হয়, যা কুখ্যাত 'বেলফোর ঘোষণা' নামে পরিচিত। এ রকমই চমকপ্রদ ঐতিহাসিক সত্য বেরিয়ে এসেছে শনিবার প্রকাশিত বিবিসির এক প্রতিবেদনে। শনিবার বিবিসির অনলাইন ম্যাগাজিনে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। 'দ্যা জিইউস অব অ্যারাবিয়া' বা আরবের ইহুদিরা শিরোনামের এই প্রতিবেদনটি করা হয়েছে ব্রিটিশ লাইব্রেরির সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু ঐতিহাসিক ঘটনাবলী থেকে। ভারতবর্ষ ও পারস্যে (বর্তমান ইরান) ব্রিটিশ উপনিবেশকালের বিভিন্ন ডকুমেন্ট ডিজিটালাইজ করতে গিয়ে এসব বেরিয়ে আসে। এসব ডকুমেন্ট এতদিন ব্রিটিশ লাইব্রেরির আর্কাইভে সংরক্ষিত ছিল। ইহুদিরা এক সময় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বাস করতো। এখনো মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বাস করছে অল্প সংখ্যক ইহুদি। কিন্তু গত শতাব্দীতে এই মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদিরা পারস্য উপসাগরীয় এলাকায় একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছিল। ম্যাথু টেলার নামের এক ইহুদি নেতা চেয়েছিলেন বাহরাইনের নিকটবর্তী একটি মরুদ্যানে (মরুভূমির মাঝে বসবাস উপযোগী গাছপালা ও প্রাণীসমৃদ্ধ এলাকা) ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। ১৮৫৯ সালে পারস্য উপসাগরীয় এলাকায় দায়িত্বরত ব্রিটিশ নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা গ্রিফিথ জেনকিন্স একটি চিঠি লেখেন হিসক্যাল নামের তার অধীনস্থ এক কর্মকর্তার কাছে। হিসক্যাল ওমানের রাজধানী মাসকটে ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীন একজন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। উল্লেখ্য, আরব সাগর তীরবর্তী দেশ ওমান তখন ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীনে ছিল। ওমানে দায়িত্বরত এই হিসক্যাল ছিলেন ইহুদি ধর্মাবলম্বী। তার আগে ওমানে একই পদে দায়িত্বরত ব্যক্তিটিও ছিলেন ইহুদি। মাসকটে ১৬২৫ সাল থেকেই বাস করে আসছিল ইহুদিরা। ১৬৭৩ সালে মাসকটে একটি সিনাগগ (ইহুদিদের উপাসনালয়) দেখার কথা বর্ণনা করেছেন একজন পর্যটক। ১৮৩০ সালেও মাসকট ভ্রমণের সময় সেখানে একটি ইহুদি সম্প্রদায়ের বসবাস দেখতে পান বলে জানান ব্রিটিশ এক কর্মকর্তা। যাই হোক, ব্রিটিশ লাইব্রেরির কিউরেটর ড্যানিয়েল লুউয়ি সম্প্রতি এই চিঠিটি উদঘাটন করেন। কিন্তু চিঠিটি হিব্রুতে লেখার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। হিসক্যাল আরবি পারতেন এবং নিশ্চয়ই ইংরেজিতেও দক্ষ ছিলেন; কেননা তিনি ব্রিটিশ কর্মকর্তা ছিলেন। কিন্তু কেন জেনকিন্স ইংরেজি বা আরবি বাদ দিয়ে হিব্রুতে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে লাইব্রেরির কিউরেটর লুউয়ি অনুমান করে বলেন, জেনকিন্স তার চিঠিতে ওমানের একজন শাসকের কথা পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া পারস্য থেকে এক ব্যক্তির ওমানে যাওয়ার কথাও উল্লেখ ছিল এই চিঠিতে। জেনকিন্স তার অধীনস্থ কর্মকর্তা হিসক্যালকে চিঠিতে লিখেন, এই দুটি ব্যাপারে তাকে লিখতে এবং তা হিব্রু ভাষায় লিখতে, যাতে চিঠির বহনকারী চিঠির লেখা পড়তে না পারেন। এর মানে, জেনকিন্সের ধারণা ছিল, চিঠিটি ওমানের শাসক বা তার লোকের হাতে পড়তে পারে। তাই তাদের হাতে পড়লেও যাতে চিঠি পড়তে না পারেন, এজন্যই হিব্রু ভাষায় অনুবাদ করে দেয়ার নির্দেশ দেন হিসক্যালকে। জেনকিন্সের এই চিঠির রহস্য হয়তো কখনোই উদঘাটিত হবে না। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের বাস ছিল এটা সত্য। বিবিসি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনেও সপ্তম শতকে মদীনায় ইহুদিদের বসবাসের কথা বলা আছে। এ ছাড়া, ১১৭০ সালে মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণকারী টুডেলার বেনজামিন উল্লেখ করেছেন, ইরান, ইরাক ও সৌদি আরবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইহুদির বাস ছিল। ইরাকের রাজধানী বাগদাদে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকেই ইহুদিদের বাস ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাগদাদ ও এর আশপাশের এলাকায় ৫৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার ইহুদির বাস ছিল বলে জানা যায়। সমগ্র ইরাকে এই সংখ্যা ছিল প্রায় দুই লাখ, যা ইউরোপে ইহুদি বসতির প্রাণকেন্দ্রগুলো (যেমন পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশো অথবা জার্মান রাজধানী বার্লিন) থেকেও বেশি ছিল। বর্তমানে ইরানে সম্ভবত ২৫ হাজারের মতো ইহুদির বসবাস রয়েছে। অন্যদিকে পারস্য উপসাগরীয় ক্ষুদ্র দেশ বাহরাইনে ইহুদি রয়েছে হাতেগোনা অল্পসংখ্যক। তবে, বাহরাইনে বসবাসরত এই অল্পসংখ্যক ইহুদিদের প্রভাব রয়েছে ব্যাপক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাহরাইনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন হাউদা নুনু নামের এক ইহুদি মহিলা। তবে, বাহরাইন ও ইরানে ইহুদিরা এখন অনেক ভালো সময়ে আছে। ১৯০৫ সালে ইরানে ও ১৯২৯ সালে বাহরাইনে ইহুদিদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আক্রমণ করে ব্রিটিশরা। এ ছাড়া, ব্রিটিশ এক কূটনীতিক জন গর্ডন লরিমের বলেন, তৎকালীন সময়ে কুয়েতে ইহুদি এক ব্যবসায়ী ধর্মীয় সহিংসতাতে উস্কানি দেন, যা মুসলমানদেরকে ধর্মীয় স্থিতিশীলতা ভাংতে উৎসাহিত করে। ১৯১৭ সালে বাহরাইনের নিকটবর্তী অঞ্চলে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেয় ব্রিটিশরা। 'জিইউশ স্টেট অব ইস্টার্ন অ্যারাবিয়া' নামের এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা অবশ্য এগোয়নি। এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই কুখ্যাত 'বেলফোর ঘোষণা' দেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোর। এই ঘোষণার মাধ্যমেই ফিলিস্তিন ভূখন্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এমএ
Sunday, December 14, 2014
ফিলিস্তিন নয়, বাহরাইনে হতে চেয়েছিল ইসরায়েল:Time News
ফিলিস্তিন নয়, বাহরাইনে হতে চেয়েছিল ইসরায়েল ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক টাইম নিউজ বিডি, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১৭:৩৭:১৬ ফিলিস্তিনে নয়, বরং বাহরাইনের নিকটবর্তী একটি বিশাল মরুদ্যানে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে বাহরাইনের নিকট ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরই ফিলিস্তিনের ভূখন্ডে ইহুদিদের জন্য ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া
হয়, যা কুখ্যাত 'বেলফোর ঘোষণা' নামে পরিচিত। এ রকমই চমকপ্রদ ঐতিহাসিক সত্য বেরিয়ে এসেছে শনিবার প্রকাশিত বিবিসির এক প্রতিবেদনে। শনিবার বিবিসির অনলাইন ম্যাগাজিনে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। 'দ্যা জিইউস অব অ্যারাবিয়া' বা আরবের ইহুদিরা শিরোনামের এই প্রতিবেদনটি করা হয়েছে ব্রিটিশ লাইব্রেরির সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু ঐতিহাসিক ঘটনাবলী থেকে। ভারতবর্ষ ও পারস্যে (বর্তমান ইরান) ব্রিটিশ উপনিবেশকালের বিভিন্ন ডকুমেন্ট ডিজিটালাইজ করতে গিয়ে এসব বেরিয়ে আসে। এসব ডকুমেন্ট এতদিন ব্রিটিশ লাইব্রেরির আর্কাইভে সংরক্ষিত ছিল। ইহুদিরা এক সময় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বাস করতো। এখনো মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বাস করছে অল্প সংখ্যক ইহুদি। কিন্তু গত শতাব্দীতে এই মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদিরা পারস্য উপসাগরীয় এলাকায় একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছিল। ম্যাথু টেলার নামের এক ইহুদি নেতা চেয়েছিলেন বাহরাইনের নিকটবর্তী একটি মরুদ্যানে (মরুভূমির মাঝে বসবাস উপযোগী গাছপালা ও প্রাণীসমৃদ্ধ এলাকা) ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। ১৮৫৯ সালে পারস্য উপসাগরীয় এলাকায় দায়িত্বরত ব্রিটিশ নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা গ্রিফিথ জেনকিন্স একটি চিঠি লেখেন হিসক্যাল নামের তার অধীনস্থ এক কর্মকর্তার কাছে। হিসক্যাল ওমানের রাজধানী মাসকটে ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীন একজন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। উল্লেখ্য, আরব সাগর তীরবর্তী দেশ ওমান তখন ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীনে ছিল। ওমানে দায়িত্বরত এই হিসক্যাল ছিলেন ইহুদি ধর্মাবলম্বী। তার আগে ওমানে একই পদে দায়িত্বরত ব্যক্তিটিও ছিলেন ইহুদি। মাসকটে ১৬২৫ সাল থেকেই বাস করে আসছিল ইহুদিরা। ১৬৭৩ সালে মাসকটে একটি সিনাগগ (ইহুদিদের উপাসনালয়) দেখার কথা বর্ণনা করেছেন একজন পর্যটক। ১৮৩০ সালেও মাসকট ভ্রমণের সময় সেখানে একটি ইহুদি সম্প্রদায়ের বসবাস দেখতে পান বলে জানান ব্রিটিশ এক কর্মকর্তা। যাই হোক, ব্রিটিশ লাইব্রেরির কিউরেটর ড্যানিয়েল লুউয়ি সম্প্রতি এই চিঠিটি উদঘাটন করেন। কিন্তু চিঠিটি হিব্রুতে লেখার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। হিসক্যাল আরবি পারতেন এবং নিশ্চয়ই ইংরেজিতেও দক্ষ ছিলেন; কেননা তিনি ব্রিটিশ কর্মকর্তা ছিলেন। কিন্তু কেন জেনকিন্স ইংরেজি বা আরবি বাদ দিয়ে হিব্রুতে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে লাইব্রেরির কিউরেটর লুউয়ি অনুমান করে বলেন, জেনকিন্স তার চিঠিতে ওমানের একজন শাসকের কথা পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া পারস্য থেকে এক ব্যক্তির ওমানে যাওয়ার কথাও উল্লেখ ছিল এই চিঠিতে। জেনকিন্স তার অধীনস্থ কর্মকর্তা হিসক্যালকে চিঠিতে লিখেন, এই দুটি ব্যাপারে তাকে লিখতে এবং তা হিব্রু ভাষায় লিখতে, যাতে চিঠির বহনকারী চিঠির লেখা পড়তে না পারেন। এর মানে, জেনকিন্সের ধারণা ছিল, চিঠিটি ওমানের শাসক বা তার লোকের হাতে পড়তে পারে। তাই তাদের হাতে পড়লেও যাতে চিঠি পড়তে না পারেন, এজন্যই হিব্রু ভাষায় অনুবাদ করে দেয়ার নির্দেশ দেন হিসক্যালকে। জেনকিন্সের এই চিঠির রহস্য হয়তো কখনোই উদঘাটিত হবে না। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের বাস ছিল এটা সত্য। বিবিসি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনেও সপ্তম শতকে মদীনায় ইহুদিদের বসবাসের কথা বলা আছে। এ ছাড়া, ১১৭০ সালে মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণকারী টুডেলার বেনজামিন উল্লেখ করেছেন, ইরান, ইরাক ও সৌদি আরবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইহুদির বাস ছিল। ইরাকের রাজধানী বাগদাদে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকেই ইহুদিদের বাস ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাগদাদ ও এর আশপাশের এলাকায় ৫৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার ইহুদির বাস ছিল বলে জানা যায়। সমগ্র ইরাকে এই সংখ্যা ছিল প্রায় দুই লাখ, যা ইউরোপে ইহুদি বসতির প্রাণকেন্দ্রগুলো (যেমন পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশো অথবা জার্মান রাজধানী বার্লিন) থেকেও বেশি ছিল। বর্তমানে ইরানে সম্ভবত ২৫ হাজারের মতো ইহুদির বসবাস রয়েছে। অন্যদিকে পারস্য উপসাগরীয় ক্ষুদ্র দেশ বাহরাইনে ইহুদি রয়েছে হাতেগোনা অল্পসংখ্যক। তবে, বাহরাইনে বসবাসরত এই অল্পসংখ্যক ইহুদিদের প্রভাব রয়েছে ব্যাপক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাহরাইনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন হাউদা নুনু নামের এক ইহুদি মহিলা। তবে, বাহরাইন ও ইরানে ইহুদিরা এখন অনেক ভালো সময়ে আছে। ১৯০৫ সালে ইরানে ও ১৯২৯ সালে বাহরাইনে ইহুদিদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আক্রমণ করে ব্রিটিশরা। এ ছাড়া, ব্রিটিশ এক কূটনীতিক জন গর্ডন লরিমের বলেন, তৎকালীন সময়ে কুয়েতে ইহুদি এক ব্যবসায়ী ধর্মীয় সহিংসতাতে উস্কানি দেন, যা মুসলমানদেরকে ধর্মীয় স্থিতিশীলতা ভাংতে উৎসাহিত করে। ১৯১৭ সালে বাহরাইনের নিকটবর্তী অঞ্চলে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেয় ব্রিটিশরা। 'জিইউশ স্টেট অব ইস্টার্ন অ্যারাবিয়া' নামের এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা অবশ্য এগোয়নি। এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই কুখ্যাত 'বেলফোর ঘোষণা' দেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোর। এই ঘোষণার মাধ্যমেই ফিলিস্তিন ভূখন্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এমএ
হয়, যা কুখ্যাত 'বেলফোর ঘোষণা' নামে পরিচিত। এ রকমই চমকপ্রদ ঐতিহাসিক সত্য বেরিয়ে এসেছে শনিবার প্রকাশিত বিবিসির এক প্রতিবেদনে। শনিবার বিবিসির অনলাইন ম্যাগাজিনে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। 'দ্যা জিইউস অব অ্যারাবিয়া' বা আরবের ইহুদিরা শিরোনামের এই প্রতিবেদনটি করা হয়েছে ব্রিটিশ লাইব্রেরির সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু ঐতিহাসিক ঘটনাবলী থেকে। ভারতবর্ষ ও পারস্যে (বর্তমান ইরান) ব্রিটিশ উপনিবেশকালের বিভিন্ন ডকুমেন্ট ডিজিটালাইজ করতে গিয়ে এসব বেরিয়ে আসে। এসব ডকুমেন্ট এতদিন ব্রিটিশ লাইব্রেরির আর্কাইভে সংরক্ষিত ছিল। ইহুদিরা এক সময় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বাস করতো। এখনো মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বাস করছে অল্প সংখ্যক ইহুদি। কিন্তু গত শতাব্দীতে এই মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদিরা পারস্য উপসাগরীয় এলাকায় একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছিল। ম্যাথু টেলার নামের এক ইহুদি নেতা চেয়েছিলেন বাহরাইনের নিকটবর্তী একটি মরুদ্যানে (মরুভূমির মাঝে বসবাস উপযোগী গাছপালা ও প্রাণীসমৃদ্ধ এলাকা) ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। ১৮৫৯ সালে পারস্য উপসাগরীয় এলাকায় দায়িত্বরত ব্রিটিশ নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা গ্রিফিথ জেনকিন্স একটি চিঠি লেখেন হিসক্যাল নামের তার অধীনস্থ এক কর্মকর্তার কাছে। হিসক্যাল ওমানের রাজধানী মাসকটে ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীন একজন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। উল্লেখ্য, আরব সাগর তীরবর্তী দেশ ওমান তখন ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীনে ছিল। ওমানে দায়িত্বরত এই হিসক্যাল ছিলেন ইহুদি ধর্মাবলম্বী। তার আগে ওমানে একই পদে দায়িত্বরত ব্যক্তিটিও ছিলেন ইহুদি। মাসকটে ১৬২৫ সাল থেকেই বাস করে আসছিল ইহুদিরা। ১৬৭৩ সালে মাসকটে একটি সিনাগগ (ইহুদিদের উপাসনালয়) দেখার কথা বর্ণনা করেছেন একজন পর্যটক। ১৮৩০ সালেও মাসকট ভ্রমণের সময় সেখানে একটি ইহুদি সম্প্রদায়ের বসবাস দেখতে পান বলে জানান ব্রিটিশ এক কর্মকর্তা। যাই হোক, ব্রিটিশ লাইব্রেরির কিউরেটর ড্যানিয়েল লুউয়ি সম্প্রতি এই চিঠিটি উদঘাটন করেন। কিন্তু চিঠিটি হিব্রুতে লেখার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। হিসক্যাল আরবি পারতেন এবং নিশ্চয়ই ইংরেজিতেও দক্ষ ছিলেন; কেননা তিনি ব্রিটিশ কর্মকর্তা ছিলেন। কিন্তু কেন জেনকিন্স ইংরেজি বা আরবি বাদ দিয়ে হিব্রুতে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে লাইব্রেরির কিউরেটর লুউয়ি অনুমান করে বলেন, জেনকিন্স তার চিঠিতে ওমানের একজন শাসকের কথা পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া পারস্য থেকে এক ব্যক্তির ওমানে যাওয়ার কথাও উল্লেখ ছিল এই চিঠিতে। জেনকিন্স তার অধীনস্থ কর্মকর্তা হিসক্যালকে চিঠিতে লিখেন, এই দুটি ব্যাপারে তাকে লিখতে এবং তা হিব্রু ভাষায় লিখতে, যাতে চিঠির বহনকারী চিঠির লেখা পড়তে না পারেন। এর মানে, জেনকিন্সের ধারণা ছিল, চিঠিটি ওমানের শাসক বা তার লোকের হাতে পড়তে পারে। তাই তাদের হাতে পড়লেও যাতে চিঠি পড়তে না পারেন, এজন্যই হিব্রু ভাষায় অনুবাদ করে দেয়ার নির্দেশ দেন হিসক্যালকে। জেনকিন্সের এই চিঠির রহস্য হয়তো কখনোই উদঘাটিত হবে না। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের বাস ছিল এটা সত্য। বিবিসি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনেও সপ্তম শতকে মদীনায় ইহুদিদের বসবাসের কথা বলা আছে। এ ছাড়া, ১১৭০ সালে মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণকারী টুডেলার বেনজামিন উল্লেখ করেছেন, ইরান, ইরাক ও সৌদি আরবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইহুদির বাস ছিল। ইরাকের রাজধানী বাগদাদে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকেই ইহুদিদের বাস ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাগদাদ ও এর আশপাশের এলাকায় ৫৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার ইহুদির বাস ছিল বলে জানা যায়। সমগ্র ইরাকে এই সংখ্যা ছিল প্রায় দুই লাখ, যা ইউরোপে ইহুদি বসতির প্রাণকেন্দ্রগুলো (যেমন পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশো অথবা জার্মান রাজধানী বার্লিন) থেকেও বেশি ছিল। বর্তমানে ইরানে সম্ভবত ২৫ হাজারের মতো ইহুদির বসবাস রয়েছে। অন্যদিকে পারস্য উপসাগরীয় ক্ষুদ্র দেশ বাহরাইনে ইহুদি রয়েছে হাতেগোনা অল্পসংখ্যক। তবে, বাহরাইনে বসবাসরত এই অল্পসংখ্যক ইহুদিদের প্রভাব রয়েছে ব্যাপক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাহরাইনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন হাউদা নুনু নামের এক ইহুদি মহিলা। তবে, বাহরাইন ও ইরানে ইহুদিরা এখন অনেক ভালো সময়ে আছে। ১৯০৫ সালে ইরানে ও ১৯২৯ সালে বাহরাইনে ইহুদিদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আক্রমণ করে ব্রিটিশরা। এ ছাড়া, ব্রিটিশ এক কূটনীতিক জন গর্ডন লরিমের বলেন, তৎকালীন সময়ে কুয়েতে ইহুদি এক ব্যবসায়ী ধর্মীয় সহিংসতাতে উস্কানি দেন, যা মুসলমানদেরকে ধর্মীয় স্থিতিশীলতা ভাংতে উৎসাহিত করে। ১৯১৭ সালে বাহরাইনের নিকটবর্তী অঞ্চলে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেয় ব্রিটিশরা। 'জিইউশ স্টেট অব ইস্টার্ন অ্যারাবিয়া' নামের এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা অবশ্য এগোয়নি। এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই কুখ্যাত 'বেলফোর ঘোষণা' দেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোর। এই ঘোষণার মাধ্যমেই ফিলিস্তিন ভূখন্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এমএ
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment