Tuesday, December 2, 2014

দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির আহবান ফরহাদ মজহারের:Time News

দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির আহবান ফরহাদ মজহারের যুক্তরাজ্য করেসপন্ডেন্ট টাইম নিউজ বিডি, ০২ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১০:৩৮:৩৪ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হবে মন্তব্য করে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেছেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু বাংলার মানুষ এই তিন নীতির সুফল পায়নি। তাই চলমান আন্দোলনকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে পরিণত কর
তে হবে। আমাদেরকে এই তিন নীতির ভিত্তিতে আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। প্রথম মুক্তিযুদ্ধের মতোই আসন্ন এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধেও বৃটেন প্রবাসীরা পথ দেখাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। যুক্তরাজ্য স্থানীয় সময় রোববার রাতে ইস্ট লন্ডনের ওয়াটার লিলি অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র’শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। সহস্রাধিক যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশী এবং বৃটেনের নাগরিকদের এ সম্মেলন থেকে পাঁচ দফা লন্ডন ঘোষণা করা হয়। ঘোষণায় বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রহসন উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা। এছাড়া বিরোধী দলমত দমন, গুম-খুন এবং গণমাধ্যম দলনে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করা হয়। দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভিসহ বন্ধ সব গণমাধ্যম খুলে দেয়া এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন তারা। এসব দাবি জানিয়ে সিটিজেন মুভমেন্টের নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারকে তিন মাসের আল্টিমেটাম দেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে ফেব্রুয়ারির পর বিশ্বজুড়ে সরকারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কর্মসূচির হুমকি দেন তারা। সেমিনারে ফরহাদ মজহার বলেন, যে তিন নীতির আলোকে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আগামী লড়াইকে এই তিন দফার ভিত্তিতে পরিচালিত করতে পারলেই কেবল আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে হটানো সম্ভব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন কেবল একটি নির্বাচনের সমস্যায় নেই। ফ্যাসিবাদীকে হটানোই হলো এখন প্রধান কাজ।  ফরহাদ মজহার আরো বলেন, ষড়যন্ত্রের কারণে ৫ মে ফ্যাসিবাদের বিদায় হয়নি। এই অপশক্তিকে হটাতে হলে এবার মুক্তিযুদ্ধের তিন নীতিতে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, ইসলাম একটি সভ্যতার নাম। এই সভ্যতাকে কেবল ধর্ম নয়, দর্শন হিসেবে নিতে হবে। তাহলেই সকল অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।  টকশো ব্যক্তিত্ব ড. তুহিন মালিক বর্তমান সরকারকে ‘মিথ্যাবাদী’অভিহিত করে বলেন, সত্য বললেই এখন রাজাকার বলা হয়। আর মিথ্যা বলে পুরস্কার পাওয়া যায়। দেশ এখন দখলদার ও লুটেরাদের কবলে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সংবিধান বাতিল করতে হবে। কেবল আন্দোলনের হুমকি আর জনস্রোত দেখালে চলবে না। আন্দোলনে বারুদ লাগাতে হবে।  রাজনৈতিক বিশ্লেষক  ড. তুহিন মালিক আরো বলেন, নাস্তিকদের সাথে নিয়ে শেখ হাসিনা পুরো রাজনীতিটাকে কলুষিত করেছে। যে নাস্তিকরা তার বাবাকে হত্যা করতে চেয়েছে, যে নাস্তিকরা তার বাবা মারা যাবার পর ট্যাংকের ওপরে দাড়িয়ে উলঙ্গ নৃত্য করেছে, যে নাস্তিকরা তার চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানাতে চেয়েছে; শুধুমাত্র ইসলামকে আঘাত করার জন্য এই নাস্তিকদের শেখ হাসিনা সাথে রেখেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বাম পঁচলে হয় আওয়ামীলীগ আর আওয়ামীলীগ যখন পঁচে যায় তখন তার নাম হয় নাস্তিক। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে মিথ্যা, প্রপাগান্ডা ও হয়রানি করে ধ্বংস করে দিয়ে বাংলাদেশে দিল্লির শাসন ও নাস্তিকবাদীদের মন্দির বানাতে চায়। সারা পৃথিবীতে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় কিন্তু বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে সংখ্যাগুরু নির্যাতন হয়। আশ্চর্য্য দেশ যেখানে সংখ্যাগুরু মানুষের মূল্যবোধ, তার লেবাস, তার দাঁড়ি, টুপি এমনকি তার কিতাব রাখা অপরাধ, কিন্তু ঘুষ ও হারাম খাওয়া অপরাধ না। তিনি বলেন, তারা এতোদিন বলেছে জয় বাংলা। প্রমোদ মানকিন কয়েকদিন আগে বলেছেন জয়বাংলা না বললে বাংলাদেশ থেকে বের করা দেয়া হবে। জয় বাংলা আমরা দেখেছি, শুনেছি, কিন্তু জয়ের বাংলা আমরা দেখবো না ইনশাল্লাহ। এটা মুসলামদের বাংলা, এটা তাওহিদী জনতার বাংলা ; এটা ইহুদী খ্রীষ্টানদের পিতার বাংলা নয়। সমবেত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষে পাঁচদফা লন্ডন ঘোষণা পাঠ করেন সিটিজেন মুভমেন্ট ইউকের আহবায়ক এম এ মালেক। ঘোষণায় বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় থাকার কোন নৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার নেই। তাই এই অবৈধ ও দখলদারদের কোন প্রকার স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য বৃটিশ সরকার ও জনগণের প্রতি আহবান  জানানো হয়। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হত্যা, খুন, গুম বন্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকে এই সরকার যেভাবে দমন পীড়ন করছে, বিদ্বেষ ও আতংকের বশবর্তী হয়ে যেভাবে ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের ওপর সরকার অত্যাচার নির্যাতন করছে তা একদলীয় শাসন ব্যবস্থারই নামান্তর। বাংলাদেশের জনগনের নাগরিক ও মানবিক অধিকার আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতার আহবান জানান। সরকার গণমাধ্যমের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে উল্লেখ করে অবিলম্বে দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভিসহ যেসব গণমাধ্যম এই অবৈধ সরকার বন্ধ করে দিয়েছে তা খুলে দেয়া এবং আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করা হয়। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণা অনুযায়ী সাম্য মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচারের জন্য মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এই আদর্শকে নসাৎ করে যে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে  তা থেকে পরিত্রানের জন্য সাম্য মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করার নীতি ও কৌশল নিয়ে আলোচনা করতে হবে। সেমিনারে বাংলাদেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা আতিকুর রহমান জিলু। ইউরোপভিত্তিক নাগরিক সংগঠন সিটিজেন মুভমেন্টের আহবায়ক এম এ মালিকের সভাপতিত্বে সেমিনারে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের চিত্র তুলে ধরে বক্তৃতা করেন দার্শনিক ও চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার এবং টকশো ব্যক্তিত্ব ড. তুহিন মালিক। আরো বক্তৃতা করেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুফতি শাহ সদরুদ্দীন, আইনজীবী নেতা ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, ব্যারিস্টার আবদুস সালাম, ব্যারিস্টার তমিজ উদ্দীন, টাওয়ার হ্যামলেট বারার ডেপুটি মেয়র ওয়ালিউর রহমান, কাউন্সিলর ওয়াহেদ আহমেদ, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মাওলানা এখলাসুর রহমান, প্রফেসর আবদুল কাদির সালেহ, ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, নূর বক্স, প্রিন্সিপাল সৈয়দ মামনুল মোরশেদ, মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম চৌধুরী, সাংবাদিক ও রাজনীতিক শেখ মহিউদ্দীন, রাজনীতিক শরিফুজ্জামান তপন চৌধুরী, প্রফেসর ফরিদ উদ্দীন, নাসিম আহমেদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার লিটন আফিন্দি, মেজর আবু বকর সিদ্দিক (অব.), মনোয়ার বদরুদ্দোজা, চ্যানেল-আই ইউরোপের পরিচালক আখতার হোসেন টুটুল, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা আশিকুর রহমান, কবি আবু সুফিয়ান প্রমুখ। এমআর/জেআই  


No comments:

Post a Comment