Thursday, December 18, 2014

গুড তালেবান, ব্যাড তালেবান!:Time News

গুড তালেবান, ব্যাড তালেবান! টাইম ডেস্ক টাইম নিউজ বিডি, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১১:২৪:১৬ এই সেদিনের ঘটনা৷ অসলোর মঞ্চে উজ্জ্বল মালালা ইউসুফজাই৷ তালেবান হামলাকে পেছনে ফেলে, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জেদকে সম্বল করা পাকিস্তানের মেয়ের শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তি৷ সপ্তাহ ঘুরতে নাঘুরতেই সেই মালালারই দেশে আক্রান্ত শিক্ষাঙ্গন৷ ঘাতক সেই তালেবান৷ ১৩২টি শিশুর রক্তে ভেসে যাওয়া পাকিস্তানে এখন একটা প্রশ্ন বড় করে দেখা দিচ্ছে৷
তালেবান, আল কায়দা ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠন প্রসঙ্গে পাক সেনার নীতিই শেষমেশ ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এল না তো? আফগানিস্তানে, কাশ্মিরে নিজেদের জমি পেতে বারবার এই ঘাতক বাহিনীকে প্রকারান্তরে মদত জুগিয়েছে পাক সেনা বাহিনী এবং তাদের গোয়েন্দা সংগঠন আইএসআই৷ সেই তালেবান, সেই আল কায়দাকেই আবার নিয়ন্ত্রণে আনতে বারবার মাশুলও দিয়েছে পাকিস্তান৷ দেশটায় কোনো না কোনো অঞ্চলে জঙ্গি হামলা বা জঙ্গিদের সঙ্গে সেনা-পুলিশের সংঘর্ষ প্রায় রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তবে মঙ্গলবার পেশোয়ারের সেনা স্কুলে যে হাড়হিম করা ঘটনা ঘটাল তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান তা নজিরবিহীন৷ ১৩২টি শিশুসহ ১৪১ জনকে নৃশংস হত্যার পর এক বিবৃতিতে তেহরিক-ই-তালেবানের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করে জানানো হয়েছে যে, সেনাকে শিক্ষা দিতেই ওদের ‘অভিযান’৷ আজ তালেবানদের আরেকটি গোষ্ঠীও কালকের হামলার কৃতিত্ব দাবি করেছে৷ এটি হল মোল্লা ফজলুল্লাহর গোষ্ঠী৷ মালালার ওপর হামলা নাকি এরাই চালিয়েছিল৷ একটি সূত্রের বক্তব্য, পাক গোয়েন্দাদের কাছে খবর আছে, পেশোয়ারের হামলার নেতৃত্বে ছিলেন ওমর খোরাসানি৷ তেহরিক-ই-তালেবানের অঙ্গ সংগঠন ‘মহম্মদ’ শাখার এক সময়ের ভারপ্রাপ্ত বর্তমানে ‘জামাত-উল-আহরার’-এর শীর্ষনেতা খোরাসানি পাকিস্তানে সবথেকে মারত্মক জঙ্গি৷ সরকারের সঙ্গে কোনো অবস্হাতেই কোনোরকম সমঝোতায় আসতে নারাজ খোরাসানি বারবার মারণ হামলার ‘প্রয়োজনীয়তা’ প্রচার করেছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো দরো এই জঙ্গি নেতা প্রায়ই টুইটারে নিজের নৃশংসতার বর্ণনা দেয়৷ মুণ্ডচ্ছেদে কুখ্যাত আইএস-এর নেতা বাগদাদির চেয়ে কোনো অংশে কম নয় সে৷ ঠিক কতজন খোরাসানির সঙ্গে আছে, তা স্পষ্ট নয়৷ তবে তালেবানের প্রথম সারির কয়েকজন কমান্ডারকে সঙ্গে নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘জামাত উল-আহরার’ এটুকু জানা গেছে৷ আবার, পাকিস্তানের ‘ডন’ কাগজ একটি সূত্রে উদ্ধৃত করে বলছে, গোটা ঘটনার মাথা আফগানিস্তানের তালেবান কমান্ডার উমর নারায়৷ আফগানিস্তান থেকেই নির্দেশ এসেছে জঙ্গিদের উদ্দেশে৷ সেনা মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিম সেলিম বাজওয়ার মন্তব্য, জবরা কোথা থেকে এসেছিল, কাদের সঙ্গে কথা বলছিল, কাদের হাতে ছিল লাগাম, সব আমরা বের করেছি৷ দু’চারদিনের মধ্যেই হয়তো আপনাদের বলতে পারব৷ গত বছর ভোটে দেশ শাসনের রায় পেয়েছে নওয়াজ শরিফের মুসলিম লিগ৷ শরিফ শপথগ্রহণের পরেই তালেবানদের বাড়বাড়ন্ত দশায় রাশ টানা কথা ঘোষণা করেছিলেন৷ কিন্তু পাকিস্তান আছে পাকিস্তানেই৷ চলতি বছরেই আরও দুবার বড় রকমের জঙ্গি হানা ঘটেছে পাকিস্তানে৷ গত চার বছরে হামলার ঘটনা ঘটেছে বারবার৷ দেশ জুড়ে তালেবান তাদের ‘অস্তিত্ব’ বোঝালেও, আফগানিস্তান সীমান্ত ঘেঁষা খাইবার পাখতুনখোয়া, উত্তর ওয়াজিরিস্তানেই ওদের প্রভাব, প্রতিপত্তি বেশি৷ পেশোয়ার খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী৷ ঘটনা হলো, এই অঞ্চল প্রাক্তন ক্রিকেট তারকা, অধুনা রাজনীতিবিদ ইমরান খানের ‘তেহরিক-ই-ইনসাফ’-এর শক্ত ঘাঁটি৷ খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে তাদেরই সরকার৷ পাকিস্তান তালেবানের প্রতি কোনো অজ্ঞাত কারণে ইমরান নাকি নরম মনোভাব পোষণ করেন৷ এতটাই যে, তাকে নিন্দুকেরা তার নাম দিয়েছেন ‘তালেবান খান’৷ বস্তুত, গতকাল পেশোয়ারের নারকীয় ঘটনার পর সেখানে রওনা দিলেও, একবার জন্য তালেবানের নাম পর্যন্ত নেননি ইমরান খান৷ এ বছর জুনে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সেনা অভিযানের কথা ঘোষণা করেছিলেন নওয়াজ শরিফ৷ তবে তাকে সমর্থন তো দূর অস্ত, তীব্র বিরোধিতার পথেই নামেন ইমরান৷ মৌলবাদী নেতা ড. তাহিরুল কাদরির সাহায্যে শরিফ সরকারকে পরাস্ত করার অভিযানও শুরু করেন৷ ওই অবস্হায়ে গদি বাঁচাতে তালেবান বিরোধী অভিযান থেকে সরে আসতে বাধ্য হন শরিফ৷ এরপর দ্বিগুণ চাঙ্গা হওয়া তেহরিক-ই-তালেবান ২ নভেম্বর ওয়াঘা সীমান্তে একটি জমায়েত মারণ হামলা চালিয়ে ৫৫ জনকে হত্যা করে৷ মঙ্গলবারের ঘটনা সেনাবাহিনীর অপদার্থতার দিকেও আঙুল তুলছে৷ পেশোয়ারের সেনা স্কুল ছিল সেনা ছাউনি এলাকাতেই৷ পাশেই রাজ্যপালের বাসভবন৷ আর পাঁচটা সাধারণ স্কুলের থেকে সেখানে নিরাপত্তা বেশি৷ তা সত্ত্বেও মাত্র ৬-৭ জনকে জঙ্গিকে কেন রোখা গেল না? জানতে চাইছে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান৷ ১৬ ডিসেম্বর পেশোয়ারে তালেবান হানা হতে পারে, আগেই খবর পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা৷ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন সেই কথা৷ এরপরেও প্রশাসনের গা ছাড়াভাবে এত শিশু মৃত্যুতে ক্ষোভ বাড়ছে আরও৷ ২৫৬ ধারা চালুর করার পক্ষে সওয়াল উঠছে৷ পাকিস্তানি সংবিধানের ওই ধারা অনুযায়ী, পাক সেনা ছাড়া আর কোনো সশস্ত্র সংগঠন দেশের মাটিতে অভিযান চালাতে পারবে না৷ তবে সন্ত্রাসবাদের বিষে কলুষিত পাকিস্তানে তা কতটা কাজে আসবে, বড় প্রশ্ন তাই নিয়েও৷ অভিযোগ, আফগান তালেবানের বড় নেতা মোল্লা ওমরকে আফ-পাক সীমান্তে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে তো পাকিস্তান সেনাই৷ আফগান তালেবানের মদতে গড়ে ওঠা তেহরিক-ই-তালেবান সৌদি আরবের কিছু দাতাদের আর্থিক আনুকুল্যে গত কয়েক বছরে পাখতুন অধ্যুষিত এলাকায় একের পর এক মাদ্রাসা গড়েছে৷ তাদের মতবাদ প্রচার করা হচ্ছে সেখানে৷ চমকপ্রদ ঘটনা হলো তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে উজবেক জঙ্গি সংগঠন আই এম ইউ৷ উজবেকিস্তান ছেড়ে এই ভিনদেশে পাকিস্তানি জঙ্গিদের ‘জেহাদ’-এ শরিক হয়ে নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে চাইছে আই এম ইউ৷ যেকোনো জেহাদের পাশে দাঁড়ানোকে তাদের নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করছে ওরা৷ অন্তত তাই মনে করছেন পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা৷ পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে ‘গুড তালেবান, ব্যাড তালেবান’ খুব চালু কথা৷ ‘ভালো’ তালেবান কারা? না যাদের কাঁধে ভর করে পড়শি দেশ, স্পষ্ট করে বলতে গেলে ভারতকে বিপাকে ফেলা যায়৷ কাশ্মীরে, মুম্বাই, আমেদাবাদ, হায়দরাবাদে এইসব ‘গুড তালেবান’ অর্থাৎ হাক্কানি, লস্কর-ই-তৈবা, আফগান তালেবানকে কাজে লাগিয়েছে আই এস আই৷ ‘মন্দ’ তালেবান তারাই, যারা আফগানিস্তানে পাকিস্তানি প্রভাবে বাদ সাধে, আই এস আইয়ের নিয়ন্ত্রণ মানে না৷ এই ‘ব্যাড তালেবান’-দের আঘাত যে এতটা নিদারুণ হয়ে উঠবে, তা পাকিস্তান দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি৷ পেশোয়ারের হানার পরে পাকিস্তান নড়েচড়ে বসবে? ‘গুড তালেবান’, ‘ব্যাড তালেবান’-এর ভেদ ভুলবে? পাকিস্তানের দ্য নেশন কাগজের সম্পাদকীয়তে বুধবার সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল রাহিল শরিফের উদ্দেশে জোরালো ভাষায় বলা হয়েছে, জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ে সাহসী জওয়ানরা প্রাণ দিচ্ছে, ব্যাড তালেবানদের বিরুদ্ধে লড়ছে তারা, কিন্তু এসব সত্ত্বেও সমস্ত তাবৎ রাষ্ট্রহীন সন্ত্রাসীদের বিরোধিতা করার ঢালাও কোনো নীতি আপনারা নিচ্ছেন না৷ সূত্র: ওয়েবসাইট এএইচ


No comments:

Post a Comment