Thursday, January 1, 2015

কেমন ছিল গত বছরের অর্থনীতি?:Time News

কেমন ছিল গত বছরের অর্থনীতি? শাহ মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ টাইম নিউজ বিডি, ০১ জানুয়ারি, ২০১৫ ১৫:৪৭:৪৬ দেখতে দেখতে আরেকটি বছর গত হয়ে গেল আমাদের জীবন থেকে। ২০১৪ সালটি নানা কারণেই আলোচনার তুঙ্গে ছিল। অর্থনীতির ক্ষেত্রেও নানা চড়াই-উৎরাই পেরোতে হয়েছে বিশ্বকে এবং বাংলাদেশকে। চলুন জেনে নেয়া যাক গত একটি বছরের অর্থনীতিতে কেমন ছিল আমাদের দেশ ও বিশ্ব। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি: অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব প
রিস্থিতির মধ্যে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। আর সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরাও আশাবাদী। তবে, বাংলাদেশে গত বছরের তুলনায় দুর্নীতি বেড়েছে বাংলাদেশে। বিশ্বের ১৭৫টি দেশের মধ্যে দুর্নীতির দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) প্রকাশিত হয় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এ সূচক অনুসারে গত বছরের তুলনায়, বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থান উভয় খাতেই অবনতি হয়েছে। তবে, সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। অনুমান করা হচ্ছে, পাঁচ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭-৮ শতাংশের মধ্যে থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা অন্য রকম। সামাজিক সূচকে অগ্রগতি হলেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে জনগণের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নের দিকে বেশি নজর দিতে হবে বাংলাদেশকে। জাতিসংঘের উন্নয়ন ও বাণিজ্য সংস্থা আঙ্কটাডের এলডিসি-২০১৪ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। গত নভেম্বরে আঙ্কটাডের এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদ সূচক ও অর্থনীতির ভঙ্গুরতা এই তিনটি সূচকের অগ্রগতি বিবেচনা করে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা বা স্ট্যাটাস মূল্যায়ন করা হয়। আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী স্বল্পোন্নত তথা এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় বাড়লেও অন্য দুটিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। সিপিডি বলেছে, সামাজিক সূচকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের যে অগ্রগতি তাতে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে কমপক্ষে আরও ১০ বছর সময় লাগবে। এদিকে, মোট শ্রমশক্তির অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশ বিধিবদ্ধ ক্ষেত্রে কাজ করে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও অন্যান্য বেসরকারি গবেষণা সংস্থার হিসাব বলছে, বর্তমানে মোট কর্মসংস্থানের ৯০ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে শ্রমবাজারের সঙ্গে যুক্ত, যেখানে কাজের নিরাপত্তা ও সিংহভাগ সুবিধা অনুপস্থিত। যদিও উন্নয়নের যথার্থ চক্র হলো যখন একটি অর্থনীতির মাথাপিছু আয় বাড়ে, শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটে, তখন বিধিবদ্ধ কর্মসংস্থানের সুযোগও বেশি সৃষ্টি হয়। প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার বাড়াতে গত দুই দশকে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি), পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ রাষ্ট্রীয় যত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, ফল হয়েছে ঠিক তার উল্টো। ১৯৯৯-২০০০ সালে বাংলাদেশে মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ২৫ শতাংশ ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বা বিধিবদ্ধ ক্ষেত্রে। এখন এ হার ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। বিধিবদ্ধ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এ হার দক্ষিণ এশিয়াসহ উদীয়মান অর্থনীতির মধ্যে সবচেয়ে কম। ফলে অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও বাংলাদেশের শ্রমবাজারে ক্রমান্বয়ে কাঠামোগত অবনতি ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার যেভাবে কমছে, তাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়ন বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়বে; যা সামাজিক শৃঙ্খলায় বড় ধরনের উত্তাপ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। সরকার তার বিভিন্ন সময়ের উন্নয়ন দলিলে বিধিবদ্ধ কর্মসংস্থানের হার বাড়ানোর প্রক্ষেপণ করলেও তেমন কোনো অগ্রগতি আসেনি। যদিও বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার পদক্ষেপের সঙ্গে শ্রমবাজারের উন্নতি সম্পর্কযুক্ত। তাছাড়া দেশে নগরকেন্দ্রিক বেকারত্বের হার বাড়লে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ঝুঁকির মুখে পড়বে। অন্যদিকে, রেমিটেন্স কমেছে গত অর্থ বছরের তুলনায়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে যেখানে রেমিটেন্স ছিল ১৪৪৬১.১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪২২৮.২৬ মিলিয়ন ডলারে। তবে, বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধাপে ধাপে বাড়ছে। এদিকে, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় স্বাধীনতার পরে প্রথমবারের মতো ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে ২০১৩/১৪ অর্থবছরের হিসেব মতে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশ তার বিভিন্ন পণ্য বিদেশে বিক্রি করে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে (অর্থবছর শেষ হয়েছে জুন ১৩, ২০১৪) আয় করেছে ৩০.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া, বাণিজ্যে বিশ্বের মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এইচএসবিসি ব্যাংকের সর্বশেষ বাণিজ্যিক আস্থা সূচকে, বাংলাদেশ বৈশ্বিক বাণিজ্যিক আস্থায় স্পষ্টভাবে এগিয়েছে। গত বছরের ৬ মাসে ৩৬টি পয়েন্টে বাংলাদেশ এগিয়েছে, যা বিশ্বের এই ধারার ২৩টি শীর্ষ দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। এই সূচকে প্রকাশ বাংলাদেশ ২০১৪ সালের প্রথমার্ধে ১৪১ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০১৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে ছিল ১০৩ পয়েন্ট। ২০১৪ সাল বিশ্ব অর্থনীতি: নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ ই-স্টিগলিৎস ২০১৩ সালে বলেছিলেন, ২০১৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতি ২০১৩ সালের তুলনায় কিছুটা ভালো হতে পারে। কিন্তু দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে মধ্য আয়ের মানুষের আয় প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। পুরুষ শ্রমিকদের আয় ৪০ বছর আগের মজুরির চেয়েও নিচে নেমে গেছে। ২০১৩ সালে ইউরোপের টলায়মান মন্দা কেটে গেছে। তবে এমন কথা বলা যাবে না, সেখান থেকে কোনো উত্তরণ ঘটেছে। গ্রিস ও স্পেনের প্রায় ৫০ শতাংশ তরুণ এখন বেকার। তবে আইএমএফের ভাষ্য অনুযায়ী, আগামী বছরগুলোয় স্পেনে বেকারত্বের হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিভাজন তীব্রতর হওয়ায় তারা তুলনামূলকভাবে একটু ভালো অবস্থায় আছে। যদিও সেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য ক্রমে বাড়ছে। অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য অনেক বেশি। ব্রাজিলের সামাজিক অস্থিরতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, দারিদ্র্য নিরসনে ও অসাম্য হঠাতে গত এক দশকে সেখানে অনেকটা উন্নতি হয়েছে বটে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সচ্ছলতা আনতে হলে সেখানে আরো বহু কিছু করতে হবে। চীন এক টেকসই উন্নয়নের পথে হাঁটা শুরু করেছে। ওই উন্নয়নের গতি ধীর হলেও আখেরে তা চীন ও সারা দুনিয়ার জন্য মঙ্গলজনক হবে। ২০১৪ সালের বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সঙ্কট পরবর্তী উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় প্রবৃদ্ধির মাত্রার উচ্চ অব্স্থা দেখা গেছে। মার্কিন অর্থনীতিতে সরকারি খাতের বিনিয়োগ পর্যাপ্ত না হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকছেই না বলা যায়। ইউরোপের কাঠামোগত পুনর্বিন্যাসে আরো সময় লাগবে। চীন আগ্রাসী ও বিশ্বাসযোগ্য সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দেশটি যদি একই মাত্রায় আগ্রাসী কর্মসূচির মাধ্যমে তা বাস্তবায়নে লেগে যায়, তবে তাদের প্রবৃদ্ধি টেকসইভাবে এগিয়ে যাবে। আফ্রিকান দেশগুলো প্রায় একযুগ ধরে ভালো করছে। ২০১৪ সালেও সেই অর্থে তাদের অর্থনীতি ভালোই কেটেছে বলা যায়। প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্য ও বাজারের ওপর তাদের অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ রবার্ট কানের মতে, ২০১৪ সালের প্রবৃদ্ধির গতি দেখে ইউরোপিয়ান নীতিনির্ধারকরা উৎফুল্ল হতে পারেন। সঙ্কট ভাবটি কেটে গেছে বলেই মনে হচ্ছে, মূলধন ফিরে আসছে, তবে সঙ্কটের শঙ্কা পুরোপুরি কেটে গেছে। এমনটি ভাবার অবকাশ নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের (ইসিবি) উচিত ব্যাপক মাত্রায় নতুন ঋণপ্রধান। ইউরোপের সবচেয়ে বড় সমস্যা বেকারত্ব। স্পেনে তা ২.৬ শতাংশ এবং সার্বিকভাবে ইউরোপে ১২ শতাংশে পৌঁছে গেছে। ইউরো জোনে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব প্রায় ২৪ শতাংশ এবং বেশ কয়েকটি দেশে তা ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এটি ইউরোপের ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করেছে। তবে ২০১৪ সালে ইউরোপের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এসেছে রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে। ইউরোপের অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হতে পারত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আরো জোরদার করার মাধ্যমে। কিন্তু কৃচ্ছনীতির ফলে অনেক দেশ ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছে। গ্রিস ও পর্তুগালের মতো দেশ কৃচ্ছ কর্মসূচির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খাচ্ছে। আর ইউক্রেন নিয়ে ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার টানাপোড়নের বেগ অর্থনীতিতেও পড়েছে। আরেক অর্থনীতিবিদ তালভি মনে করেন ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো বিশেষ করে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা মার্কিন অর্থনৈতিক চক্রের ওপর কম নির্ভরশীল থাকায় বিপুল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে রয়েছে। তাদের দারিদ্র্য হ্রাস পাচ্ছে, বেকারত্ব কমছে, নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ ইউকোন হুয়াঙ চীনের অর্থনীতি নিয়ে মনে করেন, গত বছরের (২০১৩ সাল) নভেম্বরে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেয়া পরিকল্পনাটি একটি সাহসী পদক্ষেপ, এটি দেশটির অর্থনীতিকে আরো এগিয়ে নিয়েছে। চীন কিছুদিন আগেই আমেরিকাকে টপকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। চীন এ দশকের অবশিষ্ট সময়ে ৭.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পারলে ক্রমবর্ধমান ঋণ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে এবং উৎপাদনশীলতা ব্যাপকভাবে বাড়াতে পারবে। ২০০৮ সালে চীনের ৬০০ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ মোট ঋণের মাত্রা ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে আশার কথা হলো চীনের উচ্চমাত্রার সঞ্চয় হার এবং বিপুল রিজার্ভের কারণে এ বোঝা সহনযোগ্য এবং প্রবৃদ্ধির হার টেকসই রাখা সম্ভব। নভেম্বরের সম্মেলনে সিনিয়র নেতাদের নীতিনির্ধারণী এজেন্ডায় ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক সমস্যাবলী প্রাধান্য পায়। এর কারণ হলো দেশটির সাধারণ নাগরিকরা সামাজিক ন্যায়বিচার, দুর্নীতি ও পরিবেশের মতো বিষয়গুলো নিয়ে বেশি বেশি ভাবছে। তবে ওই সম্মেলনে এসব স্পর্শকাতর বিষয়ের সুরাহার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। রাজস্ব সংস্কার ও ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর ফলে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা বাড়বে। মার্ক জিনদি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এক দশকের মধ্যে দ্রুততম প্রবৃদ্ধির দিকে পা বাড়াবে। তবে এ আশাবাদে পানি ঢেলে দিতে পারে রাজস্ব কৃচ্ছসাধন। বর্তমান আইনানুসারে কংগ্রেস যদি কর ও ব্যয়ের ব্যাপারে ব্যাপক কোনো পরিবর্তন না করে তবে রাজনীতি থেকে বয়ে আসা বিপরীতমুখী বাতাস খুব তাড়াতাড়ি সব সম্ভাবনা কাটিয়ে বিদায় করে দেবে। কংগ্রেস এবং ওবামা প্রমাণ যদি কর সংস্কারের ব্যাপারে একমতে পৌঁছে তা হতে পারে দারুণ ব্যাপার; তবে তেমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। গৃহায়ন খাতে চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হতে পারে। আর এটিই প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হবে। তবে ২০১৪ সালে করপোরেট, ব্যাংক ও গৃহস্থালি ব্যালান্স সিটের ছিল চমৎকার অবস্থা। ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যয় কমিয়ে রেকর্ড মুনাফা করছে। ব্যাংকগুলো আবার মূলধন পাচ্ছে, তারল্যে প্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে। 'অর্গানাইজেশন অব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট'-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দশম শতাব্দী পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ০.০১ শতাংশ। শিল্প বিপ্লবের পূর্ব পর্যন্ত তা ০.২২ শতাংশে উন্নীত হয়। তারপর থেকে বিশ্ব প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়তে থাকে। বিংশ শতাব্দী শেষে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে ২.২১ শতাংশে পৌঁছে। নতুন শতাব্দীর ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিশ্ব প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪ শতাংশে উন্নীত হয়। মন্দার কারণে ২০০৮ সাল থেকে প্রবৃদ্ধি কিছুটা নিম্নমুখী হলেও উন্নত দেশগুলোয় মন্দা কাটতে শুরু করায় প্রবৃদ্ধি আবার পড়তে শুরু করেছে। তারপরও বিশ্ব থেমে নেই। উন্নত বিশ্ব আরো বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চায়। উন্নয়নশীল বিশ্ব দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়ে উন্নতির পরবর্তী উচ্চতায় পৌঁছতে চায়। সেই দৌড় প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশও একটি অগ্রসরমান অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে শামিল হয়েছে। সরকার প্রবৃদ্ধির হার বর্তমানের ৬.২ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ উন্নীত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে শিল্পায়নের ওপর অধিক গুরুত্ব দেবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। চীন ১৯৮০'র দশক থেকে শিল্প খাতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে অর্থনৈতিক সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন শুরু করে। মাত্র ৩০ বছরেই চীন, জাপান ও জার্মানিকে টপকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ অর্থনীতির আসনটি দখল করেছে। তারপর আছে যথাক্রমে জাপান, জার্মানি, রাশিয়া, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশ। আর বাংলাদেশের অবস্থান ৪২তম। চীনের এক-তৃতীয়াংশ জিডিপি নিয়ে ভারত তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। 'সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ' (সিইবিআর)-এর আগের পূর্বাভাসে (২০১৩) বলা হয়েছিল, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে। চীনের পর থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান (তবে, চীন ইতোমধেই যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে গেছে)। এরপরই ভারত ও জাপান থাকবে তালিকার শীর্ষে। ভারত চীনের প্রায় এক দশক পর ১৯৯১ সালে অর্থনৈতিক সংস্কার কাজ শুরু করে। সংস্কারের প্রথম দলকে ভারত গড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। আশির দশকে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৪ শতাংশ। আর নতুন সহস্রাব্দের প্রথম দশকে তা প্রায় ৮ শতাংশে উন্নীত হয়। বিশ্ব মন্দার কারণে চলতি দশকে প্রবৃদ্ধি কমে গত বছর প্রায় ৫ শতাংশে পৌঁছে। তবে দেশটি আবার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। অন্যদিকে চীন সংস্কারের প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে ৮ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও ২০০১-এর দশকে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সকল সংকট কাটিয়ে আমরা আগামীতে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও বিশ্ব দেখতে পাবো বলে আশাবাদী। সমৃদ্ধির পথে যে বাধাগুলো সেগুলো পেরিয়ে যেতে হবে আমাদের। কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সুশাসন, গণতন্ত্র, সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা থাকা দরকার। প্রয়োজনে অর্থনৈতিক সংস্কারও করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ঠেকাতে হবে। আর অর্থনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন তথা দুর্নীতি রুখতে হলে প্রয়োজন সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আর সুশাসন। বলার অপেক্ষা রাখে না, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যব্স্থার উপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল সুশাসন। এমএ


No comments:

Post a Comment