
স করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সরকারের গঠিত বেতন ও চাকরি কমিশন তাদের প্রতিবেদনে এ ধরনের মন্তব্য ও সুপারিশ করেছে । প্রতিবেদনে প্রশ্ন করা হয়েছে, ‘উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি না পেলে, সেবার উৎকর্ষতা বিধান না হলে বেতনভাতাদি বৃদ্ধি পাবে কোন যুক্তিতে?’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে এই কমিশন গত রবিবার প্রতিবেদনটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে হস্তান্তর করেছেন। ১৮২ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে একটি অধ্যায়ের নামই দেয়া হয়েছে ‘জনপ্রশাসন’। এখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জনপ্রশাসন বর্তমানে একটি ক্রান্তিলগ্নে এসে উপনীত হয়েছে, যখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর লক্ষ্য এবং গতিপথ পুনর্নির্ধারণ একান্তই আবশ্যক হয়ে পড়ছে। ১৯৮৪ সালে এনাম কমিটির প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের পর অদ্যাবধি জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনীতির পরিবর্তিত চাহিদা, শাসনতান্ত্রিক রদবদল, প্রযুক্তির ব্যবহার, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ, বিশ্বায়ন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নিরিখে বাস্তবসম্মত, সংবেদনশীল ও হালনাগাদ কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন প্রশাসনে আনা হয়নি। এসব বিষয় সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে সচিবালয়ে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য প্রশাসনিক পুনর্গঠন ও সংস্কার কমিশন আশু গঠন করা সময়ের দাবি। জনপ্রশাসনে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ। জনপ্রশাসন সম্পর্কে কমিশনের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে বর্তমানে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু হয়েছে। এরূপ পরিবর্তনের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে যেভাবে শক্তিশালী করা দরকার ছিল সেভাবে তা করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে সংসদীয় গণতন্ত্রের ধাঁচে পুনর্বিন্যাস ও পুনর্গঠিত করা প্রয়োজন। সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের স্বার্থে এরূপ পরিবর্তন আবশ্যক। মন্ত্রণালয়গুলোর আকার ও এর জনবল হ্রাসের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, ‘বিগত ৩০ বছরে পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড ও গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয়গুলোর কলেবর ও জনবল সুষম করা যেতে পারে। দক্ষভাবে প্রশাসনে ক্যাডার সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে কমিশন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করতে এবং মধ্যম আয়ের দেশে পরিবর্তিত চাহিদা মেটানোর জন্য জনপ্রশাসনের বিভিন্ন ফাংশনাল গ্রুপের কলেবর যেভাবে বৃদ্ধি ও বিন্যাস করা প্রয়োজন সেভাবে হয়নি। অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী তাদেরকে যেভাবে শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সুদক্ষ শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার দরকার ছিল তাও হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৮টি ক্যাডারকে গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজনানুযায়ী ক্যাডার পুনর্গঠন, এনক্যাডারিং, ডিক্যাডারিং ও কাস্টারিং করা প্রয়োজন হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘উৎপাদনশীলতা, সেবাদান ও বেতনভাতাদি একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উৎপাদশীলতা বৃদ্ধি না পেলে, সেবার উৎকর্ষতা বিধান না হলে বেতনভাতাদি বৃদ্ধি পাবে কোন যুক্তিতে? প্রশাসনে বিভিন্ন ঘটনায় টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ইতোমধ্যে সরকার প্রশাসনের ওপরের কাঠামোতে ও নিচের স্তরে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু পরিবর্তন আনয়ন করেছে। ওপরের দিকে সিনিয়র সচিবের পদ সৃষ্টি, কিছু ডিপার্টমেন্ট প্রধানকে গ্রেড-১ এ অন্তর্ভুক্ত করা ও নিচের স্তরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে সাবইন্সপেক্টর পদকে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের তহশিলদার পদকে, কৃষি মন্ত্রাণালয়ের অধীনে ব্লক-সুপারভাইজার পদকে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদকে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে জনপ্রশাসনে এক ধরনের টানাপড়েন সৃষ্টি হচ্ছে এবং অন্যান্য যারা সমকক্ষ ছিলেন তারাও অনুরূপ দাবি নিয়ে সরকারের কাছে দেনদরবার শুরু করেছেন। এতে জনপ্রশাসনে বিভিন্ন স্তরে ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই আংশিক আপ-গ্রেডেশন বা মানোন্নয়ন না করে আন্তঃক্যাডার বা অন্তঃক্যাডার ভারসাম্য রক্ষার্থে সামগ্রিকভাবে পদগুলোর বিচার-বিশ্লেষণ করে পরিবর্তন আনা যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবসম্মত হবে। এতে বিদ্যমান স্থিতিও বজায় থাকবে। এরূপ কাজ পূর্ণাঙ্গভাবে করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনে একটি প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস ও সংস্কার কমিশন আশু গঠন করা সমীচীন। সূত্র: নয়াদিগন্ত মন্তব্য
No comments:
Post a Comment