Thursday, December 11, 2014

বিপদে সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য, হুমকিতে ইরাবতী ডলফিন:RTNN

তেল অপসারণের ব্যবস্থা হয়নি বিপদে সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য, হুমকিতে ইরাবতী ডলফিন নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: সুন্দরবনের মধ্যে ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কার থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য। এখন পর্যন্ত তেল অপসারণের ব্যবস্থা করতে পারেনি সরকার। এতে করে হুমকিতে রয়েছে শেলা নদীর বিরল ইরাবতী ডলফিন। পরিবেশকর্মীদের ধারণা, ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কার থেকে প্রায় সাড়ে ত
িন লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়েছে সুন্দরবন এলাকার নদী-খালসহ প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায়। জোয়ারের সঙ্গে এই তেল চলে এসেছে খুলনা নগরীসংলগ্ন রূপসা নদীতেও। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত পর্যন্ত তেল অপসারণের কোনো ব্যবস্থাই করতে পারেনি সরকারি সংস্থাগুলো। উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি ট্যাঙ্কারটি। তবে ডুবে যাওয়ার ট্যাঙ্কারটির মালিকপক্ষ ওই ট্যাঙ্কারের সঙ্গে আরো দুটি ট্যাঙ্কার বেঁধে তা ভাসিয়ে রেখেছে। গত মঙ্গলবার ভোরে আরেকটি জাহাজের ধাক্কায় সুন্দরবন এলাকায় তেলবাহী ট্যাঙ্কারটি ডুবে যায়। এরপর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন ট্যাঙ্কারচালক মোখলেসুর রহমান। বন বিভাগ এ ঘটনায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতির কথা উল্লেখ করে মংলা থানায় মামলা করেছে। তেল শেলা নদীতে ছড়িয়ে পড়ে দূষণের সৃষ্টি করছে। সুন্দরবন এলাকার বেশ কয়েকটি স্থানে নদীতে মরা মাছ ভাসতে দেখা গেছে। নদীতে ভাসমান তেলের কালো স্তর এখন স্পষ্ট। নদীর দু’পাশে বনভূমির যে অংশগুলো পানিতে মিশেছে সেখানে তেলের স্তর জমাট বেঁধে গেছে। সুন্দরী গাছের শ্বাসমূল, নদীর দু’পাড়ের ছোট গাছ, লতাপাতা, শ্যাওলা- এসবও কালো রঙের তেলের স্তরে ঢেকে গেছে। তেলের কারণে শেলা নদীতে বিরল প্রজাতির ইরাবতী ডলফিনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ডলফিনের অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া সুন্দরবনের গাছপালা ও অন্যান্য প্রাণির ওপরও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। সুন্দরবনের দক্ষিণাঞ্চলের এ স্থানকে সরকার ২০১১ সালে ডলফিনের জন্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। গবেষকরা জানিয়েছেন, কমপক্ষে ৬ হাজার ইরাবতী ডলফিন বাস করে এই অভয়াশ্রম এলাকায়। বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ এবং ডলফিন সংরক্ষণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সুন্দরবনের পূর্বদিকের চাঁদপাই রেঞ্জের কাছে এই দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বিশ্বের বিপন্ন প্রজাতির ইরাবতী ডলফিন। বন সংরক্ষক তপন কুমার দে ইরাবতী ডলফিনের সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা জানিয়ে বলেন, ‘ডলফিনের বৈশিষ্ট্য হলো, এরা প্রতি ২০-২৫ মিনিট পর শ্বাস নেওয়ার জন্য গভীর পানি থেকে উঠে আসে। ফার্নেস অয়েলের ঘনত্ব মবিল ও ডিজেলের মতো। ফলে পানির উপরস্তরে ছড়িয়ে থাকা তেলের জন্য অক্সিজেন নিতে সমস্যা হবে তাদের। এটা ইরাবতী ডলফিনের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়। ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম এ দুর্ঘটনার সম্ভাব্য প্রভাব পুরো সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থানে (ইকোসিস্টেম) পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ছড়িয়ে পড়া তেল ভারী না হালকা তা এখনো নিশ্চিত নন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হালকা হলে এ তেল দ্রুত আশপাশের নদীতে ছড়িয়ে পড়বে। ভারী হলেও তা নদীর নিচে অবস্থান করে বিস্তার ঘটাবে।’ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দীর্ঘ মেয়াদে এ অঞ্চলের বেশিরভাগ উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণি অক্সিজেন ও খাদ্যসংকটে পড়ে মৃত্যুর মুখে পড়বে। আর সময়টি মাছ, ডলফিন প্রভৃতির প্রজননের সময় হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ হবে আরো বেশি। তেলে অধিকাংশ জলজ প্রাণির প্রজনন ক্ষমতাই নষ্ট হয়ে যাবে। এদিকে, সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সুন্দবন রক্ষা জাতীয় কমিটি। সংগঠন দুটি দ্রুত তেল অপসারণ করে ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছ। এদিকে, নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান জানিয়েছেন, ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারের জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যয়, বরিশাল থেকে নির্ভীক এবং চট্টগ্রাম থেকে টাগবোট কাণ্ডারি-১০ বাগেরহাটের পথে রওনা হয়েছে। তিনি জানান, কাণ্ডারি-১০ থেকে পানিতে রাসায়নিকের গুঁড়ো ছিটানো হবে, যেন ভেসে থাকা তেল পানির নিচে চলে যায়। তেল পানির নিচে চলে গেলে ওপরের পানির অক্সিজেন নষ্ট হবে না। ঘটনা তদন্তে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। মন্তব্য      


No comments:

Post a Comment