Saturday, March 14, 2015

আ. লীগের জন্য বুমেরাং হতে পারে ডিসিসি নির্বাচন:Time News

আ. লীগের জন্য বুমেরাং হতে পারে ডিসিসি নির্বাচন স্টাফ রিপোর্টার টাইম নিউজ বিডি, ১৪ মার্চ, ২০১৫ ১৩:৩২:০৭ ডিসিসি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলনকে রাজধানী ঢাকায় আরও অকার্যকর করা, অন্যদিকে বিএনপির নাজুক সাংগঠনিক পরিস্থিতির কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সহজে জিততে পারবেন। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দল এখনো জনপ্রিয়, তা দেখানোর সুযোগ পাবে। এসব চিন্তা নিয়েই দুই সিটিতে নির্বাচণ
ের ঘোষণা দেয়া হয় বলে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে জানা গেছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির মধ্যেই গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত ঢাকা সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নির্দেশ দেন। সরকারি দলের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো জানায়, বিএনপি-জামায়াত এতে অংশ নেবে না ধরে নিয়েই সরকারি দল এ বিষয়ে ছক কষছে। আর কোনো কারণে বিএনপি নির্বাচনে এলেও নাজুক সাংগঠনিক অবস্থা এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা ও ধরপাকড়ের কারণে তারা সুবিধা করতে পারবে না। আবার এ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে উভয় সিটি করপোরেশনেই আওয়ামী লীগ নিজ দলেরই একাধিক প্রার্থী দাঁড় করানো ছাড়াও জাতীয় সংসদে অনুগত বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকেও প্রার্থী দিতে উৎসাহ দেবে দলে দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ঢাকার নির্বাচন নিয়ে সরকার ভোটার উপস্থিতি দেখাতে পারলে আন্তর্জাতিক মহলে এই বার্তা দেওয়া যাবে যে সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকনকে ডেকে নিয়ে যথাক্রমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সমর্থনের কথা জানান। এদিকে, এই নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নিয়ে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থী ঘোষণা উপেক্ষা করেই দলের একডজন নেতা মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে মিছিল, মিটিং ও শোডাউন করছেন। বিভিন্ন এলাকায় বিলবোর্ড, পোস্টার লাগাচ্ছেন তারা। উত্তর সিটিতে মেয়র পদে নির্বাচনের প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার ও দক্ষিণে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাজী সেলিম। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কোনো হাইপ্রোফাইলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে দলের বিজয় অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, দলের নির্দেশনার বাইরে অনেকেই নিজেকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তারা দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করছেন। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গেছে, ঢাকার উত্তর সিটিতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রার্থী আনিসুল হকের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন মেয়র পদপ্রার্থী আওয়ামী লীগের সাতজন। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কামাল আহমেদ মজুমদার, সংসদ সদস্য এ কে এম রহমত উল্লাহ, আওয়ামী লীগ ও ব্যবসায়ী নেতা এস এ মান্নান কচি, সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলাম, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের সভাপতি মাঈনুল হোসেন নিখিল ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক খানের নাম মেয়র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছে। এর মধ্যে কামাল আহমেদ মজুমদারের নামে উত্তর সিটির ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে লিফলেট বিলি করা হচ্ছে এবং ব্যাপক শোডাউনও চলছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকনের পাশাপাশি প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। তিনিও প্রচার-প্রচারণায় পিছিয়ে নেই। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনিও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। দক্ষিণে সিটি মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের অপর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন। তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক গণমাধ্যমকে বলেন, মাঠে একাধিক প্রার্থী দেখা গেলেও সময়মতো দলের সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেবেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ বলেন, যিনি সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ করবেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উত্তরের মেয়র প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আনিসুল হককে কাজ করতে বলেছেন, দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেননি। জনগণ আমাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। তিনি জানান, তফসিল ঘোষণার আগে দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। দলীয় সমর্থন না পেলেও এমপি পদ ছেড়ে দিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এদিকে দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হাজী মো. সেলিম বলেন, জনগণের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে নেমেছেন। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। দলীয় সভানেত্রীও প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। দক্ষিণ সিটির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন বলেন, মাঠে ছিলাম, মাঠে আছি, মাঠে থাকব। জানা গেছে, ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার সমর্থকরাও উত্তর সিটির নাগরিকদের মধ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সাঈদ খোকনও প্রচার-প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এই নির্বাচনে সরকারের কতটা স্বার্থ হাসিল হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা উপেক্ষা করে নিজ দলের এমন প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন, যারা রাজনৈতিক মাঠে অতি পরিচিত। তাই নির্বাচনের ফলাফল এখনই পরিস্কার নয়। অন্যদিকে নির্বাচনকে ঘিরে অবাধ রাজনৈতিক সভা সমাবেশের একটা সুযোগ তৈরি হতে পারে রাজধানীতে। যা ২০ দলীয় জোটের জন্য স্বস্তিকর। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজপথে নেমে যেতে পারে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীরা। একারণে এখনই বলা যাচ্ছে না- সিটি নির্বাচনের শতভাগ সুফলই আওয়ামী লীগ ভোগ করবে। তাদের জন্য বুমেরাং হতে পারে ডিসিসি নির্বাচন। ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০০২ সালে। সে সময় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির নেতা সাদেক হোসেন খোকা। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরে তিনবার নির্বাচন করার আওয়াজ তুললেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। এর মধ্যে ঢাকা সিটি নির্বাচনের বিষয়টি প্রথম জোরেশোরে আলোচনায় আসে ২০১০ সালে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার মতে, বিপুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা সিটি নির্বাচন দেওয়ার মোক্ষম সময় ছিল। তখন অবিভক্ত সিটি নির্বাচনে সাবের হোসেন চৌধুরীকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনে করা হতো। কিন্তু এক-এগারোর সময়ে কথিত ‘সংস্কারপন্থী’ তকমা জুড়ে দেওয়ার কারণে তাঁকে দলীয় প্রার্থী করতে আগ্রহী ছিলেন না শীর্ষ নেতৃত্ব। বিকল্প ভালো প্রার্থী খুঁজে না পাওয়ায় এবং বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যার কারণে নগরবাসী বিরক্ত থাকায় তখন আর নির্বাচন দিয়ে ঝুঁকি নিতে চাননি সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। তা ছাড়া ২০১০-এর জুনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভরাডুবি হয়। অবশ্য তখন নির্বাচন না দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমানা নির্ধারণ হয়নি অভিযোগ তুলে উচ্চ আদালতে করা এক রিট আবেদনকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জেএ  


No comments:

Post a Comment