স্থিতিতে খালেদা জিয়ার প্রতি সমর্থন ও ভালোবাসার প্রমাণ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৭০ সালে যখন স্বাধীনতার মুক্তি সংগ্রামে দেশের মানুষ সংগঠিত হচ্ছিল, ঠিক ওই সময়ে কুমিল্লা সেনানিবাসে আরাফাত রহমান কোকো জন্ম নেন। জিয়া পরিবারের দুই সন্তানের মধ্যে কোকো ছোট। বড় ছেলে তারেক রহমান রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও কোকোর ছিল না কোনো রাজনৈতিক পরিচয়। বড় হওয়ার পর নিজের বেশকিছু ব্যবসা পরিচালনা করতেন তিনি। বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতার আরাফাত ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই তখনকার কর্তৃপক্ষের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যান। সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান।অর্থপাচারের একটি মামলায় বাংলাদেশের আদালতে ছয় বছর কারাদণ্ড দেয়। কোকো স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে কুয়ালালামপুরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন বলে জানা যায়। গত শনিবার মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন কোকো। পরদিন রোববার কুয়ালালামপুরে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।পরে তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করে পরিবার ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা। কোকোর মরদেহবাহী মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের বিমানটি মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকাল আটটার দিকে মালয়েশিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। এটি বাংলাদেশ সময় দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হজরত শাহজালাল (র.)আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। কোকোর মরদেহ গ্রহণ করেন বিএনপির নেতা আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ফজলুল হক মিলন, গিয়াস কাদের চৌধুরী, আবদুল মান্নান প্রমুখ। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে কোকোর মরদেহ বহনকারী গাড়ি পৌঁছে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে। উত্তর পাশের ফটক দিয়ে গাড়ি ঢোকানো হয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে। নেতা-কর্মীদের ভিড়, ধাক্কাধাক্কিতে ফটক খুলে কয়েক গজ ভেতরে গাড়ি ঢুকাতে সময় লাগে প্রায় ১৫ মিনিট। পৌনে দুইটার দিকে কোকোর কফিন কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকানো হয়। কার্যালয়ের ভেতরে দলীয় নেতা-কর্মী বা গণমাধ্যমের কর্মীদের যাওয়ার সুযোগ ছিল না। সকাল থেকে ভেতরে ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা। এর বাইরে তার নিজস্ব কর্মকর্তা এবং মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী ছিলেন। কিন্তু মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স কার্যািলয়ের গেইটের ভেতরে নেয়ার সময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সেখানে ঢুকে পড়েন।এতে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যা সামাল দিতে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তকর্মী (সিএসএফ)সহ কার্যােলয়ের লোকজনকে হিমশিম খেতে হয়। এরআগে কার্যা্লয়ে প্রবেশে বাধা দেয়ায় সিএসএফের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন কয়েকজন নারী নেত্রী। এদিকে কোকোর মরদেহ কার্যাএলয়ে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে মাইকে নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার পরামর্শ দেন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস। তিনি নেতাকর্মীদের কোকোর রুহের মাগফেরাত কামনা করার পাশাপাশি শোককে শক্তিতে রূপান্তরের আহ্বান জানান। এসময় শিমুল বিশ্বাস সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক কবরস্থানে কোকোকে দাফন করার অনুমতি না দেয়ার অভিযোগ করেন। কোকোর মরদেহ রাখা হয় কার্যালয়ের নিচতলার একটি কক্ষে। এ কক্ষে সাধারণত খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করেন।কক্ষের ভেতর স্থায়ী মঞ্চে রাখা হয় কফিন। কক্ষে কোকোর মরদেহ আনার পর দৃশ্যপট সবার মন কেড়ে নেয়। প্রায় ১০ মিনিট পর দোতলা থেকে বেগম জিয়াকে হাতে ধরে নিয়ে আনা হয় নিচ তলায়। ক্রিম কালারের সুতি শাড়ি পরিহিতা বেগম জিয়া সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে তার ছোট দুই ভাইয়ের স্ত্রী ও কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথি ছিলেন। কার্যালয়ের নীচে এসে ছেলের নিথর মুখ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন খালেদা জিয়া। দুই নাতনীর সঙ্গে দাদীর কান্না যেন একাকার হয়ে যায়। পুরো পরিবেশটাই যেন কান্নার ভারে নুইয়ে পড়ার এক অজানা দেশের পরিবেশের মতো মনে হয়েছে। সেখানে যারা ছিলেন, তারাই এই দৃশ্যপট অনুধাবণ করতে পেরেছে। এরপরের দৃশ্যপট আরো বেদনাবিধুর। ছেলের কফিনের সামনে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বেগম জিয়া। কখনো ঘুমড়ে কান্না আবার কখনো নাতনীকে জড়িয়ে কান্না। সাদা কফিনে সাদা পোশাকে শুয়ে আছেন কোকো। মুখে দাঁড়ি। মা যখনই ছেলের দিকে তাকাচ্ছিলেন তখন কাঁদছিলেন শিশুর মতো। এ যেন এক অন্যরকম দৃশ্য। সেখানে বেগম জিয়ার প্রবেশ ও পরিবেশের সঙ্গে অনেকে নিজেদের আর সামলিয়ে রাখতে পারেনি। সবাই অশ্রুসজল ছিলেন। পরে ছেলের মরদেহের পাশে বসেই মোনাজাত করেন খালেদা। ওইসময় পাশের আরেকটি কক্ষে কোরআন তিলাওয়াত চলছিল। সেখানে এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন কোকোর দুই মেয়ে, খালেদা জিয়ার দুই ভাইয়ের স্ত্রী, তারেক রহমানের শাশুড়ি, খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ। পরিবারের ছোট বলে মায়ের কাছে সবচেয় প্রিয় ছিল কোকো। যেকোনো আবদার মায়ের নিমিষেই পুরণ করতে হতো। আর সেই প্রিয় পুত্রকে হারিয়ে বেগম জিয়া যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। প্রায় ৩৫ মিনিট কফিনের পাশেই বসা ছিলেন বেগম। এরপর তার সামনে কফিনটি ঢেকে দেয়া হয়। সেটাও ছিল অনেক বেদনার। কান্নার মধ্যেই বেগম জিয়া নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ছেলেকে বিদায় দিয়ে অজানার দেশে।পরে বেগম জিয়াকে ধরে নিয়ে দোতলায় তুলেছেন তার দুই ভাইয়ের বউ। পরিবারের সদস্যরা শেষবারের মতো দেখার পর প্রায় এক ঘণ্টা পর কোকোর মরদেহ বেলা পৌনে তিনটার দিকে গুলশান কার্যালয় থেকে বায়তুল মোকাররমের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। কোকোর জানাজা হয় স্মরণকালের বড় জানাজা।বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাকর্মীকে বলতে শোনা যায়, জিয়াউর রহমানের পরেই ঢাকাতে এটি সবচেয়ে বড় জানাজা।বায়তুল মোকররমের তিনদিকে জানাজার লোকজন ছড়িয়ে পড়ে।দক্ষিণে নবাবপুর রোড, পূর্বে মতিঝিল সোনালী ব্যাংক আর উত্তরে যতটুকু জায়গা পাওয়া গেছে তার সবটুকু ভরে ওঠে লাখো জনতায়। জানাজা শেষে কোকোকে বনানী কবরস্থানের বি ব্লকের ১৮ নং সারিতে অবস্থিত ১৮৩৮/১৪৭ নং কবরে তাকে দাফন করা হয়। দাফনের পর কোকোর আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। নতুন বার্তা/বিইউ
Wednesday, January 28, 2015
লাখো মানুষের ভালোবাসায় কোকোর বিদায় :Natun Barta
ঢাকা: লাখো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে কোকোর স্মরণকালের বৃহৎ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি ও ২০ দলের নেতাকর্মী, সমর্থকসহ সাধারণ মানুষ এতে অংশ নেন। প্রশাসনের কড়াকড়ির মধ্যেও জানাজাকে ঘিরে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপ
স্থিতিতে খালেদা জিয়ার প্রতি সমর্থন ও ভালোবাসার প্রমাণ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৭০ সালে যখন স্বাধীনতার মুক্তি সংগ্রামে দেশের মানুষ সংগঠিত হচ্ছিল, ঠিক ওই সময়ে কুমিল্লা সেনানিবাসে আরাফাত রহমান কোকো জন্ম নেন। জিয়া পরিবারের দুই সন্তানের মধ্যে কোকো ছোট। বড় ছেলে তারেক রহমান রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও কোকোর ছিল না কোনো রাজনৈতিক পরিচয়। বড় হওয়ার পর নিজের বেশকিছু ব্যবসা পরিচালনা করতেন তিনি। বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতার আরাফাত ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই তখনকার কর্তৃপক্ষের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যান। সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান।অর্থপাচারের একটি মামলায় বাংলাদেশের আদালতে ছয় বছর কারাদণ্ড দেয়। কোকো স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে কুয়ালালামপুরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন বলে জানা যায়। গত শনিবার মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন কোকো। পরদিন রোববার কুয়ালালামপুরে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।পরে তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করে পরিবার ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা। কোকোর মরদেহবাহী মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের বিমানটি মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকাল আটটার দিকে মালয়েশিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। এটি বাংলাদেশ সময় দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হজরত শাহজালাল (র.)আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। কোকোর মরদেহ গ্রহণ করেন বিএনপির নেতা আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ফজলুল হক মিলন, গিয়াস কাদের চৌধুরী, আবদুল মান্নান প্রমুখ। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে কোকোর মরদেহ বহনকারী গাড়ি পৌঁছে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে। উত্তর পাশের ফটক দিয়ে গাড়ি ঢোকানো হয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে। নেতা-কর্মীদের ভিড়, ধাক্কাধাক্কিতে ফটক খুলে কয়েক গজ ভেতরে গাড়ি ঢুকাতে সময় লাগে প্রায় ১৫ মিনিট। পৌনে দুইটার দিকে কোকোর কফিন কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকানো হয়। কার্যালয়ের ভেতরে দলীয় নেতা-কর্মী বা গণমাধ্যমের কর্মীদের যাওয়ার সুযোগ ছিল না। সকাল থেকে ভেতরে ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা। এর বাইরে তার নিজস্ব কর্মকর্তা এবং মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী ছিলেন। কিন্তু মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স কার্যািলয়ের গেইটের ভেতরে নেয়ার সময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সেখানে ঢুকে পড়েন।এতে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যা সামাল দিতে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তকর্মী (সিএসএফ)সহ কার্যােলয়ের লোকজনকে হিমশিম খেতে হয়। এরআগে কার্যা্লয়ে প্রবেশে বাধা দেয়ায় সিএসএফের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন কয়েকজন নারী নেত্রী। এদিকে কোকোর মরদেহ কার্যাএলয়ে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে মাইকে নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার পরামর্শ দেন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস। তিনি নেতাকর্মীদের কোকোর রুহের মাগফেরাত কামনা করার পাশাপাশি শোককে শক্তিতে রূপান্তরের আহ্বান জানান। এসময় শিমুল বিশ্বাস সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক কবরস্থানে কোকোকে দাফন করার অনুমতি না দেয়ার অভিযোগ করেন। কোকোর মরদেহ রাখা হয় কার্যালয়ের নিচতলার একটি কক্ষে। এ কক্ষে সাধারণত খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করেন।কক্ষের ভেতর স্থায়ী মঞ্চে রাখা হয় কফিন। কক্ষে কোকোর মরদেহ আনার পর দৃশ্যপট সবার মন কেড়ে নেয়। প্রায় ১০ মিনিট পর দোতলা থেকে বেগম জিয়াকে হাতে ধরে নিয়ে আনা হয় নিচ তলায়। ক্রিম কালারের সুতি শাড়ি পরিহিতা বেগম জিয়া সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে তার ছোট দুই ভাইয়ের স্ত্রী ও কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথি ছিলেন। কার্যালয়ের নীচে এসে ছেলের নিথর মুখ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন খালেদা জিয়া। দুই নাতনীর সঙ্গে দাদীর কান্না যেন একাকার হয়ে যায়। পুরো পরিবেশটাই যেন কান্নার ভারে নুইয়ে পড়ার এক অজানা দেশের পরিবেশের মতো মনে হয়েছে। সেখানে যারা ছিলেন, তারাই এই দৃশ্যপট অনুধাবণ করতে পেরেছে। এরপরের দৃশ্যপট আরো বেদনাবিধুর। ছেলের কফিনের সামনে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বেগম জিয়া। কখনো ঘুমড়ে কান্না আবার কখনো নাতনীকে জড়িয়ে কান্না। সাদা কফিনে সাদা পোশাকে শুয়ে আছেন কোকো। মুখে দাঁড়ি। মা যখনই ছেলের দিকে তাকাচ্ছিলেন তখন কাঁদছিলেন শিশুর মতো। এ যেন এক অন্যরকম দৃশ্য। সেখানে বেগম জিয়ার প্রবেশ ও পরিবেশের সঙ্গে অনেকে নিজেদের আর সামলিয়ে রাখতে পারেনি। সবাই অশ্রুসজল ছিলেন। পরে ছেলের মরদেহের পাশে বসেই মোনাজাত করেন খালেদা। ওইসময় পাশের আরেকটি কক্ষে কোরআন তিলাওয়াত চলছিল। সেখানে এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন কোকোর দুই মেয়ে, খালেদা জিয়ার দুই ভাইয়ের স্ত্রী, তারেক রহমানের শাশুড়ি, খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ। পরিবারের ছোট বলে মায়ের কাছে সবচেয় প্রিয় ছিল কোকো। যেকোনো আবদার মায়ের নিমিষেই পুরণ করতে হতো। আর সেই প্রিয় পুত্রকে হারিয়ে বেগম জিয়া যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। প্রায় ৩৫ মিনিট কফিনের পাশেই বসা ছিলেন বেগম। এরপর তার সামনে কফিনটি ঢেকে দেয়া হয়। সেটাও ছিল অনেক বেদনার। কান্নার মধ্যেই বেগম জিয়া নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ছেলেকে বিদায় দিয়ে অজানার দেশে।পরে বেগম জিয়াকে ধরে নিয়ে দোতলায় তুলেছেন তার দুই ভাইয়ের বউ। পরিবারের সদস্যরা শেষবারের মতো দেখার পর প্রায় এক ঘণ্টা পর কোকোর মরদেহ বেলা পৌনে তিনটার দিকে গুলশান কার্যালয় থেকে বায়তুল মোকাররমের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। কোকোর জানাজা হয় স্মরণকালের বড় জানাজা।বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাকর্মীকে বলতে শোনা যায়, জিয়াউর রহমানের পরেই ঢাকাতে এটি সবচেয়ে বড় জানাজা।বায়তুল মোকররমের তিনদিকে জানাজার লোকজন ছড়িয়ে পড়ে।দক্ষিণে নবাবপুর রোড, পূর্বে মতিঝিল সোনালী ব্যাংক আর উত্তরে যতটুকু জায়গা পাওয়া গেছে তার সবটুকু ভরে ওঠে লাখো জনতায়। জানাজা শেষে কোকোকে বনানী কবরস্থানের বি ব্লকের ১৮ নং সারিতে অবস্থিত ১৮৩৮/১৪৭ নং কবরে তাকে দাফন করা হয়। দাফনের পর কোকোর আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। নতুন বার্তা/বিইউ
স্থিতিতে খালেদা জিয়ার প্রতি সমর্থন ও ভালোবাসার প্রমাণ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৭০ সালে যখন স্বাধীনতার মুক্তি সংগ্রামে দেশের মানুষ সংগঠিত হচ্ছিল, ঠিক ওই সময়ে কুমিল্লা সেনানিবাসে আরাফাত রহমান কোকো জন্ম নেন। জিয়া পরিবারের দুই সন্তানের মধ্যে কোকো ছোট। বড় ছেলে তারেক রহমান রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও কোকোর ছিল না কোনো রাজনৈতিক পরিচয়। বড় হওয়ার পর নিজের বেশকিছু ব্যবসা পরিচালনা করতেন তিনি। বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতার আরাফাত ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই তখনকার কর্তৃপক্ষের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যান। সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান।অর্থপাচারের একটি মামলায় বাংলাদেশের আদালতে ছয় বছর কারাদণ্ড দেয়। কোকো স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে কুয়ালালামপুরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন বলে জানা যায়। গত শনিবার মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন কোকো। পরদিন রোববার কুয়ালালামপুরে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।পরে তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করে পরিবার ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা। কোকোর মরদেহবাহী মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের বিমানটি মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকাল আটটার দিকে মালয়েশিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। এটি বাংলাদেশ সময় দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হজরত শাহজালাল (র.)আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। কোকোর মরদেহ গ্রহণ করেন বিএনপির নেতা আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ফজলুল হক মিলন, গিয়াস কাদের চৌধুরী, আবদুল মান্নান প্রমুখ। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে কোকোর মরদেহ বহনকারী গাড়ি পৌঁছে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে। উত্তর পাশের ফটক দিয়ে গাড়ি ঢোকানো হয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে। নেতা-কর্মীদের ভিড়, ধাক্কাধাক্কিতে ফটক খুলে কয়েক গজ ভেতরে গাড়ি ঢুকাতে সময় লাগে প্রায় ১৫ মিনিট। পৌনে দুইটার দিকে কোকোর কফিন কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকানো হয়। কার্যালয়ের ভেতরে দলীয় নেতা-কর্মী বা গণমাধ্যমের কর্মীদের যাওয়ার সুযোগ ছিল না। সকাল থেকে ভেতরে ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা। এর বাইরে তার নিজস্ব কর্মকর্তা এবং মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী ছিলেন। কিন্তু মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স কার্যািলয়ের গেইটের ভেতরে নেয়ার সময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সেখানে ঢুকে পড়েন।এতে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যা সামাল দিতে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তকর্মী (সিএসএফ)সহ কার্যােলয়ের লোকজনকে হিমশিম খেতে হয়। এরআগে কার্যা্লয়ে প্রবেশে বাধা দেয়ায় সিএসএফের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন কয়েকজন নারী নেত্রী। এদিকে কোকোর মরদেহ কার্যাএলয়ে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে মাইকে নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার পরামর্শ দেন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস। তিনি নেতাকর্মীদের কোকোর রুহের মাগফেরাত কামনা করার পাশাপাশি শোককে শক্তিতে রূপান্তরের আহ্বান জানান। এসময় শিমুল বিশ্বাস সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক কবরস্থানে কোকোকে দাফন করার অনুমতি না দেয়ার অভিযোগ করেন। কোকোর মরদেহ রাখা হয় কার্যালয়ের নিচতলার একটি কক্ষে। এ কক্ষে সাধারণত খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করেন।কক্ষের ভেতর স্থায়ী মঞ্চে রাখা হয় কফিন। কক্ষে কোকোর মরদেহ আনার পর দৃশ্যপট সবার মন কেড়ে নেয়। প্রায় ১০ মিনিট পর দোতলা থেকে বেগম জিয়াকে হাতে ধরে নিয়ে আনা হয় নিচ তলায়। ক্রিম কালারের সুতি শাড়ি পরিহিতা বেগম জিয়া সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে তার ছোট দুই ভাইয়ের স্ত্রী ও কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথি ছিলেন। কার্যালয়ের নীচে এসে ছেলের নিথর মুখ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন খালেদা জিয়া। দুই নাতনীর সঙ্গে দাদীর কান্না যেন একাকার হয়ে যায়। পুরো পরিবেশটাই যেন কান্নার ভারে নুইয়ে পড়ার এক অজানা দেশের পরিবেশের মতো মনে হয়েছে। সেখানে যারা ছিলেন, তারাই এই দৃশ্যপট অনুধাবণ করতে পেরেছে। এরপরের দৃশ্যপট আরো বেদনাবিধুর। ছেলের কফিনের সামনে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বেগম জিয়া। কখনো ঘুমড়ে কান্না আবার কখনো নাতনীকে জড়িয়ে কান্না। সাদা কফিনে সাদা পোশাকে শুয়ে আছেন কোকো। মুখে দাঁড়ি। মা যখনই ছেলের দিকে তাকাচ্ছিলেন তখন কাঁদছিলেন শিশুর মতো। এ যেন এক অন্যরকম দৃশ্য। সেখানে বেগম জিয়ার প্রবেশ ও পরিবেশের সঙ্গে অনেকে নিজেদের আর সামলিয়ে রাখতে পারেনি। সবাই অশ্রুসজল ছিলেন। পরে ছেলের মরদেহের পাশে বসেই মোনাজাত করেন খালেদা। ওইসময় পাশের আরেকটি কক্ষে কোরআন তিলাওয়াত চলছিল। সেখানে এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন কোকোর দুই মেয়ে, খালেদা জিয়ার দুই ভাইয়ের স্ত্রী, তারেক রহমানের শাশুড়ি, খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ। পরিবারের ছোট বলে মায়ের কাছে সবচেয় প্রিয় ছিল কোকো। যেকোনো আবদার মায়ের নিমিষেই পুরণ করতে হতো। আর সেই প্রিয় পুত্রকে হারিয়ে বেগম জিয়া যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। প্রায় ৩৫ মিনিট কফিনের পাশেই বসা ছিলেন বেগম। এরপর তার সামনে কফিনটি ঢেকে দেয়া হয়। সেটাও ছিল অনেক বেদনার। কান্নার মধ্যেই বেগম জিয়া নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ছেলেকে বিদায় দিয়ে অজানার দেশে।পরে বেগম জিয়াকে ধরে নিয়ে দোতলায় তুলেছেন তার দুই ভাইয়ের বউ। পরিবারের সদস্যরা শেষবারের মতো দেখার পর প্রায় এক ঘণ্টা পর কোকোর মরদেহ বেলা পৌনে তিনটার দিকে গুলশান কার্যালয় থেকে বায়তুল মোকাররমের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। কোকোর জানাজা হয় স্মরণকালের বড় জানাজা।বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাকর্মীকে বলতে শোনা যায়, জিয়াউর রহমানের পরেই ঢাকাতে এটি সবচেয়ে বড় জানাজা।বায়তুল মোকররমের তিনদিকে জানাজার লোকজন ছড়িয়ে পড়ে।দক্ষিণে নবাবপুর রোড, পূর্বে মতিঝিল সোনালী ব্যাংক আর উত্তরে যতটুকু জায়গা পাওয়া গেছে তার সবটুকু ভরে ওঠে লাখো জনতায়। জানাজা শেষে কোকোকে বনানী কবরস্থানের বি ব্লকের ১৮ নং সারিতে অবস্থিত ১৮৩৮/১৪৭ নং কবরে তাকে দাফন করা হয়। দাফনের পর কোকোর আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। নতুন বার্তা/বিইউ
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment