চট্টগ্রামে দুই কেন্দ্রে ৯৯% ভোট পড়ার কাহিনী নিউজ ডেস্ক আরটিএনএন চট্টগ্রাম: সিটি নির্বাচনে চট্টগ্রামের দুটি কেন্দ্রে প্রায় ৯৯ শতাংশ ভোট পড়ার ঘটনা বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। আর অন্তত ১০টি কেন্দ্রে ৯৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়ার তরতাজা কাহিনীও রয়েছে। অন্যদিকে কিছু কেন্দ্রে এর উল্টো চিত্রও দেখা গেছে। একটি কেন্দ্রে ৯ শতাংশেরও কম ভোট পড়েছে। এমনও কেন্দ্র রয়েছে যেখানে বৈধ ভোটের চেয়ে বাতিল ভোটই বেশি। বিশেষজ্ঞ
রা ইতোমধ্যেই ভোটের এ অবাস্তব ফলাফলে বিস্ময় ও অবিশ্বাস পোষণ করেছেন। তারা বলেছেন, বাতিল ভোটের আধিক্য এবং একটি পক্ষের বর্জন সত্বেও দুই প্রার্থীর ভোটপ্রাপ্তির যে চিত্র তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক ভোটের ফল বিশ্লেষণে আরো অস্বাভাবিকতা পাওয়া গেছে। একটি কেন্দ্রে নবনির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-সমর্থিত মোহাম্মদ মনজুর আলম কোনো ভোটই পাননি। অন্য একটি কেন্দ্রে পেয়েছেন মাত্র সাত ভোট। আবার ২৪১টি কেন্দ্রে নাছিরের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৭১৯টি ভোটকেন্দ্রের ফল বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। আগ্রাবাদের তালেবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২,৪৬২ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ২,৪৩৩টি। ভোট গ্রহণের হার ৯৮.৮২ শতাংশ। এই কেন্দ্রে ছয়টি বুথ। সে হিসেবে গড়ে দেড় মিনিটের কম সময়ে একটি ভোট পড়েছে। বৈধ ভোটের ৯৪.৫৫ শতাংশই (২১৮৯ ভোট) পেয়েছেন হাতি প্রতীকের আ জ ম নাছির। কমলালেবু প্রতীকের মনজুর আলম পেয়েছেন ভোটের ৩.৫৮ শতাংশ (৮৩ ভোট)। এই কেন্দ্রে বাতিল ভোট ১১৮টি। ২০১০ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল প্রায় ৫৩ শতাংশ। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ভোট পড়ার হার ছিল প্রায় ৭৮ শতাংশ। গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে তালেবিয়া বিদ্যালয় কেন্দ্রের মতো ৩২টি কেন্দ্রে ৮০ থেকে প্রায় ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। এসব কেন্দ্রে গোলযোগ, কারচুপি, ভোটকেন্দ্র দখলের মাধ্যমে জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগ রয়েছে। এই ৩২টি কেন্দ্রে আ জ ম নাছির পেয়েছেন ৪৯,৭৩৩ ভোট। মনজুর আলম পান ১১,৩২৭ ভোট। ৩২টি কেন্দ্রে ভোটের হারের এই অস্বাভাবিক চিত্র সম্পর্কে মনজুর আলমের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই ব্যালট পেপার যদি সঠিকভাবে যাচাই করা হয়, তাহলে ৮০ শতাংশ ভোটও বৈধ হবে না। কারণ ব্যালট পেপারে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা ও ভোটারের স্বাক্ষর মিলবে না। কোথাও হয়তো সিল ওলট-পালটভাবে মারা হয়েছে। এটা নির্বাচন হয়নি।’ তবে আ জ ম নাছিরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে শুধু মেয়ররা নন, ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে অসংখ্য প্রার্থী থাকেন। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যাপারে তৎপর ছিলেন। কিছু জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। ভোটাররাও সচেতন। সব মিলিয়ে কিছু কিছু জায়গায় বেশি ভোট পড়তে পারে। এটা স্বাভাবিক।’ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৬০০। ভোট পড়ার হার ৪৭.৯ শতাংশ (৮ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৩ ভোট)। এর মধ্যে বাতিল ভোট ৪৭,২৯২টি, যা মোট প্রদত্ত ভোটের ৫.৪৪ শতাংশ। নির্বাচনে আ জ ম নাছির উদ্দিন পান ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট। ভোট গ্রহণের সোয়া তিন ঘণ্টা পর নির্বাচন বর্জন করেও মনজুর আলম পান ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট। দুটি কেন্দ্রে প্রায় ৯৯ শতাংশ ভোট পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সোমবার সেলফোনে দেয়া মতামতে বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ চট্টগ্রামে দুপুরের পর কেন্দ্র ফাঁকা হয়ে যায়। ন্যূনতম প্রতিটি ভোট প্রদানে তিন মিনিট সময় লাগলেও এত অল্প সময়ে এত বেশি ভোট পড়ার কথা নয়। আবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বীর কোনো কেন্দ্রে শূন্য ভোট পাওয়াও বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু রিং হলেও তিনি ফোন ধরেননি। আর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি চট্টগ্রামের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান। মন্তব্য
No comments:
Post a Comment