্যে নতুন পাইপলাইন স্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে তুরস্ককে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করতে নতুন এই পাইপলাইন স্থাপন করবে রাশিয়া। বাতিলকৃত সাউথ স্ট্রীম প্রকল্পে মস্কো ইতিমধ্যে ৪৫০ কোটি ডলার খরচ করেছে রাশিয়া। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষ্ণ সাগরের তলদেশ দিয়ে গাজপ্রম তাদের জ্বালানি পরিবহন করাসহ আরো কয়েকটি দেশ হয়ে ইতালিতেও গ্যাস সরবরাহের কথা ছিলো। গ্যাজপ্রম রাশিয়ার একটি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক জ্বালানি কোম্পানি। ধারণা করা হচ্ছে দুই ডিজিটের হ্রাসকৃত মূল্যে তুরস্ক গ্যাস পেতে যাচ্ছে। পাশাপাশি তাদের এই অঞ্চলে একটি আঞ্চলিক জ্বালানি শক্তির কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষাও পূরণ হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা ও পরামর্শক সংস্থা স্ট্রাটফরের সিনিয়র একজন ইউরেশিয়া বিশ্লেষক লরেন গুডরিচ বলেন, ‘তুরস্ক তার নিজের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিকে ঝুঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘তুরস্ককে পাশে পাওয়া রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কেননা রাশিয়া ইউক্রেন ইস্যুতে অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় আছে। তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য হলেও রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। তুরস্ক তার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং এখন এটি থেকে তুরস্ক সুবিধা পেতে যাচ্ছে।’ রাশিয়া প্রকল্পটি বাতিল ঘোষণা করলেও ইতোমধ্যেই কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের রাজনীতিক নেতারা জানিয়েছেন যে, সাউথ স্ট্রীম প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করা করা হতে পারে। গুডরিচ জানান, গ্যাজপ্রম এক রিপোর্টে জানিয়েছে, তুরস্কের জন্য গ্যাসের দাম প্রায় ৬ শতাংশ হ্রাস করা হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক বলেছেন, ১৫ শতাংশ ছাড়ও পেতে পারে তুরস্ক। গুডরিচ বলেন, ‘তুরস্ক বেশ একটা ভাল অবস্থানে রয়েছে। এখানে তারা একটি বড় ধরনের সুযোগ দেখতে পাচ্ছে। সেটি হলো, এই মুহূর্তে বাকি বিশ্ব মোটামুটিভাবে রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এসময় রাশিয়ার মিত্র হয়ে কাজ করে তারা সবচেয়ে ভাল সুবিধা নিতে পারবে। ইতোপূর্বে রাশিয়া চীনের সঙ্গেও একটি গ্যাসচুক্তির ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণায় অনেকে ধারণা করছে যে, বেইজিংয়ের বিশেষ আনুকূল্য লাভের জন্যই রাশিয়া এ ঘোষণা দিয়েছে। কারণ মস্কোর উপর ইউরোপ ও আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এটাও জোর দিয়ে বলছেন যে, এ ধরনের চুক্তি রাশিয়ার দুর্বলতা প্রকাশ করছে না। বরং রাশিয়া সুবিধামত তার চাল দিয়ে যাচ্ছে। ৩০০ কোটি ডলারের সাউথ স্ট্রীম পাইপলাইন বাতিলে পুতিনের এই ঘোষণায় প্রতীয়মান হচ্ছে যে, প্রকল্পটি ক্রমবর্ধমান সমস্যাকে চরমসীমায় নিয়ে গেছে। সাউথ স্ট্রীম প্রকল্পটি ২০০৭ সালে শুরু হয়েছিল। গুডরিচ তার বিশ্লেষণে বলেন, গত জুনে ইউরোপীয় কমিশনের চাপের মুখে বুলগেরিয়া তার অংশের লাইন নির্মাণ কাজ স্থগিত করে। কমিশনের দাবি, চুক্তিটি তৃতীয় জ্বালানি প্যাকেজ আইনের লঙ্ঘন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ এতে একইভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। উপরন্তু প্রকল্পটির ব্যয় তার প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ বিলিয়ন থেকে বেড়েই চলছিল। কেউ কেউ বলছেন, এটির চূড়ান্ত ব্যয় ৫০ বিলিয়ন পর্যন্ত গড়াতে পারে। গুডরিচ বলেন, নতুন তুর্কি পাইপলাইন নির্মাণে খরচ বৃদ্ধি পেলেও ইউরোপীয় কোনো দেশের তুলনায় মস্কো এখানে তাদের অধিক সম্ভাবনাময় বাজার দেখতে পাচ্ছে। ব্রুকিংসের জ্বালানি নিরাপত্তা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টিম বোয়ের্সমা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আসলে, রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে ব্লু স্ট্রীম পাইপলাইন নির্মাণের মাধ্যমে তুরস্ককে রাশিয়া তার একজন সফল অংশীদার হিসেবে দেখছে।’ পুতিনের ঘোষণাকে তুরস্কের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক জোরালো করার পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন বোয়ের্সমা। তিনি জানান, তাদের মধ্যে সম্পর্কের এই উন্নয়ন, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি চাহিদার উঠানামাকেই প্রতিফলিত করছে। বোয়ের্সমা সিএনবিসিকে জানান, আগামী কয়েক দশকে চীনের মত তুরস্কেও প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে ইউরোপে গ্যাসের চাহিদা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি রাশিয়ার নেয়া এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী জ্বালানি চাহিদা উঠানামার প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত এবং ইউরোপে রাশিয়া বিরোধী মনোভাবের কারণেই তারা অধিক হারে প্রণোদনা প্রদান করছে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাউথ স্ট্রীম প্রকল্প বাতিলের পিছনে মূলত অন্যান্য কারণও রয়েছে। মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্যের জন্য রাশিয়া তাদের নিজস্ব জ্বালানি সেক্টরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তেলের মূল্য হ্রাস করার কারণেও তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। তেলের বার্ষিক মূল্য কমে যাওয়া এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বিপুল ক্ষতির দিকটি নির্দেশ করে বোয়ের্সমা বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই বর্তমানে রাশিয়ার অর্থনীতি একটি ভয়ানক অবস্থার মধ্য রয়েছে।’ বোয়ের্সমা আরো বলেন, ‘যদিও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ মনে করে যে, তারা রাশিয়াকে একঘরে করতে পারবে, তারপরও আমি বিশ্বাস করি রাশিয়ার পণ্যের ক্রেতা থাকবে এবং চীন ও তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়ার চুক্তি আমার এই দৃষ্টিভঙ্গির সবচেয়ে উপযুক্ত উদাহরণ।’ গুডরিচ জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার জ্বালানি খাতে ক্রমবর্ধমানভাবে ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন প্রকল্পের জন্য ঋণ পাওয়া কিংবা ঋণ পরিশোধ করা দুটোই রাশিয়ার ফার্মগুলোর জন্য অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। মস্কো নিয়ন্ত্রিত রোজনেফ্ট তেল কোম্পানি উল্লেখযোগ্যভাবে খুবই অনগ্রসর। নিষেধাজ্ঞার কারণে পরবর্তী ৩ মাসে তাদের বকেয়ার পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন ডলার। এই নিষেধাজ্ঞা বছরের পর বছর ধরে অব্যাহত থাকলে একইভাবে গ্যাজপ্রমও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অক্সফোর্ড ইন্সটিটিউটের জ্বালানি গবেষণার সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জেমস হেন্ডারসন বৃহস্পতিবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনায় বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার আরো একটি ফল হচ্ছে- রাশিয়ান কোম্পানিগুলো তাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের চুক্তিতে কেউ মূলধনের যোগান দিতে চায় না, যে কারণে জাপানে রোজনেফ্ট কোম্পানির তেল বিক্রয় স্থগিত রয়েছে। রাশিয়ার প্রচলিত জ্বালানি শক্তির প্রায় সবকিছুই একটি ফাঁদের মধ্য আটকে আছে।’ সূত্র: সিএনবিসি মন্তব্য
Thursday, December 11, 2014
রাশিয়ার সাথে পাশ্চাত্যের বিরোধ, সুবিধা নিচ্ছে তুরস্ক:RTNN
বিশ্লেষণ রাশিয়ার সাথে পাশ্চাত্যের বিরোধ, সুবিধা নিচ্ছে তুরস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক আরটিএনএন মস্কো: রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি কঠিন ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং এই ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির সর্বোচ্চ সুবিধা পাচ্ছে একটি ন্যাটো সদস্য-তুরস্ক। রাশিয়া সম্প্রতি দক্ষিণ ও মধ্য ইউরোপে পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা বাতিল করে দিয়েছে। এর পরিবর্তে তুরস্কের মধ
্যে নতুন পাইপলাইন স্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে তুরস্ককে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করতে নতুন এই পাইপলাইন স্থাপন করবে রাশিয়া। বাতিলকৃত সাউথ স্ট্রীম প্রকল্পে মস্কো ইতিমধ্যে ৪৫০ কোটি ডলার খরচ করেছে রাশিয়া। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষ্ণ সাগরের তলদেশ দিয়ে গাজপ্রম তাদের জ্বালানি পরিবহন করাসহ আরো কয়েকটি দেশ হয়ে ইতালিতেও গ্যাস সরবরাহের কথা ছিলো। গ্যাজপ্রম রাশিয়ার একটি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক জ্বালানি কোম্পানি। ধারণা করা হচ্ছে দুই ডিজিটের হ্রাসকৃত মূল্যে তুরস্ক গ্যাস পেতে যাচ্ছে। পাশাপাশি তাদের এই অঞ্চলে একটি আঞ্চলিক জ্বালানি শক্তির কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষাও পূরণ হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা ও পরামর্শক সংস্থা স্ট্রাটফরের সিনিয়র একজন ইউরেশিয়া বিশ্লেষক লরেন গুডরিচ বলেন, ‘তুরস্ক তার নিজের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিকে ঝুঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘তুরস্ককে পাশে পাওয়া রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কেননা রাশিয়া ইউক্রেন ইস্যুতে অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় আছে। তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য হলেও রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। তুরস্ক তার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং এখন এটি থেকে তুরস্ক সুবিধা পেতে যাচ্ছে।’ রাশিয়া প্রকল্পটি বাতিল ঘোষণা করলেও ইতোমধ্যেই কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের রাজনীতিক নেতারা জানিয়েছেন যে, সাউথ স্ট্রীম প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করা করা হতে পারে। গুডরিচ জানান, গ্যাজপ্রম এক রিপোর্টে জানিয়েছে, তুরস্কের জন্য গ্যাসের দাম প্রায় ৬ শতাংশ হ্রাস করা হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক বলেছেন, ১৫ শতাংশ ছাড়ও পেতে পারে তুরস্ক। গুডরিচ বলেন, ‘তুরস্ক বেশ একটা ভাল অবস্থানে রয়েছে। এখানে তারা একটি বড় ধরনের সুযোগ দেখতে পাচ্ছে। সেটি হলো, এই মুহূর্তে বাকি বিশ্ব মোটামুটিভাবে রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এসময় রাশিয়ার মিত্র হয়ে কাজ করে তারা সবচেয়ে ভাল সুবিধা নিতে পারবে। ইতোপূর্বে রাশিয়া চীনের সঙ্গেও একটি গ্যাসচুক্তির ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণায় অনেকে ধারণা করছে যে, বেইজিংয়ের বিশেষ আনুকূল্য লাভের জন্যই রাশিয়া এ ঘোষণা দিয়েছে। কারণ মস্কোর উপর ইউরোপ ও আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এটাও জোর দিয়ে বলছেন যে, এ ধরনের চুক্তি রাশিয়ার দুর্বলতা প্রকাশ করছে না। বরং রাশিয়া সুবিধামত তার চাল দিয়ে যাচ্ছে। ৩০০ কোটি ডলারের সাউথ স্ট্রীম পাইপলাইন বাতিলে পুতিনের এই ঘোষণায় প্রতীয়মান হচ্ছে যে, প্রকল্পটি ক্রমবর্ধমান সমস্যাকে চরমসীমায় নিয়ে গেছে। সাউথ স্ট্রীম প্রকল্পটি ২০০৭ সালে শুরু হয়েছিল। গুডরিচ তার বিশ্লেষণে বলেন, গত জুনে ইউরোপীয় কমিশনের চাপের মুখে বুলগেরিয়া তার অংশের লাইন নির্মাণ কাজ স্থগিত করে। কমিশনের দাবি, চুক্তিটি তৃতীয় জ্বালানি প্যাকেজ আইনের লঙ্ঘন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ এতে একইভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। উপরন্তু প্রকল্পটির ব্যয় তার প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ বিলিয়ন থেকে বেড়েই চলছিল। কেউ কেউ বলছেন, এটির চূড়ান্ত ব্যয় ৫০ বিলিয়ন পর্যন্ত গড়াতে পারে। গুডরিচ বলেন, নতুন তুর্কি পাইপলাইন নির্মাণে খরচ বৃদ্ধি পেলেও ইউরোপীয় কোনো দেশের তুলনায় মস্কো এখানে তাদের অধিক সম্ভাবনাময় বাজার দেখতে পাচ্ছে। ব্রুকিংসের জ্বালানি নিরাপত্তা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টিম বোয়ের্সমা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আসলে, রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে ব্লু স্ট্রীম পাইপলাইন নির্মাণের মাধ্যমে তুরস্ককে রাশিয়া তার একজন সফল অংশীদার হিসেবে দেখছে।’ পুতিনের ঘোষণাকে তুরস্কের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক জোরালো করার পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন বোয়ের্সমা। তিনি জানান, তাদের মধ্যে সম্পর্কের এই উন্নয়ন, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি চাহিদার উঠানামাকেই প্রতিফলিত করছে। বোয়ের্সমা সিএনবিসিকে জানান, আগামী কয়েক দশকে চীনের মত তুরস্কেও প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে ইউরোপে গ্যাসের চাহিদা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি রাশিয়ার নেয়া এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী জ্বালানি চাহিদা উঠানামার প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত এবং ইউরোপে রাশিয়া বিরোধী মনোভাবের কারণেই তারা অধিক হারে প্রণোদনা প্রদান করছে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাউথ স্ট্রীম প্রকল্প বাতিলের পিছনে মূলত অন্যান্য কারণও রয়েছে। মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্যের জন্য রাশিয়া তাদের নিজস্ব জ্বালানি সেক্টরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তেলের মূল্য হ্রাস করার কারণেও তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। তেলের বার্ষিক মূল্য কমে যাওয়া এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বিপুল ক্ষতির দিকটি নির্দেশ করে বোয়ের্সমা বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই বর্তমানে রাশিয়ার অর্থনীতি একটি ভয়ানক অবস্থার মধ্য রয়েছে।’ বোয়ের্সমা আরো বলেন, ‘যদিও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ মনে করে যে, তারা রাশিয়াকে একঘরে করতে পারবে, তারপরও আমি বিশ্বাস করি রাশিয়ার পণ্যের ক্রেতা থাকবে এবং চীন ও তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়ার চুক্তি আমার এই দৃষ্টিভঙ্গির সবচেয়ে উপযুক্ত উদাহরণ।’ গুডরিচ জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার জ্বালানি খাতে ক্রমবর্ধমানভাবে ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন প্রকল্পের জন্য ঋণ পাওয়া কিংবা ঋণ পরিশোধ করা দুটোই রাশিয়ার ফার্মগুলোর জন্য অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। মস্কো নিয়ন্ত্রিত রোজনেফ্ট তেল কোম্পানি উল্লেখযোগ্যভাবে খুবই অনগ্রসর। নিষেধাজ্ঞার কারণে পরবর্তী ৩ মাসে তাদের বকেয়ার পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন ডলার। এই নিষেধাজ্ঞা বছরের পর বছর ধরে অব্যাহত থাকলে একইভাবে গ্যাজপ্রমও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অক্সফোর্ড ইন্সটিটিউটের জ্বালানি গবেষণার সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জেমস হেন্ডারসন বৃহস্পতিবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনায় বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার আরো একটি ফল হচ্ছে- রাশিয়ান কোম্পানিগুলো তাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের চুক্তিতে কেউ মূলধনের যোগান দিতে চায় না, যে কারণে জাপানে রোজনেফ্ট কোম্পানির তেল বিক্রয় স্থগিত রয়েছে। রাশিয়ার প্রচলিত জ্বালানি শক্তির প্রায় সবকিছুই একটি ফাঁদের মধ্য আটকে আছে।’ সূত্র: সিএনবিসি মন্তব্য
্যে নতুন পাইপলাইন স্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে তুরস্ককে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করতে নতুন এই পাইপলাইন স্থাপন করবে রাশিয়া। বাতিলকৃত সাউথ স্ট্রীম প্রকল্পে মস্কো ইতিমধ্যে ৪৫০ কোটি ডলার খরচ করেছে রাশিয়া। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষ্ণ সাগরের তলদেশ দিয়ে গাজপ্রম তাদের জ্বালানি পরিবহন করাসহ আরো কয়েকটি দেশ হয়ে ইতালিতেও গ্যাস সরবরাহের কথা ছিলো। গ্যাজপ্রম রাশিয়ার একটি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক জ্বালানি কোম্পানি। ধারণা করা হচ্ছে দুই ডিজিটের হ্রাসকৃত মূল্যে তুরস্ক গ্যাস পেতে যাচ্ছে। পাশাপাশি তাদের এই অঞ্চলে একটি আঞ্চলিক জ্বালানি শক্তির কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষাও পূরণ হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা ও পরামর্শক সংস্থা স্ট্রাটফরের সিনিয়র একজন ইউরেশিয়া বিশ্লেষক লরেন গুডরিচ বলেন, ‘তুরস্ক তার নিজের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিকে ঝুঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘তুরস্ককে পাশে পাওয়া রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কেননা রাশিয়া ইউক্রেন ইস্যুতে অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় আছে। তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য হলেও রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। তুরস্ক তার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং এখন এটি থেকে তুরস্ক সুবিধা পেতে যাচ্ছে।’ রাশিয়া প্রকল্পটি বাতিল ঘোষণা করলেও ইতোমধ্যেই কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের রাজনীতিক নেতারা জানিয়েছেন যে, সাউথ স্ট্রীম প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করা করা হতে পারে। গুডরিচ জানান, গ্যাজপ্রম এক রিপোর্টে জানিয়েছে, তুরস্কের জন্য গ্যাসের দাম প্রায় ৬ শতাংশ হ্রাস করা হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক বলেছেন, ১৫ শতাংশ ছাড়ও পেতে পারে তুরস্ক। গুডরিচ বলেন, ‘তুরস্ক বেশ একটা ভাল অবস্থানে রয়েছে। এখানে তারা একটি বড় ধরনের সুযোগ দেখতে পাচ্ছে। সেটি হলো, এই মুহূর্তে বাকি বিশ্ব মোটামুটিভাবে রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এসময় রাশিয়ার মিত্র হয়ে কাজ করে তারা সবচেয়ে ভাল সুবিধা নিতে পারবে। ইতোপূর্বে রাশিয়া চীনের সঙ্গেও একটি গ্যাসচুক্তির ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণায় অনেকে ধারণা করছে যে, বেইজিংয়ের বিশেষ আনুকূল্য লাভের জন্যই রাশিয়া এ ঘোষণা দিয়েছে। কারণ মস্কোর উপর ইউরোপ ও আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এটাও জোর দিয়ে বলছেন যে, এ ধরনের চুক্তি রাশিয়ার দুর্বলতা প্রকাশ করছে না। বরং রাশিয়া সুবিধামত তার চাল দিয়ে যাচ্ছে। ৩০০ কোটি ডলারের সাউথ স্ট্রীম পাইপলাইন বাতিলে পুতিনের এই ঘোষণায় প্রতীয়মান হচ্ছে যে, প্রকল্পটি ক্রমবর্ধমান সমস্যাকে চরমসীমায় নিয়ে গেছে। সাউথ স্ট্রীম প্রকল্পটি ২০০৭ সালে শুরু হয়েছিল। গুডরিচ তার বিশ্লেষণে বলেন, গত জুনে ইউরোপীয় কমিশনের চাপের মুখে বুলগেরিয়া তার অংশের লাইন নির্মাণ কাজ স্থগিত করে। কমিশনের দাবি, চুক্তিটি তৃতীয় জ্বালানি প্যাকেজ আইনের লঙ্ঘন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ এতে একইভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। উপরন্তু প্রকল্পটির ব্যয় তার প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ বিলিয়ন থেকে বেড়েই চলছিল। কেউ কেউ বলছেন, এটির চূড়ান্ত ব্যয় ৫০ বিলিয়ন পর্যন্ত গড়াতে পারে। গুডরিচ বলেন, নতুন তুর্কি পাইপলাইন নির্মাণে খরচ বৃদ্ধি পেলেও ইউরোপীয় কোনো দেশের তুলনায় মস্কো এখানে তাদের অধিক সম্ভাবনাময় বাজার দেখতে পাচ্ছে। ব্রুকিংসের জ্বালানি নিরাপত্তা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টিম বোয়ের্সমা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আসলে, রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে ব্লু স্ট্রীম পাইপলাইন নির্মাণের মাধ্যমে তুরস্ককে রাশিয়া তার একজন সফল অংশীদার হিসেবে দেখছে।’ পুতিনের ঘোষণাকে তুরস্কের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক জোরালো করার পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন বোয়ের্সমা। তিনি জানান, তাদের মধ্যে সম্পর্কের এই উন্নয়ন, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি চাহিদার উঠানামাকেই প্রতিফলিত করছে। বোয়ের্সমা সিএনবিসিকে জানান, আগামী কয়েক দশকে চীনের মত তুরস্কেও প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে ইউরোপে গ্যাসের চাহিদা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি রাশিয়ার নেয়া এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী জ্বালানি চাহিদা উঠানামার প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত এবং ইউরোপে রাশিয়া বিরোধী মনোভাবের কারণেই তারা অধিক হারে প্রণোদনা প্রদান করছে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাউথ স্ট্রীম প্রকল্প বাতিলের পিছনে মূলত অন্যান্য কারণও রয়েছে। মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্যের জন্য রাশিয়া তাদের নিজস্ব জ্বালানি সেক্টরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তেলের মূল্য হ্রাস করার কারণেও তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। তেলের বার্ষিক মূল্য কমে যাওয়া এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বিপুল ক্ষতির দিকটি নির্দেশ করে বোয়ের্সমা বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই বর্তমানে রাশিয়ার অর্থনীতি একটি ভয়ানক অবস্থার মধ্য রয়েছে।’ বোয়ের্সমা আরো বলেন, ‘যদিও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ মনে করে যে, তারা রাশিয়াকে একঘরে করতে পারবে, তারপরও আমি বিশ্বাস করি রাশিয়ার পণ্যের ক্রেতা থাকবে এবং চীন ও তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়ার চুক্তি আমার এই দৃষ্টিভঙ্গির সবচেয়ে উপযুক্ত উদাহরণ।’ গুডরিচ জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার জ্বালানি খাতে ক্রমবর্ধমানভাবে ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন প্রকল্পের জন্য ঋণ পাওয়া কিংবা ঋণ পরিশোধ করা দুটোই রাশিয়ার ফার্মগুলোর জন্য অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। মস্কো নিয়ন্ত্রিত রোজনেফ্ট তেল কোম্পানি উল্লেখযোগ্যভাবে খুবই অনগ্রসর। নিষেধাজ্ঞার কারণে পরবর্তী ৩ মাসে তাদের বকেয়ার পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন ডলার। এই নিষেধাজ্ঞা বছরের পর বছর ধরে অব্যাহত থাকলে একইভাবে গ্যাজপ্রমও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অক্সফোর্ড ইন্সটিটিউটের জ্বালানি গবেষণার সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জেমস হেন্ডারসন বৃহস্পতিবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনায় বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার আরো একটি ফল হচ্ছে- রাশিয়ান কোম্পানিগুলো তাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের চুক্তিতে কেউ মূলধনের যোগান দিতে চায় না, যে কারণে জাপানে রোজনেফ্ট কোম্পানির তেল বিক্রয় স্থগিত রয়েছে। রাশিয়ার প্রচলিত জ্বালানি শক্তির প্রায় সবকিছুই একটি ফাঁদের মধ্য আটকে আছে।’ সূত্র: সিএনবিসি মন্তব্য
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment