জাতহীন মানব দর্শন ও সঙ্গীত দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বাঙ্গনে নিজের মহিমায় জায়গা করে নিলেও বাংলা ভাষা ব্যতিত অন্য কোনো ভাষায় প্রকাশ, প্রচার ও প্রসার ঘটেনি তেমন একটা। মানবতা মুক্তি ও ভক্তির পথকে প্রতিষ্ঠা করতেই তিনি হাজারো ভাবধারার গান সৃষ্টি করছেন। কিন্তু তা বিশ্ববাসীকে নাড়া দিতে পারেনি যথার্থ একাডেমিক প্রচার আর প্রকাশনার অভাবে। তিনি অতি কঠিন কথাগুলো খুব সহজ করে তার গানে বলে গেছেন। তার অমর সৃষ্টি সঙ্গীত গতানুগতিকভাবে প্রচার ও প্রকাশ হলে চলবেনা। বিশ্বের বিশিষ্ট গবেষকেরা লালনের সৃষ্টি আরও নতুন নতুন তথ্য জানতে চাই। লালন গবেষক আব্দুস সালাম বলেন, একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী সাম্যের সমাজ গড়তে চেয়ে ছিলেন লালন সাঁই। তিনি পথভ্রষ্ট মানুষের মুক্তির জন্য তার বাউলতত্বের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক অহিংস মানবতার ডাক দিয়েছিলেন। তিনি ধর্মের দোহাই দিয়ে জাতি ভেদাভেদ ও সমাজের শ্রেণী বিভেদের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। তার অমর সৃষ্টির বিশালতা অনেক গভীর ও বিশাল। লালন সাঁই সমাজের সকল শ্রেণী ধর্মের মানুষকে আমৃত্যু এক করে দেখেছেন। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের জীবন ছিল বৈচিত্রময়। এই মরমী সাধকের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না থাকলেও তিনি ছিলেন আধুনিক সমাজ বিন্যাসে স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত। ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে কি অসীম মর্মকথা বলেছেন তিনি। এবারের স্মরণোৎসবে আগত দেশ-বিদেশের হাজারো ভক্ত অনুরাগী ও সাধু-গুরুর চরণ ধূলায় সিক্ত বাউল সম্রাটের ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি। সাঁইজির মতাদর্শের ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে মানুষ নিবেদিত থাক চিরকাল। মানবতার নিগুড় প্রেমের ভাবধারা বর্তমান সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে ভক্তকুলের এই অঙ্গীকার-সভ্যতার এই যুগে মানুষ মানুষে হিংসা বিদ্বেশ ভূলে সাঁইজির ধর্ম দর্শনের চিরাচরিত ‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’ আমার মনেরে বুঝায় কেমনে মিলন হবে কত দিনে, এই গানগুলোকে বাস্তবায়নে সদা সত্য ও সঠিক পথে চলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত রাখবে। বাউল সম্রাট লালন শাহর পাঁচ দিনব্যাপী স্মরণোৎসবে আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণে বসেছিল গ্রামীণ মেলা। মেলায় নাগরদোলাসহ বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। লালন মঞ্চ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বাউলরা বসেছিলো গানের আসর নিয়ে। আলোচনা শেষে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালন সংগীত পরিবেশিত হয়। সমাপনী দিনে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি মাহবুব-উল আলম হানিফ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, সহ-সভাপতি রবিউল ইসলাম, কুমারখালি উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান, কুমারখালি পৌরসভার মেয়র শামসুজ্জামান অরুন, লালন একাডেমির সহ-সভাপতি জাহিদ হোসেন, লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান প্রমুখ। লালনের বাউলতত্ব গ্রহণ, ফকিরিবাদ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লালন গবেষক এডভোকেট লালিম হক। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির নির্বাচিত সদস্য শেখ আহমেদ আলী। স্বাগত বক্তব্য ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন লালন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সেলিম হক। কেএইচ


No comments:

Post a Comment