Wednesday, December 10, 2014

মোবাইলফোন এত সস্তা! :Natun Barta

ঢাকা: নিজের পুরনো কিংবা ভেঙে যাওয়া মোবাইলটা যখন আপনি ফেলে দেন ময়লার ঝুড়িতে, তারপর কী হয় জানেন? রান্না ঘরের জিনিসপত্রের বিনিময়ে যখন তা বদল করে নেন। কিংবা মোবাইলটি চুরি হওয়ার পর কী ঘটে এর খবর কি রাখেন? আপনার ব্যবহার করা জিনিসটাই তার পরবর্তী নতুন মালিকের হাতে শোভা পাচ্ছে! আপনি যদি রাজধানী দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের সামনের ফুটপাতে একবার হাঁটতে যান তাহলে পেয়ে যেতে পারেন ফেলে দেয়া মোবাইলটি। নোকিয়া
, স্যামসাং, এইচটিসি, সনি, মাইক্রোম্যাক্স, সিম্পনি এমনকি আইফোনের জম-জমাট ব্যবসা চলে সেখানে। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ না থাকলেও হকাররা ভাঙা কিংবা পুরোনো মোবাইলের যন্ত্রাংশ এক মোবাইল থেকে অন্য মোবাইলে ঢুকিয়ে সচল করে  বিক্রি করছে। ফুটপাতের অর্ধ-কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তাদের এই বাণিজ্যের পসরা। কেবল মোবাইল নয় চাইলেই পেতে পারেন, ব্যাটারি, চার্জার, হ্যাডফোন, মোবাইল কভার এবং মোবাইল কেসও। হকাররা জানান, যে কেউ চাইলে সেখানে তার মোবাইল কিংবা অন্য কোনো জিনিসপত্র সেখানে বিক্রি করতে পারবেন। চুরি করা মোবাইলের একটা বিশাল সংগ্রহও এখানে রয়েছে। কম দামের এসব মোবাইলের পসরা স্বল্প আয়ের মানুষদের সহজে আকৃষ্ট করে। ১০০ টাকা থেকে শুরু কিরে মান অনুযায়ী বিভিন্ন দামের মোবাইল মিলবে সেখানে। কিছু স্মার্ট ফোনও পাবেন সেখানে তবে সেগুলোর দাম বেশি। ব্যবসায়ীরা জানান, বেগম বাজারের ইলেকট্রনিকস বর্জ্যের সমাহার থেকে তারা অধিকাংশ পুরনো মোবাইল কিনেন।বিভিন্ন উৎস থেকে বেগম বাজারের ব্যবসায়ীরা এ পুরোনো মোবাইল পেয়ে থাকেন। যেমন-রান্নাঘরের জিনিসপত্রের বিনিময়ে তারা পুরোনো মোবাইল কিনেন। পুরান ঢাকার মোবাইল ব্যবসায়ী ইউনূস বলেন, “আমরা পুরাতন মোবাইলফোন কেনার ক্ষেত্রে তা সচল আছে কিনা দেখি।” এক বছর আগে মুন্সীগঞ্জ থেকে এ ব্যবসা শুরু করেন ইউনূস। তিনি বলেন, “পুরনো ও ভাঙা মোবাইলের ডিসপ্লে, ব্যাটারি, মাইক, স্পিকার পুনরায় অন্য মোবাইলে ব্যবহার করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে আমার এক মোবাইলের যন্ত্রাংশ অপর মোবাইলে বসিয়ে তা বিক্রি করার উপযোগী করে তুলি।” প্রশিক্ষণের কোনো অভিজ্ঞতা নেই জানিয়ে ইউনূস বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে এক মোবাইলের যন্ত্রাংশ অন্য মোবাইলে বসালেই তা ঠিক হয়ে যায়।” ভালো মোবাইলের যন্ত্রাংশ নিমতলি এলাকায় বিক্রি করা হয় বলেও জানান তিনি। শিমুল নামের অপর এক হকার জানান, “মোবাইল কিংবা অন্য যেকোনো জিনিস কেনার আগে ক্রেতারা তা চেক করে নেবার সুযোগ পান। তবে বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো গ্যারান্টির সুযোগ দেয়া হয় না।” তিনি বলেন, “দুটি মোবাইল ৩০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে। আর তাতে প্রতিটিতে গড়ে লাভ ৭৫ টাকা।” শিমুলের কয়েক ফুট ব্যবধানে কিছু ভুয়া স্মার্ট ফোন নিয়ে বসতে দেখা যায় আনোয়ার হোসেন নামের আরেক হকারকে। কী দামে বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, “আইফোন ৮,০০০ এবং এইচটিসি ৭,৫০০ টাকা। এগুলো চাইনিজ সেট। খুচরা বাজার থেকে এগুলো কিনে আনা হয়েছে।” কিছুক্ষণ দামাদামির পর ২০০০ টাকায় একটি মোবাইল কিনেন এক কাস্টমার। তিনি জানান, “মোবাইলটিতে তার পছন্দের ফিচারগুলো রয়েছে।” কেবল ফোন কিংবা অন্যান্য যন্ত্রাংশই নয় এছাড়া আরো পসরা সাজিয়ে বসেছেন তিনি। নতুন ও পুরাতন ভিসিডি প্লেয়ার, ক্যাসেট প্লেয়ার, ক্যামেরা, রেডিও, ছোট টেলিভিশন, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, ইস্ত্রি, টেবিল পাখা, লাইটসহ বিভিন্ন জিনিষ বিক্রি হচ্ছে সেখানে। ক্যাসেট প্লেয়ার ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা, স্পিকার ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, ছোট পাখা ২০০ টাকা, টেবিল পাখা ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, ব্লেন্ডার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আসা আব্দুস সাত্তার দামাদামি করে একটি ক্যাসেট প্ল্যায়ার কিনলেন ১০০ টাকায়। দামাদামিতে সাত্তারকে খুশিই মনে হল। তিনি বলেন, “ক্যাসেট প্ল্যায়ারটি ভাঙা হলেও তা রেডিও হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। একটা নতুন রেডিও কিনতে গেলে আমার অন্তত ১০০০ টাকা খরচ করতে হবে।” নাম না প্রকাশের শর্তে আরেক বিক্রেতা জানান, “আমি ৩৫০ টাকায় ব্লেন্ডার, ৪০০ টাকায় রির্চাজেভল লাইট এবং ২০০ টাকায় পাখা কিনেছি। আর তাতে লাভ করেছি ৪০০ টাকা।” এ ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় ২০০ হকার। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিনের ব্যবসা করার জন্য ভাড়া হিসেবে ৭০ টাকা এবং বিদ্যুতের জন্য ২০ টাকা করে গুনতে হয়।” তাদেরই একজন বলেন, “প্রশাসনের এক লোক এসে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যান।” তবে নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি ওই ব্যবসায়ী।–ডেইলি স্টার। নতুন বার্তা/জিএস/জবা


No comments:

Post a Comment