ঢাকা: ব্লগারদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, “মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে। মতপ্রকাশ করতে গিয়ে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে যাতে আঘাত না লাগে সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।” একইসঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কথা বলে কারো ওপর হামলা বা হত্যা করার অধিকারও কারো নেই বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। শন
িবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের ১১৭তম পর্ব হয়। এতে ইকবাল সোবহান চৌধুরী ছাড়াও অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা এবং উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার। অনুষ্ঠানে আনিকা পিউলী নামের এক দর্শকের প্রশ্ন ছিল ব্লগ কিংবা ইন্টারনেটে যারা লেখালেখি করেন, তাদের ওপর হামলা বন্ধ করতে সরকার দৃশ্যত যে ব্যর্থ হচ্ছে, তা কি পরোক্ষভাবে হলেও আরো হামলা চালাতে উৎসাহ দিচ্ছে? উত্তরে নুরুল হুদা বলেন, “সরকার ব্যর্থ না হলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ায় ঘাটতি হচ্ছে। এসব হত্যা বেশিরভাগ সময়ই পূর্ব পরিকল্পিত হয়। গত দুই বছরে যে সংখ্যক ঘটেছে, আমাদের বাংলাদেশের পরিধির তুলনায় এটা খুব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। কিছু রাজনৈতিক কারণতো আছেই।” ফরিদা আখতার বলেন, “আসলে কারা করেছে, তা দেখার বিষয় আছে। সরকার আগে ধরে দেখাক কারা মেরেছে।” বাংলাদেশ কি আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মতো হচ্ছে-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “দেশ আফগানিস্তান বা পাকিস্তান কোন পথে যাবে তা পরে দেখা যাবে। সরকার আগে নিজের কাজ করে দেখাক। যারা সত্যিকার অর্থে দোষী তাদের ধরা হোক।” ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, “একটি ক্রাইম আরেকটি ক্রাইমের জন্ম দেয়। তাই এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্ব নেয়া দরকার। যেহেতু একটি লিস্ট পাওয়া গেছে, সেই অনুযায়ী সরকার প্রিকশনারি ব্যবস্থা নিতে পারে।” সরকারকে নাস্তিক হিসেবে পরিচিত করে বিরোধীপক্ষ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করবে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সরকার এ অপরাধের শাস্তির ব্যবস্থা করলে নাস্তিক হিসেবে বিবেচিত হবে না। অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার সঙ্গে নাস্তিকতার কোনো সম্পর্ক নেই।” জয়ের মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষন করেন ইকবাল সোবহান চৌধুরীও। তিনি বলেন, “এমন আশঙ্কার কিছু নেই। সরকার তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে কিন্তু প্রমান করেছে যে, সরকার এ ধরনের কাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।” এ প্রসঙ্গে মো. আলামিন নামের আরেক দর্শক প্রশ্ন করেন, “একজনের বাকস্বাধীনতা কিংবা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যদি আরেকজনের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে, তাহলে তা কি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য? উত্তরে ফরিদা আখতার বলেন, “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়াটা সাধারণ মানুষের কাছে কিন্তু বড় প্রশ্ন। এটি মানা যায়না। আবার বেআইনিভাবে কাউকে হত্যা করাও অপরাধ।” তিনি বলেন, “যারা ধর্মপ্রাণ কিন্তু মৌলবাদী নয় তাদের যদি মনে হয় যে রসুলের (সা.) নামে কিছু বললে তার নামে কষ্ট লাগছে, সে ধরনের কথা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পর্যায়ে পড়ে কিনা এটা বিবেচনা করতে হবে।” নুরুল হুদা বলেন, “মত প্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপারে কিন্তু ব্যাখ্যা হওয়া দরকার। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে নির্বিচারে সাধারণ মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মতো ঘটনা ঘটছে।” ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “অন্যের কোনো অনুভূতিতে আঘাত করছে সেটা যেমন অপরাধ, তেমনি ধর্মান্ধ হয়ে কারো ওপর আঘাত করাটাও তেমনি অপরাধ।” তিনি বলেন, “মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে। মতপ্রকাশ করতে গিয়ে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে যাতে আঘাত না লাগে সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।” ইনাম আহমেদ চৌধুরীও এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানটির প্রযোজনা করেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ এবং উপস্থাপনা করেন আকবর হোসেন। বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন এবং বিবিসি বাংলার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। এতে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত বিষয়ে দর্শকরা সরাসরি প্যানেল সদস্যেদর কাছে প্রশ্ন বা মতামত প্রকাশ করতে পারেন। নতুন বার্তা/কেএমআর/এসএ
No comments:
Post a Comment