দল ও সরকারে অস্বস্তি অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ক্ষমতাসীন দলে দুই মাসে ২৬ খুন নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে গত দুই মাসে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। হঠাৎ করেই বিগত কয়েকদিন অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে এই খুনোখুনি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ, যুবলীগ বনাম যুবলীগ, ছাত্রলীগ বনাম ছাত্রলীগ কিংবা এক সংগঠনের সঙ্গে আরেক সংগঠনের নেতাকর্মীদের
সংঘাত-সংঘর্ষ নিত্যনৈমিত্যিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত দুই মাসে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সংঘাত-সংঘর্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক দ্বন্দ্বে আরো বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার কুমিল্লার তিতাসে আওয়ামী লীগের তিন পক্ষের সংঘর্ষে রেজাউল করিম সেন্টু মিয়া (৪৫) নামে এক কর্মী নিহত হয়েছেন। দুপুর ১২টার দিকে জেলা সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে তিতাস উপজেলার কলাকান্দি বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। রিয়াজ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহীম পক্ষের সদস্য ও একজন ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী। একই দিন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে আহত হন রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক লীগের সভাপতি মুন্সি নাদের হোসেন (৫৫)। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা ডান তিনি। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার আধিপত্য বিস্তার ও হল দখলকে কেন্দ্র করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনায় সুমন দাস নামে এক ছাত্রলীগকর্মী নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ১০জন। একই দিনে ময়মনসিংহের নান্দাইলে পৌর কর্মী সম্মেলনে দুইপক্ষের সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বড় ভাই মুনসুর ভুইয়া নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। অন্যদিকে, নাটোরের লালপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আশরাফ আলীকে (৩৬) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এটাও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এছাড়া ১৯ নভেম্বর দিনাজপুর মেডিকেলে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র নিজেদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আট ছাত্রলীগ নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮ নভেম্বর কক্সবাজারের শহরতলি লিংকরোড এলাকায় সুলাইমান ধলু (৩৫) নামে এক আওয়ামী লীগকর্মীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সিরাজগঞ্জে ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মারধরে হাফিজুল ইসলাম নামে এক যুবলীগকর্মী আহত হন। ১৭ নভেম্বর রাত ১১টায় ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হাফিজ (২৩) শহরের একডালা ধোপাপাড়া এলাকার মফিজ শেখের ছেলে। ১৬ নভেম্বর রাত ১২টার দিকে নওগাঁ সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ওহিদুর রহমান ও ছোট ভাই ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি শাহীন হোসেনকে গলা কেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। শহরের দুর্গাপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, ১৩ নভেম্বর খুলনার তেরখাদায় যুবলীগকর্মী মিরাজ ফকিরকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওইদিন তাকে হাঁড়িখালী গ্রামের বাড়ি থেকে কয়েকজজন যুবক ডেকে নিয়ে হত্যা করে। একই দিন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আওয়ামী লীগকর্মী মাসুম নিহত হন। ১২ নভেম্বর রংপুরে যুবলীগ নেতা ইমরান আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১০ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। ৫ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী গ্রামে মোহন পাটোয়ারী নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। একই দিন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কাদিপাড়া গ্রামের প্রতাপ সাহা নামে এক আওয়ামী লীগকর্মীকে গলা কেটে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পঙ্কজ সাহার ভাই। ২ নভেম্বর চট্টগ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে মাহমুদুর রহমান মান্না (২৫) নামে এক কর্মী খুন হন। ৩০ অক্টোবর বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ২৮ অক্টোবর মাগুরায় সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী রাজন খানকে হত্যা করে। ২১ অক্টোবর যশোরের কোতোয়ালি থানায় ওলামা লীগের নেতা শরিফুল ইসলামকে নিজবাড়ির পাশে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১২ অক্টোবর শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার আবদুর রাজ্জাক নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে বাড়ি থেকে তুলে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তিনি বিলাসপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ৪ অক্টোবর মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় যুবলীগ নেতা শামসু পাঠানকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। একই জেলার গজারিয়ায় আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে মনসুর প্রধান নামে একজন নিহত হন। ২ অক্টোবর ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে ইকবাল শিকদার নামে এক কর্মী নিহত হন। সরকারি দলের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ-সংঘাতে জড়িয়ে পড়া খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের সাবেক আইজি এ এস এম শাহজাহান। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিতরে-বাইরে সবখানেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে; যা কখনো আশা করা যায় না। এ ধরনের পরিস্থিতির যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। আর ঘটলে আইনের হাত যে অনেক লম্বা তা যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে হবে। ছাত্রলীগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। তিনি বলেন, ছাত্রলীগকে রক্ষা করতে হবে। গুটিকয় কর্মী ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে ম্লান করে দিচ্ছে। সময় চলে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগকে আবার নীতি ও আদর্শের পথে নিয়ে আসতে হবে। দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় অনেকটা বেপরোয়া স্টাইলে চলছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। সরকার আর দল একাকার হয়ে গেছে। ফলে সুবিধা আদায়ে সংঘাত-সংঘর্ষে নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যেমনটি বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। তার মতে, দেশে শক্তিশালী কোনো বিরোধী দল না থাকায় আওয়ামী লীগ নিজেরাই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়াচ্ছে। জিনাত হুদা বলেন, ছাত্রসংসদকেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতি চললে সমাজে অপরাধপ্রবণতা অনেক কমে আসবে। ভবিষ্যতে দেশে যোগ্য নেতৃত্বও প্রতিষ্ঠিত হবে। মন্তব্য pay per click
No comments:
Post a Comment