
ঘলদের বর্তমান প্রজন্ম "দিন আনে দিন খায়"। ১৮৫৭ সালে শেষ সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরকে রেঙ্গুনে নির্বাসনে দেয়ার মাধ্যমে ইংরেজদের হাতে মোঘল সাম্রাজ্যের সূর্য অস্তমিত হয়। কালের পরিক্রমায় এখন কলকাতার অদূরে একটি বস্তিতে ছেলে-মেয়েসহ নাতি-নাতনিদের নিয়ে বসবাস করছেন ৬০ বছর বয়সী সুলতানা বেগম। তার স্বামীর দাদার দাদা ছিলেন শেষ সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ। পরিবার: পশ্চিম বঙ্গে নাতি মোহাম্মদ জেজানের সঙ্গে সুলতানা বেগম। ১৯৮০ সালে তার স্বামী প্রিন্স মির্জা বেদার বখত মারা যাওয়ার পর থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করছেন সুলতানা বেগম। যদিও রাজবংশের উত্তরাধিকারী হিসেবে এখনও সরকারি কোষাগার থেকে প্রতি মাসে পেনশন পান। কিন্তু তা মাত্র ৬০ পাউন্ড (ভারতীয় ৬০০০ টাকা)। যা দিয়ে ৫ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। এমন দীনতায় কলকাতার হাওড়ার একটি বস্তিতে দু'রুমের ছোট্ট ঘরে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন ১৮শতকের রাজপ্রাসাদের উত্তরসূরিরা। প্রতিবেশীদের সঙ্গে রান্নাঘর ভাগাভাগি করছেন। রাস্তা থেকে সরকারি পানি এনে ব্যবহার করছেন। দারিদ্র্য: হাওড়ায় ছোট দুই রুমে বাস করছেন শেষ মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের নাতির নাতি বউ। সুলতানার সঙ্গে থাকেন তার একমাত্র অবিবাহিত মেয়ে মধু বেগম। তিনি বলেন, "আমরা কিভাবে বেঁচে আছি তা আল্লাহই ভালো জানেন।" সুলাতানা বলেন, "আমার অন্য মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের স্বামীদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। কোনো রকম তারা তাদের জীবন চালাচ্ছে। তাই আমাদেরকে সাহায্য করতে পারছে না।" গত কয়েক বছর আগে তাদের দুর্দশা নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছিলেন অনেকে। ভারতের রাজ বংশধরদের উপর যাতে সরকার আরো খেয়াল রাখে সে বিষয় তারা চেষ্টা করেছিলেন। নোংরা: নিজের ছোট দুই রুমের বাসার বারান্দা দিয়ে হাঁটছেন সুলতানা বেগম (বামে)। কলকাতার বাইরে বস্তির নোংরা রাস্তায় হাঁটেছন তিনি (ডানে)। পেনশন ও বেঁচে থাকার মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্যের জন্য কয়েক বছর ধরে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সরকার কোনো সাহায্য বৃদ্ধি করেনি। শুধু তার নাতনি রওশন আরাকে একটি চাকুরি দিয়েছিলো সরকার যেখান থেকে মাসে ১৫০ পাউন্ড (১৫ হাজার ভারতীয় টাকা) বেতন পান তিনি। তার পরিবারের আরো অনেক সদস্য অশিক্ষিত হওয়ার কারণে সরকারি চাকুরির প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ফলে চাকুরিও পাননি। বস্তি: নিজের বাসার বাইরে থালা-বাসন ধৌত করছে সুলতানা বেগম। যেখানে প্রবন্ত সিং মাইহারি নামের আরেক জন গোসল করছেন। কয়েক বছর ধরে ছোট একটি চা-দোকান চালিয়েছিলেন সুলতানা বেগম। কিন্তু সেটা বন্ধ করে দিয়ে এখন নারীদের জামা-কাপড় বিক্রি করেন। সুলতানা বলেন, "আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে বেশ কিছু মানুষ আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন।" প্রয়োজন হলেও মানুষের কাছে হাত না পাতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমার স্বামী প্রায়ই বলতেন যে আমরা একটি সম্মানিত রাজ পরিবার থেকে এসেছি। যারা বেঁচে থাকার জন্য কখনো মানুষের কাছে হাত পাতেনি।" তিনি আরো বলেন, "আমার পরিবার যা পাওয়ার যোগ্য তা দেয়ার জন্য সব সময় আমি সরকারকে বলেছি।" পেশা: চায়ের দোকান দিয়ে উপার্জন করার চেষ্টা করেছিলেন সুলতানা। এখন মেয়েদের স্যালোয়ার-কামিজ বিক্রি করছেন তিনি। ১৮৫৭ সালে ভারতীয় সিপাহীরা একত্রিত হয়ে বৃটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। বাহাদুর শাহ তাদের সর্বাধিনায়ক ছিলেন বলে ঘোষণা করা হয়। ১৮৫৮ সালে বৃটিশরা যখন সিপাহী বিদ্রোহ দমন করে এবং বাহাদুর শাহকে রেঙ্গুনে (বর্তমানে মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুন) নির্বাসনে পাঠায়। বাহাদুর শাহ'র সঙ্গে তার স্ত্রী জীনাত মহল এবং পরিবারের আরো কয়েকজন সদস্যও নির্বাসনে যান। ১৮৬২ সালের ৭ নভেম্বর ৮৭ বছর বয়সে মারা রেঙ্গুনে মারা যান ভারতের শেষ মোঘল সম্রাট। তাকে সেখানেই দাফন করা হয়, যা এখন বাহাদুর শাহ জাফর দরগাহ নামে পরিচিত। ১৯৯১ সালে অনুসন্ধানের মাধ্যমে তার কবর মূল সীমানা খুঁজে পাওয়া যায় এবং বার্মিজ মুসলিমরা তাকে একজন সুফী সাধক হিসেবে সম্মান করে। তার স্ত্রী জীনাত মহল ১৮৮৬ সালে মারা গেলে সম্রাটের পাশেই সমাহিত করা হয় এবং তাদের নাতনি রৌনাক জামিনিকেও সেখানে দাফন করা হয়। যদিও ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর বাহাদুর শাহ'র ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের অনেককে ইংরেজরা হত্যা করেছিল, তবে যারা বেঁচে গিয়েছিলেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ছাড়াও ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছেন। মোঘলরা মূলত পারস্য বংশোদ্ভূত। ১৬ শতকের মাঝামাঝি থেকে ১৮ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বেশ দাপটের সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করেছেন তারা। সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ শিখরে উঠে পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ মানুষকে শাসন করেছেন তারা। ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে মোঘল শাসনামলে। অর্থনীতির দিক থেকে দেশকে নিয়ে গেছে অন্য মাত্রায়। আর এটা সম্ভব হয়েছে উপমহাদেশের সব রাজ্যগুলোকে একত্র করা, একক মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করা ও রাস্তা ঘাটের ব্যাপক উন্নয় সাধন করার ফলে। তাজমহল: ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মুমতাজ মহল নামে পরিচিত, তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। সৌধটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে যা সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে। ১৬, ১৭ ও ১৮ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে মোঘলদের অসংখ্য স্থাপত্য রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে তাজমহল ছাড়াও রয়েছে লাল কেল্লা, আগ্রার দুর্গ ও লাহোরের শালিমার বাগ যেগুলোকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের সময় শহর ও নগরগুলোর দ্রুত উন্নতি ও প্রসার হয়েছে। দেশের বেশিরভাগ অংশেই ছিল সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক কেন্দ্র। জেডআই, কেবি
No comments:
Post a Comment