জনৈতিক অস্থিরতায়। ২০১৪-তে এসে ফ্ল্যাটের জটিল জট তৈরি হয়েছে আবাসন ব্যবসায়। চলতি বছর ব্যবসায়িরা নতুন নতুন আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ করলেও বিক্রির সময় ক্রেতা খুঁজে পাননি। ফলে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা দীর্ঘদিন ধরেই বলছিলেন, তাদের ব্যবসায় মন্দা চলছে। কিন্তু কতটুকু খারাপ অবস্থা, তার হালনাগাদ সমীক্ষাভিত্তিক কোনো তথ্য ছিল না। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক একটি জরিপ শুরু করেছে আবাসন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। গত সোমবার পর্যন্ত ২০৯টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, এ প্রতিষ্ঠানগুলোর ১২,১৮৫টি ফ্ল্যাট বা ইউনিট অবিক্রীত আছে। আর এতে আটকে আছে প্রায় ৮,৮১১ কোটি টাকা। এ অবস্থার মধ্যে বড় ছাড়ের অফার দিয়ে আজ বুধবার থেকে ঢাকায় শুরু হচ্ছে আবাসন মেলা। চলবে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পাঁচ দিনব্যাপী এই মেলা হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। আবাসন ব্যবসায়ীদের মতে, স্বাভাবিক সময়ে তাদের যা বিক্রি হয় তার থেকে ৫০ শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছিল। এখন সামান্য বেড়েছে। কিন্তু জট কাটাতে তা তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। বহু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন দিতে, ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে লাভ ছাড়াই ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে দাম কমে গেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। অনেক বড় বড় গ্রুপ আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে মারাত্মক সংকটে পড়েছে। তারা এখন এ খাত থেকে হাত গুটাতেও পারছে না। ফলে গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে তারা। দেশের অর্থনীতির বড় খাতগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থানে আবাসন খাত। এ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। আবাসন খাতের সঙ্গে ২৬৯টি শিল্প জড়িত, যেগুলোর অস্তিত্ব নির্ভর করছে আবাসন খাতের ওপর। এগুলোর পণ্য বিক্রি বাড়ে আবাসন খাতে গতি থাকলে। যার ইতিবাচক প্রভাব শেষ পর্যন্ত গিয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ওপর পড়ে। ২০১১ সালের পর থেকে বিক্রিতে ধস নামায় ফ্ল্যাটের দাম ৩০ শতাংশ কমে গেছে বলে দাবি করেন আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শেলটেক (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. তৌফিক এম সেরাজ। তিনি বলেন, ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালের তুলনায় এখন ফ্ল্যাটের বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কম। এর কারণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা এবং তিন বছর ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ মন্দাবস্থা কবে কাটবে তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে এ ধরনের মন্দা কাটাতে আমেরিকা, জাপানে সাত-আট বছরও লাগে বলে উল্লেখ করেন তিনি। আবাসনের সহযোগী শিল্পগুলোও এখন বিপাকে আছে। রড, সিমেন্ট, ইট, আসবাবপত্র, রং, সিরামিকসহ বহু শিল্পের পণ্য বিক্রি কমে গেছে। ওই সব শিল্পে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে কর্মীদের ছাঁটাই চলছে। রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর সামসুল আলামিন বলেন, ‘আসলে ভালো কেউ নেই। কারো কারো অবস্থা খুব বেশি খারাপ।’ ফ্ল্যাটের দাম কমে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আবাসন ব্যবসায়ীরা যে দামে ফ্ল্যাট বিক্রি করছেন, তাতে তাদের পকেটের টাকা চলে যাচ্ছে। এদিকে, আবাসন খাতের বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে ক্রেতাদের ঋণ দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘূর্ণায়মান তহবিল আবার চালুর দাবি জানিয়েছেন। ড. তৌফিক এম সেরাজ মনে করেন, আবাসন মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর একটি। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন চাহিদা পূরণের জন্য সরকারের কম সুদে ঋণ দেওয়া উচিত। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘূর্ণায়মান তহবিল আবার চালুর পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রয়োজনে এ তহবিল থেকে শুধু প্রথমবার ফ্ল্যাট অথবা জমি কেনার জন্য গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া যেতে পারে। ২০১০ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে একজন আবেদনকারীকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হতো। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে এই ঋণ দিত। বাণিজ্যিক ব্যাংক গ্রাহকদের কাছ থেকে সুদ নিত ৯ শতাংশ হারে। ঘূর্ণায়মান এ তহবিলটি ২০০৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৭০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত এ তহবিল থেকে ৬১০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়। ওই তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গ্রাহকদের ভরসা এখন বাণিজ্যিক ব্যাংক। সিঙ্গাপুরের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ২.৮ থেকে ৩ শতাংশ সুদ হারে, মালয়েশিয়ায় ৪.৩৯-৪.৬৫ শতাংশ আর ভারতে ১০-১০.৭৫ শতাংশ সুদে গ্রাহকদের আবাসন ঋণ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে ঘোষিত সুদ হার ১১ থেকে ১৯.৫০ হলেও নানা ধরনের প্রকাশ্য ও গোপন চার্জসহ ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ হারে সুদ দাঁড়ায়। রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর সামসুল আলামিন বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ সাধারণ মানুষের পক্ষে নেওয়া কষ্টকর। কারণ এতে সুদ বেশি ও স্বল্প সময়ের জন্য এ ঋণ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, বিদেশে ভাড়ার চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি কিস্তি ধরে গ্রাহকদের দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দেওয়া হয়, যাতে তাদের ওপর চাপ না পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো মাসিক ভাড়া খরচের ১০ গুণ হারে কিস্তি ধরে। ফলে চাকরিজীবী ও সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে ঋণ নেওয়া সম্ভব হয় না। রিহ্যাব সভাপতি বলেন, আবাসনে ঋণ দেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ। কারণ এখানে ১০০ ভাগ জামানত থাকে। যার বয়স ৪০ বছর, তাকে ২০ বছর মেয়াদি ঋণ দেওয়া উচিত। যার ৩০ বছর তাকে ৩০ বছর মেয়াদি ঋণ দেওয়া উচিত। বিদেশে এভাবেই আবাসন খাতে ঋণ দেওয়া হয়। মন্তব্য
Wednesday, December 24, 2014
মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের আবাসন খাত:RTNN
আজ শুরু রিহ্যাব মেলা মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের আবাসন খাত নিউজ ডেস্ক আরটিএনএন ঢাকা: শুরুটা ২০১০ সালে, রেশ চলছে এখনো। দেশের সম্ভাবনাময় আবাসন খাত মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে। আর এর পেছনে পুঁজিবাজারে ধস, আবাসিক ভবনে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ আর ৩০০ কোটি টাকার ঘূর্ণায়মান তহবিল বন্ধকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রিতে মন্দার শুরু হয়েছে ২০১১ সালে। ২০১২ সালে তা আরো গভীর হয়েছে। ২০১৩ সাল গেছে ভয়াবহ রা
জনৈতিক অস্থিরতায়। ২০১৪-তে এসে ফ্ল্যাটের জটিল জট তৈরি হয়েছে আবাসন ব্যবসায়। চলতি বছর ব্যবসায়িরা নতুন নতুন আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ করলেও বিক্রির সময় ক্রেতা খুঁজে পাননি। ফলে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা দীর্ঘদিন ধরেই বলছিলেন, তাদের ব্যবসায় মন্দা চলছে। কিন্তু কতটুকু খারাপ অবস্থা, তার হালনাগাদ সমীক্ষাভিত্তিক কোনো তথ্য ছিল না। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক একটি জরিপ শুরু করেছে আবাসন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। গত সোমবার পর্যন্ত ২০৯টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, এ প্রতিষ্ঠানগুলোর ১২,১৮৫টি ফ্ল্যাট বা ইউনিট অবিক্রীত আছে। আর এতে আটকে আছে প্রায় ৮,৮১১ কোটি টাকা। এ অবস্থার মধ্যে বড় ছাড়ের অফার দিয়ে আজ বুধবার থেকে ঢাকায় শুরু হচ্ছে আবাসন মেলা। চলবে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পাঁচ দিনব্যাপী এই মেলা হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। আবাসন ব্যবসায়ীদের মতে, স্বাভাবিক সময়ে তাদের যা বিক্রি হয় তার থেকে ৫০ শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছিল। এখন সামান্য বেড়েছে। কিন্তু জট কাটাতে তা তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। বহু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন দিতে, ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে লাভ ছাড়াই ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে দাম কমে গেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। অনেক বড় বড় গ্রুপ আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে মারাত্মক সংকটে পড়েছে। তারা এখন এ খাত থেকে হাত গুটাতেও পারছে না। ফলে গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে তারা। দেশের অর্থনীতির বড় খাতগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থানে আবাসন খাত। এ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। আবাসন খাতের সঙ্গে ২৬৯টি শিল্প জড়িত, যেগুলোর অস্তিত্ব নির্ভর করছে আবাসন খাতের ওপর। এগুলোর পণ্য বিক্রি বাড়ে আবাসন খাতে গতি থাকলে। যার ইতিবাচক প্রভাব শেষ পর্যন্ত গিয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ওপর পড়ে। ২০১১ সালের পর থেকে বিক্রিতে ধস নামায় ফ্ল্যাটের দাম ৩০ শতাংশ কমে গেছে বলে দাবি করেন আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শেলটেক (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. তৌফিক এম সেরাজ। তিনি বলেন, ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালের তুলনায় এখন ফ্ল্যাটের বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কম। এর কারণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা এবং তিন বছর ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ মন্দাবস্থা কবে কাটবে তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে এ ধরনের মন্দা কাটাতে আমেরিকা, জাপানে সাত-আট বছরও লাগে বলে উল্লেখ করেন তিনি। আবাসনের সহযোগী শিল্পগুলোও এখন বিপাকে আছে। রড, সিমেন্ট, ইট, আসবাবপত্র, রং, সিরামিকসহ বহু শিল্পের পণ্য বিক্রি কমে গেছে। ওই সব শিল্পে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে কর্মীদের ছাঁটাই চলছে। রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর সামসুল আলামিন বলেন, ‘আসলে ভালো কেউ নেই। কারো কারো অবস্থা খুব বেশি খারাপ।’ ফ্ল্যাটের দাম কমে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আবাসন ব্যবসায়ীরা যে দামে ফ্ল্যাট বিক্রি করছেন, তাতে তাদের পকেটের টাকা চলে যাচ্ছে। এদিকে, আবাসন খাতের বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে ক্রেতাদের ঋণ দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘূর্ণায়মান তহবিল আবার চালুর দাবি জানিয়েছেন। ড. তৌফিক এম সেরাজ মনে করেন, আবাসন মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর একটি। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন চাহিদা পূরণের জন্য সরকারের কম সুদে ঋণ দেওয়া উচিত। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘূর্ণায়মান তহবিল আবার চালুর পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রয়োজনে এ তহবিল থেকে শুধু প্রথমবার ফ্ল্যাট অথবা জমি কেনার জন্য গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া যেতে পারে। ২০১০ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে একজন আবেদনকারীকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হতো। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে এই ঋণ দিত। বাণিজ্যিক ব্যাংক গ্রাহকদের কাছ থেকে সুদ নিত ৯ শতাংশ হারে। ঘূর্ণায়মান এ তহবিলটি ২০০৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৭০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত এ তহবিল থেকে ৬১০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়। ওই তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গ্রাহকদের ভরসা এখন বাণিজ্যিক ব্যাংক। সিঙ্গাপুরের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ২.৮ থেকে ৩ শতাংশ সুদ হারে, মালয়েশিয়ায় ৪.৩৯-৪.৬৫ শতাংশ আর ভারতে ১০-১০.৭৫ শতাংশ সুদে গ্রাহকদের আবাসন ঋণ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে ঘোষিত সুদ হার ১১ থেকে ১৯.৫০ হলেও নানা ধরনের প্রকাশ্য ও গোপন চার্জসহ ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ হারে সুদ দাঁড়ায়। রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর সামসুল আলামিন বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ সাধারণ মানুষের পক্ষে নেওয়া কষ্টকর। কারণ এতে সুদ বেশি ও স্বল্প সময়ের জন্য এ ঋণ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, বিদেশে ভাড়ার চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি কিস্তি ধরে গ্রাহকদের দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দেওয়া হয়, যাতে তাদের ওপর চাপ না পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো মাসিক ভাড়া খরচের ১০ গুণ হারে কিস্তি ধরে। ফলে চাকরিজীবী ও সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে ঋণ নেওয়া সম্ভব হয় না। রিহ্যাব সভাপতি বলেন, আবাসনে ঋণ দেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ। কারণ এখানে ১০০ ভাগ জামানত থাকে। যার বয়স ৪০ বছর, তাকে ২০ বছর মেয়াদি ঋণ দেওয়া উচিত। যার ৩০ বছর তাকে ৩০ বছর মেয়াদি ঋণ দেওয়া উচিত। বিদেশে এভাবেই আবাসন খাতে ঋণ দেওয়া হয়। মন্তব্য
জনৈতিক অস্থিরতায়। ২০১৪-তে এসে ফ্ল্যাটের জটিল জট তৈরি হয়েছে আবাসন ব্যবসায়। চলতি বছর ব্যবসায়িরা নতুন নতুন আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ করলেও বিক্রির সময় ক্রেতা খুঁজে পাননি। ফলে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা দীর্ঘদিন ধরেই বলছিলেন, তাদের ব্যবসায় মন্দা চলছে। কিন্তু কতটুকু খারাপ অবস্থা, তার হালনাগাদ সমীক্ষাভিত্তিক কোনো তথ্য ছিল না। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক একটি জরিপ শুরু করেছে আবাসন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। গত সোমবার পর্যন্ত ২০৯টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, এ প্রতিষ্ঠানগুলোর ১২,১৮৫টি ফ্ল্যাট বা ইউনিট অবিক্রীত আছে। আর এতে আটকে আছে প্রায় ৮,৮১১ কোটি টাকা। এ অবস্থার মধ্যে বড় ছাড়ের অফার দিয়ে আজ বুধবার থেকে ঢাকায় শুরু হচ্ছে আবাসন মেলা। চলবে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পাঁচ দিনব্যাপী এই মেলা হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। আবাসন ব্যবসায়ীদের মতে, স্বাভাবিক সময়ে তাদের যা বিক্রি হয় তার থেকে ৫০ শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছিল। এখন সামান্য বেড়েছে। কিন্তু জট কাটাতে তা তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। বহু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন দিতে, ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে লাভ ছাড়াই ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে দাম কমে গেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। অনেক বড় বড় গ্রুপ আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে মারাত্মক সংকটে পড়েছে। তারা এখন এ খাত থেকে হাত গুটাতেও পারছে না। ফলে গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে তারা। দেশের অর্থনীতির বড় খাতগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থানে আবাসন খাত। এ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। আবাসন খাতের সঙ্গে ২৬৯টি শিল্প জড়িত, যেগুলোর অস্তিত্ব নির্ভর করছে আবাসন খাতের ওপর। এগুলোর পণ্য বিক্রি বাড়ে আবাসন খাতে গতি থাকলে। যার ইতিবাচক প্রভাব শেষ পর্যন্ত গিয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ওপর পড়ে। ২০১১ সালের পর থেকে বিক্রিতে ধস নামায় ফ্ল্যাটের দাম ৩০ শতাংশ কমে গেছে বলে দাবি করেন আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শেলটেক (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. তৌফিক এম সেরাজ। তিনি বলেন, ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালের তুলনায় এখন ফ্ল্যাটের বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কম। এর কারণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা এবং তিন বছর ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ মন্দাবস্থা কবে কাটবে তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে এ ধরনের মন্দা কাটাতে আমেরিকা, জাপানে সাত-আট বছরও লাগে বলে উল্লেখ করেন তিনি। আবাসনের সহযোগী শিল্পগুলোও এখন বিপাকে আছে। রড, সিমেন্ট, ইট, আসবাবপত্র, রং, সিরামিকসহ বহু শিল্পের পণ্য বিক্রি কমে গেছে। ওই সব শিল্পে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে কর্মীদের ছাঁটাই চলছে। রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর সামসুল আলামিন বলেন, ‘আসলে ভালো কেউ নেই। কারো কারো অবস্থা খুব বেশি খারাপ।’ ফ্ল্যাটের দাম কমে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আবাসন ব্যবসায়ীরা যে দামে ফ্ল্যাট বিক্রি করছেন, তাতে তাদের পকেটের টাকা চলে যাচ্ছে। এদিকে, আবাসন খাতের বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে ক্রেতাদের ঋণ দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘূর্ণায়মান তহবিল আবার চালুর দাবি জানিয়েছেন। ড. তৌফিক এম সেরাজ মনে করেন, আবাসন মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর একটি। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন চাহিদা পূরণের জন্য সরকারের কম সুদে ঋণ দেওয়া উচিত। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘূর্ণায়মান তহবিল আবার চালুর পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রয়োজনে এ তহবিল থেকে শুধু প্রথমবার ফ্ল্যাট অথবা জমি কেনার জন্য গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া যেতে পারে। ২০১০ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে একজন আবেদনকারীকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হতো। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে এই ঋণ দিত। বাণিজ্যিক ব্যাংক গ্রাহকদের কাছ থেকে সুদ নিত ৯ শতাংশ হারে। ঘূর্ণায়মান এ তহবিলটি ২০০৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৭০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত এ তহবিল থেকে ৬১০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়। ওই তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গ্রাহকদের ভরসা এখন বাণিজ্যিক ব্যাংক। সিঙ্গাপুরের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ২.৮ থেকে ৩ শতাংশ সুদ হারে, মালয়েশিয়ায় ৪.৩৯-৪.৬৫ শতাংশ আর ভারতে ১০-১০.৭৫ শতাংশ সুদে গ্রাহকদের আবাসন ঋণ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে ঘোষিত সুদ হার ১১ থেকে ১৯.৫০ হলেও নানা ধরনের প্রকাশ্য ও গোপন চার্জসহ ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ হারে সুদ দাঁড়ায়। রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর সামসুল আলামিন বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ সাধারণ মানুষের পক্ষে নেওয়া কষ্টকর। কারণ এতে সুদ বেশি ও স্বল্প সময়ের জন্য এ ঋণ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, বিদেশে ভাড়ার চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি কিস্তি ধরে গ্রাহকদের দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দেওয়া হয়, যাতে তাদের ওপর চাপ না পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো মাসিক ভাড়া খরচের ১০ গুণ হারে কিস্তি ধরে। ফলে চাকরিজীবী ও সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে ঋণ নেওয়া সম্ভব হয় না। রিহ্যাব সভাপতি বলেন, আবাসনে ঋণ দেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ। কারণ এখানে ১০০ ভাগ জামানত থাকে। যার বয়স ৪০ বছর, তাকে ২০ বছর মেয়াদি ঋণ দেওয়া উচিত। যার ৩০ বছর তাকে ৩০ বছর মেয়াদি ঋণ দেওয়া উচিত। বিদেশে এভাবেই আবাসন খাতে ঋণ দেওয়া হয়। মন্তব্য
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment