কুষ্টিয়া সীমান্তে বেপরোয়া বিএসএফ কুষ্টিয়া করেসপন্ডেন্ট টাইম নিউজ বিডি, ১৩ জুন, ২০১৫ ২১:১১:১৮ কুষ্টিয়া সীমান্তে বেপরোয়া হয়ে উঠছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। সীমান্তে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপর গুলি, নির্যাতন এমনকি হরহামেসা ধরে দিয়ে যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে। সবশেষ গত ১০ জুন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত থেকে দুই বাংলাদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। পরে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জেল হাজতে
পাঠানো হয়। তারা হলেন- আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের গরুরা এলাকার নাহারুল ইসলামের ছেলে কামরুজ্জামান (২৫) ও গোলাম মোস্তফার ছেলে আল হোসেন (২৭)। উপজেলার চিলমারী সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে তাদের ধরে নিয়ে যায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চরভদ্রা ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা। বিজিবি জানায়, ওইদিন সকালে উপেজেলার চিলমারী সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার হোগলবাড়িয়া থানার চরভদ্রা ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যরা তাদের আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ওই দুই বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জেলহাজতে পাঠানো হয়। গত ৬ জুন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত থেকে বিপ্লব হোসেন (২৫) নামে এক বাংলাদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। উপজেলার রামকৃষ্ণপুর সীমান্ত থেকে বিপ্লব হোসেন নামে ওই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে যায়। বিপ্লব হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চরপাড়া গ্রামের নমির উদ্দিনের ছেলে। ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন চিলমারী কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার রাকিব হোসেন জানায়, ওইদন সকালে ১৫৭-১৩ (আর) সীমান্ত পিলার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বিপ্লব হোসেন ভারতে যাচ্ছিলেন। এসময় পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী বিএসএফ ক্যাম্পের টহল দল তাকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে আটকে রাখে। গত ৩১ মার্চ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চল্লিশপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)’র গুলিতে দুই বাংলাদেশি গরু ব্যবসায়ী আহত হয়। চল্লিশপাড়া সীমান্তের ১৫৭/১৫ আর পিলারের সন্নিকটে এ ঘটনা ঘটে। তারা হলেন-চল্লিশপাড়া গ্রামের সোলেমানের ছেলে বাবু শেখ (২৪) ও একই গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে কাসেম (২৩)। গত ২৯ মার্চ রোববার সকালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে বিএসএফ’র হাতে জামরুল ইসলাম (৪৫) নামে এক বাংলাদেশী নাগরিক আটক হয়। উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর সীমান্তের বিপরিতে ভারতীয় ভূখন্ড থেকে তাকে আটক করে বিএসএফ। বিজিবি জানায়, উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের জানু মন্ডলের ছেলে জামরুল ইসলাম ভারতের কেরালা রাজ্যে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১৫৭/১-এস সীমান্ত পিলার সংলগ্ন মোহাম্মদপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত ভূ-খন্ডে প্রবেশ করে। এসময় ভারতের নদীয়া জেলার হোগলবেড়িয়া থানার বাউশমারী বিএসএফ ক্যাম্পের টহলদল তাকে আটক করে নিজ ক্যাম্পে নেয়। গত ২৬ মার্চ বৃহস্পতিবার ভোরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত থেকে দুই বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের ছলিমেরচর সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। বিজিবি জানায়, উপজেলার রামকৃষ্ণপুরর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে সানোয়ার হোসেন (২৩) ও ইকবাল হোসেনের ছেলে বাপ্পারাজ (২২) ভারতের কেরালা রাজ্যে যাওয়ার উদ্দেশে ৮৫/১০-আর সীমান্ত পিলার সংলগ্ন ছলিমেরচর সীমান্ত দিয়ে ভারত ভূ-খন্ডে প্রবেশ করে। এ সময় ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানার চরভদ্রা বিএসএফ ক্যাম্পের টহলদল তাদের আটক করে। তথ্যসূত্রে জানা যায়, ভারতীয় সীমান্তে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ৪৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্যে ১৮ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া। বাকি ২৮ কিলোমিটার ‘অরক্ষিত’ উন্মুক্ত। সীমান্ত এলাকার মধ্যে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মুন্সীগঞ্জ, মোহাম্মদপুর, ডাঙ্গেরপাড়া ও তালপট্টি, চিলমারী ইউনিয়নের মরারচর, হবিরচর, উদয়নগর ও বাংলাবাজার, আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের গরুড়া, ধর্মদহ, তেকালা, প্রাগপুর ইউনিয়নের বিলগাথুয়া, প্রাগপুর, চরপ্রাগপুর, ময়রামপুর, মহিষকুন্ডি মাঠপাড়া ও জামালপুর রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সীমান্তবর্তী এসব এলাকায় বাংলাদেশীরা গেলেই বিএসএফ তাদের তাড়া করে। অনেক সময় ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ কুদরত-ই-খুদা জানান, নিজেদের জমিতে ফসল চাষাবাদ করতে গেলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাদের ধরে নিয়ে যায়। আবার কখনও কখনও তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে কৃষিকাজের উপকরণ কেড়ে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর কোনো নিরীহ কৃষক ওই এলাকায় থাকলে তাদের লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়ে বিএসএফ। সীমান্তবাসীর বর্তমান অবস্থা যেন নিজ ভূমিতে পরবাসী। এমকে
No comments:
Post a Comment