
্য আদালত নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষকে। ৫ জানুয়ারি সোমবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিক্ষোভ সমাবেশ করতে চাইলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরপর থেকেই ক্রমবর্ধমানভাবে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ৫ জানুয়ারী ছিল দেশটির বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের এক বছর পূর্তি। এই নির্বাচন বিরোধী দলগুলো বর্জন করে এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এতে জয়ী হয়। বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ দক্ষিণ নোয়াখালীর একটি শহরে বিএনপির দুই কর্মীকে গুলি করে হত্যা করে। স্থানীয় পুলিশ প্রধান ইলিয়াস শরীফ জানান, বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে আক্রমণ করলে পুলিশ কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালায়। সোমবারের এই বিক্ষোভ সমাবেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে বিরোধী দিল অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজধানী ঢাকার সাথে দেশব্যপী সড়কপথ, রেলপথ এবং জলপথ অবরোধের ডাক দেয়। পুলিশ জানায়, তারা বিক্ষোভ করার অভিযোগে কয়েকশ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। সোমবার থেকে চলা এই বিক্ষোভে অন্তত ছয় জন প্রতিবাদকারীর মৃত্যু হয়েছে। বিরোধীরা অভিযোগ করছে, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে পুলিশও পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করছে। পুলিশ বলছে, তারা নিরাপত্তা বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও বুধবার আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা আদালতে আবেদন জানায় বিরোধী এক নেতার বক্তব্য যেন মিডিয়া প্রকাশ করতে না পারে। পরে আদালত থেকে কণ্ঠরোধের আদেশ দেয়া হয়। এতে বিএনপি নেতা খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের কোনো বিবৃতি মিডিয়ায় প্রচার না করার আদেশ দেয়া হয়। চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে ছেড়ে বাইরে যাবার অনুমতি দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ এবং দলটির একাধিক সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন। সরকার অতীত কয়েকটি ইস্যুতে তার বিরুদ্ধে কয়েক ডজন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিএনপি বলছে, সরকার সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে এটি বন্ধ করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। খালেদা জিয়াকে আটক রাখার কথা অস্বীকার করে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, খালেদার নিজের অনুরোধেই সরকার তার নিরাপত্তা জোরদার করেছে। বিরোধী দল বলছে, সরকার তাকে অবৈধভাবে আটক রেখে এই বিক্ষোভ প্রতিবাদে নেতৃত্ব দেয়া থেকে বিরত রাখছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান এই রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের উন্নয়নশীল অর্থনীতি, বিশেষ করে দেশটির বছরে ২৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক শিল্পকে আঘাত করতে পারে। দেশটির পোশাক কারখানাগুলো পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন নামি-দামি ব্যান্ডের পোশাক তৈরি করে থাকে। বাংলাদেশী একজন আইনজীবী শাহদীন মালিক জানান, তারেক রহমান মন্তব্যের উপর কণ্ঠরোধ আদেশ একেবারেই অপ্রত্যাশিত। একজন রাজনৈতিক নেতার বক্তৃতার রিপোর্ট প্রচারে নিষেধাজ্ঞা মিডিয়ার জন্য অবশ্যই অপ্রত্যাশিত। মুলতুবি কোনো মামলা কিংবা তিনি দোষী সাব্যস্ত হলেও এটি কাম্য নয়। অন্যদিকে পুলিশ একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে। মানবাধিকার কর্মীরা এই গ্রেপ্তারের কঠোর সমালোচনা করেছে। একুশে টেলিভিশন দেশটির বহুদিনের পুরনো একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল। তারেক রহমানের একটি বক্তৃতা সম্প্রচার করার কয়েক ঘণ্টা পরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। চ্যানেলটির সাংবাদিকেরা জানান, একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মঙ্গলবার তার অফিসে থেকে বের হওয়ার পথে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পুলিশের একজন মুখপাত্র মাসুদুর রহমান জানান, গত নভেম্বরে একজন মহিলার দায়ের করা একটি মামলায় সালামকে আটক করা হয়েছে। মহিলাটি চ্যানেলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, চ্যানেলটি তার অশ্লীল চিত্র সম্প্রচার করেছে। একুশে টিভির সংবাদ এডিটর মজুমদার জুয়েল জানান, চ্যানেলটি তার সম্পাদকীয় মান বজায় রেখেই একটি অনুসন্ধানী প্রোগ্রামের জন্য তারা ঝাপসা/অস্পষ্ট ছবি সম্প্রচার করেছে। জুয়েল বলেন, ‘সাংবাদিকতার নৈতিকতা বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো কিছুই আমরা করিনি। আমরা মনে করি এটি মিডিয়ার উপর একটি শীতল প্রভাব সৃষ্টি করবে।’ সালামের একজন আইনজীবী ইউনুস আলী বিশ্বাস জানান, তার ক্লায়েন্ট অন্যায় কোনো কিছু করেনি। তিনি আরো জানান, দৈনন্দিন অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ক্ষেত্রে একুশে টিভির চেয়ারম্যানের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। পর্নোগ্রাফি আইনের অধীনে দায়ের করা এই মামলায় আসামী হিসাবে তার নাম ছিল না। তিনি বলেন, ‘ঘটনা ঘটার দুই মাস পরে আমার ক্লায়েন্টকে গ্রেপ্তার করা একেবারেই অযৌক্তিক। এই ক্ষেত্রে আসামী হিসাবে তার নামও তালিকায় ছিল না।’ সোমবার রাতে বিরোধী দলের এই নেতার একটি বক্তৃতা সম্প্রচার করার পরপরই ইটিভির সিগন্যাল কেবল নেটওয়ার্ক থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। চ্যানেলটি বন্ধে সরকার ক্যাবল অপারেটরদের উপর চাপ প্রয়োগ করেছে বলে সমালোচকরা অভিযোগ করছেন। যদিও সরকার তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। ক্যাবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন এই ব্যাপারে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। (যুক্তরাষ্ট্রের বহুল প্রচারিত দৈনিক ওয়াল স্ট্রীট জার্নালে ‘বাংলাদেশ পুলিশ ক্র্যাকডাউন অন প্রটেস্টার্স’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের ভাষান্তর) মন্তব্য
No comments:
Post a Comment