Tuesday, December 9, 2014

আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ:RTNN

বিশ্বজিৎ হত্যার ২ বছর আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যার দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। এই হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের অনেকে প্রকাশ্যে রাজধানীর বুকে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। পুলিশের চোখে তারা ‘পলাতক’। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতার মাধ্যমে সুবিধা নিয়ে গ্রেপ্তার এড়িয়ে ঘু
রে বেড়াচ্ছেন আসামিরা। বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ২১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন আটজন। বাকি ১৩ জনের মধ্যে চারজন বিদেশে পালিয়েছেন। আর নয় আসামি দেশে অবস্থান করছেন। অনেককে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানেও দেখা যায়। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়। দীর্ঘদিনেও আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় হতাশ বিশ্বজিতের পরিবারের সদস্যরা। ১৩ আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিশ্বজিতের পরিবারও আতঙ্কে আছেন। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর তৎকালীন ১৮-দলীয় জোটের কর্মসূচি চলাকালে দর্জি দোকানের কর্মচারী বিশ্বজিৎ দাসকে পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্কের পাশে দিনের বেলা সবার সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল কলেজ শাখার নেতাকর্মীরা। দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা ওই হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ২১ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ওই হত্যা মামলার রায়ে ২১ আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। জানা গেছে, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি রাজন তালুকদার কলকাতায় রয়েছেন। তিনি ওই দেশের বিজিপির (ভারতীয় জনতা পার্টি) রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। তার ফেসবুক থেকে এই তথ্য জানা গেছে। কয়েক মাস ধরে তিনি ফেসবুকে দেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মীর সঙ্গে তোলা পুরনো ছবি আপলোড করেছেন। তার ফেসবুকে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বন্ধু রয়েছেন। বিশ্বজিতের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী চলে আসায় গণমাধ্যমকর্মীরা তৎপর হওয়ার কারণে রাজন তার এই সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের লিস্ট এখন প্রাইভেসি দিয়ে রেখেছেন। আরেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূরে আলম লিমন মিরপুরের একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত রয়েছেন। মাঝে মধ্যে তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে আসেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এরপর থেকে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন লিমন। মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবনের দায়ে তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারও করা হয়। এখন বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার পরোয়ানা মাথায় নিয়ে রাজধানীতে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না। তবে সূত্রাপুর থানার ওসি খলিলুর রহমান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, লিমনকে খুঁজে না পাওয়ার কারণে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। পলাতক অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামি কামরুল হাসান ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সবুজের সঙ্গে আঁতাত করে প্রশ্ন ফাঁস এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ও চাকরির পরীক্ষায় মুঠোফোনে এসএমএস বাণিজ্য করেছেন বলে জানা যায়। রাত নয়টার পর জাতীয় জাদুঘরের সামনে নিয়মিত আড্ডা দেন তিনি। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি আল-আমিন শেখ মামলার রায় হওয়ার পরই কলকাতায় চলে যান। তিনি কলকাতায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওবায়দুল কাদের দুবাই ও তারিক বিন জোহর সিঙ্গাপুর আছেন বলে জানা গেছে। বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আটজন হলেন- রাজন তালুকদার, নূরে আলম, রফিকুল ইসলাম শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন, ইমদাদদুল হক, কাইয়ুম মিয়া ও সাইফুল ইসলাম। আর যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন- এইচএম কিবরিয়া, গোলাম মোস্তফা, খন্দকার ইউনুস আলী, তারিক বিন জোহর, মনিরুল হক, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, কামরুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন। বর্তমানে কারাগারে আছেন- রাফিকুল ইসলাম শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, রাশিদুজ্জামান ওরফে শাওন, ইমদাদুল হক, কাইয়ুম মিয়া, সাইফুল ইসলাম, এইচএম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তাফা। বিশ্বজিতের ভাই উত্তম দাস বলেন, মামলার রায় হওয়ার পরও পলাতক আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা পুরো পরিবার আতঙ্কে রয়েছি। মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে রয়েছে। তিনি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত যারা কারাগারে রয়েছেন, তারা সবাই বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। উচ্চ আদালতে তা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে, বিশ্বজিতের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মশুরা গ্রামেও ভিড় করেছে আতঙ্ক। তার বাবা অনন্ত দাস ও মা কল্পনা দাস বলেন, ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে দুই বছর হয়ে গেল। এখনো সব আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আসামিরা গ্রেপ্তার হবে কি-না, তাও জানি না। সব সময় একটা ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে থাকি। মন্তব্য      


No comments:

Post a Comment