Tuesday, May 26, 2015

ইরানের পরমানু আলোচনার আড়ালে আইএসআইএলের বিস্তার:টাইমনিউজ

ইরানের পরমানু আলোচনার আড়ালে আইএসআইএলের বিস্তার মো: কামরুজ্জামান বাবলু টাইম নিউজ বিডি, ২৫ মে, ২০১৫ ২০:৪১:৪৮ আমেরিকার মতে, মধ্যপ্রাচ্যের উদীয়মান শক্তি আইএসআইএল (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লিভান্ট) সম্প্রতি ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার পশ্চিমের শহর রামাদি যেভাবে দখল করেছে তা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে অত্র অঞ্চলে যুদ্ধের যেই ভয়াবহতা বিরাজ করছে তাতে আইএসআইএলের হাতে রামাদি
পতন কোন বড় বিষয় নয়। ঐতিহাসিক ইউফ্রেতিস বা ফোরাত নদীর কাছে অবস্থিত ইরাকের আনবার প্রদেশের রাজধানী রামাদি শহরকে কৌশলগত কারণে যুদ্ধ-বিধস্ত ইরাকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করা হয়।   কিন্তু চমকে ওঠার মতো বিষয় হলো-প্রায়ই একই সময়ে আইএসআইএল সিরিয়ার ঐতিহাসিক নগরী পালমিরাতেও প্রবেশ করে। আর এই শহরের অংশ বিশেষ দখলের মধ্য দিয়ে আইএসআইএল রাজধানী দামাস্কাসের পথে তার অগ্রাভিযানে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এর আগে মে’র (২০১৫) শুরুর দিকে আল কায়দার সাথে সম্পর্কিত অপর এক ‘চরমপন্থী’ ইসলামিক গ্রুপ নুসরা ফ্রন্ট সিরিয়ার অন্যতম বৃহত্তর নগরী এডলিব দখল করে নেয়। চলতি মে মাসের ২২ তারিখ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইরাক ও সিরিয়ার এমন কোন যৌথ সীমান্ত চৌকি নেই যা আইএসআইএল দখল করেনি। এছাড়া তুরস্ক ও সিরিয়ার বেশ কয়েকটি যৌথ সীমান্ত চৌকিও আইএসআইএলের দখলে চলে গেছে এরই মধ্যে। আর এমনই পরিস্থিতিতে কুর্দি বাহিনীর হাত থেকে তুরস্কের দক্ষিণ সীমান্তের কাছে অবস্থিত সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর কোবানি দখলে শিগগিরই আইএসআইএল অভিযানে নামবে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সিরিয়ার উত্তর সীমান্তবর্তী এই শহরটি ভূ-রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইএসআইএল যখন একের পর এক ইরাক ও সিরিয়ার শহর দখল করছে এবং তাদের স্বঘোষিত রাষ্ট্রের সীমানা বৃদ্ধি করে চলছে তখনই অবশ্য পশ্চিমা নীতি-নির্ধারকরা আইএসআইএলের দখল থেকে মসুল শহরকে পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা করছেন। তবে, যে বিষয়টি খুবই পরিস্কার তা হলো আইএসআইএল এই অঞ্চলে বর্তমানে বিরাজমান ক্ষমতার সংকটকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে। আর এই সংকট শুধুমাত্র সিরিয়া এবং ইরাকের বর্তমান ব্যর্থ রাষ্ট্র কাঠামোর কারণেই সৃষ্টি হয়নি। ইরানের পরমানু ইস্যুকে কেন্দ্র করে এবং আসন্ন ২০১৬ সালের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ভারসাম্য অকার্যকর হয়ে পড়ার ফলেও ঘণীভূত হয়েছে এই সংকট। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অবশ্য ইরাক থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের ব্যাপারে তার দেয়া অঙ্গীকার রেখেছেন। পাশাপাশি (ইউক্রেন অথবা সিরিয়াসহ) অপরাপর সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কোথাও সেনা পাঠানোর কোন লক্ষণও তার মধ্যে দেখা যায়নি। অন্তত ২০১৬ সালে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিসেবে হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী লড়াই পর্যন্ত আমেরিকার এই নীতিতে হয়তো বা কোন পরিবর্তন আসবে না। অপরদিকে, ওবামা বর্তমানে “পুরোনো শত্রুদের সাথে শান্তি স্থাপন”-এই নীতির অনুসরকণ করছেন বলেও মনে করেন অনেকেই। আর এক্ষেত্রে সমালোচকরা কিউবা এবং ইরান ইস্যুতে ওবামার বর্তমান নীতির দিকেই ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন।  ইরানের পরমানু কর্মসূচির বিষয়ে চলমান আলোচনার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের পাঁচ স্থায়ী সদস্য ও অপর এক দেশের সমন্বয়ে গঠিত “পি ৫+ওয়ান” গ্রুপই মূলত মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। আমেরিকা, বৃটেন, চীন, রাশিয়া ও ফ্রান্সের সাথে জার্মানিকে যুক্ত করে গঠিত ওই “পি ৫+ওয়ান” গ্রুপে বিশেষ করে রাশিয়া ও চীনের অবস্থানের কারণে অত্র অঞ্চলের রাজনৈতিক ভূমিকার ক্ষেত্রে এই দলটি লিডিং অবস্থানে রয়েছে। হোয়াইট হাউজ মনে করে, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত নিরসন, ইসরাইলের নিরাপত্তা সুরক্ষা এবং অত্র অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি কমিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় বলয়ে চীন ও রাশিয়ার মোকাবেলায় নিজেকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে ইরানের পরমানু কর্মসূচি সংক্রান্ত চলমান আলোচনাই হতে পারে মূল চাবিকাঠি।    এদিকে, সিরিয়া এবং ইরাকে আইএসআইএলের বিরুদ্ধে আরও জোরালো ও কার্যকর যুদ্ধের জন্য সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে হটানোকে অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে দেখছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। তবে যতক্ষণ আসাদকে রাশিয়া বিশেষ করে ইরান সমর্থন জোগাচ্ছে ততক্ষণ আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তাকে হটাতে কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না বলেই ধারনা করা হচ্ছে।     বহিরাগত আইএসআইএল যোদ্ধা ও অন্যান্য চরমপন্থী ইসলামিক গোষ্ঠীদের নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলায় তুরস্ক সক্রিয় সহযোগিতা করলেও আমেরিকার নেতৃত্বাধীন জোটের সাথে বিমান হামলায় অংশ নেয়নি। এমনকি এই জোটকে নিজের আকাশ সীমা ব্যবহারেরও অনুমতি দেয়নি সিরিয়া। এরদোগানের সাফ নীতি হলো- বাশার আল আসাদ সিরিয়ার জনগণের জন্য আইএসআইএলের মতোই হুমকি-এমন ঘোষণা আমেরিকার নেতৃত্বাধীন জোটের কাছ থেকে না পাওয়া পর্যন্ত তুরস্ক এই জোটে অংশ নেবে না।   এদিকে, ইরাকে ইরানের প্রভাবের বিষয়টি এখন খুবই পরিস্কার। আইএসআইএলকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে ইরানের রিভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর নিয়ন্ত্রনাধীন শিয়া মিলিশিয়ারা আমেরিকার নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন কর্তৃক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইরাকি সেনা এবং কুর্দি বাহিনীর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু চলতি বছরের শুরুর দিকে যখন আইএসএলের কাছ থেকে ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ তিকরিত শহর পুনর্দখলের পর শিয়াদের প্রভাব নিয়ে কোয়ালিশনের মধ্যে সৃষ্টি হয় নতুন আতংক। এতে সুন্নীরা আবার নতুন করে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে এবং আইএসআইএলের কব্জায় চলে যেতে পারে এমন শংকা দেখা দেয়। এর পরই আলোচনায় চলে আসে রামাদি প্রসঙ্গ। আর তখনই ইরান শিয়া মিলিশিয়াদের নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। কিন্তু ইরাকি সেনা, যাদের অধিকাংশই শিয়া যোদ্ধা, তারা শহরটি  নিজেদের দখলে রাখতে যেন সর্বোচ্চ শক্তি দেখাতে পারছেন না। গত ২২ মে ইরাকের উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, মনে হচ্ছে রামাদি পুনর্দখলে মিলিশিয়াদের ওপর আমেরিকানদের অন্ধ দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে। আমেরিকা এ অবস্থায় খোলাখুলিভাবে আইএসআইএলের বিরুদ্ধে সাহায্যের পদক্ষেপ না নিলে প্রকারান্তরে ইরানই তার আসল খেলাটি খেলবে। সিরিয়ার বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে যেই প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা আমেরিকার নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনী প্রদান করছে তা খুবই দুর্বল  এবং ধীরগতিতে চলছে। মনে হচ্ছে এই বিদ্রোহীরা বিমান বাহিনীর সহায়তা ব্যতীত আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবে না। সব মিলিয়ে বিদ্রোহীরা এখন রীতিমতো চতুর্মূখী সংকটে পড়েছে কারণ আমেরিকা সিরিয়া ইস্যুতে ইরান বা রাশিয়ার সাথে আর কোন নতুন দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না। আর এই বর্তমান পরিস্থিতিরই সুযোগটি নিচ্ছে আইএসআইএল এবং গোষ্ঠীটি পশ্চিমা গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর চোখের সামনেই তার সন্ত্রাসী কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছে গোটা অঞ্চলজুড়ে। (বি. দ্র. তুরস্কের প্রভাবশালী ইংরেজী দৈনিক হুরিয়াতে (The Hürriyet Daily News) গত ২৩ মে ২০১৫-তে প্রকাশিত আর্টিকেল অবলম্বনে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। হুররিয়াতে প্রকাশিত মূল আর্টিকেলটি পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন: http://www.hurriyetdailynews.com/isil-expands-under-the-shadow-of-iran-nuclear-talks.aspx?PageID=238&NID=82843&NewsCatID=409)

No comments:

Post a Comment