Saturday, June 20, 2015

গণহারে মামলার পর এবার দ্রুতলয়ে চার্জশিট:আরটিএনএন

বেকায়দায় বিএনপি গণহারে মামলার পর এবার দ্রুতলয়ে চার্জশিট নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: বিএনপি নেতাদের নামে গত আড়াই বছরে ‘গণহারে’ মামলা দায়েরের পর এবার চলছে দ্রুতলয়ে চার্জশিট দাখিলের তোড়জোড়। বস্তুত, মামলার জড়িয়ে বিএনপির বেশিরভাগ নেতাই এখন হয় কারাগারে নয়তো আদালতের বারান্দায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। বহু নেতা আবার গ্রেপ্তার এড়াতে এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধ-আ
ন্দোলনের আড়াই বছরে সহিংসতার অভিযোগে সারা দেশে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে ১৫,০০০ এর বেশি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই মামলা দায়ের হয়েছে প্রায় ৪,৫০০। এসব মামলা হয়েছে বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিভিন্ন ধারায়। মামলার আসামিদের বেশির ভাগই পলাতক। তাই সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ দলটির আন্দোলন-সংগ্রামসহ প্রায় সব ধরনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড মামলার জালে জড়িয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, সম্প্রতি সরকারের ওপর মহল থেকে সহিংসতার মামলায় পুলিশকে দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকেই আদালতে চার্জশিট দাখিলের হিড়িক পড়েছে। ঢাকার বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন মামলাসংক্রান্ত রেজিস্টার ঘেঁটে ও বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতাদের তথ্য মতে, ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গত পাঁচ মাসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির ১,১০০ নেতাকর্মীর নামে শতাধিক মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বিভিন্ন আইনে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই দাখিল হচ্ছে কোনো না কোনো মামলার চার্জশিট। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০ মে পর্যন্ত বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ অন্যান্য আইনের মামলায় কমপক্ষে সাড়ে ৬০০ চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। এক হিসাবে জানা যায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরীতে ৬৫৯টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতাদের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার লক্ষ্যে এবং বিএনপিকে নেতাকর্মীশূন্য করাসহ দলটিকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে দূরে রাখার হীন চক্রান্ত থেকেই সরকার এসব কাজ করছে। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকার বিএনপির নেতাকর্মীকে চাপে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য বিএনপিকে সমূলে উৎপাটন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা। আবার তদন্তের নামে মিথ্যা চার্জশিট দিয়ে বিএনপিকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে দূরে রাখার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে সরকার। আমরা তা বাস্তবায়িত হতে দেব না। রাজপথের পাশাপাশি আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’ এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘সব মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিএনপিকে চাপে রাখতে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সরকার তার পুলিশ বাহিনী দিয়ে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে দূরে রাখতেই মিথ্যা চার্জশিট দিচ্ছে সরকার।’ বিএনপিপন্থী আইনজীবী ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, সরকার বরাবরই আইন-আদালতের মাধ্যমে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। এ কারণে পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করাচ্ছে আর চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে। সরকার বিএনপিকেনেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তিনি বলেন, এসব করে কোনো ফায়দা হবে না বরং এতে বিএনপির জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে। তবে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ আলম তালুকদার বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগেই বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু মামলায় আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। আমরা আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েই আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পারব।’ আদালত ও ঢাকা মহানগর পুলিশ- ডিএমপির প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর আটটি জোনের মধ্যে ওয়ারী জোনের ৬৪টি, উত্তরা জোনের ২৫, লালবাগ জোনের ৩৮, মতিঝিল জোনের ১৩৪, মিরপুর জোনের ১৬২, গুলশান জোনের ৪৩ এবং রমনা জোনের ৯২টি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এসব মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামির মধ্যে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবীর রিজভী ও বরকতউল্লাহ বুলুসহ বিএনপির বিপুলসংখ্যক কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন। এর মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরক আইনের পৃথক দুটি মামলায় গত ৭ জুন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবীর রিজভীসহ ২৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অভিযোগপত্র গ্রহণ ও মামলা আমলে নেওয়ার ধার্য দিনে আদালতে হাজির না হওয়ায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত তাদের বিরুদ্ধে ওই পরোয়ানা জারি করেন। এর আগে গত ৬ মে যাত্রাবাড়ীতে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি পুলিশ। আবার ২০ মে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আরেকটি মামলায়ও খালেদাসহ একই আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। চলতি মাসের ২৮ জুন অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানি রয়েছে। প্রতিটি মামলায় খালেদা জিয়াকে পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদনও করেছে পুলিশ। গত জানুয়ারি মাসে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুসহ কমপক্ষে ৬০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে বিভিন্ন আইনে ১৫০টির বেশি মামলা হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইন ছাড়া অন্য আইনেও খালেদা জিয়াসহ বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় খালেদা জিয়াসহ বিএনপির শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতার বিচারও শুরু হয়েছে। বিএনপি নেতাদের নামে মামলার পাহাড় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলা তদন্তাধীন। এ ছাড়া দুর্নীতির দুটি মামলার বিচার চলছে ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালতে। মামলা দুটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৭৬টি মামলার আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলায় তার অনুপস্থিতিতে বিচার চলছে। বিশেষ করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ৭৮টি মামলার আসামি করা হয়েছে। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর অবরোধের ঘটনায়ই তার নামে রাজধানীতে ৩৭টি মামলা দেয় পুলিশ। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একাধিকবার জামিনের আবেদন করলেও তা নাকচ করেছেন আদালত। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। ইতিমধ্যে বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে ২২টি মামলার বিচার শুরু হয়েছে। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি (বর্তমানে কারাগারে), এম কে আনোয়ারের বিরুদ্ধে পাঁচটি (বর্তমানে কারাগারে), মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৭৩টি (বর্তমানে পলাতক), গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ১১টি (বর্তমানে কারাগারে), এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে তিনটি, মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে ১০টি, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান ওরফে শিমুল বিশ্বাসের নামে ৪৭টি, বিএনপির সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে পাঁচটি, সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে ১৪টি (বর্তমানে বিদেশে চিকিৎসাধীন), বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা বিচারাধীন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুর বিরুদ্ধে ১৭টি (বর্তমানে কারাগারে), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহর বিরুদ্ধে আটটি, আবদুল আউয়াল মিন্টুর বিরুদ্ধে পাঁচটি, শমসের মবিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে চারটি, মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে চারটি (বর্তমানে কারাগারে), বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে ৮৭টি, সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের বিরুদ্ধে ১০টি, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির নামে ৪০টি, যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের (বর্তমানে ভারতে আটক) বিরুদ্ধে ২৭টি, আরেক যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর (বর্তমানে কারাগারে) বিরুদ্ধে ৪৪টি, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলুর বিরুদ্ধে ৫০টি, সহসভাপতি মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে পাঁচটি, বিশেষ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফার বিরুদ্ধে ৯টি, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলমের বিরুদ্ধে তিনটি, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়ার বিরুদ্ধে দুটি, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে ১১টি, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা বিচারাধীন। এ ছাড়া যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ১১০টি, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরবের বিরুদ্ধে ১৭৮টি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের নামে ১০০টি, সাধারণ সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপুর বিরুদ্ধে ১০৫টি (বর্তমানে কারাগারে), সহসাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাতটি, যুবদল ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) সভাপতি রফিকুল আলম মজনুর বিরুদ্ধে ১০৬টি, যুবদল ঢাকা মহানগরের (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে ১৩৭টি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে ৪৭টি, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের বিরুদ্ধে ১০১টি, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিবের বিরুদ্ধে ৯৮টি এবং নির্বাহী সদস্য বেলাল আহমেদের বিরুদ্ধে আটটি, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারের বিরুদ্ধে ১৭টি, মিরপুর-৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন দুলুর বিরুদ্ধে ১২০টি, ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ কাইয়ুমের বিরুদ্ধে ৩৮টি এবং খিলগাঁও থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফারুক উল ইসলামের নামে ১২টি মামলা বিচারাধীন। মন্তব্য      

No comments:

Post a Comment