Tuesday, December 9, 2014

বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতেই ডিসিসি নির্বাচনের কৌশল:RTNN

বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতেই ডিসিসি নির্বাচনের কৌশল নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: দীর্ঘ সাত বছর নির্বাচন নেই ঢাকা সিটি করপোরেশনে। মাঝখানে একবার নির্বাচনের জন্য ভেঙে দু’ভাগ করা হয়েছে। আপতকালীন নিয়োগ দেওয়া হয় প্রশাসক। তাও কেটে গেছে প্রায় তিন বছর। নির্বাচন শব্দটি পর্যন্ত করেনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। হঠাৎ করেই এই শীতে বিভক্ত ডিসিসির নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ
তকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্বাচন করার ঘোষণাকে রহস্যজনক হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক বোদ্ধারা। তাদের মতে, জানুয়ারিতে সরকারের এক বছর পূর্তি সামনে রেখে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। আন্দোলন ব্যর্থ করতেই প্রধানমন্ত্রী ডিসিসি নির্বাচনের ‘কৌশল’ নিয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আন্দোলনের পরিবর্তে বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্বাচনমুখী করতে আওয়ামী লীগ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে ঢাকা এবং মার্চ মাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাইছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রও এমন আভাস দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর একটি নির্বাচনী উৎসবের আবহ তৈরি হবে। এ সময় বিএনপির আন্দোলন মানুষের মধ্যে সাড়া জাগাতে পারবে না। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তি সামনে রেখে বিএনপি আন্দোলন করতে পারে- এমন ধারণা সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আগে থেকেই ছিল। এজন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে তারা ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে রেখেছিলেন। এখন পরিস্থিতি বুঝে এটির ব্যবহার করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলে বিএনপির আন্দোলন সাড়া ফেলতে পারবে না। অঙ্কুরেই তা বিনষ্ট হবে। তিনি বলেন, বিএনপি দুদিক থেকে বিপদে পড়বে। প্রথমত, তারা যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে আন্দোলন হবে না। দ্বিতীয়ত, তারা যদি সংসদ নির্বাচনের মতো নির্বাচনে না আসে তাহলেও ভোটারদের অংশগ্রহণ আটকাতে পারবে না। আওয়ামী লীগ মনে করছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শুধু মেয়র পদপ্রার্থী নয়, এখানে কাউন্সিলর পদেও ভোট হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী থাকবেন। সেখানে বিএনপি ঘোষণা দিয়েও অনেককে বিরত রাখতে পারবেন না। এ প্রার্থীরা জেতার জন্য নিজেদের তাগিদেই ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। ফলে সংসদ নির্বাচনের মতো ভোটারবিহীন নির্বাচন এটাকে বলা যাবে না, গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘ঢাকার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। এ নিয়ে বিএনপিকে ব্যস্ত থাকতে হবে। এ নির্বাচন যখন শেষ হবে, ততদিনে বিএনপির সরকার পতন নয়, রাজনীতির মাঠে ফেরার আন্দোলনে নামতে হবে।’ জানা গেছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে বিগত তিন-চার মাস ধরে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। দলটির নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। গত জুলাইয়ে হঠাৎ করেই মহানগরের রাজনীতিতে সক্রিয় হন ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাইদ খোকন। আলোচিত এক-এগারোর পর দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খোকনের পক্ষে রাজধানীতে বিপুলসংখ্যক পোস্টার ও ব্যানার টানানো হয়। খোকন ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্ভাব্য প্রার্থী বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে দোয়া চেয়ে বিপুলসংখ্যক ব্যানার, ফেস্টুন ঝুলিয়েছেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল। জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের শুরুতেই ঢাকার ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে নির্বাচন কমিশন। সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে দ্রুত ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষ করা হয়। সর্বশেষ ২০০২ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। সে সময়ে ক্ষমতাসীন চারদলীয় জোট সরকারের অধীনে কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। সেই নির্বাচনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সাদেক হোসেন খোকা মেয়র নির্বাচিত হন। ২০০৭ সালে মেয়র পদে খোকার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও সরকারের অনাগ্রহ, হালনাগাদ ভোটার তালিকা না থাকা, সীমানা নিয়ে জটিলতাসহ কয়েকটি কারণে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১১ সালে আইন করে সরকার ঢাকা সিটি করপোরেশনকে উত্তর ও দক্ষিণ এ দুই ভাগে বিভক্ত করে। তখন থেকে দুই সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করে এর কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, ‘কৌশল হলে এত সহজে সবাই বুঝত না। যে কৌশল প্রতিপক্ষ সহজেই বুঝে যায় তা আমরা নেব কেন?’ তিনি বলেন, ‘শিগগিরই নির্বাচন অনুষ্ঠান আওয়ামী লীগ বা সরকারের কোনো কৌশল নয়। আইনগত কিছু জটিলতার কারণে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন দীর্ঘদিন ধরেই ঝুলে ছিল। এখন এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। ফলে সরকার উদ্যোগী হয়েছে।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘এর আগে আইনগত জটিলতায় নির্বাচন বারবার পিছিয়েছে। এখন সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুনেছি, মার্চের দিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। আর খুব শিগগির ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। এর আগেও তারা নানা হুমকি দিয়েছে, কিন্তু আন্দোলন করতে পারে নাই। প্রকৃতপক্ষে তারা আন্দোলনের দল নয়। সরকার জনগণের কল্যাণের কথা বিবেচনা করেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ মন্তব্য      


No comments:

Post a Comment