ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দ্য স্টেট অব গভর্ন্যান্স বাংলাদেশ-২০১৩’ প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার প্রথমে রয়েছে সিরিয়া। এরপর যথাক্রমে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরাক ও দক্ষিণ সুদান। পাকিস্তানের অবস্থান ১০ নম্বরে। মাওবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলোর সহিংসতাপূর্ণ ভারতের অবস্থান ১৮তম। সহিংসতা সবচেয়ে কম স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের দেশ নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ডে। প্রতিবেদনটিতে শুধু সহিংসতা নয়, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা, সংসদে ব্যবসায়ী ও সাবেক আমলাদের আধিপত্য, পারিবারিক রাজনীতি চর্চা, বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন এবং পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে দলীয়করণের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে সংবাদপত্রের সংবাদ, জরিপ, বিভিন্ন সংস্থার তথ্য-উপাত্ত একত্র করার মাধ্যমে। বিশিষ্ট নাগরিকদের সাক্ষাৎকার ও বইয়ের তথ্যও নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সারাদেশে দুই হাজার ৭২৩টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। প্রতি বছর সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৩ শতাংশ, অর্থাৎ এক হাজার ১৮০টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে শুধু ২০১৩ সালে। এতে প্রাণ গেছে ৫১৯ জনের। ২০১৩ সালে এক বছরেই নিহত হয়েছেন ২৭৩ জন, যা আগের চার বছরের চেয়ে বেশি। আহত হয়েছেন ৩৩ হাজার ৭০২ জন। ভাংচুর করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৯টি যানবাহন, দোকান, বাড়ি ও ঘর। আগুনে পুড়েছে ৫১৪টি যানবাহন ও দোকান। এই সহিংসতার জন্য মূলত দায়ী করা হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি ঘটনার জন্যই দায়ী রাজনৈতিক দলগুলো। সহিংসতায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। তবে একক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ পিছিয়ে নেই। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৫৮ শতাংশ সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে। দেড় হাজার সহিংসতার ৮৯৪টিতে জড়িয়েছে দলটির নাম। তবে এ অভিযোগকে সরাসরি নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, ব্র্যাকের নিজস্ব কোনো গবেষণা কিংবা সেল নেই। কেবল সংবাদপত্রের সংবাদ ও বিভিন্ন সংস্থার তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তারা এই প্রতিবেদন করেছে। অন্যের কাছ থেকে নেয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা প্রতিবেদনের মন্তব্য করার কারণ নেই। সহিংসতা ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগকে ছাড়িয়ে গেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। ওই বছরে সংঘটিত ৭৬ শতাংশ সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে জোটের বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ২১ শতাংশ সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আগের চার বছরে বিএনপি এককভাবে মোট সহিংসতার ২৫ শতাংশে জড়িত বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। জামায়াত জড়িত ৮ শতাংশে। ২ শতাংশ সহিংসতা বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধভাবে করেছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলই সহিংসতার দায় অস্বীকার করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে সরকারই সহিংসতা করেছে। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এ দায় এখন বিএনপির ওপর চাপানো হচ্ছে। একই সুরে কথা বলেন জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আওয়ামী লীগের নাম সর্বাগ্রে। দলটির কর্মীদের মোট সংঘাতের ৭১ শতাংশই হয়েছে নিজেদের মধ্যে। বাকিগুলো অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পরিমাণ ৬০ শতাংশ। বাকি সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। জামায়াতের ৯৯ শতাংশ সংঘাতই হয়েছে পুলিশ ও অন্য দলের কর্মীদের সঙ্গে। সহিংসতায় বেশি জড়িত ছাত্রলীগ। গত পাঁচ বছরে রাজনৈতিক সহিংসতার ২৭ শতাংশের জন্যই প্রতিবেদনে ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়েছে। পরের অবস্থানে রয়েছে ছাত্রদল। ৫ শতাংশের ঘটনায় জড়িত এই সংগঠন। ছাত্রশিবির জড়িত ৪ শতাংশ ঘটনায়। প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য অনুযায়ী সংসদে মোট এমপির প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যবসায়ী। অষ্টম ও নবম সংসদে এ সংখ্যা ছিল ৫৯ ও ৬০। এবারের সংসদে বিএনপি না থাকলেও মোট এমপির ৬৪ শতাংশ ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের ৬৫ শতাংশ ব্যবসায়ী। আগের সংসদে বিএনপির ৭৭ শতাংশ এমপি ছিলেন ব্যবসায়ী। প্রতিবেদনে বলা হয়, পারিবারিক রাজনীতি ব্যাহত করছে বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রকে। নবম সংসদে ১৯ শতাংশ এমপিই ছিলেন সাবেক এমপিদের স্ত্রী, পুত্র-কন্যা। অষ্টম সংসদে এই হার ছিল ১৭ শতাংশ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি- তিন দলে পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চাকে হতাশাজনক বলা হয় প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মাত্র ১২ শতাংশ মনোনয়ন দেয়া হয় তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে। ৮৮ শতাংশই হয় শীর্ষ নেতাদের ইচ্ছায়। প্রধান দুই দলের মূল ভিত্তি জেলা শাখার সম্মেলনেও দলীয় গঠনতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রীতি মেনে হয় না। দুই দলের ৬৭ শতাংশ জেলা কমিটিতে সম্মেলন হয় অন্তত ১০ বছর ব্যবধানে। জেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের চেয়ে মনোনয়নের বেশি নজির বিএনপিতে। মন্তব্য
Saturday, December 20, 2014
সহিংসতায় জামায়াতের চেয়ে এগিয়ে আ.লীগ-বিএনপি:RTNN
সবচেয়ে সহিংস ছাত্রলীগ সহিংসতায় জামায়াতের চেয়ে এগিয়ে আ.লীগ-বিএনপি নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৯৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২১তম। রাজনৈতিক সহিংসতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এর জন্য দায়ী করা হয়েছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। পরেই জামায়াতে ইসলামীর নাম। আন্তর্জাতিক ঝুঁকি বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ম্যাপলক্রফটের গবেষণার বরাত দিয়ে
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দ্য স্টেট অব গভর্ন্যান্স বাংলাদেশ-২০১৩’ প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার প্রথমে রয়েছে সিরিয়া। এরপর যথাক্রমে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরাক ও দক্ষিণ সুদান। পাকিস্তানের অবস্থান ১০ নম্বরে। মাওবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলোর সহিংসতাপূর্ণ ভারতের অবস্থান ১৮তম। সহিংসতা সবচেয়ে কম স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের দেশ নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ডে। প্রতিবেদনটিতে শুধু সহিংসতা নয়, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা, সংসদে ব্যবসায়ী ও সাবেক আমলাদের আধিপত্য, পারিবারিক রাজনীতি চর্চা, বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন এবং পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে দলীয়করণের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে সংবাদপত্রের সংবাদ, জরিপ, বিভিন্ন সংস্থার তথ্য-উপাত্ত একত্র করার মাধ্যমে। বিশিষ্ট নাগরিকদের সাক্ষাৎকার ও বইয়ের তথ্যও নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সারাদেশে দুই হাজার ৭২৩টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। প্রতি বছর সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৩ শতাংশ, অর্থাৎ এক হাজার ১৮০টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে শুধু ২০১৩ সালে। এতে প্রাণ গেছে ৫১৯ জনের। ২০১৩ সালে এক বছরেই নিহত হয়েছেন ২৭৩ জন, যা আগের চার বছরের চেয়ে বেশি। আহত হয়েছেন ৩৩ হাজার ৭০২ জন। ভাংচুর করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৯টি যানবাহন, দোকান, বাড়ি ও ঘর। আগুনে পুড়েছে ৫১৪টি যানবাহন ও দোকান। এই সহিংসতার জন্য মূলত দায়ী করা হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি ঘটনার জন্যই দায়ী রাজনৈতিক দলগুলো। সহিংসতায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। তবে একক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ পিছিয়ে নেই। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৫৮ শতাংশ সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে। দেড় হাজার সহিংসতার ৮৯৪টিতে জড়িয়েছে দলটির নাম। তবে এ অভিযোগকে সরাসরি নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, ব্র্যাকের নিজস্ব কোনো গবেষণা কিংবা সেল নেই। কেবল সংবাদপত্রের সংবাদ ও বিভিন্ন সংস্থার তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তারা এই প্রতিবেদন করেছে। অন্যের কাছ থেকে নেয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা প্রতিবেদনের মন্তব্য করার কারণ নেই। সহিংসতা ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগকে ছাড়িয়ে গেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। ওই বছরে সংঘটিত ৭৬ শতাংশ সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে জোটের বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ২১ শতাংশ সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আগের চার বছরে বিএনপি এককভাবে মোট সহিংসতার ২৫ শতাংশে জড়িত বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। জামায়াত জড়িত ৮ শতাংশে। ২ শতাংশ সহিংসতা বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধভাবে করেছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলই সহিংসতার দায় অস্বীকার করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে সরকারই সহিংসতা করেছে। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এ দায় এখন বিএনপির ওপর চাপানো হচ্ছে। একই সুরে কথা বলেন জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আওয়ামী লীগের নাম সর্বাগ্রে। দলটির কর্মীদের মোট সংঘাতের ৭১ শতাংশই হয়েছে নিজেদের মধ্যে। বাকিগুলো অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পরিমাণ ৬০ শতাংশ। বাকি সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। জামায়াতের ৯৯ শতাংশ সংঘাতই হয়েছে পুলিশ ও অন্য দলের কর্মীদের সঙ্গে। সহিংসতায় বেশি জড়িত ছাত্রলীগ। গত পাঁচ বছরে রাজনৈতিক সহিংসতার ২৭ শতাংশের জন্যই প্রতিবেদনে ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়েছে। পরের অবস্থানে রয়েছে ছাত্রদল। ৫ শতাংশের ঘটনায় জড়িত এই সংগঠন। ছাত্রশিবির জড়িত ৪ শতাংশ ঘটনায়। প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য অনুযায়ী সংসদে মোট এমপির প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যবসায়ী। অষ্টম ও নবম সংসদে এ সংখ্যা ছিল ৫৯ ও ৬০। এবারের সংসদে বিএনপি না থাকলেও মোট এমপির ৬৪ শতাংশ ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের ৬৫ শতাংশ ব্যবসায়ী। আগের সংসদে বিএনপির ৭৭ শতাংশ এমপি ছিলেন ব্যবসায়ী। প্রতিবেদনে বলা হয়, পারিবারিক রাজনীতি ব্যাহত করছে বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রকে। নবম সংসদে ১৯ শতাংশ এমপিই ছিলেন সাবেক এমপিদের স্ত্রী, পুত্র-কন্যা। অষ্টম সংসদে এই হার ছিল ১৭ শতাংশ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি- তিন দলে পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চাকে হতাশাজনক বলা হয় প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মাত্র ১২ শতাংশ মনোনয়ন দেয়া হয় তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে। ৮৮ শতাংশই হয় শীর্ষ নেতাদের ইচ্ছায়। প্রধান দুই দলের মূল ভিত্তি জেলা শাখার সম্মেলনেও দলীয় গঠনতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রীতি মেনে হয় না। দুই দলের ৬৭ শতাংশ জেলা কমিটিতে সম্মেলন হয় অন্তত ১০ বছর ব্যবধানে। জেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের চেয়ে মনোনয়নের বেশি নজির বিএনপিতে। মন্তব্য
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দ্য স্টেট অব গভর্ন্যান্স বাংলাদেশ-২০১৩’ প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার প্রথমে রয়েছে সিরিয়া। এরপর যথাক্রমে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরাক ও দক্ষিণ সুদান। পাকিস্তানের অবস্থান ১০ নম্বরে। মাওবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলোর সহিংসতাপূর্ণ ভারতের অবস্থান ১৮তম। সহিংসতা সবচেয়ে কম স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের দেশ নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ডে। প্রতিবেদনটিতে শুধু সহিংসতা নয়, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা, সংসদে ব্যবসায়ী ও সাবেক আমলাদের আধিপত্য, পারিবারিক রাজনীতি চর্চা, বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন এবং পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে দলীয়করণের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে সংবাদপত্রের সংবাদ, জরিপ, বিভিন্ন সংস্থার তথ্য-উপাত্ত একত্র করার মাধ্যমে। বিশিষ্ট নাগরিকদের সাক্ষাৎকার ও বইয়ের তথ্যও নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সারাদেশে দুই হাজার ৭২৩টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। প্রতি বছর সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৩ শতাংশ, অর্থাৎ এক হাজার ১৮০টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে শুধু ২০১৩ সালে। এতে প্রাণ গেছে ৫১৯ জনের। ২০১৩ সালে এক বছরেই নিহত হয়েছেন ২৭৩ জন, যা আগের চার বছরের চেয়ে বেশি। আহত হয়েছেন ৩৩ হাজার ৭০২ জন। ভাংচুর করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৯টি যানবাহন, দোকান, বাড়ি ও ঘর। আগুনে পুড়েছে ৫১৪টি যানবাহন ও দোকান। এই সহিংসতার জন্য মূলত দায়ী করা হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি ঘটনার জন্যই দায়ী রাজনৈতিক দলগুলো। সহিংসতায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। তবে একক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ পিছিয়ে নেই। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৫৮ শতাংশ সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে। দেড় হাজার সহিংসতার ৮৯৪টিতে জড়িয়েছে দলটির নাম। তবে এ অভিযোগকে সরাসরি নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, ব্র্যাকের নিজস্ব কোনো গবেষণা কিংবা সেল নেই। কেবল সংবাদপত্রের সংবাদ ও বিভিন্ন সংস্থার তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তারা এই প্রতিবেদন করেছে। অন্যের কাছ থেকে নেয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা প্রতিবেদনের মন্তব্য করার কারণ নেই। সহিংসতা ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগকে ছাড়িয়ে গেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। ওই বছরে সংঘটিত ৭৬ শতাংশ সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে জোটের বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ২১ শতাংশ সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আগের চার বছরে বিএনপি এককভাবে মোট সহিংসতার ২৫ শতাংশে জড়িত বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। জামায়াত জড়িত ৮ শতাংশে। ২ শতাংশ সহিংসতা বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধভাবে করেছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলই সহিংসতার দায় অস্বীকার করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে সরকারই সহিংসতা করেছে। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এ দায় এখন বিএনপির ওপর চাপানো হচ্ছে। একই সুরে কথা বলেন জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আওয়ামী লীগের নাম সর্বাগ্রে। দলটির কর্মীদের মোট সংঘাতের ৭১ শতাংশই হয়েছে নিজেদের মধ্যে। বাকিগুলো অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পরিমাণ ৬০ শতাংশ। বাকি সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। জামায়াতের ৯৯ শতাংশ সংঘাতই হয়েছে পুলিশ ও অন্য দলের কর্মীদের সঙ্গে। সহিংসতায় বেশি জড়িত ছাত্রলীগ। গত পাঁচ বছরে রাজনৈতিক সহিংসতার ২৭ শতাংশের জন্যই প্রতিবেদনে ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়েছে। পরের অবস্থানে রয়েছে ছাত্রদল। ৫ শতাংশের ঘটনায় জড়িত এই সংগঠন। ছাত্রশিবির জড়িত ৪ শতাংশ ঘটনায়। প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য অনুযায়ী সংসদে মোট এমপির প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যবসায়ী। অষ্টম ও নবম সংসদে এ সংখ্যা ছিল ৫৯ ও ৬০। এবারের সংসদে বিএনপি না থাকলেও মোট এমপির ৬৪ শতাংশ ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের ৬৫ শতাংশ ব্যবসায়ী। আগের সংসদে বিএনপির ৭৭ শতাংশ এমপি ছিলেন ব্যবসায়ী। প্রতিবেদনে বলা হয়, পারিবারিক রাজনীতি ব্যাহত করছে বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রকে। নবম সংসদে ১৯ শতাংশ এমপিই ছিলেন সাবেক এমপিদের স্ত্রী, পুত্র-কন্যা। অষ্টম সংসদে এই হার ছিল ১৭ শতাংশ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি- তিন দলে পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চাকে হতাশাজনক বলা হয় প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মাত্র ১২ শতাংশ মনোনয়ন দেয়া হয় তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে। ৮৮ শতাংশই হয় শীর্ষ নেতাদের ইচ্ছায়। প্রধান দুই দলের মূল ভিত্তি জেলা শাখার সম্মেলনেও দলীয় গঠনতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রীতি মেনে হয় না। দুই দলের ৬৭ শতাংশ জেলা কমিটিতে সম্মেলন হয় অন্তত ১০ বছর ব্যবধানে। জেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের চেয়ে মনোনয়নের বেশি নজির বিএনপিতে। মন্তব্য
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment