Wednesday, April 29, 2015

বর্জনের পর ভুঁতুড়ে ভোটে প্রার্থীরাও হতবাক:আরটিএনএন

বর্জনের পর ভুঁতুড়ে ভোটে প্রার্থীরাও হতবাক নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: নানা অঘটনে শেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ডামাডোল। বুধবার কাক ডাকা ভোরে এসেছে অনুমতি ফল। নির্বাচনের আয়োজক সরকার সমর্থকরাই তিন সিটির পিতার আসনে বিজয়ী হয়েছেন। ভোট নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও এরাই যে বিজয়ী হবেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টার পর তাতে কারো সন্দেহ ছিল না। কিন্তু এখন নতুন বিতর্ক সামনে এসেছে ভোটের অংক। এ নিয়ে স্বয়ং প্রার্থীরা
ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ঢাকা উত্তর সিটিকেই বিবেচনায় নেওয়া যাক। আনিসুল হক, তাবিথ আউয়াল, মাহী বি. চৌধুরী, জোনায়েদ সাকি, আব্দুল্লাহ আল ক্বাফীর মত সব ডাক সাইটে নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। মঙ্গলবার ভোট শুরু হয় সকাল আটটায়। ১০টার মধ্যে বেশিরভাগ কেন্দ্রে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে সরকার সমর্থকরা। যা দু-একজন বিরোধী পোলিং এজেন্ট ছিলেন, বেলা ১১টার পর তারাও সরে পড়েন। দুপুর ১২টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এই সিটিতে ভোট শেষের আগেই একই পথে হাঁটেন গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি ও সিপিবি-বাসদের আব্দুল্লাহ আল ক্বাফীসহ অন্যরা। লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত রয়ে যান বিকল্পধারা সমর্থিত সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বি. চৌধুরী। বেলা ১১টার পর ঢাকা উত্তরের বেশিরভাগ কেন্দ্রই ছিল ভোটার শূন্য। যারা ভোট দিতে আসতে চেয়েছেন, তাদেরও স্বজনেরা ফোনে আসতে নিষেধ করেছেন। সে সময়ে সরকার সমর্থকরা কেন্দ্রে বসে ব্যালটে সিল দিয়েছেন। কিন্তু মাত্র তিন ঘণ্টার ভোটে দিন শেষে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ‘বাস’ প্রতীকে পেয়েছেন ৩ লাখ ২৫,০৮০ ভোট। মূলত তাকে হারিয়ে ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রীক নিয়ে নগরপিতা হওয়া আওয়ামী লীগের আনিসুল হকের ভোট ৪ লাখ ৬০,১১৭ ভোট। দুজনের ব্যবধান এক লাখ ৩৫,০৩৭ ভোট। ভোট নিয়ে তাবিথ আউয়ালের তেমন মাথা ব্যথা না থাকলেও তিনি পুনরায় ভোট করার জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন জানিয়েছেন। তবে এ নিয়ে আনিসুল সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে থাকা বিকল্পধারার মাহী বি. চৌধুরী ‘ঈগল’ প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ১৩,৪০৭ ভোট। মঙ্গলবার রাতে আরটিএনএন- কে তিনি বলেছিলেন, ‘এখন বর্জন করে কি লাভ? এর চেয়ে দেখা দরকার- আমার প্রকৃত ভোট কত।’ বুধবার ভোরে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম ঘোষিত ভোটের এই অংক নিয়ে মাহী নিজেও এখন বিরক্ত, হতবাক। কীভাবে সম্ভব, স্রেফ ভুঁতুড়ে ভোট, এমন কথা বলছেন ঘনিষ্টজনদের। প্রতিবাদ জানাতে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন মাহী বি. চৌধুরী। জোনায়েদ সাকি ‘টেলিস্কোপ’ নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৭৩৭০ ভোট। সাকি কেন, তার ঘোর শত্রুও বিশ্বাস করবেন না তিনি এই অংকের ভোট পেতে পারেন। ভোটে ক্ষমতাসীনদের অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে সাকি বলেছেন, এই ভোটে প্রকৃত গণরায় প্রকাশিত হবে না। ভোটের আগে খোলা ফ্যান পেজে ভোট জালিয়াতির ভিডিও শেয়ার করে সাকি লিখেছেন, ‘নির্বাচন! নির্বাচন!! জানি না কে এই ভিডিওটা করেছেন, কিন্তু এই সব নিদর্শনের ঐতিহাসিক মূল্য আছে। আওয়ামী লীগ জেতেনি, আওয়ামী লীগের চরমতম পরাজয়ের এই শুরু।’ আর বাম রাজনৈতিক শক্তি সিপিবি-বাসদ সমর্থিত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল ক্বাফী পেয়েছেন ‘হাতি’ প্রতীকে পেয়েছেন আরো কম, ২৪৭৫ ভোট। তবে এদিক থেকে ভোট বর্জন করেও চরমোনাই পীরের ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন সমর্থিত শেখ ফজলে রাব্বি মাসউদ ‘কমলালেবু’ প্রতীকে ১৮,০৫০ ভোট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল ‘চরকা’ প্রতীকে পেয়েছেন ২৯৫০ ভোট। এর বাইরে বাকিদের প্রাপ্ত ভোট কে ওয়াই এম কামরুল ইসলাম (১২১৬), কাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ (২৯৬৮), চৌধুরী ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী (৯১৫), নাদের চৌধুরী (১৪১২), মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিস (১০৯৫), আনিসুজ্জামান খোকন (৯০০), মো. জামাল ভূঁইয়া (১১৪০), শামসুল আলম চৌধুরী ৯৮২ ও শেখ শহীদুজ্জামান পেয়েছেন ৯২৩ ভোট। ঢাকা উত্তরে বৈধ ভোটের সংখ্যা ৮ লাখ ৪১,০০০। বাতিল হয়েছে ৩৩,৫৮১টি। এখানে ৩৬টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২৩ লাখ ৪৫,৩৭৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ২৪,৭০১ ও নারী ভোটার ১১ লাখ ২০,৬৭৩ জন। ভোটের হার ৪০ শতাংশের একটু বেশি। ঢাকা দক্ষিণে আলোচিত প্রার্থী ছিলেন- বিএনপির মির্জা আব্বাস, আওয়ামী লীগের সাঈদ খোকন, জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন মিলন, সিপিবি-বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মওলা রনি। ইলিশ মার্কা নিয়ে সাঈদ খোকন পেয়েছেন ৫ লাখ ৩৫,২৯৬ ভোট। তার নিকটতম ভোট বর্জনকারী প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাস মগ মার্কা নিয়ে ২ লাখ ৯৪,২৯১ ভোট পেয়েছেন। দুজনের ব্যবধান ২ লাখ ৪১,০০৫ ভোট। এরশাদের জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন মিলন সোফা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৫১৯ ভোট, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ টেবিল নিয়ে ১০২৯, আর গোলাম মওলা রনি আংটি প্রতীকে পেয়েছেন ১৮৮৭ ভোট। পরিচিত প্রার্থীরা ভোটের অংকে পিছিয়ে থাকলেও অখ্যাত প্রার্থী আব্দুর রহমান পেয়েছেন ১৪,৭৮৪ ভোট। রনি ভোট নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, অন্য সব প্রতিযোগীর মত আমিও নির্বাচন বর্জন করলাম। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন টিভিতে দেখেছিলাম। ২৮ এপ্রিলের নির্বাচন চর্মচোখে দেখলাম। এও কি সম্ভব? হ্যাঁ, রঙ্গ ভরা বঙ্গে সবই সম্ভব। এই সিটিতে বাকি প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট আসাদুজ্জামান রিপন (৯২৮), মো. আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ (৩৬২), রেজাউল করিম চৌধুরী (২১৭৩), আব্দুল খালেক (৫৫০), জাহিদুর রহমান (৯৮৮), আবু নাছের মোহাম্মদ মাসুদ হোসাইন (২১৯৭), বাহরানে সুলতান বাহার (৩১২), শাহীন খান (২০৭৪), দিলীপ ভদ্র (৬৫৯), শহীদুল ইসলাম (১২৩৯), শফিউল্লাহ চৌধুরী (৫১২), এ এস এম আকরাম (৬৮২), আব্দুর রহমান (১৪৭৮৪), মশিউর রহমান (৫০৮) ও আয়ুব হোসেন (৩৫৪)। এখানে ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১৮ লাখ ৭০,৭৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৯,২৮৬ এবং নারী ভোটার ৮ লাখ ৬১,৪৬৭ জন। মোট ভোট পড়েছে ৯ লাখ ৫৪৮৪। বাতিল হয়েছে ৪০,১৩০ ভোট, বৈধ ভোটের সংখ্যা ৮ লাখ ৪৫,৩৫৪। ভোটের হার ৪৮.৫৭ শতাংশ। আর চট্টগ্রামে হাতি প্রতীকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাছিরউদ্দিন পেয়েছেন ৪ লাখ ৭৫,৩৬১ ভোট। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম কমলা লেবু প্রতীকে পেয়েছেন ৩ লাখ ৪৮৩৭ ভোট। ব্যবধান এক লাখ ৭০,৫২৪ ভোট। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন মনজুর আলম। সে হিসেবে মাত্র তিন ঘণ্টায় তার প্রাপ্ত ভোট বেশ বিস্ময় জাগিয়েছে সবার। তবে তিনি ভোটের ভজঘটে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। চট্টগ্রামে ৪১টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১৮ লাখ ১৩,৪৪৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৩৭,০৫৩ এবং নারী ভোটার রয়েছেন ৮ লাখ ৭৬,৩৯৬ জন। মোট ভোট পড়েছে ৮ লাখ ৬৮,৬৬৩। বাতিল হয়েছে ৪৭,২৯২টি। ভোটের হার ৪৭.৯ শতাংশ। ভোট বর্জন করেও এমন ভোট পাওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় এক শ্রেণীর পাঠকরা বলেছেন, সিইসির দাবিই সত্য, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। নইলে বিএনপির প্রার্থীরা এত ভোট কেমনে পেলেন? তবে অন্য পক্ষের যুক্তি, আমার হাতেই ভোট, যাকে খুশি দিব, তাতে সমস্যা কোথায়? কেন্দ্র ভোটার ফাঁকা, তাতে কী? ব্যালট তো আর কম ছাপা হয়নি। মোট ভোটার গুণেই ছাপা হয়েছে। সিল আর কালি প্রস্তুতই ছিল, যা একটু পরিশ্রম করে বাক্সে ভরতে সময় লেগেছে। ভারসাম্য বলে কথা! মন্তব্য      

No comments:

Post a Comment